Thursday, November 13, 2014
শানে মহিউদ্দিন ৫ম সংখা
নূরুল ইরফান ফি তাফসীরিল কুরআন-৫
ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান
অধ্যক্ষ, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন
بسم الله الرحمن الرحیم
اقرأ باسم ربك الذی خلق- خلق الانسان من علق- اقرأ وربك الاکرم- الذى علم بالقلم- علم الانسان ما لم یعلم
“পড়ুন আপনার রবকে চেনার জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাটবদ্ধ রক্ত থেকে পড়ুন আপনার রবকে যে মহা মহিম, যিনি শিক্ষা দিচ্ছেন কলমের মাধ্যমে, শিক্ষা দিচ্ছেন মানুষকে যা সে জানতো না।”
মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর জাতী নাম الله শব্দের সাথে الرحمن বা পরম করুণাময় এবং الرحيم বা অসীম দয়ালু এ গুণবাচক নাম দু’টি ব্যবহার করলেন। এ দু গুণবাচক নামের তাৎপর্য এত গভীর যে তা গবেষণার দাবী রাখে। الرحمن শব্দটি আরবী ব্যাকরণের নিয়মানুযায়ী اسم فاعل مبالغة বা আধিক্যবোধক কর্তা। যার মূল ধাতু رحم অর্থ হল ‘দয়া’। এখানে الرحمن শব্দকে বিশ্লেষণ করলে অর্থ দাঁড়ায়- (الف) দ্বারা الفت বা সৌহার্দ্য-আকর্ষণ, (لام) দ্বারা لطف অনুগ্রহ, (راء) দ্বারা رفق বা ন¤্রতা, (حاء) দ্বারা حكمة বা কৌশল, (ميم) দ্বারা محبةবা ভালবাসা, (نون) দ্বারা نور বা আলো। যে সত্ত্বা আকর্ষণে, অনুগ্রহে, ন¤্রতার দ্বারা, কৌশলে, প্রেম-ভালবাসা দিয়ে আলোকময় করেন তিনি الرحمن।
الرحيم শব্দটির মূল ধাতুও رحم- যার অর্থ দয়া। الرحيم শব্দটিও اسم فاعل مبالغة বা আধিক্য বোধক কর্তা। শব্দটি বিশ্লেষণ করলে অর্থ দাঁড়ায় (الف) দ্বারা انيست বা আকর্ষণ, (لام) দ্বারা لينت বা বিনয়, ন¤্রতা, (راء) দ্বারা رقة قلب বা মনের ন¤্রতা বা সহানুভূতিশীল মনের অধিকারী, (حاء) দ্বারা حياء বা লজ্জাবোধ, (ياء) দ্বারা يقين বা দৃঢ় প্রত্যয় এবং (ميم) দ্বারা محبة -ভালবাসা, مواسات সহমর্মিতা, مساوات বা সাম্য। এককথায় যে সত্ত্বা নিজ আকর্ষনে সকল মাখলুককে বিনয়ী, লজ্জাবোধ, সাহনুভূতিশীল, দৃঢ় প্রত্যয়ী করে প্রেম-ভালবাসা, সহমর্মী ও সাম্যের মাধ্যমে অসীম দয়া লাভের উপযুক্ত করে তোলেন তিনিই الرحيم।
পবিত্র কুরআন মাজীদে الرحمن শব্দটি ৫৭বার, الرحيم শব্দটি ৯৫বার এসেছে। এছাড়াও رحمة শব্দটি ৭৯ বারএসেছে। বিভিন্নরূপে رحمة শব্দটি এসেছে ৭৫বার। আল কুরআনে رحمة শব্দমূল থেকে মোট ৩০৬ বার দয়া ও অনুগ্রহের কথা বলা হয়েছে। الرحمن শব্দটি জাহেলী যুগে কারো নাম হিসেবে পরিচিত ছিলনা। যেমন এরশাদ হয়েছে-
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اسْجُدُوا لِلرَّحْمَنِ قَالُوا وَمَا الرَّحْمَنُ [الفرقان : ৬০
অর্থাৎ- যখন তাদেরকে বলা হল- রহমানকে সিজদা কর তারা বলল রহমান কি? (সূরা আল ফুরকান-৬০)
কোন কোন মনীষী বলেন- দোয়ার মধ্যে এ দু’টি শব্দকে এভাবে ব্যবহার করা হয়েছে-
رحمن الدنيا ورحيم الآخرة
অর্থাৎ- তিনি করুণাময় এ পার্থিবজগতে আর অসীম দয়ালু পরকালে। (কাশফুল আসরার-১/৭,রুহুল মাআ’নী-১/২৭)
মুফাসসীরগণ লিখেছেন- الرحمن العاطف على جميع خلقه بان خلقهم ورزقهم
রহমান অর্থ- সকল সৃষ্টির প্রতি দয়া-অনুগ্রহ এই জন্য যে তিনিই সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে রিযিক দিয়েছেন। (কাশফুল আসরার-১/৭)
পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহর তায়ালা নিজেই এরশাদ করেন-
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ-الأعراف : ১৫৬
অর্থাৎ- আমার রহমত সকল বস্তুর মাঝে পরিব্যাপ্ত। (সূরা আ’রাফ-১৫৬)
আর الرحيم মানে হল-
الرحيم بالمؤمنين خاصة بالهداية والتوفيق فى الدنيا- وبالجنة والرؤية فى العقبى- وكان بالمؤمنين رحيما-
রাহীম বা অসীম দয়া মু’মিনদের জন্য দুনিয়ায় হেদায়েত ও তাওফীক পাওয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য, আর পরকালে জান্নাত ও আল্লাহর দিদার পাওয়া বিশেষ দয়ার আওতাভূক্ত। আল্লাহ তায়ালা তাইতো এরশাদ করেছেন- “আল্লাহ মুমিনদের বিষয়ে রাহীম বা অত্যন্ত দয়ালু”। (কাশফুল আসরার-১/৭)
ইমাম জাফর সাদেক রহমতুল্লাহে আলাইহি বলেন-
الرحمن اسم خاص بصفة عامة والرحيم اسم عام بصفة خاصة-
রহমান একটি খাস নাম যার গুন আম বা সাধারণ আর রাহীম নাম হিসেবে সাধারণ আর গুণ হিসেবে খাস বা বিশেষায়িত। (কাশফুল আসরার-১/৮)
الرحمن শব্দটি خاص বা নির্দিষ্ট এদিক দিয়ে যে, এ নামটি শুধু আল্লাহর নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্য কোন সৃষ্টির জন্য ব্যবহৃত হয় না। গুণগত দিক থেকে আম বা সাধারণ হিসেবে ব্যবহৃত সকল সৃষ্টিকে সৃষ্টি করা এবং রিযিক দান করা। যাতে কোন ধর্ম, বর্ণ আলাদা করা হয়নি।
الرحيم শব্দগতভাবে আল্লাহ ছাড়াও অন্য সৃষ্টির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। গুণগত দিক থেকে রাহীম বা অসীম দয়া শুধু মুসলমানদের জন্য। এ হিসেবে শব্দটি আম বা সাধারণভাবে প্রযোজ্য। পবিত্র কুরআন মজীদে আল্লাহ তায়ালা ৫ ভাবে তাঁর নাম মোবারককে رحمة শব্দের সাথে সম্পৃক্ত করেছেনঃ-
১) الرحمن -পরম করুণাময়
২) الرحيم -অসীম দয়ালু
৩) خير الرحمين - সর্বোত্তম দয়াবান
৪) ارحم الرحمين - সবচেয়ে বড় মেহেরবান এবং
৫) ذو الرحمة - রহমতের অধিকারী।
আল্লাহর রহমত যে অসীম তার নমুনা পেশ করে হযরত সালমান ফারসী ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِائَةَ رَحْمَةٍ فَجَعَلَ مِنْهَا رَحْمَةً فِي الدُّنْيَا تَتَرَاحَمُونَ بِهَا وَعِنْدَهُ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ رَحْمَةً فَإِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ ضَمَّ هَذِهِ الرَّحْمَةَ إِلَى التِّسْعَةِ وَالتِّسْعِينَ رَحْمَةً ثُمَّ عَادَ بِهِنَّ عَلَى خَلْقِهِ
অর্থাৎ- আল্লাহ তায়ালার একশত রহমত রয়েছে। সেখান থেকে পৃথিবীতে ১টি রহমত বন্টণ করেছেন। যার ফলে সৃষ্টির মাঝে মধুর সম্পর্ক সৃষ্টি হচ্ছে এবং পরষ্পরকে দয়া-অনুগ্রহ করছে। আর ৯৯ভাগ রহমত আল্লাহ নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। আল্লাহ কেয়ামতের পূর্বে সে এক ভাগ রহমত উঠিয়ে নিবেন এবং একশত ভাগ পূর্ণ করে কিয়ামতের দিন বান্দার প্রতি একশত ভাগ রহমত বা দয়া প্রদর্শণ করবেন। (মসনদে আহমদ-১৬/৪৭৩)
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-
من كتب بسم الله الرحمن الرحيم تعظيما لله عز وجل غفر الله له- ومن رفع قرطاسا من الارض فيه بسم الله الرحمن الرحيم اجلالا لله عز وجل ان يداس كتب عند الله من الصديقين وخفت عن والديه وان كانا من المشركين يعنى العذاب-
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শণ করে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ লিখবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ লিখিত মাটিতে পড়ে থাকা একটি কাগজের টুকরো কেউ যদি আল্লাহর মহানত্বের দিকে খেয়াল করে উঠিয়ে আনে আল্লাহ তাকে সিদ্দিকীনদের কাতারে শামিল করবেন। তার মাতা-পিতা আজাব ভোগ করতে থাকলে তারা মুশরিক হলেও আল্লাহ তাদের আজাব লাঘব করে দেবেন। (কাশফুল আসরার-১/৮)
আল্লাহর হাবিব আরো এরশাদ করেন-
لا يرد دعاء اوله بسم الله الرحمن الرحيم-
অর্থাৎ- যে দোয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পড়া হয় সে দোয়া ফিরে না (কবুল হয়)। (কাশফুল আসরার-১/৮)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,
لكل شيء أساس وأساس الدنيا مكة لأنها منها دحيت ، وأساس السماوات عَريباً وهي السماء السابعة ، وأساس الأرض عجيباً وهي الأرض السابعة السفلى ، وأساس الجنان جنة عدن وهي سرة الجنان عليها أسست الجنة ، وأساس النار جهنم وهي الدركة السابعة السفلى عليها أسست الدركات ، وأساس الخلق آدم وأساس الأنبياء نوح وأساس بني إسرائيل يعقوب وأساس الكتب القرآن وأساس القرآن الفاتحة وأساس الفاتحة بسم الله الرحمن الرحيم فإذا اعتللت أو اشتكيت فعليك بالفاتحة تشفى.
প্রত্যেক বস্তুর একটি ভিত্তি রয়েছে। দুনিয়ার ভিত্তি মক্কা কেননা তার থেকে পৃথিবীকে বিছানো হয়েছে। আকাশ সমূহের ভিত্তি হল অপিরিচিত বিষয় আর সেটি হল সপ্তম আকাশ। যমীনের ভিত্তি অভিনব বিষয় আর সেটি হল সর্বনি¤œস্তরের যমীন। জান্নাতের ভিত্তি হল জান্নাতে আদন। এ জান্নাত জান্নাত সমূহের মূল যার উপর ভিত্তি করে অন্যান্য জান্নাত তৈরী করেছেন। দোযখের ভিত্তি হল জাহান্নাম যা সর্বনি¤œ গর্ত। যার উপর ভিত্তি করেই গর্ত সমূহ সৃষ্টি করা হয়েছে। সৃষ্টির ভিত্তি আদম আলাইহিস সালাম, নবীগণের ভিত্তি নূহ আলাইহিস সালাম, বনী ঈসরাইলের ভিত্তি ইয়াকুব আলাইহিস সালাম। সকল ঐশী গ্রন্থের ভিত্তি আল কুরআন। কুরআনের ভিত্তি সূরা আল ফাতেহা। সূরা আল ফাতেহার ভিত্তি ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’। যদি তুমি অসুস্থ হয়ে পড় অথবা কোন অসুবিধা দেখা দেয় তোমাকে এ ভিত্তির আমল করতে হবে। আল্লাহর মেহেরবাণীতে তুমি আরোগ্য লাভ করবে। (কুরতবী-১/১১৩, কাশফুল আসরার-১/৯)
আল কুরআনে الرحمن শব্দটির মাধ্যমে করুণাময়ের অসীম করুণার কথা বার বার বলা হয়েছে। যেমন হযরত হারুণ আলাইহিস সালামের ভাষায়-
إِنَّ رَبَّكُمُ الرَّحْمَنُ فَاتَّبِعُونِي وَأَطِيعُوا أَمْرِي [طه : ৯০
“তোমাদের রব করুণাময়, তাই আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মান্য কর।” (ত্বহা-৯০)
রহমানের স্মরণ ভুলে গেলে পরিণতি কি হয় এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ - وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّونَهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ مُهْتَدُونَ [الزخرف : ৩৬ ، ৩৭[
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয় আমি তার জন্য নিয়োজিত করি এক শয়তান। অতঃপর সেই হয় তার সহচর। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে। অথচ মানুষ মনে করে তারা সৎপথেই পরিচালিত হচ্ছে। (সূরা যুখরুফ- ৩৬, ৩৭)
বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর যে দয়া-মায়া ও মহব্বত তা উপলব্ধিতে আনাই হবে তাঁর হক আদায়ের একটি দিক। সৃষ্টির পরতে পরতে দয়াময়ের অসীম দয়া বিদ্যমান। যিনি জীবন দিয়েছেন এটা তাঁর দয়া, চোখ-কান-নাক-জিহ্বা-বিবেক-বুদ্ধি সবই তাঁর দান। তাঁর নামেই ইহজগত আনন্দিত। আল্লামা রশীদুদ্দীন মেইবদী রহমতুল্লাহে আলাইহি বলেন-
ما طابت الدنيا الا باسمه و ما طابت العقبى الا بعفوه و ما طابت الجنة الا برؤيته-
‘এ জগতের সকল আনন্দ তাঁরই নামে, পরকালের সুখ তাঁর ক্ষমাতেই রয়েছে, আর জান্নাতের আনন্দ তাঁর দিদারেই রয়েছে।’ (কাশফুল আসরার-১/২৭)
তাঁর নামের যিকির করার তওফীক, তাঁর ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন এবং দয়াময় রহমানের দিদার আল্লাহ আমাদের নসীব করুন। আমীন। বি ওয়াসিলাতী রাহমাতাল্লীল আ’লামীন।
পবিত্র আশুরার মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব
মাওলানা মামুনুর রশীদ আল-কাদেরী আল আযহারী
আশুরার নামকরণ: অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামগনের মতে-আশুরা হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে যেহেতু মুহাররমের দশ দিনের মধ্যে। অথবা এ উম্মাতকে আল্লাহ তায়ালা দশটি সম্মানে সম্মানিত করেছেন যথা: ১. রজব মাস ইহা আল্লাহর মাস ২. শা’বান ইহা নবীপাকের মাস। ৩. রমজান, ইহা উম্মাতে মুহাম্মাদীর গুনাহ মোচনের মাস। ৪. শবে ক্বদর ইহা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ৫. রমজানের ঈদের দিন, ইহা প্রতিদান বিশেষ দিন ৬. মুুহররমের প্রথম দশ দিন ইহা আল্লাহর যিকরের বিশেষ দিন ৭. আরাফার দিন এই দিনটি বান্দার গুনাহের কাফ্ফারার দিন ৮. কুরবানীর দিন ৯. জুমআ’র দিন এটি সকল দিনের সর্দার। ১০. আশুরার দিন। আবার কারো মতে- আশুরা বলা হয়েছে দশজন নবীকে এই দিনে দশটি নিয়ামাত দানে ধন্য করা হয়েছে।
আশুরার মর্যাদা প্রসঙ্গ:
আল্লাহ তাযালা কুরআনে কারীমে এরশাদ করেছেন- ان عدة الشهور عند الله اثنا عشر شهرا في كتاب الله---- منها اربعة حرم (التوبة৩৬) অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারটি যা আল্লাহর কিতাবে বর্ণিত তন্মধ্যে চারটি হারাম মাস। ১. রজব ২. জিলক্বদ ৩. জিলহাজ্ব ৪. মুহাররম, আর আশুরা মহররম শরীফেরই দশ তারিখ। এ চারটি মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ, কলহ-কোন্দল করা অবৈধ। হারাম অর্থ অবৈধ বা সম্মানিত; মূলত এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ অবৈধ করে এ মাসগুলোকে সম্মানিত করা হয়েছে।
সাহাবীগণ আরজ করলেন ওগো আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তায়ালা কি যে কোন দিনের অপেক্ষা আশুরার দিনকে অধিক মর্যাদা দান করেছেন? নবী পাক বলেছেন: হ্যাঁ আসমান-জমীনে, পাহাড়- পর্বত, সমুদ্র, লাওহ-কলম, এই দিনে সৃষ্টি করেছে। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-কে সৃষ্টি করেছেন তাঁকে জান্নাতে স্থান দিয়েছেন, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহণ করেছেন, তাঁকে আশুরার দিনে তাঁকে আগুন থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেন, এবং তাঁ প্রিয় সন্তান ইসমাইলকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করলেন, আশুরার দিনে ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মারলেন, আশুরার দিনে হযরত আইয়্যুব আলাইহিস সালামকে রোগ থেকে মুক্ত করেন। আশুরার দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর তাওবা কবুল করেছেন। আলাহ তায়ালা দাউদ আলাইহিস সালাম এর তাওবা কবুল করেছেন, আশুরার দিনে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহণ করেছেন, আর অবশেষে আশুরার দিন কিয়ামাত সংঘটিত হবে।
আশুরার ইবাদাতের ফজিলত ও গুরুত্ব:
আশুরার ইবাদাতের অনেক ফজিলত ও গুরুত্ব রয়েছে- *আবু নসর সনদ পরস্পরায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- মান সামা ইয়াওমান মিনাল মুহাররমি ফালাহু বি-কুল্লি ইয়াওমিন ছালাছুনা ইয়ওমান অর্থাৎ মহাররম মাসে কেউ যদি একটি রোজা রাখে তবে প্রতিটি রোজার বিনিময় ত্রিশটি রোজার সাওয়াব তার জন্য থাকবে। (তাবারানী শরীফ ১১/৭২) *হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন- নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিন রোজা রেখেছেন এবং রোজা রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হযরাতে সাহাবায়ে কিরামগণ আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহুদী ও নাসারাদের সম্মানের ন্যায় হয়ে যাবেনা? রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন আগামী বছর আসলে আল্লাহ চাহেতু মুহররমের নয় তারিখেও রোযা রাখব, অথচ পরবর্তী বছরের বছর আসা পর্যন্ত তিনি ইন্তেকাল করেন। [মুসলিম শরীফ, রোজার অধ্যায়, ১৩৩, আবু দাউদ শরীফ রোজার অধ্যায় ৬৪।]
হযরত মাইমুনার সুত্রে হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত: তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন কোন ব্যক্তি যদি মুহাররমের দশটি রোজা রাখে, তবে তাকে দশ হাজার ফেরেস্তার ইবাদতেরসম পরিমান সাওয়াব দেয়া হয়, তাছাড়া দশ হাজার হাজী ও ওমরাকারীর ন্যায় তাকে পূণ্য দেয়া হয়। যদি কোন ব্যক্তি আশুরার দিন কোন ইয়াতিমের মাথায় স্নেহের হাত রাখেন, উক্ত বালকের মাথার চুল পরিমান জান্নাতে কক্ষ প্রদান করা হবে। আশুরার রাতে কোন মুমিন ব্যক্তিকে তৃপ্তি সহকারে আহার করালে সে যেন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামর সকল উম্মাতকে তৃপ্তি সহকারে আহার করাল। বুখারীর অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় যখন আগম করলেন, তখন ইয়াহুদীরকে রোজা অবস্থায় পেলেন। তিনি তাদেরকে বললেন এটা কোন দিন যে দিনে তোমরা রোজা রাখছ? তারা বলল এই দিনে আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন এবং মুসা আলাইহিস সালামকে তার কবল থেকে মুক্ত করেছেন তাই আমরা এই দিনের সম্মানে রোজা রাখছি। রাসূলুল্লাহ বলেছেন- আমরা তোমাদের চেয়ে মুসা আলাইহিস সালামের প্রতি বেশি হক্বদার। তাই আমরা এই দিনেও রোজা রাখব আগামী বছর পর্যন্ত থাকলে নয় তারিখও রোজা রাখব। উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমানিত হল যে আশুরার রোজা কমপক্ষে দু’টা রাখতে হবে। একটি ৯ তারিখ, যা ইয়াহুদীদের আমলের খেলাফ করার জন্য আর ১০ তারিখ আশুরার রোজা।
কারবালা প্রসঙ্গ ও বাতিলদের আপত্তির জবাব:
আশুরার দিনে বিশেষ করে কারবালায় নবী পাকের পবিত্র নূরানী সন্তান মা ফাতেমার কলিজার টুকরা হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর আওলাদগনের হৃদয় বিদারক ঘটনা। যা আশুরার আনন্দমঘন দিনটিতে সত্যিকারের মুসলমানের হৃদয়পট নাড়া দিয়ে উঠে। আর আশেকের অশ্র“ সিক্ত হয়, কারণ এটি কোন বিধর্মী দ্বারা ঘটেনি ঘটেছে এক শ্রেনীর লেবাসধারী মুসলমানদের দ্বারা। যা মেনে নেয়া যায়না। যদিও বা শাহাদাতের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন তারপরও এই করুণ, বর্বর, নিষ্ঠুরতার সীমালঙ্গিত। আর যে উক্ত শাহাদাত নিয়ে কোন বিদ্রƒপ মন্তব্য করবে সেতো তাদেরই দলভুক্ত। হযরত ইমাম আহমাদ কুস্তালানী (রহ.) বলেন- মুহাররম আসলে যার হৃদয় কাঁেদনা সে নিশ্চয় মুনাফিক জানিও। সবযুগে সব ইমামগন ইয়াজিদ ও তার দোষরদের প্রশংসা করেননি বরং অনেকে তাকে কাফিরও, দুষ্ট, লম্পট, দুরাচার বলে মন্তব্য করেছেন। যেমন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাদ্বি.) এক প্রশ্নের জবাবে বলেছে- ইয়াজিদ ছিল কাফের। কারণ সে পবিত্র হারামাইনের পবিত্রতা নষ্ট করেছে, মদপান জায়েজ করেছে। অন্য এ বর্ণনায় রয়েছে- কেই ইয়াজিদ সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে সেকি ইয়াজিদকে ভাল বলতে পারে? একটি রেফারেন্সও দেখাতে পারবেনা যেটিতে কোন হক্বপন্থী ইমামগন তার প্রশংসা করেছেন। বরং ৭০০ হিজরীতে ইবনে তাইমিয়া তাকে মাগফুর বা ক্ষমা প্রাপ্ত বলে দাবী করে যে, কুসতানতানিয়ার যুদ্ধে ইয়াজিদ অংশগ্রহণ করেছে আর নবী পাক বলেছেন ঐ যুদ্ধে যারা অংশ নিবে তাদের জন্য ক্ষমা ও জান্নাত। অথচ ইবনে তাইমিয়ার অনেক বক্তব্য সরাসরি হাদীস, কুরআনের খেলাফ, এমনকি নবী ও তার আউলাদের ক্ষেত্রে অনেক বিয়াদুবী রয়েছ্ েকি করে তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে? ইবনে তাইমিয়ার এই রেফারেন্সের সূত্রধরে অনেক নামধারী গবেষক ইয়াজিদ ক্ষমা প্রাপ্ত এবং তার সমালোচনা করা যাবেনা বলেছেন তাদের মাঝে সম্প্রতি ওসমানগনি সালেহী, ডা. যাকির নায়ক সহ অনেকে। অথচ কুসতুনতানিয়ার যুদ্ধে ইয়াজিদ অংশগ্রহণ করে নাই এটিই নির্ভযোগ্য মত। এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে ইমাম আহমাদ কুস্তালানী (রা.) বুখারীর শরাহ “এরশাদুস সারী ফি শরহিল বুখারী”তে উক্ত হাদীসের বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করে সাব্যস্ত করছেন যে ঐ যুদ্ধে ইয়াজিদ অংশ গ্রহণ করে নাই বরং তার রাজত্বের পূর্বেই উক্ত যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। বরং ঐ যুদ্ধে তার পিতা হযরত মুয়াবিয়া (রাদ্বি.) অংশ গ্রহণ করেন। আর ইমাম হুসাঈন (রাদ্বি.) ও তাঁর আওলাদগণকে হত্যা করা রাসূলুল্লাহর জন্য কষ্টের বিষয় নয়কি? তাহলে কুরআন শরীফের হুকুকের নিকট কোন উক্তি খাটবে না-ان الذين يؤذون الله و رسوله لعنهم الله في الدنيا و الاخرة (الاحزاب) অর্থাৎ নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও রাসূলকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া-আখেরাতে তাদের উপর আল্লাহর লা’নত। তাই বলব ইমাম হুসাঈন কে নির্যাতন করে হত্যা করবে আর আল্লাহর রাসূলের জন্য খুশীর বিষয় এ কেমন কথা? তাই যে কেউ ইমাম হুসাইনকে নিয়ে বিদ্রƒপ করবে আয়াতের হুকুম অনুযায়ী দুনিয়া-আখেরাতে তাদের উপর আল্লাহর লা’নত। আল্লাহ তায়ালা এ সমস্ত ফিতনাবাজ লোকদের হতে ঈমান আমল বাচিয়ে রাখুন।
উক্ত রাতের বিশেষ আমল: ১০০ রাকাত ‘সালাতুল খায়ের’ নামায প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ইখলাস ‘(ক্বুলহুয়াল্লাহু আহাদ)’ ১০ বার করে দু’ রাকাত করে পড়বে। এ নামায জামাআ’তের সহিত আদায় করলে বেশি সাওয়াব পাওয়া যাবে। হুজুর গাউছে পাক (রাদ্বি.) গুনিয়াতুত্বালেবীনে শবে বারা’তের অধ্যায়ে বর্ণনা করেন যে উক্ত সালাতুল খায়ের নামায জামাতে পড়ার জন্য বছরে ১৪ রাতে একত্রিত হতেন এর মধ্যে আশুরার রজনী উল্লেখযোগ্য।
হুজুর গাউছে পাক (রাদ্বি.) গুনিয়াতুত্বালেবীনে রজব ও শবে বারা’তের অধ্যায়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন এবং হযরত হাসান বছরী (রাদ্বি.) হতে ৭০ জন সাহাবীর বরাত দিয়ে হাদীস শরীফ খানা বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি উক্ত রাতে এ নামায আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তির প্রতি ৭০ টি রহমাতের নজর দিবেন, প্রত্যেক নজরে দুনিয়া আখেরাতের ৭০টি হাজত পূর্ণ হবে, আর সর্বনিম্ম যে হাজতটি পূর্ণ করেন তা হলো ক্ষমা।
বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম
সত্যের সন্ধানে “শানে মহিউদ্দীন” যুগান্তরকারী অভিযান
মুফতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রব আল্ ক্বাদেরী
খতীব-হযরত মাদ্দা খাঁ (রহ.) জামে মসজিদ, আলীগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি রাহমানুর রাহীম ও গাফুরুর রাহীম এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম তাঁর প্রিয় নবী ও রাসূল হাবীবে খোদা রাহমাতুল্লিল আলামীনের নূরানী পাক ক্বদম মোবারকে, এছাড়া তাঁর পবিত্র নুরানী আওলাদ ও সাহাবায়ে কিরামগণের উপর। তাঁর মর্যাদা এতই ব্যপক যে, তা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেহই জানেন না। যার আদর্শ বিশ্বজনীন মানবতার ইহ-পরকালীন কল্যানের উৎস যা পরবর্তীকালে আল-কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস অনুসৃত ইসলামের সঠিক রূপরেখার একমাত্র নাম “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত”-তথা নাজী জান্নাতী দল। সেজন্য প্রতিটি মুসলমান সেই সঠিক দলের মতাদর্শ অনুসরন না করলে পরকালে আল্লাহর অনুগ্রহ হতে মাহরূম হতে হবে। এ বিষয়ে সঠিক দিক নির্দেশনার জন্য কুমিল্লা শাহপুর দরবার শরীফের গদিনাশীন পীরে কামেল শাহসুফি প্রফেসর মুহাম্মদ পিয়ারা আল্ ক্বাদেরী (মুদ্দাজিল্লুহুল আলী) ’র পরোক্ষ তত্বাবধানে গাজীপুরী ক্বাদেরীয়া সংগঠন, কুমিল্লা কর্তৃক মাসিক “শানে মহিউদ্দিন” প্রকাশিত হয়ে আসছে যা নিয়মিত পাঠে ইসলামের সঠিক ধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআ’তের মতাদর্শ জেনে নিজেকে ঈমানে-আমলে পরিপক্ষ করে পরকালীন মুক্তি প্রাপ্ত দলে অর্ন্তভুক্ত করা সম্ভব। মানুষ আসল সত্য জানতে পারলে কখনও মিথ্যার পেছনে ছুটবেনা, আমাদের মধ্যে এ বিষয়টির খুবই অভাব; প্রচারে প্রসার তথা প্রচার মাধ্যমের চরম উৎকর্ষ্যরে যুগে যদি আমরা সর্বস্তরের মুসলমানদের নিকট হক্ব বা সত্য পৌছে দিতে না পারি বা এর লক্ষে পরিকল্পনা গ্রহণ না করি তবে এর চেয়ে দূর্ভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে? আসলে এ দেশে যারা অলী-আউলিয়া, পীর-মাশায়েখ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে আশ্রয় নিয়েছিল, তারাতো সুন্নীই ছিল। পরবর্তীকালে ইসলামের নামে নানা ভ্রান্ত মতবাদের আর্বিভাবে সরল প্রাণ মুসলমানগন বাতিলের খপ্পরে পড়ে। বিভিন্ন বাতিল মতবাদ প্রচার-প্রসারের পিছনে যে, বহুমূখী কর্মকান্ড কার্যকর করেছিল, সে অনুপাতে ভ্রান্তি মোকাবেলায় সময়োচিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে অতীত সর্ম্পকেও ধারণা লাভ করা যায়, বাংলাদেশের অনেক এলাকার মুসলমানরা নিজেদের আসল পরিচয় জানে না। তারা যে আউলিয়া কিরাম তথা হযরত শাহ্জালাল (রহ.) হযরত শাহ আব্দুল্লাহ গাজীপুরী (রহ.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার অনুসারী এ কথাও ভুলে গেছে। আজকে মিলাদ-ক্বিয়ামকে যারা জগন্যতম বিদআ’ত বলে বিশ্বাস করে, অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে তাদের পূর্ব-পুরুষরা মিলাদ-ক্বিয়াম, ফাতেহা, নযর-নেয়াজ, উরস পালন করত। যখন সরল প্রাণ মুসলমানকে এ সব বিষয়ে ভুল বুঝানো হচ্ছিল তখন তার সফল মোকাবেলা করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। পাশাপাশি কোন ভ্রান্ত মতবাদ সর্ম্পকে ধারণা দিতে বেশ সময়ের ব্যপার ছিল আর এর ফাঁকে ভ্রান্তির জালে জাতী অবরূদ্ধ হয়ে শতধা বিভক্ত। অপর দিকে হক্ব পন্থীরা প্রথম দিকে অতটা গুরুত্ব না দিয়ে উদাসিনতার মধ্যে ডুবে থাকল। এর ফলে তারা তাদের মূল টার্গেটে পৌছে গেল। যেমন:- খারেজী -ওহাবী মতবাদ, এ ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠার পেছনে বহুমূখী অঙ্গ-সংগঠন সারা বিশ্বে একযোগে কাজ করছে। যেমন, মওদুদী, নব্য সালাফী যারা আহলে হাদীস দাবীদার, ভন্ডনবী দাবীদার ইলিয়াস ছয় উসূলি তাবলীগ-ক্বাওমী-হেফাজতী (এদের সংক্ষিপ্ত নাম বিদআ’তী) এদের বাতিল খপ্পরে থেকে বাঁচতে হলে “শানে মহিউদ্দিন”সহ সুন্নীয়তের মুখপত্র সমূহ নিয়মিত অধ্যয়ন করে ইমান- আমল তাজা করতে হবে। পাশাপাশি যেহেতু প্রত্যেক সুন্নী মুসলমানকে বিশেষত: সুন্নী ওলামা-মাশায়েখ, পীর-বুযুর্গ, শিক্ষাবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী সবাইকে সুন্নীয়তের ব্যপক প্রচার-প্রসারের লক্ষে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করতে হবে। আর সম্মিলিতভাবে কোন কাজ করলে কোন দিন তা অসাধ্য হয়না। তার বহু নযীর বিদ্যমান। সকল পীর- মাশায়েখ সুন্নী মতাদর্শের অনুসারী এ হিসাবে তাঁদের দরবার গুলো এক একটি সুন্নীয়তের প্রাণ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠা প্রয়োজন। দেশবাসী সংখ্যার দিক থেকে সুন্নী মুসলমানের সংখ্যা এখনো অনেক বেশি। সমন্বয়হীনতার কারনে জনসম্মুখ্যে প্রকাশ হচ্ছেনা। তাই শুধু ঐক্যের কথা বলে লাভ নেই আসুন যে সব আক্বিদা বিশ্বাসের সাথে ঐক্যমত্য পোষনকারীদেরকে সুন্নী হিসাবে গন্য করা হবে সে বিষয়ে একাত্বতা পোষন করি ও বিরোধীদেরকে বর্জন করি।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআ’তের শুদ্ধ আক্বীদা বনাম বিদআ’তীদের কুফরি ও বাতিল আক্বীদা
১. মহান আল্লাহ তায়ালা চিরন্তন সকল উত্তম গুনাবলীর অধিকারী; তিনি সর্বপ্রকার দোষ-ক্রটি থেকে পবিত্র। (অন্যদিকে দেওবন্দী আক্বীদা- আল্লাহ তায়ালা মিথ্যা বলতে পারেন (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। যারা এ কথা বলতে পারেন তারা কি করে সুন্নী হতে পারে? বরং তারা মুসলমানও না।
২. সকল নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালামগন মাসুম (নিস্পাপ)। অন্যদিকে দেওবন্দী আক্বীদা নবী-রাসূলগন কোন কোন সময় গুনাহ করেছেন বা আল্লাহ তায়ালা তাদের থেকে হিফাজতের পর্দা নিয়ে তাদেরকে বান্দা প্রমান করার জন্য দু’ একটি গুনাহ করাইয়াছেন (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। যারা এ কথা বলতে পারেন তারা কি করে সুন্নী হতে পারে? নি:সন্দেহে এরা বাতিল।
৩. নবী পাক সর্বশ্রেষ্ট এবং সর্বশেষ নবী অতএব যারা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে নেতিবাচক ধারনা করে আর বলে; নবী আমাদের মত মানুষ। বলকে একজন বড় ভাইয়ের সম্মান পাওয়ার যোগ্য। এবং তাঁর পরে কোন নবী আসলে তাঁর খাতামিয়্যাতের (শেষ নবী হওয়ার) কোন অসুবিধা হবেনা। যারা এসমস্ত আাক্বীদা পোষন করছে তারা নি:সন্দেহে কাফের অথচ তারা একশ্রেণীর লোকদের নিকট বড়বড় মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক। সাম্প্রতিক একটি ঘটঁনা- জাকির নায়ক তার এক লেকচারে বলেছে- নবী হওয়া আল্লাহর ইচ্ছাধীন কিন্তু কেউ নবী হতে চাওয়া দোষের কিছু নেই!! আপসোস! বর্তমানে না বুঝে অনেক লোক তাকে মানছে।
৪. নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের সৃস্টি আর মাটির সৃস্টি যারা বলে তারা সুন্নী নয়।
৫. নবী পাক শাফায়াতের অধিকারী, তাঁর শাফায়াতের মাধ্যমে হাশরের ময়দানে বিচার কার্য শুরু করা হবে, যারা এ আক্বীদার বিপরীত আক্বীদা পোষন করে তারা সুন্নী নয়।
৬. সকল নবী-রাসূল জীবিত (ইহা তাদের মু’জিজাহ), শুহাদা অলীগন জীবিত (ইহা তাদের কারামাত)। যারা তাদেরকে মৃত বলবে তারা সুন্নী নয়।
৭. হাজির-নাযীর অর্থাৎ নবী পাক বর্তমান উম্মাতের সকল প্রকার অবস্থা অবলোকনে স¤পূর্ণ সক্ষম তার নিকট উম্মাতের অবস্থা গোপন নয়। এবং তিনি কোন সময় যে কোন স্থানে উপস্থিত হতে পারেন। এটা যারা মানে না তারা সুন্নী নয়।
৮. সাহাবায়ে কিরাম সত্যের মান-দন্ড যারা এটা মানে না তারা সুন্নী নয়।
৯. নবী-রাসূলগনের পরে শ্রেষ্ঠ উম্মাত হযরত আবু বাকার, হযরত উমার ফারুক, হযরত উসমান. হযরত আলী, বদরী সাহাবাগন, উহুদী সাহাবাগন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈনগন।
১০. নবী পাকের ইলমে গায়েব আছে; যা প্রদত্ত। এটা যারা মানেনা তারা সুন্নী নয়।
১১. নবী-রাসূল, আউলিয়াগন আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ইন্তেকাল পূর্ববর্তী-পরবর্তী সময়ে সাহায্যকারী এবং তাদের হতে প্রদত্ত ক্ষমতা চাওয়া জায়েজ।
১২. নবী পাকের আওলাদ এবং সাহাবায়ে কিরামকে ভালবাসা, শ্রদ্ধা-ভক্তি করা ঈমানের পরিচায়ক। আর যারা এগুলোর বিপরীত আচরন দেখাবে তারা এ উম্মাতের মুনাফিক্ব। হাদীসে পাকে তারা খারেজী বিদআ’তী নামে পরিচিত।
১৩. চার মাজহাবের যে কোন একটি অনুসরন করা অবশ্যই ওয়াজিব এটাকে ‘তাক্বলীদ’ বলে। যারা এটা মানেনা তারা সুন্নী নয়; নি:সন্দেহে বাতিল।
১৪. ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, জশনে-জুলুস, ক্বিয়াম, উরুস, ফাতেহা, নযর-নেয়াজ, দুরবর্তী স্থানে গিয়ে মাযার যিয়ারত, জাণজার নামাযের পর হাত তুলে দোআ; করা, শবে বারাত, শবে মি’রাজ, আশুরা পালন, কারবালার স্মরনে আলোচনা মুহব্বাত ও ঈমানের আলামাত, (তাজিয়া-মরচিয়া করা নিষিদ্ধ), নামাযের পর হাত তুলে দোআ’ করা, আজানের আগে এবং মুনাজাতের আগে দূরূদ-সালাম পড়ে হাত তুলে দোআ’ করা নি:সন্দেহে কুরআন, হাদীস ইজমা, কিয়াস সম্মত;যারা এগুলো মানে তারা সুন্নী। আর যারা এগুলোর বিপরীত তারা বাতিল, ফাসিক্ব, বিদআ’তী।
১৫. আউলিয়া কিরামগনের বিলায়াত স্বীকৃতি দেয়া। যারা এটা মানে না তারা বিদআ’তী বাতিল।
আসুন সকল মুসলমানগন কুরআন, হাদীস, ইজমা, ক্বিয়াস, সম্মত উল্লেখিত আক্বীদা পোষন করে মুসলিম ঐক্য গঠন করে বাতিল ও অমুসলিম হায়নাদের হাত থেকে মুক্তি লাভ করে দেশ ও জাতীয় সমৃদ্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করি। অপরদিকে যারা ইসলামের লিবাসে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী কার্যকলাপেলিপ্ত তারা ইয়াহুদীদের ডলার ভোগী পোষ্য গোলাম। এরা যেকোন দেশ-জাতীর দুশমন। তাই আমরা আউলিয়া কিরামের পথে-মতে উজ্জিবিত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের আদর্শে ঐক্যবদ্ব হই। বি-হুরমাতি সাইয়্যেদিল মুরসালীন। আমীন।।
হযরত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুমহান চরিত্র ও অনুপম আদর্শ
শাইখুল হাদীস আল্লামা আল্হাজ্ব শাহ মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান মুজাদ্দেদী
পীর সাহেব নয়াকান্দী দরবার শরীফ, হোমনা, কুমিল্লা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র ও আদর্শ ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক সংরক্ষিত। তাই তাঁর চরিত্র ছিল নিরংকুশ, নিঃসন্দেহে ক্রটিমুক্ত, সুমহান ও সর্বশ্রেষ্ঠ। জাতী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য নির্দ্বিধায় গ্রহণযোগ্য আদর্শ। তাঁর চরিত্র ও আদর্শরে ব্যাপারে কারো মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ থাকলেও সে যতই আমলধারী হোক না কেন, দাঁিড়, টুপি ও লেবাসে যতই সুন্নাতের পাবন্দী হোক না কেন, সে কিছুতেই ঈমানদার নয়। তার আমল, লেবাস কোন কাজেই আসবেনা বরং সবই বরবাদ হয়ে যাবে। তাই কবির ভাষায়-
“ইশক্বে মাহবুবে খোদা জিস দেলমে হাছেল নেহি
লাখো মুমিনহো মগার ইমান মে কামেল নেহি”
‘নবীজীর প্রেম ভালবাসা যার অন্তরে নেই, সে লাখো বার মুমিন হলেও ঈমানের দিক থেকে পরিপূর্ন নয়’। প্রিয় নবীজীর চরিত্রের সার্টিফিকেট দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে হাকীমে এরশাদ ফরমান-وانك لعلي خلق عظيم (ওয়া ইন্নাকা লা-আলা খুলুক্বিন আ’জীম) অর্থাৎ আর নিশ্চয়ই আপনি সর্বোত্তম ও সুমহান চরিত্রের অধিকারী। আর তাঁর চরিত্র ও আদর্শ নির্দ্বিধায়, নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য। তিনি ছাড়া আর অন্য কেহ এ মহান চরিত্র আদর্শের অধিকারী হতে পারেনি। তাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর চরিত্রের গ্রহণযোগ্যতার প্রমান স্বরূপ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- ‘ لقد كان لكم في رسول الله أسوة حسنة (লা-ক্বাদ কানা লাকুম ফি রাসূলিল্লাহি উসওয়াতুন হাসানাতুন) নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য উত্তম আদর্শ’। সকল সৃষ্টির প্রতি তাঁর দয়া ও মমত্ববোধের দরুন তাঁকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ লক্ববে ভুষিত করে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- وما أرسلناك الا رحمة للعالمين (ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আ’লামীন) হে নবী! আমি আপনাকে সমস্ত জগতের জন্য একমাত্র করুনার আধাঁর হিসাবে প্রেরণ করেছি। প্রিয় নবী হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোটা জীবনটাই সকলের জন্য নিরংকুশ ও ক্রুটিহীনভাবে গ্রহণযোগ্য আদর্শ। তিনি হচ্ছেন সর্বকালের মহা মানব। অমুসলিম, চির ইসলাম বিদ্ধেষী দার্শনিক, পন্ডিত, সাহিত্যিক, কবি, রাজনীতিবিদ, সকলেই এক বাক্যে এ কথা অকপটে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এর একটি দৃষ্টান্ত নিম্নে প্রদত্ত্ব হলো-
স্বভাতই মাইকেল হার্টের ন্যায় একজন নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক ও হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বৈচিত্রময় গুনাবলীতে ভুয়সী প্রশংসা করে তাঁকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ব্যক্তিরূপে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। ঞযব ঐঁহফৎবফ – “সু পযড়রপব ড়ভ সড়যধসসধফ (ং) ঃড় ষবধফ ঃযব ষরংঃ ড়ভ ঃযব ড়িৎষফ’ং সড়ংঃ রহভষঁবহঃরধষ ঢ়বৎংরড়হং সধু ংঁৎঢ়ৎরংব ংড়সব ৎবধফবৎং ধহফ সধু নব য়ঁবংঃরড়হবফ নু ড়ঃযবৎং নঁঃ যব ধিং ঃযব ড়হষু সধহ রহ যরংঃড়ৎু যিড় ধিং ংঁড়ৎবসবষু ংঁপপবংংভঁষ ড়হ নড়ঃয ঃযব ৎবষরমরড়ঁং ধহফ ংবপঁষধৎ ষবাবষং.” পৃথিবীর ইতিহাসে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের তালিকায় শীর্ষদেশে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্থাপনে আমার সিদ্ধান্ত বহু পাঠককে বিস্মিত করতে পারে এবং অনেকের নিকট তা প্রশ্নাতীত হতে পারে। কিন্ত ইাতহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় ও বৈষয়িক উভয় পর্যায়েই চরমভাবে সফলকাম ছিলেন। ধর্ম বৈষয়িক বিষয়ের এই অভুতপূর্ব ও নজীরবহীন সংমশ্রণেই তাঁেক ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ব্যক্তিরূপে পরিচিত করে।”
ইনসাইক্লোপেডিয়া অব ব্রিটানিয়ায় বলা হয়েছে- ড়ভ ধষষ ৎবষরমরড়ঁং ঢ়বৎংড়হধষরঃরবং ড়ভ ঃযব ড়িৎষফ, সড়যধসসধফ (ং) ধিং ঃযব সড়ং ংঁপপবংংভঁষ’ পৃথিবীর সমগ্র ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের মধ্যে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সর্বাধিক সফলতা লাভ করেন।” বস্তুত বিশ্ব মনীষার শ্রীবৃদ্ধি ও উৎকর্ষ সাধনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবদান অনস্বীকার্য। এ বিষয়ে মনীষী আলফ্রেড দ্যা লামার্টিন-এর অমর উক্তি প্রণিধাযোগ্য-
ঢ়যরষড়ংড়ঢ়বৎ, ড়ৎধঃড়ৎ, ধঢ়ড়ংঃষব, ষবমরংষধঃড়ৎ, ধিৎৎরড়ৎ, পড়হয়ঁবৎড়ৎ ড়ভ রফবধং, ৎবংঃড়বৎ ড়ভ ৎধঃরড়হধষ ফড়মসধং, ড়ভ ধ পঁষঃ রিঃযড়ঁঃ রসধমব ঃযব ভড়ঁহফবৎ ড়ভ ঃবিহঃু ঃবৎৎবংঃৎরধষ বসঢ়রৎবং ধহফ ড়ভ ড়হব ংঢ়রৎরঃঁধষ বসঢ়রৎব, ঃযধঃ রং সঁযধসসধফ (ং) ধং ৎবমধৎফং ধষষ ংঃধহফধৎফং নু যিরপয যঁসধহ মৎবধঃহবংং সধু নব সবধংঁৎবফ, বি সধু বিষষ ধংশ, রং ঃযবৎব ধহু সধহ মৎবধঃবৎ ঃযবহ যব? দার্শনিক, বাগ্নী, ধর্ম প্রবর্তক, আইন প্রণেতা, মতবাদ বিজয়ী ধর্মমতের এবং প্রতিমাবিহীন উপাসনা পদ্ধতির পুন:সংস্থাপক, বিশটি পার্থিব সাম্রাজ্যের এবং একটি ধর্ম-সাম্রাজ্যের সংস্থাপক কর্তা এ দেখ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে সমস্ত মাপকাটির দ্বারা মানবী মহত্ত্ব পরিমাপ করা হয়ে থাকে, সে গুলোর প্রত্যেকটির আলোকে তাঁকে বিবেচনা করা হলে, আমরা এ কথা সহজেই জানতে পারি, কোন মানব কি তাহা অপেক্ষা মহত্তর? (চলবে)
গত সংখ্যার সংশোধনী
ভুল: اذا صلي أحدكم علي الميت যদি তোমাদের কেহ কোন মৃত ব্যক্তির উপর জানাযার নামায পড়ে।
শুদ্ধ: জানাযা নামাযের পর দোআ’ করার জন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে নির্দেশ দিয়েছেনعن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم اذا صليتم الجنازة علي الميت فاخلصوا له بالدعاء (أبوداؤد - مشكاة
হজরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা যখন কোন মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পড়বে তখন তার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া’ করবে। (আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ ১খন্ড, ১৪৬ পৃষ্ঠা, অধ্যায়, জানাযার লাশ নিয়ে চলা ও জানাজার নামায।) উক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা স্পস্টত প্রমানিত যে, জানাযার পর মোনাযাত করার নির্দেশ রয়েছে। বিনা কারনে আসল অর্থ পরিবর্তন করা বা রূপক অর্থ গ্রহণ করা নাজায়েজ।
আশ্শিফা বি-তা’রীফি হুকুক্বিল মুস্তফা
(মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যাবতীয় অধিকারের পরিচয় সম্বলিত সমাধান)
মুল: ইমাম ক্বাযী আয়ায আল মালেকী (রাহমাতুল্লাহি তায়া’লা আলাইহি)
অনুবাদ: মুহাম্মাদ মামুনুর রশীদ আল্ ক্বাদেরী আল্ আযহারী
(পূর্বে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে)
অথচ তিনি (আল্লাহ তায়া’লা) তাঁর প্রশংসা হতে অংশ হিসাবে رؤف ورحيم (রাউফ-রাহীম) প্রশংসা মালা দ্বারা আবৃত করেছেন। এবং তাকে সৃষ্টির নিকট একজন সত্যবাদী দূত হিসাবে প্রেরন করেছেন। وجعل طاعته طاعته (ওয়া জাআ’লা ত্বাআতাহু ত্বআতাহ) অর্থাৎ তাঁর নবী পাকের) অনূসরনই তারঁই (আল্লাহ তায়ালার) অনুসরন। নবীপাকের সিদ্বান্তই তার সিদ্বান্ত কওে দিয়েছেন। من يطع الرسول فقد أطاع الله (মায়্যুত্বি উররাসূলা ফাক্বাদ আত্বাআল্লাহ) অর্থাৎ যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এর অনুসরন করল (প্রকৃতপক্ষে) তিনি আল্লাহ তায়া’লার অনুসরন করল। আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেছেন وماارسلناك الا رحمة للعالمين (ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আ’লামীন) অর্থাৎ আপনাকে আমি সমগ্র জাহানের জন্য রহমত রূপে প্রেরন করেছি। ইমাম আবু বকর মুহাম্মাদ বিন ত্বাহের বলেন- মহান আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রহমতের পোশাক বা সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত করেছেন। যাতে তিনি হতে পারেন তার সকল জীবনাদর্শ দ্বারা সকল সৃষ্টির উপর রহমত। যে তার এ রহমতের ভাগী হবে সে দু’জাহানের সকল অপছন্দ কাজ হতে মুক্তি প্রাপ্ত এবং দু’জাহানে সকল পছন্দনীয় বিষয়ে অর্জনকারী।
আপনারা দেখেননি যে, আল্লাহ আয়া’লা তাঁর শানে কি বলেছেন وماارسلناك الا رحمة للعالمين- তাই তাঁর হায়াতে জিন্দীগি ছিল রহমত; ইন্তেকালপরবর্তীও রহমত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান حياتي خيرلكم ومماتي خيرلكم- (হায়াতী খাইরুল্লাকুম ওয়া মামাতী খাইরুল্লাকুম) অর্থাৎ তোমাদের জন্য আমার হায়াতে জিন্দীগিও কল্যাণ; আমার ইন্তেকাল পরবর্তীও তোমাদের জন্য কল্যাণ (অর্থাৎ দু’টোই কল্যানের ক্ষেএে সমান)। তিনি আরো এরশাদ করেছেন- اذا أراد الله رحمة بأمة قبض نبيها قبلها فجعله زلها فرطا وسلفا “অর্থাৎ যখন আল্লাহ তায়ালা কোন উম্মাতের উপর রহমত করতে চান তখন ঐ উম্মাতের নবীকে রহমত প্রপ্তির পূর্বে উঠিয়ে নেন। এবং তাঁকে উম্মাতের ওসিলা/শাফায়া’তের জন্য স্থলাভিষিক্ত করেন”।
ইমাম সমারকান্দী (রহ.) বলেন: رحمة للعالمين এর অর্থ হবে তিনি জ্বিন-ইনসানের জন্য রহমত, বলা হয়েছে তিনি সকল সৃষ্টির জন্য রহমত। মুমিনদের জন্য রহমত হলো হেদায়াত দ্বারা, আর মুনাফিকদের জন্য রহমত হলো হত্যা করা হতে নিরাপদ দ্বারা। (অর্থাৎ নবী পাকের জামানার মুনাফিকদেরকে হত্যা করার অনুমতি থাকার পরও তিনি তাঁর রহমতের কারনে তাদেরকে হত্যা না করে দুনিয়াতে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন), এবং কাফেরদের জন্য রহমত হলো বিলম্বে আজাব দেয়া। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়ল্লাহ আনহুমা বলেন তিনি মুমিন-কাফির সকলের জন্য রহমত। সুতরাং পরিপূর্ণ প্রাপ্ত হয়েছে মুমিনগন আর মিথ্যাবাদী উম্মাতেরা যে সমস্ত আযাব প্রাপ্ত হয়েছে তা নবী পাকের শান-মান না প্রকাশ করার কারনে।
বর্ণিত আছে- নবী পাক জিব্রাইল (আ.) -কে বললেন তুমি কি এ রহমত হতে কিছু পেয়েছ? জিব্রাইল আ. বলেন জি হ্যাঁ আমি শেষ পরিনতি সর্ম্পকে খুবই ভীত ছিলাম অত:পর আল্লাহ তায়ালা আমার উপর প্রশংসা করেন اذا أراد الله رحمة بأمة قبض نبيها قبلها فجعله لها فرطا وسلفا আর ইহাতে আমাকে আশ্বস্থ করা হলো। হযরত ইমাম জা’ফর সাদেক্ব রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত-আল্লাহ তায়ালার বাণী- فسلام لك من أصحاب اليمين অর্থাৎ জান্নাতবাসীদের পক্ষ থেকে আপনার জন্য সালাম। আপনার অস্তিত্বের, আপনার সম্মানের কারনে তাদের উপর সালাম শান্তি বর্ষিত।
আল্লাহ তায়ালার এরশাদ ফরমান الله نور السموات والارض مثل نوره (আল্লাহু নূরুস্সামাতি ওয়াল আরদ্ মাছালু নূরিহী) (সুরা নুর) হযরত কা’বুল আহবার (রা.) হতে ও ইবনে যুবায়ের (রাদ্বি.) বলেন অত্র আয়াতে দ্বিতীয় নুর দ্বারা উদ্দেশ্য হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহর বাণী- مثل نوره (মাছালু নুরিহী) তাঁর পবিত্র নুরের উদাহরণ অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নুর মোবারকের উদাহরণ। হযরত সাহল বিন আব্দুল্লাহ বলেন- আয়াতের ১ম নুরের অর্থ হলো আল্লাহ তায়ালা আসমান-জমীনের হাদী বা হেদায়াতকারী অত:পর ২য় নূর মাছালু নুরিহী হলো নুরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য কেননা তাঁর নূর মোবারক তাঁর সকল পিতামহের পৃষ্ঠদেশে জমা ছিল, যা একটি প্রদীপের ন্যায়। আয়াতে উল্লেখিত مصباح (মিছবাহ) প্রদীপ হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ক্বালব মোবারক, الزجاجة (আযজুজাতু) সচ্ছ কাচ’ হলো তাঁর বক্ষ মোবারক, উজ্জল তারকার ন্যায় হলো তাঁর ঈমান এবং হিকমাত দ্বারা পরিপূর্ণ। আর আয়াতে বর্ণিত يوقد من شجرة مباركة (ইউক্বাদু মিন শাজারাতিম মোবারাকাতিন) বরকতময় বৃক্ষ’ অর্থাৎ হযরত ইব্রাহীম আলাহিস সালাম হতে প্রজ্জলিত। বরকতময় বৃক্ষের উদাহরণ হলো আল্লাহর বাণী-يكاد زيتها يضئ) (ইয়া কাদু যাইতুহা ইউদ্বিউ) অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াতের পবিত্র তৈল দ্বারা আলোকময় হয়। এ তৈল প্রজ্জলিত হওয়ার পূর্বেই মানুষের জন্য প্রকাশ হয়ে যাবে। বলা হয়েছে এ আয়াতে কারীমা দ্বারা অন্য কিছুও উদ্দেশ্য হতে পারে, আর এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালাই অধিক ভাল জানেন।
অবশ্যই আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনে পাকে এ স্থান ছাড়াও অন্য স্থানেও নবী পাককে نور নূর, সিরাজ, মুনীর হিসাবে নামকরণ করেছেন। মহান আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ ফরমান- قد جاءكم من الله نور وكتاب مبين (ক্বাদ জা-আকুম মিনাল্লাহি নুরুও-ওয়া কিতাবুম মুবিন) (সুরা মায়েদা-১৫) তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে নূর (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও কিতাব (আল-কুরআনুল কারীম)। আবার অন্যত্র আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ ফরমান- ياأيها النبي اناأرسلناك شاهدا ومبشرا ونذيرا وداعيا الي الله باذنه سراجا منيرا (ইয়া আয়্যুহান্নাবিয়্যু ইন্না আরসালনাকা শাহেদাও ওয়া মুবাশশিরাও ওয়া নাযীরাও ওয়া দায়ি’য়ান ইলাল্লাহি বিইযনিহী ওয়া সিরাজাম মুনীরা) অর্থাৎ হে গায়েবের সংবাদদানকারী! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি একজন হাজের-নাযের, শুভ-সংবাদদাতা, ভীতি প্রদর্শনকারী এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর দিকে আহ্বানকারী উজ্জলপ্রদীপ-দ্বীপাদ্বার রূপে। এ ভাবে অন্য আয়াতে
الم نشرح لك صدرك الي اخرالسورة (আলাম নাশরাহ লাকা সাদরাকা) অর্থাৎ আমি কি আপনার বক্ষ মোবারক কে প্রশস্ত করে দেইনি? সূরার শেষ পর্যন্ত। شرح (শারাহা) وسع (ওয়াস্সাআ’) অর্থাৎ তিনি প্রশস্ত করেছেন। صدر (সদর) দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য হলো (قلب) ক্বালব হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন- شرحه بنور الاسلام) শারাহাহু বি নূরিল ইসলাম (তাঁর বক্ষমোবারককে ইসলামের নুর দ্বারা প্রশস্ত করে দিয়েছেন।
হযরত সাহল রাহ. বলেন بنور الرسالة (বি নূরির রিসালাত) রিসালাতের নূর দ্বারা আপনার বক্ষ মোবারককে প্রশস্ত করেদিয়েছেন। হযরত হাসান বছরী রাহ বলেন-হিকমাত এবং ইলম দ্বারা পরিপূর্ন হয়েছে। আয়াতের অর্থে বলা হয়েছে-তিনি আপনার ক্বলবকে পবিত্র করেননি? যাতে কোন প্রকার ওয়াস-ওয়াসা ক্বলব গস্খহণ করতে না পারে।
ووضعنا عنك وزرك الذي انقض ظهرك (ওয়াওয়া দ্বা’না আন্কা বিযরাকা* আল্লাযি আনক্বাদ্বা যাহরাকা) আমরা কি আপনার বোঝাকে সরিয়ে দেইনি যা আপনার পৃষ্ঠকে নুয়ে দিয়েছে?। বলা হয়েছে- আপনার অতীতে গুনাহ করা হতে পবিত্র রেখেছেন অর্থাৎ নবুওয়্যাত প্রকাশের পূর্বে। বলা হয়েছে- এ আয়াত শরীফ দ্বারা উদ্দেশ্য জাহিলিয়্যাতের দিন গুলো জাহিলিয়্যাতের কর্ম-কান্ড হতে পবিত্র রাখার অর্থে। আরো বলা আছে- এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য রিসালাতের দায়িত্ব পৌছানো পর্যন্ত আপনার বোঝাকে হালকা করেছি।
হযরত মাওয়ারদী ও সুলামি রাহ. বলেন- যদি এরূপ না হত তবে গুনাহ আপনার পৃষ্ঠদেশ ভারী হত। হযরত ইমাম সামারকান্দী রাহ. বলেন- ওযারা ফা’না লাকা যিকরাকা ইয়াহইয়া ইবনে আদম রাহ. বলেন-নবুওয়াত দ্বারা আপনার শান-মা কে বুলন্দ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- যখন আমার যিকির করা হবে তখন আমার সাথে আপনার যিকির করা হবে এ কালিমায় لا اله الا الله محمد رسول الله (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) في الاذان والاقامة (ফিল আযানে ওয়াল ইক্বামাতে) এবং আযানে, ইক্বামাতে। হযরত ইমাম আবুল ফদ্বল কাজী আয়াজ (রাহ.) বলেন- আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর নিজের সিফাতী নাম মোবারক নবী পাকের নাম হিসাবে নির্ধারন যা তাঁর জন্য এ মহান নিয়া’মাত, উন্নত অবস্থান, এছাড়া তাঁর ক্বলব মোবারক ঈমান ও হেদায়াতের জন্য প্রশস্ত করে দিয়েছে। ইহা তাঁর উপর এক মহান কারামাত। আরও তিনি ইলম ও হিকমা সংরক্ষনের জন্য তাঁর বক্ষ মোবারক প্রশস্ত করে দিয়েছেন। আর জাহিলিয়্যাতের সকল প্রকার অপবিত্রতা ও বোঝা হতে তাঁকে মুক্ত রেখেছেন। আল্লাহ তায়ালা অপছন্দ করেছেন, যে দ্বীনটি সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী সে দ্বীনের মধ্যে জাহিলিয়্যাতের সে সমস্ত বিষয় গুলোর উপর চলা। এবং তাঁর রিসালাত-নবুয়্যাতের দায়িত্ব পালনে সহজ করে দিয়েছেন যাতে করে সহজে মানুষের নিকট পৌছাতে পারেন, যা আমি তাদের নিকট অবতীর্ন করেছি। তাঁর মহান অবস্থান, মর্যাদা, তাঁর যিকির বুলন্দ, এবং তাঁর নাম মোবারকই মহান আল্লাহর নাম মোবারক হিসাবে নির্ধারন সম্পর্কিত বিষয়ে সতর্ক করানো।
হযরত ক্বাতাদা (রাদ্বি.) বলেন ورفعنا لك ذكرك (ওয়া রাফা’না লাকা যিকরাকা) আলাহ তায়ালা দুনিয়া-আখেরাতে তাঁর যিকির বুলন্দ করেছেন্ এমন কোন খতীব নেই, নেই কোন তাশাহহুদ পাঠকারী, নেই কোন সালাত আদায়কারী ব্যক্তি, যে এ কথা বলেনা اشهد ان لا اله الا الله محمدا رسول الله (আশ্হাদু আন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ) অর্থাৎ সকলেই এ শাহাদাতের স্বীকৃতি দিতে হয় হযরত আবু সাঈদ (রাদ্বি.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন- أتاني جبريل عليه السلام فقال: ان ربي وربك يقول تدري كيف رفعت ذكرك فقلت:الله ورسوله اعلم قال:اذا ذكرت ذكرت معي (আতানী জিবরিলু আলাইহিস্ সালাম ফা-ক্বলা ইন্না রাব্বি ওয়া রাব্বাকা ইয়া-ক্বুলু তাদরি কাইফা রাফা’তু যিকরাকা? ফা-ক্বুলতু আল্লাহু ওয়া রাসূলুহু আ’লাম ক্বালা : ইযা যুকিরতু যুকিরতা মায়ী’) অর্থাৎ একদা আমার নিকট হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম আসলেন অত:পর আমাকে বললেন আমার-আপনার রব বললেন আপনি কি জানেন যে, কিভাবে আমি আপনার যিকিরকে সমুন্নত করেছি? আমি (বর্ণনাকারী সাহাবী রাদ্বি.) বললাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক ভাল জানেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: (আল্লাহ তায়ালা বললেন) যখন আমার যিকির করা হবে, তখন আমার সাথে আপনার যিকিরও করা হবে (হাদীসে কুদসী শরীফ) جعلت تمام الايمان بذكرك معي (জাআলতু তামামাল ঈমানে বি-যিকরিকা মায়ী’)।
হযরত আতা (রাদ্বি.) বর্ণনা করেন আমার সাথে আপনার যিকিরকে ঈমানের পরিপূর্ণতা করেছি। جعلتك ذكرا من ذكري فمن ذكرك ذكرني (জাআলতুকা যিকরাম মিন যিকরী ফা-মান যাকারাকা যাকারানী) অর্থাৎ আপনার যিকিরকে আমার যিকিরের স্থলাভিষিক্ত করেছি, যে আপনার যিকির করবে সে যেন আমার যিকিরই করলো। قال جعفر بن محمد الصادق: لا يذكرك أحد بالرسالة الا ذكرني بالربوبية (ক্বালা জা’ফারুবনু মুহাম্মাদ আস্সাদিক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) লা-ইয়ায কুরুকা আহাদুন বির-রিসালাতি ইল্লা যাকারানী বির-রুবুবিয়্যাতি অর্থাৎ হযরত ইমাম জা’ফার বিন মুহাম্মাদ সাদিক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন যে কেহ আপনার রিসালাতের (ইয়া রাসূলাল্লাহ) যিকির করলো সে যেন আমার রুবুবিয়্যাতের (ইয়া রাব্বাল আলামীন) যিকির করলো। কেউ এক্ষেত্রে ইঙ্গিত করেছেন مقام الشفاعة (মাক্বামুশ্ শাফাআত)
নবী পাকের طاعة ত্বাআত অনুসরনকে আল্লাহ তায়ালার অনুসরন হিসাবে উল্লেখ এবং নবী পাকের নাম মোবারক তাঁর (আল্লাহর) নাম মোবারক। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ ফরমান- أطيعوا الله والرسول (আত্বীউল্লাহা ওয়ার-রাসূলা) অর্থাৎ তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরন করো। أمينوا بالله ورسوله (আমীনু বিল্লাহি ওয়া রাসূলাহু) অর্থাৎ তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ইমান আনো। এ আয়াতে পাকের واو (ওয়াও) বর্ণটি আত্বফে মুশাররিকা অর্থাৎ পূর্বে-পরে দু’টি এক-অভিন্ন বুঝানোর জন্য আসে। আর এভাবে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত অন্য কাউকে আল্লাহর সাথে একই বাক্যে একত্রিত করা জায়েয হবেনা।
হযরত হুজয়ফা (রাদ্বি.) নবী পাক হতে বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন لا يقولن احدكم ماشاء الله فلان ولكن ماشاء الله ثم شاء فلان অর্থাৎ তোমাদের কেউ যেন এ কথা না বলে আল্লাহ যা চান অমুক ব্যক্তি যা চান, কিন্তু এ কথা বলবে আল্লাহ যা চান অত:পর অমুক যা চান। হযরত ইমাম আলী খাত্তাবী (রাহ.) বলেন নবী পাক সাহাবায়ে কিরামগনকে এ আদব শিক্ষা দিয়েছেন যাতে করে তাঁরা আল্লাহ তায়ালার চাওয়ার পূর্বে কারো চাওয়া স্থান না দেন। হযরত ইমাম আলী খাত্তাবী (রাহ.) বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে এ আদবের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন যে আল্লাহর চাওয়া সকলের চাওয়ার পূর্বে প্রধান্য দেয়ার জন্য। তাই হাদীসে উল্লেখিত ثم ছুম্মা নসখে তারাখীর জন্য ব্যবহার হয়েছে যা واو ওয়াও হরফের বিরোধী। আর ওয়াও আসে অংশীদারিত্ব বুঝানোর জন্য। অনুরূপ অন্য হাদীসে পাকে এসেছে নিশ্চয় একজন খতীব নবী পাকের সামনে খুতবা দিতে শুরু করলেন এ বলে-من يطيع الله ورسوله ومن يعصهما অত:পর নবী পাক তাকে বললেন بئس خطيب القوم انت! তিনি সমালোচনা করে বললেন দাঁড়াও বা তুমি চলে যাও। আবু সুলাইমান বলেন হরফে কিনায়া দ্বারা দু’টি ইসমের মধ্যে একত্রিত করা তিনি অপছন্দ করেছেন যেহেতু সমমাননা বুঝায়। আবার কারো মতে من يعصهما বলে থামার ধরুন তিনি অপছন্দ করেছেন। আর আবু সুলাইমান এর মতে সহীহ হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন ومن يعصهما فقد غوي বলা অধিক শুদ্ধ। ومن يعصهما এর মধ্যে থামার ব্যাপারে কোন কিছু উল্লেখ করেন নাই। অবশ্য এ ক্ষেত্রে তাফসীরকারকগন ও অভিধানবেত্তাগন মতানৈক্য করেছেন।
মহান আল্লাহ তায়ালার বানী- ان الله وملائكته يصلون علي النبي (ইন্নাল্লাহা ওয়া মালায়িকাতাহু ইউস্বাল্লুনা আলান্নাবিয়্যি) يصلون দ্বারা আল্লাহর ও ফেরেস্তাদের সালাত পড়ার বিষয়টি কি একত্রে বর্তাবে না এরকম নয়? কিছু ওলামাগন মত দেন দুটি একত্রে হবে। আর অন্যরা তুলনার কারনে নিষেধ করেছেন। তারা يصلون জমীর বা সর্বনামটি ফেরেস্তাদের অর্থে ব্যাবহার করেছেন সুতরাং এতে করে আয়াতের উহ্য অর্থ দাঁড়ায় ان الله يصلي وملائكته يصلون علي النبي – (ইন্নাল্লাহা ইউসাল্লি ওয়া মালাইকতাহু ইউসাল্লুনা আলান্নাবীয়্যি)
অবশ্যই হযরত উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন- আল্লাহর নিকট আপনার মর্যাদা হতে এও যে, جعل طاعتك طاعته فقد قال تعالي من يطيع الرسول فقد أطاع الله (জাআ’লা ত্বা-আতাকা ত্বা-আতাহু ফাক্বাদ ক্বালা তায়া’লা (মায়্যুতী উর রাসূলা ফাক্বাদ আত্বা’আল্লাহ) আপনার অনুসরনই তাঁর (আল্লাহর) অনুসরন করেছেন নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন- যে রাসূলের অনুসরন করলো সে আল্লাহর অনুসরনই করলো।
আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ ফরমান-قل ان كنتم تحبون الله فاتبوني يحببكم الله (ক্বুল ইনকুনতুম তুহিব্বুনাল্লাহা ফাত্তাবিউ’নী ইউহবিব কুমুল্লাহা) আপনি বলুন যদি তোমরা আল্লাহকে ভাল বাসতে চাও আমার অনুসরন করো এতে আল্লাহ তোমাদেরকে ভাল বাসবেন। বর্ণিত আছে- নিশ্চয়ই উক্ত আয়াত খানা যখন অবতীর্ন হয় মক্কার মুশরিকরা বলতে শুরু করলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম চায় আমরা তাকে ‘হানান’ হিসাবে মেনে নেই, যেমনি খ্রীস্টানরা ঈসা আলাইহিস সালাম কে ‘হানান’ হিসাবে মেনে নিয়েছে। অত:পর আল্লাহ তায়া’লা উক্ত আয়াত অবতীর্ন করেন- قل أطيعوا الله والرسول (ক্বুল আত্বীউল্লাহা ওয়ার রাসূলা) বলুন তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরন করো। নবী পাকের অনুসরণ কে আল্লাহ তাঁর নিজ অনুসরণ হিসাবে নির্ধারন করলেন।
পবিত্র গেয়ারভী শরীফের গুরুত্ব ও ইতিহাস
মাওলানা খোরশেদ আলম আল্ ক্বাদেরী
এম, এম, এফ, বি, এ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর)
গেয়ারভী শব্দাটি উর্দু, এখানে ১১ সর্ম্পকিত রজনী উদ্দেশ্য, আরবী মাস রাত্র দিয়ে গননা শুরু, তাই মুহাররমের দিক থেকে ১০ তারিখ দিবাগত রাত্রিকে (১১) গেয়ারভী শরীফ বলে। নিম্নে উক্ত রজনীর সংক্ষিপ্ত গুরুত্ব ও ইতিহাস তুলে ধরছি বি-ইযনিল্লাহ
হাকীমুল উম্মাত মুফতি আহমাদ ইয়ার খাঁন নঈমী গুজরাটি (রাহ) স্বীয় রচিত তাফসীর গ্রন্থ ‘আহসানুত ত্াফসীর’ সংক্ষেপে তাফসীরে নঈমী’র প্রথম পারা সূরা বাক্বারা ২৭ নং আয়াত, পৃষ্ঠা ২৯৭ তে হযরত আদম এর তাওবা প্রসংগে সংক্ষেপে গেয়ারভী শরীফের ভিত্তি ও ইতিকথা বর্ণনা করেন। সেখানে তিনি প্রসিদ্ধ আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগনের গেয়ারভী শরীফ পালনের ইতিহাস বর্ণনা করেন।
১. হযরত আদম এর গেয়ারভী শরীফ পালন- সমগ্র মানব জাতীর আদি পিতা-মাতা হযরত আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালাম নিষিদ্ধ গন্ধব গাছের ফল খেয়ে আল্লাহর হুকুমে দুনিয়াতে এসে কৃতকর্মের মাসূল হিসাবে ৩৬০ বছর কাঁদলেন এবং তাওবা করলেন, অবশেষে নবীপাকের অসীলায় তাদের তাওবা কবুল করা হলো। যেদিন তাদের তাওবা কবুল করা হয় ঐ দিনটি ছিল মুহাররমের ১০ তারিখ, আর ঐদিন রাতে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া স্বরূপ যে ইবাদাত করেছেন ঐ ইবাদাতই গেয়ারভী শরীফ আর ঐ রাত্রটি ছিল আরবী চান্দের হিসাবে ১১ তারিখ।
২. হযরত নুহ আলাইহিস সালাম মহা প্লাবনের সময় রজব মাসের ১০ থেকে মুহাররমের ১০ তারিখ পুর্যন্তু ছয় মাস ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে কিশতির মধ্যে ভাসমান অবস্থায় ছিল। অতপর আল্লাহ তায়া’লার অশেষ রহমতে ৬ মাস পর তাঁর কিশতী জুদী পর্বতের ছুড়ায় ঠেকল। পানি কমে আশলে কিশতী হতে নেমে আসেন, যেদিন তিনি প্লাবন থেকে মুক্তি পেলেন সেদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। আর ১০ তারিখ দিবাগত চান্দ্র মাস অনুযায়ী ১১ তারিখ সকল সঙ্গীদের নিয়ে রাতভর শুকরিয়ার ইবাদাত করলেন। এটি ছিল হযরত নূহ আলাইহিস সালামের গিয়ারভী শরীফ।
৩. হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে কোনো রকমে হক্বের দাওয়াত থেকে বিরত রাখতে না পেরে এবং সকল প্রকার বাহাস-মোনাজারায় নিস্তানাবুদ হয়ে অবশেষে জালিম বাদশাহ নমরুদ হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করলো। চল্লিশদিন পূর্যন্ত তাঁকে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডের মধ্যে রাখা হলো। অবশেষে তাঁর একটি পশম মোবারকর জ্বালাতে পারেনি। আল্লাহ তায়ালার হুকুমে অগ্নিকুন্ড ফুল বাগানে পরিণত হয়। যেদিন তিনি আগুন থেকে মুক্তি পেলেন ঐদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। ১০ তারিখ দিবাগত রাতে ১১ তারিখে তিনি আল্লাহ তাযালার দরবারে শুকরিয়ার ইবাদাত করেন। আর এটি ছিল হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের গিয়ারভী শরীফ পালন।
৪. হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম আপন প্রিয়তম পুত্র হযরত ইফসুফ আলাইহিস সালামকে হারিয়ে চল্লিশ বছর একাধারে কান্নারত ছিলেন। কুরআন শরীফে ১২ পারায় সূরা ইউসুফে বর্নিত বহু ঘটনার পর অবশেষে তিনি হারানো পুত্র কে ফিরে পেলেন এবং তাঁর অন্ধ চক্ষু হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের জামার বরকতে ফিরে পেলেন। এই দীর্ঘ ছল্লিশ বছরের বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার দিনটি ছিল আশরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। হযরত ইয়াকুুব আলাইহিস সালাম দিনের বেলায় মুক্তি পেয়ে ১১ রজনীতে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়ার বিশেষ ইবাদাত করলেন আর এটি ছিল হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের গেয়ারভী শরীফ।
৫. হযরত আইয়্যুব আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ তায়ালার পরীক্ষা স্বরূপ দীর্ঘ ১৮ বছর কুষ্ঠ রোগে ভুগছিলেন। এত বেশি পোকা তাঁর শরীর মোবারকে ছিল যে পুরা শরীরের গোশত খেয়ে হার দেখা যেত। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা ১৮ বছর পর যে দিনটিতে রোগ থেকে মুক্তি দিলেন সে দিনটি ছিল আশুরা তথা ১০ মুহাররমের দিন। আর তিনি রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে ১১ রজনীতে ইবাদত্-বন্দীগি করেন। আর এটি ছিল তাঁর গেয়ারভী শরীফ।
৬. হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও বনী ইসরাইলকে মিশরের অধিপতি ফেরাউন অনেক কষ্ট দিয়েছিল। আল্লাহর নবীর সাথে বেয়াদুবী যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং তার খোদায়ী দাবীর মেয়াদ ফুরিয়ে যায়, ঠিক তখনি আল্লাহর নির্দেশে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর অনুসারী নিয়ে মিশর ছেড়ে চললেন। প্রথিমধ্যে নীলনদ পারি দিতে হবে অন্য দিকে ফেরাউনের বিশাল বাহিনী পিছনে আক্রমনের জন্য ফেরাউন নিজে নের্তৃত্ব দিয়ে আসছে কিন্তু কিভাবে নীলনদ পাড়ি জমাবে? খোদায়ী নির্দেশ আসল হে মুসা তোমার হাতের লাঠি পানিতে নিক্ষেপ কর, তিনি নিক্ষেপ করলেন অমনিতে ১২টি রাস্তা হয়ে গেল। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর অনুসারীদেরকে নিয়ে নির্বিঘেœ পানির মধ্যখান দিয়ে তৈরী রাস্তা দিয়ে পার হয়ে গেলেন। আর পরিনতিতে ফেরাউন তার বিশাল সৈন্য সামন্ত নিয়ে নীল নদে ডুবে মরলেন। যে দিন এঘটনায় মুসা নবীর মুক্তি তাঁর দুশমন ফেরাউনের পানিতে ডুবে সমূলে ধ্বংস সেদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। তাই হযরত মুসা আলাইহিস সালাম মহা পরিত্রানের ধরুন ১০ তারিখ দিবাগত রাত ১১ তারিখ তাঁর অনুসারীদের কে নিয়ে এক বিশেষ শুকরিয়ার এবাদাত করেন। আর তাই ছিল হযরত মুসা আলইহিস সালামের গেয়ারভী শরীফ পালন।
৭. হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহর হুকুমে তিনি তাঁর কাওমের নিকট ধর্মের দাওয়াত দিতে গেলে উল্টো তিনি অত্যাচার নির্যাতনের স্বীকার হলেন। রাগে আর ক্ষোভে তিনি দেশ ত্যাগের সিদ্বান্ত নিয়ে রওয়ানা হয়ে যান। প্রতিমধ্যে নদী পড়ে যায়। আর নদীতে কোন খেয়াও ছিলনা। এমতাবস্থায় উপায় অন্তর না পেয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে পরীক্ষা স্বরূপ বিশাল আকৃতির একটি মাছ এসে তাঁকে খেয়ে ফেলে। আর তিনি মাছের পেটে বসে বসে ‘‘লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলিমীন’ যিকির করেন। যেদিন তিনি মাছের পেট থেকে মুক্তি পেলেন ঐদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। ১০ তরিখ দিবাগত ১১ তারিখ রজনীতে হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বিশেষ এবাদাত করেন। আর এটি ছিল তাঁর গেয়ারভী শরীফ পালন।
৮. হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম একশটি বিয়ে করেন এতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে এ বিষয়ে ইঙ্গিত প্রদান করেন। হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম এতে লজ্জিত ও অনূতপ্ত হয়ে তাওবা করেন এবং তাঁর তাওবা যেদিন কবুল করা হয় ঐদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। ১০ তরিখ দিবাগত ১১ তারিখ রজনীতে হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বিশেষ এবাদাত করেন। আর এটি ছিল তাঁর গেয়ারভী শরীফ পালন।
৯. হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম একবার জ্বীন জাতী দ্বারা রাজ্য ও সিংহাসনহারা হয়েছিলেন। জ্বীনেরা তার মু’জিজার আংটিটি লুকিয়ে ফেলে তাঁর রাজ্য-সিংহাসন হাত ছাড়া হয়ে যায়। এতে তিনি আল্লাহর দরবারে লজ্জিত ওধনুতপ্ত হয়ে তাওবা করেন। অবশেষে চল্লিশ দিন পরে আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর অনুগ্রহ করে তাঁর আংটিটি উদ্বার করে দেন। যেদিন তিনি আংটিটি পেয়ে যান ঐদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। ১০ তরিখ দিবাগত ১১ তারিখ রজনীতে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বিশেষ এবাদাত করেন। আর এটি ছিল তাঁর গেয়ারভী শরীফ পালন।
১০. আল্লাহর নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম একবার ইয়াহুদীদের ঘৃন্যতম ষড়যন্তের স্বীকার হন। ইয়াহুদী রাজা হেরোডেটাস হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে গেস্খপতার করে শূলীতে করে তাকে হত্যা করার সিদ্বান্ত নেয়। যখন তাকে ধরে শূলীতে উঠাবে ঠিক ঐসময়ে যে জল্লাদ একাজটি করবে ঐ জল্লাদকে ঈসা আলাইহিস সালামের হুবহুব আকৃতির হয়ে যায়। তারা ঈসা নবী ভেবে তাকে শূলীতে করে হত্যা করে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বন্ধুকে তাদের ষড়যন্তের হাত থেকে মুক্ত করে আসমানে উঠিয়ে নেন। একারনে খ্রীষ্টানদের আক্বীদা তাদের নবী তাদের কৃত পাপের জন্য আত্মহুতি দিয়েছেন। যেদিন তাঁকে আসমানে তুলে নেন ঐদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। ১০ তরিখ দিবাগত ১১ তারিখ রজনীতে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বিশেষ এবাদাত করেন। আর এটি ছিল তাঁর গেয়ারভী শরীফ পালন।
১১. আল্লাহ তায়ালা পিয়ারা হাবীব, আমাদের আকা, দুজাহানের মুক্তিরকাণ্ডারী, হজরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামা ১৪শত সাহাবী নিয়ে ওমরার উদ্দেশ্য মক্কাভিমুখে রওয়ানা করেন। মক্কার অদূরে হুদায়বিয়া নামক স্থানে পৌছলে মক্কার কুরাইশদের কর্তৃক বাধাপাপ্ত হন। ১৯দিন পর অবশেষে একটি চুক্তির মাধ্যমে এমর্মে সিদ্বান্ত হয় যে, এ বছর ওমরা না করে মদীনায় ফিরে যাবে। সাহাবায়ে কিরামগন এটাকে গ্লানী মনে করে মনক্ষুন্ন হলেন তারপর হজরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কুরাগামীম স্থানে গিয়ে যাত্রা বিরতি করেন; এরই মধ্যে সূরা আল-ফাত্হ এর কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়। উক্ত সূরায় কুরাইশদের সাথে এ চুক্তিকে মহাবিজয় হিসাবে ঘোষণা করা হয় এতে সাহাবায়ে কিরাম (রা.) প্রশান্তি অর্জিত হল। যেদিন মহাবিজয় হিসাবে ঘোষণা করা হয় ঐদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। ১০ তরিখ দিবাগত ১১ তারিখ রজনীতে হযরত হজরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামা আলাইহিস সালাম সাহাবায়ে কিরামগণকে নিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বিশেষ এবাদাত করেন। আর এটি ছিল তাঁর গেয়ারভী শরীফ পালন।
উক্ত বরকতময় আমলটি আমরা কিভাবে পেলাম? হুজুর গাউছুল আ’জম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী পাকের মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লামার মাহফিল সবসময় অতি সম্মানের সহিত পালন করতেন। একবার নবী পাক উক্ত আমলটির প্রতি খুশি হয়ে তাঁেক হাদিয়া স্বরূপ উক্ত গেয়ারভী শরীফটি দান করেন। তাই কেউ যদি ভক্তি-শ্রদ্ধা নিয়ে নিয়মিতভাবে গেয়ারভী শরীফ আদায় করে তাহলে নবী আলাইহিমুস সালাম গনের আমলের বরকত-রহমত পাবে ইন্শাআল্লাহ। এড়াড়াও উক্ত আমলটি ক্বাদেরীয়া তরীকার সালিক বা মুরীদদের জন্য আবশ্যিক ওজিফা।
বি:দ্র: আমাদের প্রতিনিধি হওয়ার জন্য কমপক্ষে ২০ কপি ম্যাগাজিন প্রতি মাসে ক্রয় করতে হবে।
আউলিয়া জীবনী
হজরত শাহজালাল মুর্জারদ ইয়ামানী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু বাংলাদেশের জাহিরী-বাত্বিনী বাদ্শা
মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণী
(পূর্বে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে)
ইয়ামন থেকে রওয়ানা হয়ে বাগদাদ পৌছালেন। বহুলোক সেখানেও তাঁর কাছে দীক্ষা নিল এবং কত লোক তাঁর সফর সঙ্গী হলো। তিনি বাগদাদে বেশি বিলম্ব না করে শীঘ্রই হিন্দুস্থানের পথে রওয়ানা হয়ে পড়লেন।
হিন্দুস্থানের তৎকালীন রাজধানী ছিল দিল্লি। পাঠান শাসক ফিরোজ শাহ তোঘলক তখন হিন্দুস্থানের শাসক।
হযরত শাহ্জাল (রহ.) হযরত নিযমুদ্দিন আউলিয়া (রহ.) এর সাথে সাক্ষাত ও তাঁর আতিথ্য গ্রহণ:
বাগদাদ থেকে হিন্দুস্থানের রাজধানী দিল্লী শহর বহু দূরে অবস্থিত। বহু পাহাড় প্রান্তর দুর্গম পথ অতিক্রম করে হযরত শাহজালাল (রহ.) দিল্লীর শহরে পৌছেন। একজন মহান বুযর্গের আগমনী সংবাদ শুনে দিল্লীর বহু লোক হযরত শাহজালাল (রহ.) এর নিকট বাইআ’ত গ্রহণ করেন। এরই মধ্যে তৎকালীন দিল্লীর শহর কুতুব হযরত নিজামুদ্দিন (রহ.) এ সংবাদ জানতে পেরে হযরত নিজামুদ্দিন (রহ.) তাঁকে দরবারে আমন্ত্রন করেন। হযরত শাহজালাল (রহ.) তাঁর আমন্ত্রনে হাজির হলে একজন আরেকজনকে দেখে কাশফ বা অন্তচক্ষু দ্বারা চিনতে পারলেন, কি উদ্দেশ্য তাঁর এ সফর তা বুঝতে পারলেন। অবশেষে হযরত নিজামুদ্দিন (রহ.) এর খানেকায় কিছুদিন কাটার পর যে উদ্দেশ্যে সফর তা তিনি করলেন অর্থাৎ তিনি বাংলাদেশের সিলেট ভুমিতে রওয়ানা হলেন। বিদায়কালে হযরত নিযামুনি আউলিয়া (রহ.) তাঁর বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ এক জোড়া কবুতর উপহার দিলেন। আজও সেই কবুতর বিদ্যমান; যা জালালী কবুতর হিসাবে পরিচিত।
রাজা গোবিন্দের গৌড় রাজ্য:
সে সময় দিল্লীতে পাঠান খিলজী বংশের মুসলিম শাসন বর্তমান থাকলেও বাংলার সিলেট বা গৌড় রাজ্য দিল্লীর মুসলিম শাসনাধীন ছিলনা। রাজা প্রবল পরাক্রমশালী এবং বীর ছিল। কিন্তু চরিত্র ছিল ভীষণ খারাপ। তার মত পরধর্ম বিদ্বেষী শাসক খুব কমই ছিল। বিশেষভাবে মুসলমানদের সে চরম দুষমন ছিল।
শেখ বুরহানুদ্দিনের প্রতি চরম নিষ্ঠুর আচরন:
রাজা গোবিন্দের শাসনামলে ১৩টি মুসলিম পরিবার ছাড়া সকলে ছিল গোড়া হিন্দু। কিন্তু তাদের ধর্ম-কর্ম করতে বড়ই বেগ পেতে হতো। প্রকাশ্যে কোন প্রকার ধর্মীয় কাজ করা নিষিদ্ধ ছিল এমনকি গরু কুরবানী পর্যন্ত। হযরত শেখ বুরহানুদ্দিন (রহ.)-এর বহু বৎসর ধরে কোন সন্তান জন্ম নেয়নি। বহু কান্নাকাটি দোআ’ মোনাজাতের পর আল্লাহ তায়ালা তাকে একটি পুত্র সন্তান দান করলেন। এবার সাত দিনের মাথায় তাঁর আকীকা করা আবশ্যক কারণ বহু বৎসর পর আল্লাহ তায়ালা একটি সন্তান দান করলেন; শুকরিয়া আদায় না করলে যে আল্লাহর দানের শুকরিয়া আদায় হবেনা। যদিও বা আকীকা করা সুন্নাত। তাই কাজটি করতে হবে অত্যান্ত গোপনে। যেহেতু হিন্দু রাজা এটিকে দেবতা তুল্য মনে করে তার পূজা করে থাকে। হযরত বুরহানুদ্দিন (রহ.) একটি গরু কুরবানী করলেন অত্যান্ত গোপনে। এবং মুসলিম পরিবার গুলোর মধ্যে বন্টন করে দিলেন। তকদীরের লিখন হয়না খন্ডন; কোথায় থেকে একটি চিল উড়ে এসে চোঁ মেরে একটুকরো গোশত নিয়ে হিন্দু মন্দিরের সামনে পেলে এত করে গরু কুরবানীর বিষয়টি আর গোপন থাকল না। রাজা গৌড় গোবিন্দ লোক মারফত গরু কুরবানীর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে শেখ বুরহানুদ্দিন কে রাজ দরবারে তলব করল। শেখ বুরহানুদ্দিন (রহ.) রাজার দরবারে পৌছলেন এবং রাজা তাঁর নিকট কুরবানীর বিষযটি জানতে চাইলে তিনি অকপটে তা স্বীকার করলেন। রাজা অমনিতে তার জল্লাদকে নির্দেশ দিল যে হাত দ্বারা আমাদের দেবতাকে যবাই করেছে ঐ হাতটি গোড়ালি সহ কেটে দাও। তার নির্দেশে শেখ বুরহানুদ্দিন (রহ.) ডান হাত কেটে দেয়া হল। তখন তিনি বেহুশ হয়ে পড়ে যান। যখন তার হুশ ফিরল ততক্ষনে তার ছোট নিস্পাপ সন্তানটিকে যবাই করে দেয়া হয়। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন...)। (চলবে)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সংগঠন সংবাদ
গাজীপুরী ক্বাদেরীয়া সংগঠন, দারোগাবাড়ী, কুমিল্লা।
হযরত শাহজালাল (রা.) এর ৬৯৫ তম ওরস পালিত
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ১৪ইং তারিখে সুলতানুল বাঙ্গাল হাদিয়ে বাঙ্গাল হযরত শাহজালাল মুজাররদী আল-ইয়ামানী (রা.) এর ৬৯৫ তম উরস মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯.০০টায় মিলাদ-কিয়াম ও কাসিদা পাঠ এবং সকাল ১০টায় মাজারে গিলাফ চড়ানোর মাধ্যমে ওরস শরীফের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। মাজারে প্রথম গিলাফ চড়ান মাজারের বর্তমান মোতয়াল্লী সের-ই-কওম ফতেহ উল্লাহ আল আমান। পরে মোতয়াল্লী সাহেবের নেতৃত্বে এবং প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় মিলাদ-কিয়াম ও মুনাজাত করেন (কুমিল্লার) শাহপুর দরবার শরীফের গদ্দীনিশীন পীর সাহেব ক্বিবলা আলহাজ্ব অধ্যাপক শাহজাদা মুহাম্মদ পিয়ারা আল-ক্বাদেরী। পরে প্রসাশনের বিভিন্ন মহলসহ সর্বস্তরের জনগণ সারাদিন ব্যাপী মাজারে গিলাফ চড়ান। পরে রাত ১১টায় আরেক দফা কাসিদা পাঠ ও মিলাদ মাহফিল শেষে রাত ৩.৩০ মিনিটে আখেরী মুনাজাত ও তাবারুক বিতরেন মাধ্যমে উক্ত ওরস শরীফের সমাপ্তি ঘটে।
(মুড়াগাঁও, গোলপুরা, লক্ষ্মীপুর) শাখা কমিটি গঠন
০৮/১০/২০১৪ ইং তারিখে গাজীপুরী ক্বাদেরীয়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহা সচিব মাও. মুুহাম্মাদ মামুনুর রশীদ আল্ ক্বাদেরী আল আযহারী ও সহকারী প্রচার সম্পাদক মাও. আবদুল আউয়াল আল ক্বাদেরী উপস্থিতিতে নিমোক্ত কমিটি গঠন করা হয়।
১. সভাপতি: জনাব ইমাম হোসাইন আলক্বাদেরী, পেশ ইমাম মুড়াগাঁও জামে মসজিদ, শাহরাস্তি, চাঁদপুর।
২. সহ-সভাপতি: মুহম্মাদ বিল্লাল হোসাইন এম, এ (ইংলিশ) জগন্নাথ বিশ্বদ্যিলয়।
৩. সাধারন সম্পাদক: মুহাম্মাদ আলাউদ্দিন এম, এ ভিক্টোরিয়া কলেজ।
৪. সহ-সম্পাদক: মুহাম্মাদ কামাল হোসাইন, শিক্ষক গোলপুরা আইডিয়াল স্কুল।
৫. অর্থ-সম্পাদক: মুহাম্মাদ মহসিন হোসাইন ফাজিল (বি, এ) রাজাপুরা আল আমিন সিনিয়র মাদ্রাসা।
৬. প্রচার সম্পাদক: মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান শাহাদাত।
৭. দপ্তর সম্পাদক: মহাম্মাদ আব্দুল কাদের সুজন।
৮. সাহিত্য সাংস্কৃতি সম্পাদক: মুহাম্মাদ ওসমান গনি সবুজ।
সদস্য: হাফেজ মুহাম্মাদ মীর শীদ
মহাম্মাদ মাহবুবুল আলম রাকিব
মুহাম্মাদ স্বপন হোসাইন
উঘারিয়া অষ্টগ্রাম শাখা কমিটি, শাহরাস্তি দক্ষিণ
গাজীপুরী ক্বাদেরীয়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহা সচিব মাওলানা মুুহাম্মাদ মামুনুর রশীদ আল্ ক্বাদেরী আল আযহারী ও হাফেজ মাওলানা মুুহাম্মাদ ইলমুল হুদা জুনায়েদ আল ক্বাদেরী’র উপস্থিতিতে নিম্নোক্ত কমিটি গঠন করা হয়।
১. সভাপতি: জনাব আবু জা’ফর
২. সহ-সভাপতি: নূরুল হুদা শিবলী
সহ-সভাপতি: মুহাম্মাদ আবদুর রাহিম বাবলু
সহ-সভাপতি: জাবেদ আনসারী রবিন।
সহ-সভাপতি: আবুল বাশার
সহ-সভাপতি: মুহাম্মাদ ইসমাইল হোসাইন।
৩. সাধারন সম্পাদক: মহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
৪. সাধারণ সম্পাদক: নূরুল আমীন রিপন
৫. সহ-সম্পাদক: মাজহারুল ইসলাম
৬. অর্থ-সম্পাদক: আজাদ হোসাইন আলক্বাদেরী
৭. সাংগঠনিক সম্পাদক: আবু তাহের সুমন
৮. প্রচার সম্পাদক: আক্কাস আলী
৯. দপ্তর সম্পাদক: মুজিবুর রহমান
১০. সাহিত্য সাংস্কৃতি সম্পাদক: নাহিদুল হাসান রাজু
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment