Thursday, November 13, 2014
শানে মহিউদ্দিন ৪র্থ সংখা
নূরুল ইরফান ফি তাফসীরিল কুরআন-৪
ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান
অধ্যক্ষ, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন
بسم الله الرحمن الرحیم
اقرأ باسم ربك الذی خلق- خلق الانسان من علق- اقرأ وربك الاکرم- الذى علم بالقلم- علم الانسان ما لم یعلم
“পড়ুন আপনার রবকে চেনার জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাটবদ্ধ রক্ত থেকে পড়ুন আপনার রবকে যে মহা মহিম, যিনি শিক্ষা দিচ্ছেন কলমের মাধ্যমে, শিক্ষা দিচ্ছেন মানুষকে যা সে জানতো না।”
রাব্বুল আলামীন প্রথমেই তাঁর জাতী নাম ‘আল্লাহ’ এবং দয়া ও মায়ার দু’টি সিফাত দিয়ে সব কিছুর সূচনা করা ও তাঁরই নাম জপতে জপতে কর্ম সম্পাদন করতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
بسم الله الرحمن الرحیم
“পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে”
প্রথমে ভাবতে হবে; সে আল্লাহর পরিচয় কি ? তাঁর ক্ষমতাই বা কী ? মন মুকুরে সেই আল্লাহর পরিচয় বদ্ধমূল হলেই তাঁর নাম নিতে উৎসাহ সৃষ্টি হতে পারে। এবার আসুন তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টা করি।
الله শব্দ হল এমন একটি اسم বা বিশেষ্য যার দ্বিবচন বা বহু বচন হয় না। কেননা আল্লাহ এক-অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নাই। আল্লাহ নামটি ইসমে যাত অর্থাৎ সত্ত্বাবাচক নাম। যে নামের যিকির করলে মনে অনাবিল প্রশান্তি নেমে আসে। যেমন আল্লাহ তায়ালা নিজেই এরশাদ করেন-
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ [الرعد : ২৮]
অর্থাৎ এটা সতসিদ্ধ কথা যে আল্লাহর যিকির অন্তরসমূহে প্রশান্তি আনে। (সূরা রা’দ-২৮)
আল্লাহ নামটি কুরআন মজীদে ৯৮০ বার এসেছে। আল্লাহ নামের উৎস নিয়ে আল্লামা মেইবদী রহমতুল্লাহে আলাইহি প্রায় এক হাজার বছর পূর্বে যে বক্তব্য পেশ করেছেন তা খুবই চমৎকার। তিনি লিখেন-
بعض گفتند اشتقاق از اَلِهَ است یقال آلِهَتُ الیه ای سکنت الیه فکان الخلق سیکون عند ذکره ویطمئنون الیه وبه قال- أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
অর্থ: কোন কোন মনীষী কুরআন গবেষক বলেছেন- الله আরবী শব্দটি اَلِهَ (আলেহা) শব্দ থেকে উৎকলিত। আরবগণ বলে থাকেন, آلِهَتُ الیه (আলেহাতু ইলাইহে) অর্থ- سکنت الیه তাঁর কাছে গিয়ে প্রশান্তি লাভ করেছি। কেননা সৃষ্টি তাঁর যিকির করার সময় শান্তি পায় এবং তাতেই স্বস্তি লাভ করে। যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, এটা সতসিদ্ধ কথা যে আল্লাহর যিকির অন্তরসমূহে প্রশান্তি আনে। (.. .. ..)
কোন কোন গবেষক বলেন, الله নামটি اَلَهْتُ فى الشيء অর্থাৎ- تَحيرت فيه فكان العقول تتحير فى كنه صفته وعظمته والاحاطة بكيفيته ‘বস্তুর মাঝে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছি, অর্থ তাতে দিক-বিদিক হারা হয়ে পড়েছে যেন আল্লাহর গুণের মাহাত্ম্য, তাঁর বড়ত্ব এবং তার আকৃতি-প্রকৃতি বুঝতে গিয়ে বুদ্ধি-বিবেক-জ্ঞান সব খেই হারিয়ে ফেলেছে।’ (কাশফুল আসরার-১/৬) এক কথায় বলা যায় আল্লাহ এমন এক সত্তা যার যাত নিয়ে ভাবতে গেলে, বুঝতে চাইলে সসীম সৃষ্টি দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাঁর কুল-কিনারাহীন অস্তিত্বের কিছুই বুঝতে সক্ষম হয় না তিনিই তো ‘আল্লাহ’।
এ জন্যই পেয়ারা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান,
تفكروا في خلق الله، ولا تفكروا في الله
“আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা কর, আল্লাহর জাত বা সত্তা নিয়ে গবেষণা করো না।” (কানযুল উম্মাল- ৩/১০৬)
কারণ,
الاستواء معلوم والكيفية مجهولة والإيمان به واجب والسؤال عنه بدعة-(الملل والنحل للشهرستانى- ১৯১/ )
‘তাঁর (আল্লাহর) আরশে সমাসীন হওয়াটা জ্ঞাত বিষয়। তাঁর আকৃতি-প্রকৃতি অজ্ঞাত। এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব। এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদআত।’ (আল মিলাল ওয়ান নিহাল-শাহ্রাসতানী-১/৯১ পৃ.)
আল্লাহর অস্তিত্ব তো দূরের কথা আল্লাহর গুণবাচক নামের গূঢ় রহস্য উদঘাটনও কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কবি বলেন,
تحير القلب فى آثار قدرته + تحير الطرف فى انوار لآلائه
অর্থাৎ:- তাঁর কুদরতের নিদর্শন দেখে অন্তর দিশেহারা + তাঁর নূরের রশ্মিতে চোখ ছানাবড়া
তাই আল্লাহ নাম নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা তাঁর সাদৃশ্য আছে বলে মত প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ তাঁর পরিচয় দিয়েছেন কুরআন মজীদ, তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জির ও আসমানী একশত সহিফায়। সকল ক্ষেত্রেই তাঁর অসীম কুদরত ও গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। যেমন ঃ
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ وَيَوْمَ يَقُولُ كُنْ فَيَكُونُ قَوْلُهُ الْحَقُّ وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ [الأنعام : ৭৩]
“তিনিই যথাবিধি আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন। যখন তিনি বলেন ‘হও’ তখনই হয়ে যায়। তাঁর কথাই সত্য। যে দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সে দিন তাঁরই আধিপত্য হবে। তিনি অদৃশ্য-দৃশ্যমান সর্ববিষয়ে জ্ঞাত এবং বিজ্ঞানময়-অভিজ্ঞ।” (সূরা আনআম-৭)
هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ [يونس : ৫[
“তিনি (আল্লাহ) সূর্যকে তেজোদীপ্ত ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তার মনযিলসমূহ নির্দিষ্ট কওে দিয়েছেন, যাতে তোমরা বর্ষের গণণা ও কাল (সংখ্যা) অবগত হতে পার।” (সূরা ইউনুস-৫)
اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ بِلِقَاءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ (২) وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ [الرعد : ২ ، ৩[
“তিনি সে আল্লাহ; সু-উচ্চ করেছেন আকাশসমূহকে খুঁটি ছাড়া যা তোমরা দেখছো এরপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। আর অধীন করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে। প্রত্যেকটি সুনির্ধারিত মেয়াদের জন্য কক্ষপথে চলছে। তিনিই কার্য সম্পাদন করছেন নিদর্শণাবলীর বিশদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যাতে তোমরা তোমাদের পরওয়ার দিগারের সাথে সাক্ষাতের বিষয় সম্পর্কে ইয়াক্বিন তথা দৃঢ়তা অর্জন করতে সক্ষম হও। তিনিই যমীনকে বিস্তৃত করেছেন তাতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা ও নদ-নদী আর সকল প্রকার ফল-ফলাদী। সৃষ্টি করেছেন প্রত্যেককে জোড়ায় জোড়ায়। রাতের মাঝে দিন। এ সবে গবেষকদের জন্য নিদর্শণ বিদ্যমান রয়েছে।” (রা’দ-২,৩)
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ [البقرة : ২৫৫]
“আল্লাহ; নাই কোন ইলাহ তিনি ছাড়া, চিরঞ্জীব-চিরস্থায়ী। তাঁকে না তন্দ্রা আচ্ছাদন করে না নিদ্রা পেয়ে বসে। আকাশ মন্ডলী ও ভূ মন্ডলে যা কিছু সব তাঁর। তার কাছে যে সুপারিশ করবে তাঁরই হুকুমে করতে পারবে, তিনি তাদের সামনে-পেছনের সবকিছু জানেন, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া জ্ঞানের কোন কিছুই কেউ আয়ত্ব করতে পারেনা। তাঁর ক্ষমতার কুরসী আকাশ ও যমীন পরিব্যাপ্ত। তিনি এ উভয়ের রক্ষণাবেক্ষণে অবসাদগ্রস্ত হন না। আর তিনি সু উচ্চ, সু-মহান।” (সূরা আল-বাকারা-২৫৫)
আল্লাহ তাঁর পরিচয় প্রিয় নবীর কন্ঠে ব্যক্ত করে এরশাদ করেন,
قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ [آل عمران : ২৬[
“প্রিয় হাবীব বলুন ! হে আল্লাহ ! রাজত্বের মালিক। যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন, যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন। যাকে চান সম্মান দান করেন আর যার থেকে ইচ্ছা সম্মান ছিনিয়ে নেন। আপনারই ক্ষমতায় সকল কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। রাতকে দিনের মাঝে এবং দিনকে রাতের মাঝে অনুপ্রবেশ ঘটান। মৃত থেকে জীবিত এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। যাকে ইচ্ছা হিসাব ছাড়া রিযিক দান করেন।” (সূরা আলে ইমরান-২৬)
পবিত্র কুরআন মজীদের পরতে পরতে মহান আল্লাহর ক্ষমতা, সৃষ্টি, বৈচিত্রময় গুণাবলী অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় সর্বোচ্চ সাহিত্যিক ভঙ্গিতে বর্ণিত হয়েছে। এ সকল সিফাত বা গুণাবলীও অবিনশ্বর। সৃষ্টি কোন গুণ অর্জন করলে তার মান, প্রকৃতি, কার্যকারিতা পরিবর্তন হয়। সব সময় এক পর্যায়ে থাকেনা। কিন্তু সকল শক্তির আধার আল্লাহর গুণাবলী সৃষ্টির পূর্বে যেমন ছিল এখনও তাই আছে এবং অনাদি-অনন্তকাল পর্যন্ত একই অবস্থায় থাকবে।
তবে তার অবস্থা সম্পর্কে সহি আকিদা পোষণ করা অত্যাবশ্যকীয়।
যে রহমান ও রহীমের নামে সব কিছু করব, যার কাছে জ্বীন ও মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে পানাহ চাইব। সর্ব প্রথম তাঁর অস্তিত্ব, অসীমতা, ক্ষমতা ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। তাঁর কুরআন দিয়ে তাঁকে চিনতে পারলেই তাঁর বড়ত্বের সম্মানে মনে যে খাশিয়াত (خشية) বা ভয় এবং তাঁর ক্ষমতার বিশালত্বে যে খওফ (خوف) বা ভয় মনে আসবে তার ফলে নিরাশ মনে আশার সঞ্চার হবে যে, শয়তান যতবড়ই হোক না কেন, যত ক্ষমতাই তার থাকুক না কেন; রহমান-রহীম আল্লাহর দয়া ও মায়ায় আমি নিরাপদ থাকব। যে আল্লাহ এত দয়ার এত মায়ার তাঁর সম্পর্কে যে আকীদা পোষণ করতে হবে তা হল,
واجب لوجود الموجود اى ان ذات الله تعالى
অর্থাৎ ‘তাঁর অস্তিত্ব অত্যাবশ্যকীয়। আল্লাহর জাত বা সত্ত্বার অস্তিত্ব বিদ্যমান।’ যদি তাঁর অস্তিত্ব স্বীকার করা না হয় তাহলে সবকিছু অনস্তিত্ব হতো। কোন সৃষ্টির অস্তিত্ব কল্পনা করা যেত না। আল্লাহু সুবহানাহু তায়ালা এরশাদ করেন-
وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ [الصافات : ৯৬[
অর্থ: ‘আল্লাহ তোমাদেরকে এবং তোমাদের কর্মকে সৃষ্টি করেছেন।’ (আস সাফ্ফাত-৯৬)
والله قديم- معنى القدم ان الله سبحانه وتعالى اول الوجود-
আল্লাহ অবিনশ্বর, প্রাচীনত্ব বা অবিনশ্বরের অর্থ হল আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অস্তিত্বের কোন প্রথম নেই্ জাগতিক হিসেবে ১ম, ২য় ৩য় এসব হিসাবের ঊর্দ্ধে তিনি।
هو الباقى و معنى البقاء ان الله تعالى لا اخر لوجوده-
তিনি চিরস্থায়ী। বাকা বা স্থায়ীত্বের অর্থ হল তাঁর অস্তিত্বের শেষ ও নেই।
শুরু-শেষের কোন সংজ্ঞা আল্লাহর অস্তিত্বের সাথে সম্পৃক্ত নয়। আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক আকীদা পোষণ করার তওফীক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের দান করুন।
بسم الله الرحمن الرحيم
দারসূল হাদীস
ফাযায়েলে হজ্জ্ব ও বায়তুল্লাহ দর্শন
মাওলানা মুফতী কাজী আবুল বাশার আলক্বাদেরী
প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, ফকির বাজার ইসলামিয়া ছুন্নিয়া সিনিয়র মাদরাসা
সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও জাতীয় ইমাম সমিতি, বুড়িচং, কুমিল্লা।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেনে-
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ -
অর্থাৎ মানুষরে মধ্যে যারা বায়তুল্লাহ পৌঁছার সার্মথ্য রাখে তাদরে উপর আল্লাহর উদ্দশ্যেে এ গৃহরে হজ্ব করা ফরয। আর কউে যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদরে জনেে রাখা উচতি য,ে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টজিগতরে প্রতি মুখাপক্ষেী নন। [সূরা আলে ইমরান: ৯৭]
হজ্ব প্রত্যকে মুসলমানরে উপর সারা জীবনে একবারই ফরয হয়। একবার ফরয হজ্ব আদায়রে পর পরর্বতী হজ্বগুলো নফল হসিবেে গণ্য হব।ে এ সর্ম্পকে হাদীস শরীফে র্বণতি হয়ছে,ে আবু হুরায়রা রা. র্বণনা করনে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদরে উদ্দশ্যেে ভাষণ দলিনে। তনিি বললনে-
يا أيها الناس! إن الله كتب عليكم الحج، فحجوا، فقال رجل : أكل عام يا رسول الله؟ فكست حتى قالها ثلاثا، ثم قال : لو قلت نعم لوجبت ولما استطعتم-
হে মানবসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদরে উপর হজ্ব ফরয করছেনে। সুতরাং তোমরা হজ্ব করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ্ব করতে হব?ে তনিি চুপ রইলনে এবং লোকটি এভাবে তনিবার জজ্ঞিসে করল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললনে, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর হজ্ব করা) ফরয হয়ে যতেো, কন্তিু তোমাদরে পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না। [সহীহ মুসলমি, হাদীস : ১৩৩৭ (৪১২); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১০৬০৭; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৩৭০৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫০৮; সুনানে নাসায়ী ৫/১১০; শরহে মুশকলিুল আছার, হাদীস : ১৪৭২; সুনানে দারাকুতনী ২/২৮১]
যারা হজ্বরে সফররে সৌভাগ্য লাভ করনে তারা যনে আল্লাহর মহেমান। তাই প্রত্যকেরে উচতি র্সবদা আল্লাহর আনুগত্য ও তার ইশক-মুহববতরে অনুভূতি নযি়ে সখোনে অবস্থান করা। বায়তুল্লাহ ও আল্লাহর অন্যান্য শআের ও নর্দিশনরে প্রতি সম্মান প্রর্দশন করা। সকল প্রকার গুনাহ থকেে বঁেচে থাকা। দ্বন্দ-কলহ, ঝগড়া-ববিাদ এবং অন্যায়-অশ্লীলতা থকেে র্সবাত্মকভাবে দূরে থাকা। কুরআন-হাদীসে এ সর্ম্পকে বশিষে হুকুম নাযলি হয়ছে।ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করনে-
الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللَّه-
(অর্থাৎ) হজ্বরে নর্দিষ্টি কয়কেটি মাস আছ।ে যে ব্যক্তি সসেব মাসে (ইহরাম বঁেধ)ে নজিরে উপর হজ্ব অবধারতি করে নযে় সে হজ্বরে সময় কোনো অশ্লীল কথা বলবে না, কোনো গুনাহ করবে না এবং ঝগড়া করবে না। তোমরা যা কছিু সৎর্কম করবে আল্লাহ তা জাননে। [সূরা বাকারা : ১৯৭]
উক্ত আয়াতে তনিটি বষিয় থকেে বশিষেভাবে নষিধে করা হয়ছে।ে
এক. ইহরাম অবস্থায় অশ্লীল কথা বলা। এমনকি স্ত্রীর সাথে যৌন উত্তজেনামূলক কথা বলাও নষিদ্ধি।
দুই. কোনো ধরনরে গুনাহয় লপ্তি হওয়া। ইহরাম অবস্থার বশিষে গুনাহ যমেন শরীররে কোনো স্থানরে চুল, পশম বা নখ কাটা, আতর বা সুগন্ধি লাগানো, পশু শকিার করা, শরীরে উকুন মারা থকেে যরেূপ বরিত থাকবে তমেনি সাধারণ অবস্থার গুনাহ যমেন অন্যকে কষ্ট দওেয়া, কু-দৃষ্টি ও গীবত শকোয়তে থকেওে বরিত থাকব।ে
তনি. ঝগড়া-ববিাদে লপ্তি হওয়া।
১. বায়তুল্লাহ প্রদক্ষিণের ফযীলত:
ইবনে উমর (রা.) হতে র্বণতি, তনিি বলনে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনছে-ি
من طاف أسبوعا يحصيه وصلى ركعتين كان له كعدل رقبة قال وسمعته يقول : ما رفع رجل قدما ولا وضعها إلا كتب له عشر حسنات وحط عنه عشر سئيات ورفع له عشر درجات-
যে ব্যক্তি যথাযথভাবে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে তার একটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব হয়। তাওয়াফরে প্রতি কদমে আল্লাহ তার একটি করে গুনাহ মাফ করনে, একটি করে নকেী লখেনে এবং দশটি র্মযাদা বৃদ্ধি করনে। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৪৪৬২; সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৯৫৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭৫৩; মুসতাদরাকে হাকমে, হাদীস : ১৮৪২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৫৬৮৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস : ১২৮০৬]
ইবনে আববাস (রা.) র্বণনা করনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
ينزل الله كل يوم على حجاج بيته الحرام عشرين ومائة رحمة : ستين للطائفين وأربعين للمصلين وعشرين للناظرين-
আল্লাহ তাআলা বায়তুল্লাহর হজ্বকারীদরে উপর প্রতদিনি একশত বশিটি রহমত নাযলি করনে, তার ষাটটি তাওয়াফকারীদরে জন্য, চল্লশিটি মুসল্লীদরে জন্য এবং বশিটি র্দশকদরে জন্য। [শুয়াবুল ঈমান বায়হাকী, হাদীস : ৪০৫১; তারগীব: ১৭৮৬]
২. তালবিয়া (লাব্বাইকা আল্লাহুম লাব্বাইক) পাঠের ফযীলত:
আবু বকর সদ্দিীক (রা.) হতে র্বণতি-
أن النبي صلى الله عليه وسلم سئل : أي الحج أفضل؟ قال : الحج والثج-
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জজ্ঞিসে করা হল, কোন হজ্ব র্সবোত্তম? তনিি বললনে, যে হজ্বে উচ্চস্বরে তালবযি়া পাঠ করা হয় এবং কুরবানী করা হয়। [সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৮২৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৯২৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৬৩১; মুসতাদরাকে হাকমে, হাদীস : ১৬৯৭; সুনানে দারমিী, হাদীস : ৮১৫১; মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ৭১; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ১১৭]
সাহল ইবনে সাদ (রা.) র্বণনা করনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
ما من مسلم يلبي إلا لبى من عن يمينه أو عن شماله من حجر أو شجر أو مدر حتى تنقطع الأرض من هاهنا إلى هاهنا-
যে কোনো মুসলমান তালবযি়া পাঠ করল, তার তালবযি়া পাঠরে অনুসরণে তার ডান ও বামরে বৃক্ষরাজি সবকছিুই তার সাথে তালবযি়া পাঠ কর,ে যতক্ষণ না যমীন তার এদকি তথা ডান ও বাম র্পাশ্ব হতে ধ্বংস হয়ে যায়। -সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৮২৮; সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৯২১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৬৩৪; মুসতাদরাকে হাকমে, হাদীস : ১৬৯৮; সুনানে কুবরা, বাইহাকী, ৫/৪৩
আবু হুরায়রা (রা.) র্বণনা করনে, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
أمرني جبريل برفع الصوت في الإهلال، فإنه من شعار الحج-
জব্রিীল আমাকে উচ্চস্বরে তালবযি়া পাঠরে আদশে করছেনে। কনেনা তা হজ্বরে নর্দিশন। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৩১৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৬৩০]
৩. নারী, বৃদ্ধ ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল হজ্জ্ব:
উম্মুল মুমনিীন আয়শো (রা.) হতে র্বণতি, তনিি বলনে-
يا رسول الله! نرى الجهاد أفضل العمل، أفلا نجاهد؟ قال : لا، لكن أفضل الجهاد حج مبرور-
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো জহিাদকে র্সবোত্তম আমল মনে কর।ি আমরা কি জহিাদ করব না? তনিি বললনে, না। বরং তোমাদরে নারীদরে জন্য র্সবোত্তম জহিাদ হল হজ্বে মাবরূর। [সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫২০; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৪৪২২; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৩৬০৭; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৩৭০২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৪৭১৭; শরহু মুশকলিলি আছার, হাদীস : ৫৬০৯]
অন্য র্বণনায় রয়ছে-ে
আয়শো (রা.) বলনে, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আপনাদরে সাথে জহিাদ করব না? তনিি বললনে, তোমাদরে জন্য সবচযে়ে সুন্দর ও উত্তম জহিাদ হল হজ্বে মাবরূর। আয়শো রা. বলনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম থকেে এ কথা শুনার পর হতে আমি হজ্ব ছাড়নি।ি [সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৬১; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৪৪৯৭; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৩২৬]
আবু হুরায়রা (রা.) হতে র্বণতি, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
إن كان قاله جهاد الكبير والضعيف والمرأة الحج والعمرة-
অর্থাৎ বৃদ্ধ, র্দুবল ও নারীর জহিাদ হল হজ্ব ও উমরা। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ৯৪৫৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৯৭০৯; সুনানে নাসায়ী ৫/১১৩; তবারানী আওসাত, হাদীস : ৮৭৪৬; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৩৫০]
৪. হজ্জ্ব ও ওমরা পালনকারীর দুআ আল্লাহ কবুল করেন:
জাবরি (রা.) র্বণনা করনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
الحجاج والعمار وفد الله دعاهم فأجابوه وسألوه فأعطاهم-
অর্থাৎ হজ্ব ও উমরাকারীগণ আল্লাহর প্রতনিধিি দল। তারা দুআ করলে তাদরে দুআ কবুল করা হয় এবং তারা কছিু চাইলে তাদরেকে তা দওেয়া হয়। [মুসনদে বাযযার, হাদীস : ১১৫৩; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫২৮৮; তবারানী, হাদীস : ১৭২১]
আবু হুরায়রা (রা.) র্বণনা করনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
وفد الله ثلاثة :الغازي والحاج والمعتمر-
অর্থাৎ তনি প্রকাররে লোক আল্লাহ তাআলার প্রতনিধিি গাযী, হজ্ব ও উমরাকারী। [সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৩৬৯২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১১; মুসতাদরাকে হাকমে, হাদীস : ১৬৫৩; সুনানে নাসায়ী ৫/১১৩; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৫/২৬২]
৫. হজ্ব ও উমরা পালনকালে মৃত্যুবরণকারীর ফযীলত:
ইবনে আববাস (রা.) হতে র্বণতি-
بينما رجل واقف مع رسول الله صلى الله عليه وسلم بعرفة إذ وقع عن راحلته فأقعصته، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : اغتسلوه بماء وسدر، وكفنوه بثوبيه ولا تخمروا رأسه ولا تخطوه، فإنه يبعث يوم القيامة ملبيا-
এক ব্যক্তি আরাফাতরে ময়দানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরে সাথে উফূফরত ছলিনে। হঠাৎ তনিি বাহন থকেে নীচে পড়ে গলেনে। এতে তার ঘাড় মটকে গলে এবং তনিি মারা গলেনে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললনে, তাকে বড়ইপাতা সদ্ধিকরা পানি দযি়ে গোসল দাও, তার দুই কাপড় দযি়ে তাকে কাফন পরাও। তাকে সুগন্ধি লাগওি না এবং তার মাথাও আবৃত করো না। কনেনা তাকে কযি়ামতরে দনি তালবযি়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হব।ে [সহীহ বুখারী, হাদীস : ১২৬৭; সহীহ মুসলমি, হাদীস : ১২০৬; সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৯৫১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩০৮৪]
আবু হুরায়রা (রা.) হতে র্বণতি, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
من خرج حاجا فمات كتب له أجر الحاج إلى يوم القيامة، ومن خرج معتمرا فمات كتب له أجر المعتمر إلى يوم القيامة، ومن خرج غازيا فمات كتب له أجر الغازي إلى يوم القيامة-
অর্থাৎ যে ব্যক্তি হজ্বরে উদ্দশ্যেে বরে হল, অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, কযি়ামত র্পযন্ত তার হজ্বরে সওয়াব লখো হব।ে আর যে ব্যক্তি উমরার উদ্দশ্যেে বরে হল, আর সে অবস্থায় তার মৃত্যু হল কযি়ামত র্পযন্ত তার জন্য উমরার সওয়াব, লখো হব।ে যে ব্যক্তি জহিাদরে উদ্দশ্যেে বরে হল, এবং তাতে তার মৃত্যু হল, কযি়ামত র্পযন্ত তার জন্য মুজাহদিরে সওয়াব লখো হব।ে [মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৬৩৫৭; তবারানী আউসাত, হাদীস : ৫৪৮০]
৬. হাজরে আসওয়াদ ও রূকনে ইয়ামানী র্স্পশ করার ফযীলত:
ইবনে ওমর (রা.) র্বণনা করনে-
سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : إن مسحهما كفارة للخطايا-
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনছে,ি হাজরে আসওয়াদ ও রূকনে ইয়ামানীর র্স্পশ পাপসমূহকে মুছে দযে়। [সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৯৫৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৫৭০১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭২৯; মুসতাদরাকে হাকমে, হাদীস : ১৮৪২]
ইবনে আববাস (রা.) হতে র্বণতি রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
والله ليبعثه الله يوم القيامة له عينان يبصر بهما، ولسان ينطق به ويشهد على من استلمه بحق-
অবশ্যই আল্লাহ তাআলা কযে়ামতরে দনি হাজরে আসওয়াদকে উঠাবনে। তার দুটি চোখ থাকব,ে যা দযি়ে সে দখেতে পাব।ে একটি জহিবা বা মুখ থাকব,ে যা দযি়ে সে কথা বলবে এবং যারা তাকে যর্থাথভাবে র্স্পশ করছেে তাদরে পক্ষে সাক্ষ্য দবে।ে [সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৯৬১; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২১৫; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৩৭০৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭২৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৯৪৪; মুসতাদরাকে হাকমি, হাদীস : ১৭২৩]
৭. আরাফার দিনের ফযীলত:
অব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) হতে র্বণতি, নবী করীম সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
إن الله عز وجل يباهي ملائكته عتيبة عرفة بأهل، فيقول : انظروا إلى عبادي أتوني شعثا غبرا-
অর্থাৎ আরাফার অধবিাসীদরে ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ফরেশেতাদরে নকিট র্গব করনে এবং তাদরেকে বলনে, তোমরা আমার বান্দাদরে দকিে তাকযি়ে দখে, তারা এলোমলেো চুল,ে ধূলোমলনি অবস'ায় আমার কাছে এসছে।ে [মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭০৮৯; তাবরানী, হাদীস : ৫৭৫]
আয়শো (রা.) বলনে, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
ما من يوم أكثر من أن يعتق الله فيه عبدا من النار من يوم عرفة وأنه ليدنو ثم يباهي بهم الملائلكة فيقول : ما راء هؤلاء-
অর্থাৎ আরাফার দনি অপক্ষো এমন কোনো দনি নইে যদেনি আল্লাহ তাআলা অত্যাধকি পরণিামাণে জাহান্নাম থকেে মুক্ত করনে এবং তনিি নকিটর্বতী হন। আর ফরেশেতাদরে নকিট তাদরেকে নযি়ে র্গব করে বলনে, এরা কি চায়? [সহীহ মুসলমি, হাদীস : ১৩৪৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩০১৪; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৩৯২৬; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৬/২৫১]
৮. হজ্বে মাবরূররে প্রতদিান হল জান্নাত:
আবু হুরায়রা (রা.) হতে র্বণতি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة-
এক উমরা আরকে উমরা র্পযন্ত মধ্যর্বতী সময়রে গুনাহর ক্ষতপিূরণ হয়ে যায়। আর হজ্বে মাবরূররে প্রতদিান তো জান্নাত ছাড়া আর কছিুই নয়। [সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৭৭৩; সহীহ মুসলমি, হাদীস : ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৩৫৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৩; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৩৬৯৫; সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৯৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৭৮২]
জাবরি (রা.) হতে র্বণতি, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
الحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة، قيل : وما بره؟ قال : إطعام الطعام وطيب الكلام-
অর্থাৎ হজ্বে মাবরূররে প্রতদিান জান্নাত ছাড়া আর কছিুই নয়। জজ্ঞিাসা করা হল, হজ্বরে সদাচার কী? তনিি বললনে, খানা খাওয়ানো এবং উত্তম কথা বলা (র্অথাৎ অর্নথক ও অশ্লীল কথার্বাতা পরত্যিাগ করা)।
অন্য র্বণনায় রয়ছে,ে খানা খাওয়ানো ও বশেি বশেি সালাম করা (সালামরে বস্তিার ঘটানো) [সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ৩০৭২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস : ৪১১৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৪৪৮২; মুসতাদরাকে হাকমে, হাদীস : ১৮১২; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৮৮১৭]
আল্লাহ জাল্লা শানুহু আল্লাহর ঘরের সকল মেহমানকে হজ্জে মাবরূর নসীব করুক। আমীন।
আশ্শিফা বি-তা’রীফি হুকুক্বিল মুস্তফা
(মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যাবতীয় অধিকারের পরিচয় সম্বলিত সমাধান)
মুল: ইমাম ক্বাযী আয়ায আল মালেকী (রাহমাতুল্লাহি তায়া’লা আলাইহি)
অনুবাদ: মুহাম্মাদ মামুনুর রশীদ আল্ ক্বাদেরী আল্ আযহারী
প্রথম পাঠ
মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথায় ও কাজের অতি উচ্চ সম্মান প্রসংগেঃ
ইমাম ফাকীহ কাজী আয়াজ আবুল ফজল বলেনঃ বিষয়টি গোপন নয় যে, যিনি সামান্যতম কিছু ইলম চর্চা করেন, অথবা বুঝার ক্ষেত্রে অতি সামান্য দৃষ্টিও রয়েছে যে, মহান আল্লাহর তা’জিম আমাদের নবীপাকের প্রতি, তাঁকে মর্যাদাসমূহ সৌন্দর্যসমূহ, এবং তাঁর উত্তম আদর্শ সমূহ দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করণপূর্বে-পরে কোন সৃষ্টি তার নাগাল পাওয়া অসম্ভব। এবং তাঁর মহান শান-মান সম্পর্কে সতর্কীকরণ যা সম্পর্কে আলোচনায় সৃষ্টির জবান সমূহ, লেখকের কলম সমূহ অক্ষম।
আর এ সমস্ত বিষয় সমূহ হতে কিছু বিষয় মহান আল্লাহ তাঁর পবিত্র কিতাবে (আল কুরআন) স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর মহান অবস্থান সম্পর্কে সর্তক করেছেন। আর প্রশংসা করেছেন তাঁর নৈতিক চরিত্র সমূহ, বাহ্যিক আচার-আচরণ সমূহ হতে। এছাড়া তাঁর মহান আদর্শকে আঁকড়িয়ে ধরতে এবং তাঁর সকল কিছু অনুসরণ-অনুকরণ করার উপর তিনি বান্দাদেরকে উৎসাহিত করেছেন ।
মহান আল্লাহ (জাল্লাজালালুহ) যিনি তাঁকে সম্মানিত করেছেন, শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন অতঃপর পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করেছেন এরপর উহার সানা-প্রশংসা করলেন। অতএব পরিপূর্ণ প্রতিদান এবং তাঁর জন্য ফজল শুরুতে এবং পুনঃপুনঃ দিলেন । তাঁর জন্য দুনিয়া এবং আখেরাতে প্রশংসা। আর এর মধ্য হতে যা কামালিয়াতের ও জালালিয়্যাতের দিক থেকে অধিক পরিপূর্ণ, তাঁর সৃষ্টি সাহায্যের জন্য। এবং তাঁকে অতিউত্তম প্রশংসিত সৌন্দর্য্য, অনুপম চরিত্রসমূহ, অতি উত্তম ভাষা, এবং বিভিন্ন ফজিলত দ্বারা বিশেষিত করা, এবং তাকে প্রকাশ্যে মু’জিজা স্পষ্ট দলিলা-দিল্যাহ এবং স্পষ্ট কারামাত সমূহ দ্বারা সাহায্য করা। যারা তাঁর সমসাময়িক ছিলেন তারাই প্রত্যক্ষ করেছেন, এবং যা তাকে সরাসরি পেয়েছেন। এবং তাদের পরে যারা জেনেছেন (তাবেয়ীগণ) বাস্তব জ্ঞান আমাদের তা বাস্তবে পৌছা পর্যন্ত এগুলো বর্ণনা করেছেন , আর এভাবে নবীপাকের নুর সমূহ আমাদের উপর পূর্ণ হয়েছে (আমাদের নিকট কাজী শহীদ আবুল হুসাইন বিন মুহাম্মদ আল হাফিজ
হযরত ইমাম আব্দুর রাজ্জাক হতে বর্ণনা করেন তিনি হযরত মা’মার হতে তিনি হযরত কাতাদা (রাদি.) হতে, কাতাদা হযরত আনাস (রাদি.) হতে বর্ণনা করেন- নিশ্চয়ই নবীপাকের নিকট মে’রাজের রজনীতে উজ্জ্বল অবয়বে লেগামসহ একটি বুরাক আনা হল। অতঃপর তার উপর তিনি আরোহন করতে চাইলেন এবং করলেন, অতপর জিব্রাইল (আঃ) বুরাককে বলল, তুমি কি জান যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে তুমি লাফাচ্ছ!। তোমার মধ্যে যিনি আরোহন করছেন তাঁর চেয়ে এত সম্মানিত আল্লাহর নিকট আর কেহ নেই।
তোমার মধ্যে তাঁর চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কেই কখনো আরোহন করেনি।
প্রথম অধ্যায়
মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর মহান শান-মান কত মহান আল্লাহর নিকট তা প্রকাশঃ
জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই কোরআন শরীফে স্পষ্ট অসংখ্য আয়াত রয়েছে যেগুলো মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্পর্কে চমৎকার বর্ণনা ফুটে উঠেছে। তাঁর সৌন্দর্য সমূহের বর্ণনা, তাঁর নির্দেশনার প্রতি সতর্কতা এবং মর্যাদার প্রতি তা’জিম সম্পর্কিত বর্ণনা-
১ম পরিচ্ছদঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসা, গুনগান, বারংবার তাঁর উত্তম আদর্শ সমূহের সম্পর্কে যা এসেছে তার আলোচনায় যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- لقد جاءكم رسول من أنفسكم (লা-ক্বদ যা-আকুম রাসুলুম মিন আনফুসিকুম)।
ইমাম সমারকান্দী বলেন- কারীগণের কিছু কারীগণ উক্ত আয়াতে من أنفسكم (মিন আনফাসিকুম) ফা হরফের মধ্যে যবর যোগে পড়েছেন। আর অধিকাংশ কেরাতের ইমামগণ পেশ যোগে পড়েছেন।
ইমাম কাজী আয়াজ (রহঃ) বলেন- আল্লাহ তায়ালা মুমিনগন, অথবা আরব অথবা মক্কাবাসীগণ অথবা সমস্ত মানুষকে মুফাসসিরিনগণের খেতাবের মতানৈক্যেও নির্দেশনার ভিত্তিতে জানিয়েছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ তায়ালা) তাদের মধ্যে তাদের হতে একজন রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছেন। তাঁকে তারা সকলে চিনে জানে, তাঁর অবস্থান সম্পর্কে, তাঁর সত্যবাদীতা, এবং তাঁর আমানতদারীতা সম্পর্কে এমনভাবে জানে যে তারা তাকে মিথ্যার কোন অভিযোগ দিতে পারবেনা। তাদের জন্য নসিহত রেখেছেন যে, তিনি তাদের মধ্য থেকে হওয়া (বংশীয়), আর অবশ্যই তিনি আরবে দিক থেকে শুধুই জন্ম, আত্মীয়তার সম্পর্কে আবদ্ধ, নতুবা তিনি সকল দেশ, জাতি, সকলের জন্য রাসুল।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী الا المودة في القربي (ইল্লাল মাওয়াদ্দাতা ফিল কুরবা) অর্থাৎ তিনি তাদের মধ্যে অধিক শ্রেষ্ঠ, অধিক উন্নত এবং অধিক মর্যাদায় ভুষিত হওয়া দলীল হিসাবে বর্ণনা করেন। من أنفسكم (মিন আন ফাসিকুম)ফা-হরফে যবর যোগে অর্থাৎ আনফাসিকুম। আর ইহাই চুরান্ত প্রশংসা। অত:পর তাঁর প্রশংসিত গুনাবলী, অসংখ্য প্রশংসনীয় বিষয়ে গুনাগুন যে, তাঁর তাদেরকে হেদায়াতের সঠিক মতবাদের উপর, ইসলামের উপর অটল থাকার আকাংখা, তারা (সকল উম্মতগন) হেদায়াত পাবে, সঠিক জ্ঞান পাবে এবং তারা ইসলাম সঠিক পর্যায়ের পাবে এতে নবী পাকের যে আকাক্সক্ষা এবং তাঁর কষ্ট, দুনিয়া আখেরাতে ক্ষতি না হয় এবং পথ চলতে গিয়ে তাঁর কষ্ট, দয়া, এছাড়াও তাদের মধ্যে মুমিনগণের প্রতি তাঁর উদারতা ও দয়া বর্ণনা করেছেন।
কিছু তাফসিরকারকগণ বলেন- নবী পাককে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর ৯৯ নাম মোবারক হতে দু’টি নাম মোবারক দান করেছেন رؤوف (রাউফ) দয়াদ্র, رحيم (রাহীম) দয়ালু। উল্লেখিত আয়াতে কারীমার অনুরূপ অন্য আয়াতে এসেছে, মহান আল্লাহর বাণী-لقد من الله علي المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم
(লা-ক্বাদ মান্নাল্লাহ আলাল মুমিনিনা ইজ রাআছা ফিহিম রাসালান মিন আন ফুসিহিম)। অন্য আয়াতে هوالذي بعث في الاميين رسولا منهم (হুয়াল্লাজি বাআছা ফিল উম্মিয়িনা রাসুলান মিন্হুম)।
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহর বাণীكما ارسلنا فيكم رسولا منكم
(কামা আরসালনা ফি-কুম রাসূলান মিন কুম)।
হযরত আলী ইবনে আবী ত্বালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত- মহান আল্লাহর বাণী (মিন আনফুসিকুম) তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্য থেকে এর অর্থ বংশক্রমে, বৈবাহিক সুত্রে, বংশীয় মর্যাদার সুত্রে, (তোমাদের মধ্য হতে) আদম (আঃ) হতে আমার কোন পুরুষরাই যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলনা। প্রত্যেকেই বৈবাহিক সুত্রে আবদ্ধ ছিলেন। হযরত ইবনে কালবী (রাদিঃ) বলেন- আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর জন্য উনার পূর্ববর্তী ৫০০ জন মাতার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। আর আমি তাদের কাউকে যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল বা জাহিলিয়্যাতের কোন কু-প্রথার জাতি ছিল এমনটি পাইনি (সকলকে পবিত্র হিসাবে পেয়েছি।)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) হতে বর্ণিত-মহান আল্লাহর বানী وتقلبك في الساجد ين (ওয়া তাক্কাল্লুবাকা ফিস সাজিদিন) হযরত ইবনে আব্বাস (রাদি) এ আয়াতের অর্থ এভাবে বলেনقال من نبي الي نبي حتي أخرجتك نبيا
(ক্বালা মিন নাবিয়্যিন ইলা নাবিয়্যি হাত্তা আখরাজতুকা) অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) বলেন- একজন নবী থেকে অন্য আরেকজন নবী এভাবে আপনাকে স্থানান্তর করা হয়েছিল অবশেষে আপনাকে নবী হিসাবে দুনিয়াতে পাঠানো পর্যন্ত।
হযরত ইমাম জাফর বিন মুহাম্মদ আস সাদেক (রাদিঃ) বলেন- মহান আল্লাহ জানেন যে, সকল সৃষ্টি তাঁর অনুসরন করা অক্ষম, তাই তাদের নিকট তাঁর সঠিক পরিচয় তুলে ধরেছেন যাতে করে তারা জানতে পারে যে, তারা কেহ তাঁর খেদমাতের যোগ্যতাও রাখেন না। আর তাদের মাঝে এবং তাঁর মাঝে শুধু মাখলুক হিসাবে আকৃতিগতভাবে তাদের জাতী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। (চলবে)
কসিদা দরশানে হযরত শাহ্ জালাল ইয়ামানি (রাঃ)
শায়খুল ক্বোররা গাওছে জামান হযরত শাহ্ সুফী ক্বারী গাজী
আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুস সোবহান আল্-ক্বাদেরী (রাঃ) এঁর রচনাকৃত।
প্রতিষ্ঠাতা ঃ শাহপুর দরবার শরীফ, কুমিল¬া ।
সংকলনে ঃ শেখ আহসান হাবিব সোবহানী (কাওসাইন)
পীরে ত্বরিকত ও আওলাদ, শাহপুর দরবার শরীফ।
বুলবুলে সের ওয়ে চামানি
শাহ্জালালে ইয়েমনী
ইয়েমেনের শাহজালাল তিনি বাগানের সু-উচ্চ বৃক্ষের বুলবুল সদৃশ।
কাশেফে সেররে খোদা
নায়েবে মাক্কি মাদানী
যিনি আল¬াহর ভেদের প্রকাশক ও মাক্বী মাদানীর প্রতিনিধি
ক্বেবলায়ে দিল ক্বাবায়ে জাঁ
কেবলা নোমা জানে জাহাঁ
যিনি দিলের কেবলা ও প্রানের ক্বাবা কেবলার দিক নির্দেশ ও বিশ্বের প্রাণ
তোম পর ফেদা জান ও তন
আয় সিলহেটি রুহে মনি
তোমার প্রতি জীবন ও দেহ উৎসর্গ হে সিলেটবাসী ও প্রান চালিকা শক্তি।
বাদ সেহের জু হু গুজার
করদে খবর মেরে উধার
হে সমীরন যদি তুমি এদিকে আস তবে আমার খবর বয়ে নিয়ে যাও এবং আমার খবর পৌছে দিও
হিজরে সে হায় জাঁ তু বালব
আয় শাহে খুবানে মনি
হে প্রীয় সুদর্শন সম্রাট আপনার বিরহে আমার প্রাণ ওষ্টাগত।
এশক মেঁ হো ওয়ায়েছকরন
তুমহি তুহো কুতুবে জামান
হযরত ওয়াইস করনীর ন্যায় আপনি একজন আশেক, আপনিতো জামানার কুতুব
সিনে মেঁ সোবহাঁ কা জলন
দে বুজা বারআনে মনি।
সোবহানের হৃদয়ের জ্বালা রহমতের বৃষ্টি দ্বারা নির্বাপিত করুন।
এসো রওজা শরীফ জিয়ারতে যাই
নবী প্রেমের অমীয় সুধা পিলাই
মাওলানা কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বাশারী
রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করার বৈধতা প্রসঙ্গে :
প্রেমিক প্রেমাস্পদের নিকটে যেতে মানবেনা কোন বাধা বিপত্তি, উপেক্ষা করবে শত প্রতিকুল পরিস্থিতি, ডিঙ্গিয়ে যাবে বাধার প্রাচীর প্রতিবন্ধকতার উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিবে সে কুন্ঠাবোধ করবেনা সে তো দুর্দমনীয় বিশ্বপ্রেমিক তার প্রেমের সোনালী পথের মাঝে ছড়ানো সকল কন্টকগুলো সে নীরবে তুলে নিবে পথকে করে নিবে সুগম।
তাইতো নবী প্রেমিকদেরকে ও কেহ রুখতে পারেনা তারা ছুটে যায় রওজার পানে যতই রওজা জিয়ারতের ব্যাপারে নাজায়েজের ফতোয়া আসুক না কেন।
যারা রওজা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাকে না জায়েজ বলে। আসুন তাদের এই বক্তব্যকে একটু বিশ্লেষণ করে দেখি, কেন ই বা আমরা বাধার সম্মুখিন হই।
রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্য সফর করার হুকুম :
জমহুর আলেমদের মতে, রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্য সফর করা সম্পর্ণ জায়েজ বরং নৈকট্য লাভের মাধ্যম। প্রবৃত্তির অনুসারী কিছু ওলামা বলেন রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নাই। এই বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কিছু আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ ।
প্রথমেই আমরা পক্ষে অবস্থান কারী ওলামায়ে কেরামদের মতামত উল্লেখ্য করবো।
এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে উদ্বৃতি প্রণিধান যোগ্য।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
عن ابن عمر رض الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من زرقبرى وجبت له شفاعتى – (روع دارقطنى)
হযরত ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, পেয়ারা নবী রাসূলে কারিম (দ:) বলেন- যে আমার রওজা শরীফ জিয়ারত করবে তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়।
যে আমল দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুপারিশ পাওয়া যাবে সে আমল করতে গিয়ে যদি সফর কেন জান ও মাল সবই দিতে হয় তবূও চুড়ান্ত সফলতা নিশ্চিত করতে তা করা উচিৎ আর এটিই সিগ্ধ মস্তিষ্ক সম্পন্ন লোকদের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়ার কথা।
এমন ফজিলত পেতে যদি সফর করতে হয় তবে সফর করবে । এটাতো একটি সাধারণ বিষয় এটাকে হাসিল করার কোন প্রশ্নই আসে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও এরশাদ করেন-
عن عبد الله بن عمر رضى الله عنه عن النيى صلى الله عليه وسلم قال من حج البيت ولم يزرنى فقد جفانى-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ্জ করল অথচ আমার রওজা শরীফ জিয়ারত করলনা সে আমার সাথে অবিচার করলো ।
উল্লেখ্য যে মক্কা ও মিনা ও মুজদালেফায়ই হজ্জের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ, আর হজ্জের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অত্র হাদীসের উপর আমল করার জন্য কেউ মদিনা শরীফে গেলে তো সফর করা নাজায়েজ হলে তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করতে এমন গুরুত্ব দিতেন না।
নবীজি আরো বলেন-
من زارنى بعد موتى فكأنما زارنى فى حياتى واناحى-
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আমার ইন্তেকালের পর আমার রওজা জিয়ারত করল সে যেন আমার হায়াতে (জীবদ্দশায়) সাক্ষাৎ করল। আর আমি রওজা শরীফে জীবিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তার জীবদ্দশায় সাক্ষাৎ করার ফজিলত তো সবার কাছে সুস্পষ্ট আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর্দায় চলে যাওয়ার পর তার (দঃ) রওজা জিয়ারত যদি তাঁর জীবদ্দশায় জিয়ারতের মতোই হয় তবে এমন মহত কাজ সম্পাদনের নিমিত্তে সফর করা নাজায়েজ কেন ?
এবার আমরা দৃষ্টিকে একটু প্রসারিত করে দেখাবো যে সাহাবায়ে কেরাম ও তাদের পরবর্তী সৎকর্মশীল থেকে এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় কিনা যে তারা সফর করে রওজা শরীফ জিয়ারত করেছেন।
হযরত আবু দারদা (বা) থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর (রাঃ) এর খিলাফতের আমলে বিজিত বাইতুল মোকাদ্দাসে খলীফার অনুমতি ক্রমে হযরত বিলাল (রাঃ) থেকে গেলেন। সেখানে অবস্থান কালে হযরত বিলাল (রাঃ) স্বপ্নে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে দেখলেন, এ কেমন রূঢ় আচরণ বেলাল? হে বেলাল আমার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য কি তোমার এখনও সময় হয় নাই, এ স্বপ্ন দেখে সে চিন্তিত অবস্থায় জেগে ওঠলো এবং ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন। তিনি আর দেরী না করে বাহনে আরোহন করে মদিনা শরীফের অভিমুখে রওয়ানা হলেন। মদিনায় পৌঁছার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা শরীফের সন্নিকটে এসে অঝোর নয়নে কান্না কাটি করতে লাগলেন এবং তার মুখমন্ডল রওজা শরীফের সাথে মিশাচ্ছেন প্রেম-মহাব্বতে মুখমন্ডলকে গড়াগড়ি করাচ্ছেন) এর পর হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ) এর নিকট আসলেন তাদের কে জড়িয়ে ধরে চুমা খেলেন । হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ) তাকে আগের মত করে একটু আজান শুনাতে বললেন যেভাবে সে মসজিদে নববীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য আজান দিতেন, তাই তিনি মসজিদের ছাদে ওঠে আজানের স্থানে এসে আজান দিতে লাগলেন । যখন তিনি আল্লাহু আকবার ” বললেন আবেগে উদ্বেলে যেন তিনি মদিনা শরীফ প্রকম্পিত হয়ে ওঠলো, যখন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললেন, মদিনার প্রকাম্পন আরো বেড়ে গেল, আর যখন তিনি আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বললেন তরুণীরা তাদের নিভৃত প্রকোষ্ট থেকে বেড়িয়ে পড়লো আর তারা বলতে লাগল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি পূনরুথিত হয়েছেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর্দায় যাওয়ার পর ঐ দিনের মত আর কোন দিন এত কান্না কাটি করতে দেখা যায়নি। রাসূল (দঃ) এর জীবদ্দশায় হযমত বিলাল (রাঃ) এর আজান শুনে সেদিন সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে এবং বেদনার স্মৃতি তাদের মানসে ভেসে ওঠে তারা নিজেকে যেন সামলাতে পারছিলেন না।
হযরত ইবনে আবি আসেম (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
ففر بلال فى زمن صرر الصحابة رسول عمر بن عبد العزيز فزمن........... فصوالمسجد الامر غيره-
অর্থাৎ অতঃপর হযরত বিলাল (রাঃ) নেতৃস্থানীয় সাহাবায়ে কেরামদের যুগে এবং হযরত ওমর বিন আব্দুল আজিজের দূত প্রধান প্রধান তাবেয়ীদের যুগে শামদেশ থেকে মদিনা মুনাওয়ারায় সফর করে আসেন তাদের এই সফরের কারণ একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা শরীফ জিয়ারত ও তাকে ছালাম জানানোই ছিল উদ্দেশ্য। পার্থীব কোন কারণ ছিলনা এমনকি মসজিদে নববী ও কারণ ছিল না শুধু মাত্র রওজা শরীফ জিয়ারতই এর কারণ ছিল।
এসকল বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিয়মান হল যে, নিছক রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা সম্পূণ জায়েজ বরং উত্তম কার্যাবলীর মধ্যে অন্যতম এবং আল্লাহ ও রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। আর এ কাজটি সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন-তাবেতাবেয়ীন সহ সকল সালেহীনগণ করেছেন।
বিরুদ্ধবাদীদের দলীল ও তার জবাব তারা কেবল প্রবৃত্তির অনুসরণ করেই খুবই অসাড় ও নাযুক দলিল উপস্থাপন করে থাকে ।
তাদের দলিল হলঃ
عن ابى هريرة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال لاتشد الرحال الا الى ثلاثه مساجد المسجد الحرام ومسجد الرسول صلم ومسجد الاقصى- (متفق عليه)
হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্য সফরের প্রস্তুতি নেয়া যাবেনা, তা হল মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা, (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
প্রাসঙ্গিক আলোচনা ঃ
অত্র হাদীস খানা ইমাম বুখারী (রাঃ) তার সহীহুল বুখারীতে كتاب فضل الصلاة فى مسجد قله رالمدينة মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ার ফজিলত’ নামক অধ্যায়ে উল্লেখ করেন আর অত্র হাদীস দ্বরা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন ফজিলত লাভের উদ্দেশ্য কেবল এই তিন মসজিদে সফর করে যাওয়ার যর্থাথতা রয়েছে । আর অন্য মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করে কষ্ট ক্লেশ বাড়ানোর কোন প্রয়োজন নাই কারণ এই তিন মসজিদ ছাড়া অন্যান্য মসজিদের ফজিলত এক ও অভিন্ন।
আর এই তিন মসজিদের নামাজ আদায়ের ব্যাপারে ফজিলত বর্ণিত আছে, তাই সে ফজিলত লাভের উদ্দেশ্যই সফর করার যথার্থতা রয়েছে, যা অন্যান্য ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।
আর ইমাম বুখারী (রাঃ) এর মত মুজতাহিদ অত্র হাদীস দ্বারা রওজা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর না জায়েজ প্রমাণ করেননি। আর আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর নিচ্ছে, বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু পথভ্রষ্ট আলেম অত্র হাদীস দ্বারা রওজা জিয়ারতের উদ্দেশ্য সফর নাজায়েজ বলে যাচ্ছে। যা বুখারী শরীফের অত্র হাদীসের অধ্যায়ের সাথে আর তাদের বক্তব্যের লেস মাত্রও মিল নাই বরং সম্পূর্ণই মনগড়া বক্তব্য। হাদীসটিকে পুক্সক্ষানুরূপে বিশ্লেষণ করলে তার মর্মার্থ আরো সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা যাবে। لاتشد الرحال الا الى ثلاثة مساجد হাদীসের এই অংশটুকুর ব্যাখ্যায় পাওয়া যায়-
এখানে مستثنى مفرغ হয়েছে অর্থাৎ তার مثتسنى منه অনুল্লেখ, ধরে নেয়া যায় পূর্ন বাক্যটি হবে تشدالرجال الى مسجد الا الى مساجد الله لانه اولا تشد الرجال الى مقان الا المساجدا لله
উহ্য مثتسنى منهটি দুই ধরণের হতে পারেعام وخاص (খাছ অথবা আম) অর্থাৎ নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট প্রথমটি মেনে নিলে হাদীসের অর্থ যুক্তি ও পুর্নাঙ্গ হয়। আর তখন প্রথম প্রকার হলে অর্থ হবে তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে সফর করা বৈধ নয়, আর দ্বিতীয় প্রকার হলে অর্থ হবে তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন স্থানে সফর করা বৈধ নয়।
প্রথম অর্থের দ্বারা তিন মসজিদের ফজিলত বুঝায়। আর দ্বিতীয় অর্থের দ্বারা তিন মসজিদ ছাড়া অন্য সকল স্থানে সফর করা নিষেধাজ্ঞা বুঝায়, যা যুক্তিযুক্ত নয়। আর দ্বিতীয়টি মেনে নিলে এলেম অন্বেষনের উদ্দেশ্য দীর্ঘ সফর করা, ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফর করা, দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে সফর করা, আত্মীয় স্বজনের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সফর করা এমনকি হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে সফর করা সবই অবৈধ আর তা কোন মোহাদ্দেসীনে কেরাম গ্রহণ করেন নাই।
সুতরাং প্রমাণিত হল যে, অত্র হাদীস তিন মসজিদে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও ফজিলতের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে আর এ হাদীসের মধ্যে مثتسنى টি متصل এবং প্রথম অর্থই প্রযোজ্য হবে।
কিন্তু অত্যন্ত দুখের সাথে বলতে হয় একদল আলেম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বিদ্বেষ পোষণ হেতু এর দ্বীনের বহু আমলকে মিটিয়ে দেওয়ার নিমিত্তেই কেবল অত্র হাদীসের বিকৃত অর্থ করে থাকে এবংمستثنى কে منقطع, ধরে হাদীসটি রওজা জিয়ারতের ক্ষেত্রে চালিয়ে দেয় আর এই অসাড় ও ভিত্তিহীন দলিল ও যুক্তিকে পুজি করে তারা রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা অবৈধ বলে, এবং সরলমনা মুসলমানদেরকে রাসূল (দঃ) থেকে দূরে সরানোর অভিসন্ধিতে লিপ্ত হচ্ছে আর এমন হাদীস দ্বারা দলীল দিচ্ছে যে হাদীসের সাথে আর রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করার সাথে কোন সর্ম্পকই নেই।
তাদের ঈমান হরণের এই বিষাক্ত ছোবল থেকে আল্লাহ পাক গোটা উম্মতে মোহাম্মদীকে পরিত্রান দান করুক এবং সবাইকে ইশকে রাসূল (দঃ) এর সুধা পান করার। আমিন ছুম্মা আমিন।
হজ্ব আদায়ে কতিপয় ভুল-ভ্রান্তি
কাজী রাকিবুর রহমান বাশারী
দাখিল পরীক্ষার্থী, ২০১৪
দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা
হজ্বের সঠিক মাসআলার জ্ঞান যেমন জরুরি, তেমনি তা আদায়ের কৌশল এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে করণীয় বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখাও জরুরি। হজ্বে যে সকল ভুল হতে দেখা যায় তা সাধারণত উদাসীনতার কারণেই হয়ে থাকে। তাই নিম্নে সচরাচর ঘটে থাকে এমন কিছু ভুল উল্লেখ করা হচ্ছে। যেন হাজ্বীগণ এ সকল ভুল-ভ্রান্তি- থেকে বেঁচে সুষ্ঠুরূপে হজ্ব আদায়ে সক্ষম হন। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।
ইহরামের আগে দুই রাকাত নামাযের জন্য ইহরাম বিলম্বিত করা:
ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নামায পড়ার নিয়ম আছে। তাই অনেককে দেখা যায়, এই দুই রাকাত নামাযের সুযোগ না পাওয়ার কারণে ইহরাম বিলম্বিত করতে থাকে। এমনকি এ নামায পড়তে না পারার কারণে কেউ কেউ ইহরাম ছাড়াই মীকাতের ভেতরে পর্যন্ত চলে যায় অথচ ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নয়। তারা যেহেতু ইহরামের আগে দুই রাকাত নামায আদায়কে জরুরি মনে করে তাই তারা এমনটি করে থাকে। অথচ ইহরামের আগে নামায পড়া সকল মাযহাবেই মুস্তাহাব; জরুরি কিছু নয়। পক্ষান্তরে ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা নাজায়েয। সুতরাং ইহরামের আগে নামাযের সুযোগ পেলে তো তা আদায় করা চাই, কিন্তু সুযোগ না পেলে সে কারণে ইহরাম বাঁধাকে বিলম্ব করবে না। (সহীহ মুসলিম ১/৩৭৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১২৯০০; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ ৯৮; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৫/৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮১-৪৮২)
ইহরাম বাঁধার নিয়ম সংক্রান্ত ভ্রান্তি সমূহ:
অনেকে মনে করে থাকে যে, ইহরামের কাপড় পরে নামায পড়ার পর নিয়ত করলেই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। এ ধারণা ভুল। এগুলো দ্বারা ইহরাম সম্পন্ন হয় না। নিয়ত আরবীতে করা হোক বা বাংলাতে, সশব্দে করা হোক বা মনে মনে এর দ্বারা ইহরাম সম্পন্ন হয় না; বরং নিয়তের পর তালবিয়া পড়লে ইহরাম পূর্ণ হয়। অতএব বোঝা গেল, ইহরাম সম্পন্ন হয় দুই কাজের সমন্বয়ে : ১. হজ্ব বা উমরার নিয়ত করা ও ২. তালবিয়া পড়া। (জামে তিরমিযী ১/১০২; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ ৬৫; মানাকি মোল্লা আলী কারী পৃ ৮৯)
মক্কাগামীদের জন্য জিদ্দায় ইহরাম বাঁধা:
কেউ কেউ আগে থেকেই ইহরাম বাঁধা ঝামেলা মনে করে এবং ভাবে যে, ইহরাম বেঁধে নিলেই তো ইহরামের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়ে যাবে। বিমান যেহেতু জিদ্দায় অবতরণ করবে তাই জিদ্দায় ইহরাম বাঁধার ইচ্ছায় ইহরামকে বিলম্বিত করে। অথচ মীকাতের বাইরের হাজ্বীদের জন্য ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নেই। উপমহাদেশ থেকে গমনকারী হাজ্বীদের জন্য মীকাত হল কারনুল-মানাযিল ও যাতে ইরাক যা অতিক্রম করেই জেদ্দায় যেতে হয়। যদি কেউ বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করে তবে তার জন্য পুনরায় মীকাতে ফিরে এসে ইহরাম বেঁধে যাওয়া জরুরি। যদি তা না করে তবে দম ওয়াজিব হবে। যেহেতু বিমানে থাকা অবস্থায় মীকাতের জায়গা নির্ধারণ করা কঠিন বা ঐ সময় ঘুমিয়ে পড়া, অন্যমনষ্ক থাকা ইত্যাদি হতে পারে। তাই বিমানে চড়ার আগে কিংবা বিমানে উঠেই ইহরাম বেঁধে নেওয়ার কথা বলা হয়। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৭০২; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ ৮৪; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ ৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২১; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৫/৭৬; রদ্দুল মুহতার ২/৪৭৭)
সেলাইবিহীন কাপড় বা চপ্পলের জন্য ইহরাম বিলম্বে বাঁধা:
কেউ কেউ ইহরামের কাপড় না পরে বিমানে উঠে যায়। অথবা মদীনা থেকে গাড়িতে উঠে পড়ে। এরপর যখন গাড়ি বা বিমানের মধ্যে পরিধানের কাপড় বদলিয়ে ইহরামের কাপড় পরা কষ্টকর হয় কিংবা কাপড় লাগেজে থেকে যায়। তখন তারা সেলাইবিহীন কাপড় পরতে না পারার কারণে ইহরাম বিলম্বিত করতে থাকে। এমনকি ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করে ফেলে। ফলে দম ওয়াজিব হয়ে যায়। অথচ মীকাত অতিক্রমের আগে সেলাইযুক্ত কাপড়ের অবস্থায়ই যদি ইহরাম বেঁধে নিত এবং গাড়ি বা বিমান থেকে অবতরণের পরেই ইহরামের কাপড় পরে নিত তবে তার অন্যায়টা দম ওয়াজিব হওয়ার মতো বড় হত না। ইহরাম অবস্থায় এ কয়েক ঘণ্টা (১২ ঘণ্টার কম) সেলাই করা কাপড় পরে থাকার কারণে একটি পূর্ণ সদকা ফিতর আদায় করে দিলেই চলত।-জামে তিরমিযী ১/১৭১; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ ৩০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৫৪৭
ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করা যাবে না:
কেউ কেউ মনে করে, যে কাপড়ে ইহরাম বাঁধা হয়েছে সে কাপড় হালাল (ইহরাম শেষ) হওয়ার আগ পর্যন্ত বদলানো যাবে না। এটা একটা ভুল ধারণা। ওই কাপড় নাপাক না হলেও বদলানো যাবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস: ১৫০১০, ১৫০১১; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ ৯৮; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ ৭১)
তাওয়াফের সময় ছাড়াও ইযতিবা করা:
অনেককে দেখা যায়, ইহরামের প্রথম থেকেই ইযতিবা (বাম কাঁধের উপর চাদর রেখে ডান বগলের নিচ দিয়ে নিয়ে পরিধান করা) করে থাকে এবং হালাল হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকাকে শরয়ী হুকুম মনে করে। এটি ভুল। এভাবে নামায পড়লে নামায মাকরূহ হবে। আবার কেউ কেউ তাওয়াফের সময় ইযতিবা করে এবং এ অবস্থায় সায়ীও করে থাকে এবং তাওয়াফের মতো সাঈতেও তা করা শরয়ী বিধান মনে করে। অথচ সাঈতে ইযতিবা’র বিধান নেই। এমনকি সকল তাওয়াফেও এটি সুন্নত নয়; বরং যে তাওয়াফের পর সাঈ করতে হয় শুধু সেই তাওয়াফেই ইযতিবা করতে হয়। সুতরাং নফল তাওয়াফে ইযতিবা নেই। কেননা নফল তাওয়াফের পর সাঈ নেই। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৫; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ ১২৯; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৫/২১৭)
আল্লামা শায়েখ নুরুল ইসলাম ফারুকী (রাহ.)-কে নৃশংস হত্যায়
শোক ও প্রতিবাদ সমাবেশ
সুন্নী জনসাধারনের নয়নমনি শহীদ আল্লামা শায়েখ নুরুল ইসলাম ফারুকী (রাহ.)-কে নৃশংস ভাবে হত্যার প্রতিবাদে গত ৩০-০৮-২০১৪ ইং তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক শোক ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুরেশ্বর দরবার শরীফের পীর ছাহেব শাহসূফী বেলাল নূরী আশ-সুরেশ্বরী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহপুর দরবার শরীফের গদ্দিনীশিন পীর ছাহেব শাহসুফী অধ্যাপক শাহজাদা মুহাম্মদ পেয়ারা আল ক্বাদেরী। অনুষ্ঠানে আরো দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কিরামগণ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় বক্তারা বলেন আল্লামা ফারুকী (রাহ.) এভাবে নৃশংস হত্যার শিকার হওয়ায় বাংলাদেশের সুন্নীয়তের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। হত্যায় জড়িত বেঈমান খুনিদের অতিসত্বর চিহ্নিত করে ফাসীর দন্ডে দন্ডায়মান করার ও জোড় দাবী জানানো হয়। পরিশেষে মিলাদ-কিয়াম ও মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন, শাহপুর দরবার শরীফের গদ্দিনীশিন পীর ছাহেব শাহসুফী অধ্যাপক শাহজাদা মুহাম্মদ পেয়ারা আল ক্বাদেরী।
আউলিয়া জীবনী
হজরত শাহজালাল মুজাররদ ইয়ামানী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু) বাংলাদেশের জাহিরী-বাত্বিনী বাদ্শা
মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণী
হজরত শাহজালাল মুজাররদ ইয়ামানীর জন্ম ও স্থান: হযরত শাহজালাল (রহঃ) তুরস্কের অন্তর্গত কুনিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শায়খ মাহমুদ (রহঃ) ছিলেন মক্কার কুরাইশ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি। তার মাতা ছিলেন বোখারার সৈয়দ বংশীয়া এক ধর্মপরায়ণা মহিলা। হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর বয়স যখন মাত্র তিন মাস,তখন তাঁর এই প্রাণের পুত্র শিশু সন্তানকে একমাত্র পরম সহায় আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দিয়ে পরলোক গমন করেন। আহমদ কবীর সোহরাওয়ার্দী নামক তাঁর এক বিজ্ঞ আলিম মাতুল ছিলেন। তিনিই তখন এগিয়ে এসে পিতা-মাতাহারা ইয়াতীম শিশু ভাগ্নেকে স্বীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন।
হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) এর বাল্য বৈশিষ্ট্য ও শিক্ষা: হযরত শাহ্জালাল (রহঃ)-এর শৈশব থেকেই চরিত্র ছিল অতিশয় নির্মল ও নিষ্পাপ। সমবয়সী সাধারণ শিশুদের সাথে তিনি মেলা-মেশা করতেন না। কারও সাথে তাঁর কোন বিষয় নিয়ে এতটুকু ঝগড়াঝাটি হতোনা। নিতান্ত শান্ত শিষ্ট অথচ গম্ভীর প্রকৃতির বালক ছিলে তিনি। শৈশবকাল থেকে কোন দিনই তিনি কারও সাথে একটি মিথ্যা কথা বা কটু কথা বলেননি। মানুষের প্রতি দয়া-মমতা, পরোপকার, বিনয়, নম্রতা, অন্যের সাথে সদ্ব্যবহার এবং সদাচরণ প্রভৃতি গুণাবলী তাঁর মাঝে বাল্যকাল থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল।
বালক হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তাঁর স্বীয় মাতুলের কাছে। তাঁর মেধা ও স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত তীক্ষè। কোন সবক একবার ছাড়া তার দুবার পড়ার প্রয়োজন হতো না। এরূপ শোনা যায়, একদিন ঘটনাক্রমে বালক শাহ্জালাল (রহঃ) একটি নির্জন প্রান্তরে গিয়ে পড়েছিলেন। এ সময় হঠাৎ এক সৌম্যদর্শন মহী পুরুষ তাঁর কাছে এসে তাঁর মুখ হা করিয়ে নিজের মুখের কিছুটা লালা তার জিহ্বায় লাগিয়ে দিলেন। সে দিন থেকে হযরত শাহ্জালালের শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রসারতা আরও বেশি বৃদ্ধি পেল। কথিত আছে যে, ঐ সৌম্য দর্শন মহাপুরুষ ছিলেন হযরত খাজা খিযির (আঃ)।
হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) উচ্চশিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের সাথে সাথে সুবিখ্যাত বক্তারূপেও গণ্য হলেন। তাঁর মামা হযরত আহমদ কবীর সোহরাওয়ার্দী (রহঃ) একাধারে মশহুর আলিম এবং সুবিখ্যাত কামিল অলী ছিলেন। হযরত শাহ্জালাল (রহঃ)-এর শিক্ষার ভার গ্রহণ করে নানা বিদ্যায় তাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে লাগলেন। এভাবে কুরআন, হাদীস, ফিকহ, আদব এবং অন্যান্য বিবিধ ব্যবহারিক শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান অর্জন করে ইলমে শরীয়তে দেশের এক সুবিখ্যাত আলিম রূপে গণ্য হলেন।
বাঘ ও হরিণের কাহিনী :
আল্লাহ্ তাঁর উচ্চ পর্যায়ের কামিল অলিদেরকে এমন ঐশী ক্ষমতা দান করেন যে, তাঁরা আল্লাহর সৃষ্ট পশুপাখিদের কথাও বুঝতে পারেন। বনের পশুপাখিরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এসব অলী দরবেশদের কাছে আসে তাদের দ্বারা সমস্যা ও সংকট দূর করে লয়।
হযরত আহম্মদ কবীর (রহ.)-এর খানকার পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে সহসা একটি হরিণ ছুটে এসে হযরত আহম্মদ কবীর (রহ.)-এর খানকায় প্রবেশ করে। তাঁর কাছে আবেদন জানাল, হে আল্লাহর অলি জঙ্গলের একটি বড় বাঘ আমার একটি কচি শাবকদের ধরে খেয়ে ফেলেছে। বাকি গুলোকেও খাবার জন্যে উদগ্রীব হয়েছে। আপনি এ বাঘটিকে যথোপযুক্ত শাসন ও শায়েস্তা করে দিন।
হযরত আহমদ কবীর (রহ.) হরিণের আবেদন শুনে ভারি দুঃখ পেলেন। তিনি তার ভাগ্নে হযরত শাহ জালালকে বলেন, বাবা তুমি বাঘটিকে শায়েস্তা করে এসো। হযরত শাহজালাল (রহ.) তার সামনে গিয়ে সজোরে তার মুখে এমন এক মুষ্ঠাঘাত করলেন যে তাতেই সে চারিদিকে আঁধার দেখে প্রায় অর্ধমৃত হয়ে পড়ল এবং ঐ জঙ্গল ছেড়ে অন্যত্র চলে গেল। হরিণটি হযরত শাহ্জালালের প্রতি চিরকৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তাঁর অকুন্ঠ প্রশংসা করতে লাগল।
স্বপ্নযোগে হিন্দুস্থান গমনের নির্দেশ লাভ :
একদা গভীর রাতে নিদ্রাভিভুত হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) স্বপ্নযোগে দেখলেন, এক প্রশান্ত ও সৌম্য চেহারা বিশিষ্ট মহাপুরুষ তার সামনে উপস্থিত হয়ে তাকে লক্ষ্য করে বললেন, হিন্দুস্থান নামক এক রাজ্যে অধর্ম ও পাপাচারের ঢল বয়ে যাচ্ছে, তুমি শীঘ্রই সেখানে গিয়ে মানুষের মাঝে আল্লাহর বাণী প্রচার করবে এবং দ্বীন ইসলামের প্রতি সবাইকে আহ্বাণ জানাবে।
প্রত্যুষে ফজরের নামাজ আদায় করেই হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) গিয়ে হাজির হলেন পীর মামা হযরত আহম্মদ কবীর (রহঃ) এর কাছে। তাঁর কাছে তিনি তাঁর স্বপ্নবৃত্তান্ত আদ্যান্ত বর্ণনা করলেন। তা শুনে তিনি বললেন, তুমি মহানবীর নির্দেশ মাথায় নিয়ে এখনই হিন্দুস্থান যাত্রার আয়োজন কর। তিনি আরো বললেন, হে বৎস! ঐ দেশটি আমাদের দেশ থেকে বহু পূর্বে অবস্থিত, তথায় আমি কোন দিন যাইনি। তোমাকে দেশটির কোন নিদর্শনও বলে দিতে পারছিনা। তবে তুমি এই মাটির কোটাটি গ্রহণ কর। যেখানে গিয়ে দেখবে তথাকার মাটির রং ও ঘ্রাণ এই কৌটার মাটির রং ও ঘ্রানের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে তবে সেখানেই তুমি যাত্রা বিরতি করে অবস্থান গ্রহণ করবে।
হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) এর ইয়ামান গমন এবং সেখান থেকে হিন্দুস্থান যাত্রা :
হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) স্বপ্ন দেখে স্বাভাবিক কারণেই হিন্দুস্থান রওয়ানা করার মনস্থ করলেন যে, হিন্দুস্থান যাওয়ার পথে তাঁর পূর্বপূরুষদের বাসস্থান ইয়ামন নগরীটি হয়ে যাবেন।
তিনি তাঁর বারজন সহচরসহ একদা পীর হযরত আহমদ কবীর (রহঃ) এর কাছ থেকে দোয়া ও আশীর্বাদসহ বিদায় নিয়ে রওয়ানা হয়ে পড়লেন। কয়েকদিন পথ চলার পর হযরত শাহজালাল (রহঃ) তাঁর সহচরদের নিয়ে ইয়ামনের রাজধানীতে গিয়ে পৌছালেন। এ সময় ইয়ামনের শাসনকর্তা ছিল এমন এক ব্যক্তি, যে পীর বুজুর্গদের প্রতি ছিল দারুণ শত্র“ভাবাপন্ন। অভ্যাসবশেই সে কোন পীরদের সাথে সদ্ব্যবহার করত না।
ইয়ামনের বাদশাহর মৃত্যু এবং তার পুত্র আলী ইয়ামনীর হযরত শাহ্জালালের শিষ্যত্ব গ্রহণ :
হযরত শাহজালাল (রহঃ) ইয়ামন পৌঁছার সাথে সাথে তথাকার বাদশাহ নিজ মনের কুটিলতায়ই মনে করলো যে, এই দরবেশ এসেছেন তার ক্ষতিসাধন করতে। তাই তাকে প্রাণে মারার জন্য এক খাদেমের দ্বারা দরবেশের আপ্যায়নের বাহানায় এক গ্লাস বিষ মিশ্রিত শরবত তাঁকে পান করতে দিল। আল্লাহর প্রিয় অলী তাঁর কাশফের দ্বারা বিষয়টি বুঝে ফেললেন। অতএব তিনি গ্লাসের শরবত সাথে সাথে পান না করে তা সামনে রেখে দিয়ে বাদশাহকে বললেন, এ শরবতে বিষ মিশিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য কি?
বাদশাহ বলল, কি বলেন আপনি? শরবতে বিষ মিশানো হবে কেন?
কিন্তু এ কথা বললে কি হবে? ইয়ামনের বাদশাহর এ অপকর্মের কথা ইয়ামনের রাজ দরবার এবং রাজপরিবারের সবাই জানত। বাদশাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র আলী ইয়ামনী ছিল পিতৃচরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রকৃতির লোক।
এদিকে হযরত শাহজালাল (রহঃ) বাদশাহকে বললেন, ওহে বাদশাহ! এহেন কুটিলতা ছেড়ে সৎ পথে এসো, আল্লাহকে ভয় কর। তিনি অসীম শক্তিমান।
বাদশাহ্ বলল, যদি তাই হয় তবে আপনি এ শরবত পান করুন। আপনার আল্লাহ্ কতটা শক্তিমান তা পরীক্ষা হয়ে যাক।
হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) বললেন, তুমি তাঁকে পরীক্ষা করতে চাও, তবে কর। এ বলে তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে এক চুমুকে তীব্র হলাহল মিশ্রিত শরবতটুকু পান করে ফেলেন। রাজদরবারের উপস্থিত লোকগণ অবাক বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেল। হযরত শাহ্জালালের কিছুই হলনা। কিন্তু সাথে সাথে ইয়ামেনের বাদশাহের দেহে ভীষণভাবে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। সে ছটফট করে কিছু সময়ের মধ্যে প্রাণ ত্যাগ করল।
রাজপুত্র আলী ইয়ামেনী হযরত শাহ্জালালের চরণ যুগল ধরে কেঁদে ক্ষমা চাইল।
হযরত শাহ্ জালাল (রহঃ) বলেন, হে রাজপুত্র তোমার পিতার পাপের কাফফারা তোমারই করতে হবে। তুমি ধর্মপথে স্থির থেকে পিতার আসনে বসে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী দেশ শাসন এবং প্রজাপালন কর।
সে বলল হুযুর! আমাকে আপনি দীক্ষা দান করে আপনার শিষ্যভুক্ত করুন। আমি এখন থেকে আপনার সাহচর্যে থাকতে চাই। এই পার্থিব রাজ-রাজত্বের প্রতি আমার এতটুকু লালসা নেই। শাহ্ জালাল (রহঃ) তাঁকে বহু বুঝালেন, কিন্তু সে কিছুতেই শুনে না! অগত্যা বাধ্য হয়ে তাকে সাথে নিয়ে চললেন। কিন্তু পথে এভাবে ভক্ত ও মুরীদ জুটে যাওয়ায় তাঁর সঙ্গীদের সংখ্যা অনেক গুণ বেড়ে গেল।
ইয়ামন থেকে রওয়ানা হযে বাগদাদ পৌছালেন। বহুলোক সেখানেও তাঁর কাছে দীক্ষা নিল এবং কত লোক তাঁর সফর সঙ্গী হলো। তিনি বাগদাদে কাল বিলম্ব না করে শীঘ্রই হিন্দুস্থানের পথে রওয়ানা হয়ে পড়লেন।
হিন্দুস্থানের তৎকালীন রাজধানী ছিল দিল্লি। পাঠান শাসক ফিরোজ শাহ তোঘলক তখন হিন্দুস্থানের শাসক।
(ইনশাআল্লাহ বাকি অংশ আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে)।
নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার
নারায়ে রিসালাত ইয়া রাসূলাল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ওরস মোবারক
স্থান: হযরত শাহজালাল ইয়ামানী (রা.) এর মাজার শরীফ প্রাঙ্গন।
সুন্নী মুমিন মুসলমানদের জন্য আনন্দের সংবাদ আগামী ১৫-০৯-২০১৪ ইং, রোজ: সোমবার, সকাল ১০ ঘটিকায় সুলতানুল বাঙ্গাল হযরত শাহজালাল মুজাররদী আল ইয়ামানী (রা.) এর ৬৯৫ তম উরস শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত উরস শরীফের যাবতীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করবেন, বর্তমান মোওয়াল্লী মুহতারাম ফতেহ উল্লাহ আমান। উক্ত উরস শরীফে জিকির-আযকার ও দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করবেন (কুমিল্লার) শাহপুর দরবার শরীফের গদ্দিনীশিন পীর ছাহেব শাহসুফী অধ্যাপক শাহজাদা মুহাম্মদ পেয়ারা আল ক্বাদেরী। উক্ত উরস শরীফ দলে দলে যোগদান করে অলী-আল্লাহগনের রূহানী ফয়েজ বরকত লাভে ধন্য হউন। আমীন।
জানাযার নামাযের পর দো’আ প্রসঙ্গে শরীয়তের হুকুম
অধ্যক্ষ মুফতি মাও. আব্দুর রব আল ক্বাদেরী
খতীব হজরত মাঁদ্দাহ খাঁ (রাহমাতুল্লাহি আলাই) জামে মসজিদ, আলীগঞ্জ, হাজীগঞ্জ।
একজন মুসলমান মারা যাওয়ার পর তিনটি অবস্থা পরিলক্ষিত হয় ১. জানাযার নামাযের পূর্বে, ২.জানাযা নামাযের পর দাফনের পূর্বে ৩.দাফনের পর, এ তিন অবস্থায় মৃত ব্যক্তির জন্য দো’আ বা ইছালে সাওয়াব করা সর্বসম্মতিতে জায়েজ এবং উত্তম। অবশ্য মৃত ব্যক্তির গোসলের আগে লাশের পাশে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবেনা কেননা তখন লাশ নাপাক থাকে। গোসলের পর লাশের নিকট কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ব । এক ধরনের আলেম নামধারীরা জানাযার আগে এবং দাপনের পরে দোয়া’ করা জায়েজ মনে করলেও জনাযার নামাযের পর দোআ’ করা নাজায়েজ, হারাম, বিদআত, এমনকি শিরক পর্যন্ত ফাতওয়া দিয়ে থাকে। নিম্মে সহীহ দলিলাদিল্লাহ দ্বারা তাদের ভ্রান্ত আক্বিদা ও আমলের জবাব তুলে ধরছি বিইজনিল্লাহি তাআ’লা
জানাযা নামাযের পর দোআ’ করার জন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে নির্দেশ দিয়েছেনعن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم اذا صلي أحدكم علي الميت فاخلصوا له بالدعاء(أبوداؤد - مشكاة
হজরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমাদের কেহ যখন কোন মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পড়বে তখন তার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া’ করবে। (আবু দাউদ শরীফ,মিশকাত শরীফ ১খন্ড,১৪৬ পৃষ্ঠা, অধ্যয়, জানাযার লাশ নিয়ে চলা ও জানাজার নামায)। উক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা স্পস্টত প্রমাণিত যে,জানাযার পর মোনাযাত করার নির্দেশ রয়েছে। বিনা কারণে আসল অর্থ পরিবর্তন করা বা রূপক অর্থ গ্রহণ করা নাজায়েজ।
প্রসিদ্ব কিতাব ফাতহুল কাদীর ১৮০ নং পৃষ্ঠায় কিতাবুল জানায়েজ নামক অধ্যয়ে বর্ণিত আছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে দাঁড়িয়ে মুতার যুদ্ধের খবর দিতে গিয়ে হজরত জাফর বিন আবু তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের খবর দেন
অতপর তাঁর জানাজার নামায আদায় করলেন ও তাঁর জন্য দোয়া করলেন এবং লোকদেরকে বললেন তোমরা তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া কর। উল্লেখিত বর্ণনায় দোয়া জানাজার পরেই হয়েছে। তাই ১ম বর্ণনায় দোয়া করার নির্দেশ ২য় বর্ণনায় তাঁর নিজের আমল দ্বারা প্রমানিত হওয়ায় জানাজার নামাযের পর দোয় করা সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাব্যস্ত হলো। শামসুল আয়েম্মা আল্লামা সারখসি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত‘ মাবসূত্ব’ (হানাফী মাজহাবের কিতাব) ২য় খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা একবার এক জানাজার নমাযের পর উপস্থিত হয়ে বললেন যদিও তোমরা আমার আগে নামায পড়ে ফেলেছ কিন্তু দোয়ার বেলায় তোমরা আমার আগে যেয়োনা অর্থাৎ তোমরা আমার সাথে দোয়ায় একত্রিত হও। এ অধ্যয়ে হজরত ইবনে উমার, হজরত ইবনে আব্বাস এবং হজরত ইবনে সালাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকে একযোগে প্রমাণ করা হয়েছে যে, তারাঁ জানাজার নামাজের পর সকলে দোআ করেছেন। তাহাবী শরীফে ১০২ পৃষ্ঠায় বর্র্ণিত আছে-যখন ইমাম আবু হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর জানাজার পর দাফনের আগে ৭০ হাজার বার কুরআন খতম করা হয়।
হজরত ইমাম শায়ারানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত ‘মিযানুল কুবরা’ কিতাবে ৮০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে- হজরত ইমাম আবু হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও ইমাম ছাওরী বলেন যে দাপনের পরে নয় দাফনের আগে সমবেদনা জানান সুন্নাত কেননা দাপনের আগে বিরহ বেদনাটা বেশি থাকে। সুতরাং সুতরাং দাফনের আগে শোক করবেন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোআ করবেন। জানাজা মূলত: নামাজ কারণ এর জন্য ওজু, গোসল, সতর ঢাকা, কিবলা মুখী হওয়া, জায়গা ও কাপড় পাক হওয়া, চারটি তাকবীর এবং জামাতের সহিত আদায় করা আবশ্যক আর সমস্ত আয়েম্মা কিরামগণ এমতটি দিয়েছেন। কারণ দোআ’র জন্য কি এতগুলো শর্ত প্রয়োজন ? বুখারী, মুসলিমসহ সকল
হাদীস শরীফ ও ফিকহের কিতাবে সালাত অধ্যয়ের সাথে সালাতুল জানাজার আলোচনা করা হয়েছে। যারা সালাতুল জানাজকে দোআ’ বলে বেড়ায় এটা তাদের মূর্খতা ছাড়া কিছুইনা, আর মূল কিতাবের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং যেহেতু জানাজার নামাজ সেহেতু প্রত্যেক নামাযের পর বিশেষত ফরজ নামাযের পর দোআ’ করবে এটাই হাদীস শরীফ দ্বারা সমর্থিত। عن أبي امامة ؤضي الله عنه قيل يا رسول الله أي الدعاء أسمع ؟ قال جوف الليل الاخر ودبر الصلوات المكتوبات ( رواه الترمذي والنسائي)
অর্থাৎ হজরত আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সমীপে আরজ করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন সময়ের দোআ’ সবচেয়ে বেশি কবুল হয়? তিনি এরশাদ করলেন শেষ রাতের মধ্যবর্তী সময় ও ফরজ নামায সমূহের পর। (তিরমিযী, নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ কিতাবুদ দাওয়া’ত)
তাই জানাজাও এক প্রকার ফরজ যা ফরজে কিফায়া, আর ফরজে কিফায়ার নামাযের পর দোআ’ হবে এটাই হাদীস শরীফের ভাষ্য। আর বিরোধীদের দাবী অনুযায়ী দোআ’ অর্থে হলে ও অসুবিধা নেই, কারণ দোআ’র পর দোআ’ হলে ব্যক্তি আরো বেশী উপকৃত হবে। এসমস্ত ব্যক্তিরা জিন্দাদের দুষমনি করে
আবার এরা মৃত অসহায় ব্যক্তিদের দুষমন বটে। বর্ণিত আছে দোআ’ও এক প্রকার এবাদাত, এছাড়াও দোয়ার নির্দেশ রয়েছে-
الدعاء مخ العبادة (الترمذي) দোআ’ এবাদাতের মূল (তিরমিযী শরীফ)। তবে এটা কি কারণ থাকতে পারে যে, জনাজার আগে ও দাফনের পরে দোআ’ করা জায়েজ আর জানাজার পর দোআ’ করা নাজায়েজ ? উসূলবিদ বা আইনবিদগণের মতে- কোন কিছুকে নাজায়েজ সাব্যস্ত করতে হলে কুরআন থেকে সরীহ বা স্পস্ট দলীল অথবা হাদীসে পাক থেকে স্পস্ট দলীল অবশ্যই থাকতে হবে । আর হাদীসে পাক হতে হবে অন্তত হাসান পর্যাযের । তবেই গ্রহণযোগ্য হবে নতুবা নয়। অনুরূপ জায়েজের জন্য কোন প্রকার নিষেধ না থাকলেই সংশ্লিষ্ঠ বিষয় জায়েজ। কিন্তু বিরোধীদের নিকট আমাদের প্রশ্ন এমন কোন দলীল কি আপনাদের নাজায়েজ ফাতওয়ার পক্ষে মউজুদ আছে? তাদের মতে জানাজা দোআ’ হলেও তো, দোআ’র পর দোআ করা নাজায়েজ, এধরনের কোন দলীল তারা দেখাতে পারবেনা। তারা সাধারণ মুসলমানকে সবসময় ধোকা দিয়ে আসছে এ কথা বলে, তাহলো বিদআত। বিদআত কি? বিদআত অর্থ হলো নব আবিস্কার বা নতুন কিছু যার দৃষ্টান্ত পূর্বে ছিলনা । কিন্তু জানাজার নামাজের পর দোয়া’ করার নির্দেষসূচক এবং সাহাবাগণের আমল সম্বলিত হাদীসগুলো কি কারো নতুন বানানো? যাতে এগুলো বিদআত হবে? আর হাদীসের গ্রন্থগুলো কি আমাদের কেহ লিখেছে? যে এগুলো বিদআত? আমল করলে ঈমান থাকবেনা ? বরং জানাজার নামাযের পরে দোআ’ করা বিদআত নয়, নবী পাকের সুন্নাত, সাহবায়ে কিরামগণের আমল দ্বারা প্রমাণিত। যা আমরা উপরে সহীহ দলীল দ্বারা প্রমাণ করেছি।
তাদের জবাবে বলতে চাই যে, সব নতুন বিদআত নয়, বরং বিদআতের সহীহ পরিচয় হলো- এমন কিছু (বক্তব্য, ফাতওয়া, আমল) যা কুরআন ও হাদীসের বিরোধীতা নতুন হউক বা পুরান হউক তাই বিদআত। আর এ অর্থে নবী পাকের, সাহাবায়ে কিরামের জামানায়ও বিদআত ও বিদআতী সম্প্রদায় ছিল তারা হলো খারেজী, শিয়া’সহ পরবর্তী উপদলসমূহ। আজ বর্তমান ওহাবী, জামাতী, নব্য সালাফী বা লা- মাজহাবী, বাংলাদেশ ও হিন্দুস্তানী নব্য তাবলিগী, কাওমী, হেফাজতী সব মূলে তারা খারেজী। তাই উসুলবিদগণের পরিভাষায় খারেজী, শিয়া’ সহ সকল উপদল সমূহ বিদআতী, গোমরাহী, ৭২ জাহান্নামী দল। আর বাকী ১টি দল সহীহ নাজাতী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়া’ত জান্নাতী।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment