Thursday, November 13, 2014

শানে মহিউদ্দিন ৫ম সংখা


নূরুল ইরফান ফি তাফসীরিল কুরআন-৫
ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান
অধ্যক্ষ, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন

بسم الله الرحمن الرحیم
اقرأ باسم ربك الذی خلق- خلق الانسان من علق- اقرأ وربك الاکرم- الذى علم بالقلم- علم الانسان ما لم یعلم
“পড়ুন আপনার রবকে চেনার জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাটবদ্ধ রক্ত থেকে পড়ুন আপনার রবকে যে মহা মহিম, যিনি শিক্ষা দিচ্ছেন কলমের মাধ্যমে, শিক্ষা দিচ্ছেন মানুষকে যা সে জানতো না।”
মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর জাতী নাম الله শব্দের সাথে الرحمن বা পরম করুণাময় এবং الرحيم বা অসীম দয়ালু এ গুণবাচক নাম দু’টি ব্যবহার করলেন। এ দু গুণবাচক নামের তাৎপর্য এত গভীর যে তা গবেষণার দাবী রাখে। الرحمن শব্দটি আরবী ব্যাকরণের নিয়মানুযায়ী اسم فاعل مبالغة বা আধিক্যবোধক কর্তা। যার মূল ধাতু رحم অর্থ হল ‘দয়া’। এখানে الرحمن শব্দকে বিশ্লেষণ করলে অর্থ দাঁড়ায়- (الف) দ্বারা الفت বা সৌহার্দ্য-আকর্ষণ, (لام) দ্বারা لطف অনুগ্রহ, (راء) দ্বারা رفق বা ন¤্রতা, (حاء) দ্বারা حكمة বা কৌশল, (ميم) দ্বারা محبةবা ভালবাসা, (نون) দ্বারা نور বা আলো। যে সত্ত্বা আকর্ষণে, অনুগ্রহে, ন¤্রতার দ্বারা, কৌশলে, প্রেম-ভালবাসা দিয়ে আলোকময় করেন তিনি الرحمن।
الرحيم শব্দটির মূল ধাতুও رحم- যার অর্থ দয়া। الرحيم শব্দটিও اسم فاعل مبالغة বা আধিক্য বোধক কর্তা। শব্দটি বিশ্লেষণ করলে অর্থ দাঁড়ায় (الف) দ্বারা انيست বা আকর্ষণ, (لام) দ্বারা لينت বা বিনয়, ন¤্রতা, (راء) দ্বারা رقة قلب বা মনের ন¤্রতা বা সহানুভূতিশীল মনের অধিকারী, (حاء) দ্বারা حياء বা লজ্জাবোধ, (ياء) দ্বারা يقين বা দৃঢ় প্রত্যয় এবং (ميم) দ্বারা محبة -ভালবাসা, مواسات সহমর্মিতা, مساوات বা সাম্য। এককথায় যে সত্ত্বা নিজ আকর্ষনে সকল মাখলুককে বিনয়ী, লজ্জাবোধ, সাহনুভূতিশীল, দৃঢ় প্রত্যয়ী করে প্রেম-ভালবাসা, সহমর্মী ও সাম্যের মাধ্যমে অসীম দয়া লাভের উপযুক্ত করে তোলেন তিনিই الرحيم।
পবিত্র কুরআন মাজীদে الرحمن শব্দটি ৫৭বার, الرحيم শব্দটি ৯৫বার এসেছে। এছাড়াও رحمة শব্দটি ৭৯ বারএসেছে। বিভিন্নরূপে رحمة শব্দটি এসেছে ৭৫বার। আল কুরআনে رحمة শব্দমূল থেকে মোট ৩০৬ বার দয়া ও অনুগ্রহের কথা বলা হয়েছে। الرحمن শব্দটি জাহেলী যুগে কারো নাম হিসেবে পরিচিত ছিলনা। যেমন এরশাদ হয়েছে-
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اسْجُدُوا لِلرَّحْمَنِ قَالُوا وَمَا الرَّحْمَنُ [الفرقان : ৬০
অর্থাৎ- যখন তাদেরকে বলা হল- রহমানকে সিজদা কর তারা বলল রহমান কি? (সূরা আল ফুরকান-৬০)
কোন কোন মনীষী বলেন- দোয়ার মধ্যে এ দু’টি শব্দকে এভাবে ব্যবহার করা হয়েছে-
رحمن الدنيا ورحيم الآخرة
অর্থাৎ- তিনি করুণাময় এ পার্থিবজগতে আর অসীম দয়ালু পরকালে। (কাশফুল আসরার-১/৭,রুহুল মাআ’নী-১/২৭)
মুফাসসীরগণ লিখেছেন- الرحمن العاطف على جميع خلقه بان خلقهم ورزقهم
রহমান অর্থ- সকল সৃষ্টির প্রতি দয়া-অনুগ্রহ এই জন্য যে তিনিই সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে রিযিক দিয়েছেন। (কাশফুল আসরার-১/৭)
পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহর তায়ালা নিজেই এরশাদ করেন-
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ-الأعراف : ১৫৬
অর্থাৎ- আমার রহমত সকল বস্তুর মাঝে পরিব্যাপ্ত। (সূরা আ’রাফ-১৫৬)
আর الرحيم মানে হল-
الرحيم بالمؤمنين خاصة بالهداية والتوفيق فى الدنيا- وبالجنة والرؤية فى العقبى- وكان بالمؤمنين رحيما-
রাহীম বা অসীম দয়া মু’মিনদের জন্য দুনিয়ায় হেদায়েত ও তাওফীক পাওয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য, আর পরকালে জান্নাত ও আল্লাহর দিদার পাওয়া বিশেষ দয়ার আওতাভূক্ত। আল্লাহ তায়ালা তাইতো এরশাদ করেছেন- “আল্লাহ মুমিনদের বিষয়ে রাহীম বা অত্যন্ত দয়ালু”। (কাশফুল আসরার-১/৭)
ইমাম জাফর সাদেক রহমতুল্লাহে আলাইহি বলেন-
الرحمن اسم خاص بصفة عامة والرحيم اسم عام بصفة خاصة-
রহমান একটি খাস নাম যার গুন আম বা সাধারণ আর রাহীম নাম হিসেবে সাধারণ আর গুণ হিসেবে খাস বা বিশেষায়িত। (কাশফুল আসরার-১/৮)
الرحمن শব্দটি خاص বা নির্দিষ্ট এদিক দিয়ে যে, এ নামটি শুধু আল্লাহর নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্য কোন সৃষ্টির জন্য ব্যবহৃত হয় না। গুণগত দিক থেকে আম বা সাধারণ হিসেবে ব্যবহৃত সকল সৃষ্টিকে সৃষ্টি করা এবং রিযিক দান করা। যাতে কোন ধর্ম, বর্ণ আলাদা করা হয়নি।
الرحيم শব্দগতভাবে আল্লাহ ছাড়াও অন্য সৃষ্টির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। গুণগত দিক থেকে রাহীম বা অসীম দয়া শুধু মুসলমানদের জন্য। এ হিসেবে শব্দটি আম বা সাধারণভাবে প্রযোজ্য। পবিত্র কুরআন মজীদে আল্লাহ তায়ালা ৫ ভাবে তাঁর নাম মোবারককে رحمة শব্দের সাথে সম্পৃক্ত করেছেনঃ-
১) الرحمن -পরম করুণাময়
২) الرحيم -অসীম দয়ালু
৩) خير الرحمين - সর্বোত্তম দয়াবান
৪) ارحم الرحمين - সবচেয়ে বড় মেহেরবান এবং
৫) ذو الرحمة - রহমতের অধিকারী।
আল্লাহর রহমত যে অসীম তার নমুনা পেশ করে হযরত সালমান ফারসী ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِائَةَ رَحْمَةٍ فَجَعَلَ مِنْهَا رَحْمَةً فِي الدُّنْيَا تَتَرَاحَمُونَ بِهَا وَعِنْدَهُ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ رَحْمَةً فَإِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ ضَمَّ هَذِهِ الرَّحْمَةَ إِلَى التِّسْعَةِ وَالتِّسْعِينَ رَحْمَةً ثُمَّ عَادَ بِهِنَّ عَلَى خَلْقِهِ
অর্থাৎ- আল্লাহ তায়ালার একশত রহমত রয়েছে। সেখান থেকে পৃথিবীতে ১টি রহমত বন্টণ করেছেন। যার ফলে সৃষ্টির মাঝে মধুর সম্পর্ক সৃষ্টি হচ্ছে এবং পরষ্পরকে দয়া-অনুগ্রহ করছে। আর ৯৯ভাগ রহমত আল্লাহ নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। আল্লাহ কেয়ামতের পূর্বে সে এক ভাগ রহমত উঠিয়ে নিবেন এবং একশত ভাগ পূর্ণ করে কিয়ামতের দিন বান্দার প্রতি একশত ভাগ রহমত বা দয়া প্রদর্শণ করবেন। (মসনদে আহমদ-১৬/৪৭৩)
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-
من كتب بسم الله الرحمن الرحيم تعظيما لله عز وجل غفر الله له- ومن رفع قرطاسا من الارض فيه بسم الله الرحمن الرحيم اجلالا لله عز وجل ان يداس كتب عند الله من الصديقين وخفت عن والديه وان كانا من المشركين يعنى العذاب-
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শণ করে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ লিখবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ লিখিত মাটিতে পড়ে থাকা একটি কাগজের টুকরো কেউ যদি আল্লাহর মহানত্বের দিকে খেয়াল করে উঠিয়ে আনে আল্লাহ তাকে সিদ্দিকীনদের কাতারে শামিল করবেন। তার মাতা-পিতা আজাব ভোগ করতে থাকলে তারা মুশরিক হলেও আল্লাহ তাদের আজাব লাঘব করে দেবেন। (কাশফুল আসরার-১/৮)
আল্লাহর হাবিব আরো এরশাদ করেন-
لا يرد دعاء اوله بسم الله الرحمن الرحيم-
অর্থাৎ- যে দোয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পড়া হয় সে দোয়া ফিরে না (কবুল হয়)। (কাশফুল আসরার-১/৮)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,
لكل شيء أساس وأساس الدنيا مكة لأنها منها دحيت ، وأساس السماوات عَريباً وهي السماء السابعة ، وأساس الأرض عجيباً وهي الأرض السابعة السفلى ، وأساس الجنان جنة عدن وهي سرة الجنان عليها أسست الجنة ، وأساس النار جهنم وهي الدركة السابعة السفلى عليها أسست الدركات ، وأساس الخلق آدم وأساس الأنبياء نوح وأساس بني إسرائيل يعقوب وأساس الكتب القرآن وأساس القرآن الفاتحة وأساس الفاتحة بسم الله الرحمن الرحيم فإذا اعتللت أو اشتكيت فعليك بالفاتحة تشفى.
প্রত্যেক বস্তুর একটি ভিত্তি রয়েছে। দুনিয়ার ভিত্তি মক্কা কেননা তার থেকে পৃথিবীকে বিছানো হয়েছে। আকাশ সমূহের ভিত্তি হল অপিরিচিত বিষয় আর সেটি হল সপ্তম আকাশ। যমীনের ভিত্তি অভিনব বিষয় আর সেটি হল সর্বনি¤œস্তরের যমীন। জান্নাতের ভিত্তি হল জান্নাতে আদন। এ জান্নাত জান্নাত সমূহের মূল যার উপর ভিত্তি করে অন্যান্য জান্নাত তৈরী করেছেন। দোযখের ভিত্তি হল জাহান্নাম যা সর্বনি¤œ গর্ত। যার উপর ভিত্তি করেই গর্ত সমূহ সৃষ্টি করা হয়েছে। সৃষ্টির ভিত্তি আদম আলাইহিস সালাম, নবীগণের ভিত্তি নূহ আলাইহিস সালাম, বনী ঈসরাইলের ভিত্তি ইয়াকুব আলাইহিস সালাম। সকল ঐশী গ্রন্থের ভিত্তি আল কুরআন। কুরআনের ভিত্তি সূরা আল ফাতেহা। সূরা আল ফাতেহার ভিত্তি ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’। যদি তুমি অসুস্থ হয়ে পড় অথবা কোন অসুবিধা দেখা দেয় তোমাকে এ ভিত্তির আমল করতে হবে। আল্লাহর মেহেরবাণীতে তুমি আরোগ্য লাভ করবে। (কুরতবী-১/১১৩, কাশফুল আসরার-১/৯)
আল কুরআনে الرحمن শব্দটির মাধ্যমে করুণাময়ের অসীম করুণার কথা বার বার বলা হয়েছে। যেমন হযরত হারুণ আলাইহিস সালামের ভাষায়-
إِنَّ رَبَّكُمُ الرَّحْمَنُ فَاتَّبِعُونِي وَأَطِيعُوا أَمْرِي [طه : ৯০
“তোমাদের রব করুণাময়, তাই আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মান্য কর।” (ত্বহা-৯০)
রহমানের স্মরণ ভুলে গেলে পরিণতি কি হয় এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ - وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّونَهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ مُهْتَدُونَ [الزخرف : ৩৬ ، ৩৭[
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয় আমি তার জন্য নিয়োজিত করি এক শয়তান। অতঃপর সেই হয় তার সহচর। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে। অথচ মানুষ মনে করে তারা সৎপথেই পরিচালিত হচ্ছে। (সূরা যুখরুফ- ৩৬, ৩৭)
বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর যে দয়া-মায়া ও মহব্বত তা উপলব্ধিতে আনাই হবে তাঁর হক আদায়ের একটি দিক। সৃষ্টির পরতে পরতে দয়াময়ের অসীম দয়া বিদ্যমান। যিনি জীবন দিয়েছেন এটা তাঁর দয়া, চোখ-কান-নাক-জিহ্বা-বিবেক-বুদ্ধি সবই তাঁর দান। তাঁর নামেই ইহজগত আনন্দিত। আল্লামা রশীদুদ্দীন মেইবদী রহমতুল্লাহে আলাইহি বলেন-
ما طابت الدنيا الا باسمه و ما طابت العقبى الا بعفوه و ما طابت الجنة الا برؤيته-
‘এ জগতের সকল আনন্দ তাঁরই নামে, পরকালের সুখ তাঁর ক্ষমাতেই রয়েছে, আর জান্নাতের আনন্দ তাঁর দিদারেই রয়েছে।’ (কাশফুল আসরার-১/২৭)
তাঁর নামের যিকির করার তওফীক, তাঁর ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন এবং দয়াময় রহমানের দিদার আল্লাহ আমাদের নসীব করুন। আমীন। বি ওয়াসিলাতী রাহমাতাল্লীল আ’লামীন।

পবিত্র আশুরার মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব
মাওলানা মামুনুর রশীদ আল-কাদেরী আল আযহারী

আশুরার নামকরণ: অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামগনের মতে-আশুরা হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে যেহেতু মুহাররমের দশ দিনের মধ্যে। অথবা এ উম্মাতকে আল্লাহ তায়ালা দশটি সম্মানে সম্মানিত করেছেন যথা: ১. রজব মাস ইহা আল্লাহর মাস ২. শা’বান ইহা নবীপাকের মাস। ৩. রমজান, ইহা উম্মাতে মুহাম্মাদীর গুনাহ মোচনের মাস। ৪. শবে ক্বদর ইহা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ৫. রমজানের ঈদের দিন, ইহা প্রতিদান বিশেষ দিন ৬. মুুহররমের প্রথম দশ দিন ইহা আল্লাহর যিকরের বিশেষ দিন ৭. আরাফার দিন এই দিনটি বান্দার গুনাহের কাফ্ফারার দিন ৮. কুরবানীর দিন ৯. জুমআ’র দিন এটি সকল দিনের সর্দার। ১০. আশুরার দিন। আবার কারো মতে- আশুরা বলা হয়েছে দশজন নবীকে এই দিনে দশটি নিয়ামাত দানে ধন্য করা হয়েছে।
আশুরার মর্যাদা প্রসঙ্গ:
আল্লাহ তাযালা কুরআনে কারীমে এরশাদ করেছেন- ان عدة الشهور عند الله اثنا عشر شهرا في كتاب الله---- منها اربعة حرم (التوبة৩৬)  অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারটি যা আল্লাহর কিতাবে বর্ণিত তন্মধ্যে চারটি হারাম মাস। ১. রজব ২. জিলক্বদ ৩. জিলহাজ্ব ৪. মুহাররম, আর আশুরা মহররম শরীফেরই দশ তারিখ। এ চারটি মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ, কলহ-কোন্দল করা অবৈধ। হারাম অর্থ অবৈধ বা সম্মানিত; মূলত এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ অবৈধ করে এ মাসগুলোকে সম্মানিত করা হয়েছে।
সাহাবীগণ আরজ করলেন ওগো আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তায়ালা কি যে কোন দিনের অপেক্ষা আশুরার দিনকে অধিক মর্যাদা দান করেছেন? নবী পাক বলেছেন: হ্যাঁ আসমান-জমীনে, পাহাড়- পর্বত, সমুদ্র, লাওহ-কলম, এই দিনে সৃষ্টি করেছে। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-কে সৃষ্টি করেছেন তাঁকে জান্নাতে স্থান দিয়েছেন, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহণ করেছেন, তাঁকে আশুরার দিনে তাঁকে আগুন থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেন, এবং তাঁ প্রিয় সন্তান ইসমাইলকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করলেন, আশুরার দিনে ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মারলেন, আশুরার দিনে হযরত আইয়্যুব আলাইহিস সালামকে রোগ থেকে মুক্ত করেন। আশুরার দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর তাওবা কবুল করেছেন। আলাহ তায়ালা দাউদ আলাইহিস সালাম এর তাওবা কবুল করেছেন, আশুরার দিনে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহণ করেছেন, আর অবশেষে আশুরার দিন কিয়ামাত সংঘটিত হবে।
আশুরার ইবাদাতের ফজিলত ও গুরুত্ব:
আশুরার ইবাদাতের অনেক ফজিলত ও গুরুত্ব রয়েছে- *আবু নসর সনদ পরস্পরায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- মান সামা ইয়াওমান মিনাল মুহাররমি ফালাহু বি-কুল্লি ইয়াওমিন ছালাছুনা ইয়ওমান অর্থাৎ মহাররম মাসে কেউ যদি একটি রোজা রাখে তবে প্রতিটি রোজার বিনিময় ত্রিশটি রোজার সাওয়াব তার জন্য থাকবে। (তাবারানী শরীফ ১১/৭২) *হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন- নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিন রোজা রেখেছেন এবং রোজা রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হযরাতে সাহাবায়ে কিরামগণ আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহুদী ও নাসারাদের সম্মানের ন্যায় হয়ে যাবেনা? রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন আগামী বছর আসলে আল্লাহ চাহেতু মুহররমের নয় তারিখেও রোযা রাখব, অথচ পরবর্তী বছরের বছর আসা পর্যন্ত তিনি ইন্তেকাল করেন। [মুসলিম শরীফ, রোজার অধ্যায়, ১৩৩, আবু দাউদ শরীফ রোজার অধ্যায় ৬৪।]
হযরত মাইমুনার সুত্রে হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত: তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন কোন ব্যক্তি যদি মুহাররমের দশটি রোজা রাখে, তবে তাকে দশ হাজার ফেরেস্তার ইবাদতেরসম পরিমান সাওয়াব দেয়া হয়, তাছাড়া দশ হাজার হাজী ও ওমরাকারীর ন্যায় তাকে পূণ্য দেয়া হয়। যদি কোন ব্যক্তি আশুরার দিন কোন ইয়াতিমের মাথায় স্নেহের হাত রাখেন, উক্ত বালকের মাথার চুল পরিমান জান্নাতে কক্ষ প্রদান করা হবে। আশুরার রাতে কোন মুমিন ব্যক্তিকে তৃপ্তি সহকারে আহার করালে সে যেন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামর সকল উম্মাতকে তৃপ্তি সহকারে আহার করাল। বুখারীর অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় যখন আগম করলেন, তখন ইয়াহুদীরকে রোজা অবস্থায় পেলেন। তিনি তাদেরকে বললেন এটা কোন দিন যে দিনে তোমরা রোজা রাখছ? তারা বলল এই দিনে আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন এবং মুসা আলাইহিস সালামকে তার কবল থেকে মুক্ত করেছেন তাই আমরা এই দিনের সম্মানে রোজা রাখছি। রাসূলুল্লাহ বলেছেন- আমরা তোমাদের চেয়ে মুসা আলাইহিস সালামের প্রতি বেশি হক্বদার। তাই আমরা এই দিনেও রোজা রাখব আগামী বছর পর্যন্ত থাকলে নয় তারিখও রোজা রাখব। উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমানিত হল যে আশুরার রোজা কমপক্ষে দু’টা রাখতে হবে। একটি ৯ তারিখ, যা ইয়াহুদীদের আমলের খেলাফ করার জন্য আর ১০ তারিখ আশুরার রোজা।
কারবালা প্রসঙ্গ ও বাতিলদের আপত্তির জবাব:
আশুরার দিনে বিশেষ করে কারবালায় নবী পাকের পবিত্র নূরানী সন্তান মা ফাতেমার কলিজার টুকরা হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর আওলাদগনের হৃদয় বিদারক ঘটনা। যা আশুরার আনন্দমঘন দিনটিতে সত্যিকারের মুসলমানের হৃদয়পট নাড়া দিয়ে উঠে। আর আশেকের অশ্র“ সিক্ত হয়, কারণ এটি কোন বিধর্মী দ্বারা ঘটেনি ঘটেছে এক শ্রেনীর লেবাসধারী মুসলমানদের দ্বারা। যা মেনে নেয়া যায়না। যদিও বা শাহাদাতের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন তারপরও এই করুণ, বর্বর, নিষ্ঠুরতার সীমালঙ্গিত। আর যে উক্ত শাহাদাত নিয়ে কোন বিদ্রƒপ মন্তব্য করবে সেতো তাদেরই দলভুক্ত। হযরত ইমাম আহমাদ কুস্তালানী (রহ.) বলেন- মুহাররম আসলে যার হৃদয় কাঁেদনা সে নিশ্চয় মুনাফিক জানিও। সবযুগে সব ইমামগন ইয়াজিদ ও তার দোষরদের প্রশংসা করেননি বরং অনেকে তাকে কাফিরও, দুষ্ট, লম্পট, দুরাচার বলে মন্তব্য করেছেন। যেমন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাদ্বি.) এক প্রশ্নের জবাবে বলেছে- ইয়াজিদ ছিল কাফের। কারণ সে পবিত্র হারামাইনের পবিত্রতা নষ্ট করেছে, মদপান জায়েজ করেছে। অন্য এ বর্ণনায় রয়েছে- কেই ইয়াজিদ সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে সেকি ইয়াজিদকে ভাল বলতে পারে? একটি রেফারেন্সও দেখাতে পারবেনা যেটিতে কোন হক্বপন্থী ইমামগন তার প্রশংসা করেছেন। বরং ৭০০ হিজরীতে ইবনে তাইমিয়া তাকে মাগফুর বা ক্ষমা প্রাপ্ত বলে দাবী করে যে, কুসতানতানিয়ার যুদ্ধে ইয়াজিদ অংশগ্রহণ করেছে আর নবী পাক বলেছেন ঐ যুদ্ধে যারা অংশ নিবে তাদের জন্য ক্ষমা ও জান্নাত। অথচ ইবনে তাইমিয়ার অনেক বক্তব্য সরাসরি হাদীস, কুরআনের খেলাফ, এমনকি নবী ও তার আউলাদের ক্ষেত্রে অনেক বিয়াদুবী রয়েছ্ েকি করে তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে? ইবনে তাইমিয়ার এই রেফারেন্সের সূত্রধরে অনেক নামধারী গবেষক ইয়াজিদ ক্ষমা প্রাপ্ত এবং তার সমালোচনা করা যাবেনা বলেছেন তাদের মাঝে সম্প্রতি ওসমানগনি সালেহী, ডা. যাকির নায়ক সহ অনেকে। অথচ কুসতুনতানিয়ার যুদ্ধে ইয়াজিদ অংশগ্রহণ করে নাই এটিই নির্ভযোগ্য মত। এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে ইমাম আহমাদ কুস্তালানী (রা.) বুখারীর শরাহ “এরশাদুস সারী ফি শরহিল বুখারী”তে উক্ত হাদীসের বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করে সাব্যস্ত করছেন যে ঐ যুদ্ধে ইয়াজিদ অংশ গ্রহণ করে নাই বরং তার রাজত্বের পূর্বেই উক্ত যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। বরং ঐ যুদ্ধে তার পিতা হযরত মুয়াবিয়া (রাদ্বি.) অংশ গ্রহণ করেন। আর ইমাম হুসাঈন (রাদ্বি.) ও তাঁর আওলাদগণকে হত্যা করা রাসূলুল্লাহর জন্য কষ্টের বিষয় নয়কি? তাহলে কুরআন শরীফের হুকুকের নিকট কোন উক্তি খাটবে না-ان الذين يؤذون الله و رسوله لعنهم الله في الدنيا و الاخرة (الاحزاب)  অর্থাৎ নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও রাসূলকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া-আখেরাতে তাদের উপর আল্লাহর লা’নত। তাই বলব ইমাম হুসাঈন কে নির্যাতন করে হত্যা করবে আর আল্লাহর রাসূলের জন্য খুশীর বিষয় এ কেমন কথা? তাই যে কেউ ইমাম হুসাইনকে নিয়ে বিদ্রƒপ করবে আয়াতের হুকুম অনুযায়ী দুনিয়া-আখেরাতে তাদের উপর আল্লাহর লা’নত। আল্লাহ তায়ালা এ সমস্ত ফিতনাবাজ লোকদের হতে ঈমান আমল বাচিয়ে রাখুন।
উক্ত রাতের বিশেষ আমল: ১০০ রাকাত ‘সালাতুল খায়ের’ নামায প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ইখলাস ‘(ক্বুলহুয়াল্লাহু আহাদ)’ ১০ বার করে দু’ রাকাত করে পড়বে। এ নামায জামাআ’তের সহিত আদায় করলে বেশি সাওয়াব পাওয়া যাবে। হুজুর গাউছে পাক (রাদ্বি.) গুনিয়াতুত্বালেবীনে শবে বারা’তের অধ্যায়ে বর্ণনা করেন যে উক্ত সালাতুল খায়ের নামায জামাতে পড়ার জন্য বছরে ১৪ রাতে একত্রিত হতেন এর মধ্যে আশুরার রজনী উল্লেখযোগ্য।
হুজুর গাউছে পাক (রাদ্বি.) গুনিয়াতুত্বালেবীনে রজব ও শবে বারা’তের অধ্যায়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন এবং হযরত হাসান বছরী (রাদ্বি.) হতে ৭০ জন সাহাবীর বরাত দিয়ে হাদীস শরীফ খানা বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি উক্ত রাতে এ নামায আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তির প্রতি ৭০ টি রহমাতের নজর দিবেন, প্রত্যেক নজরে দুনিয়া আখেরাতের ৭০টি হাজত পূর্ণ হবে, আর সর্বনিম্ম যে হাজতটি পূর্ণ করেন তা হলো ক্ষমা।

বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম
সত্যের সন্ধানে “শানে মহিউদ্দীন” যুগান্তরকারী অভিযান
মুফতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রব আল্ ক্বাদেরী
খতীব-হযরত মাদ্দা খাঁ (রহ.) জামে মসজিদ, আলীগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি রাহমানুর রাহীম ও গাফুরুর রাহীম এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম তাঁর প্রিয় নবী ও রাসূল হাবীবে খোদা রাহমাতুল্লিল আলামীনের নূরানী পাক ক্বদম মোবারকে, এছাড়া তাঁর পবিত্র নুরানী আওলাদ ও সাহাবায়ে কিরামগণের উপর। তাঁর মর্যাদা এতই ব্যপক যে, তা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেহই জানেন না। যার আদর্শ বিশ্বজনীন মানবতার ইহ-পরকালীন কল্যানের উৎস যা পরবর্তীকালে আল-কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস অনুসৃত ইসলামের সঠিক রূপরেখার একমাত্র নাম “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত”-তথা নাজী জান্নাতী দল। সেজন্য প্রতিটি মুসলমান সেই সঠিক দলের মতাদর্শ অনুসরন না করলে পরকালে আল্লাহর অনুগ্রহ হতে মাহরূম হতে হবে। এ বিষয়ে সঠিক দিক নির্দেশনার জন্য কুমিল্লা শাহপুর দরবার শরীফের গদিনাশীন পীরে কামেল শাহসুফি প্রফেসর মুহাম্মদ পিয়ারা আল্ ক্বাদেরী (মুদ্দাজিল্লুহুল আলী) ’র পরোক্ষ তত্বাবধানে গাজীপুরী ক্বাদেরীয়া সংগঠন, কুমিল্লা কর্তৃক মাসিক “শানে মহিউদ্দিন” প্রকাশিত হয়ে আসছে যা নিয়মিত পাঠে ইসলামের সঠিক ধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআ’তের মতাদর্শ জেনে নিজেকে ঈমানে-আমলে পরিপক্ষ করে পরকালীন মুক্তি প্রাপ্ত দলে অর্ন্তভুক্ত করা সম্ভব। মানুষ আসল সত্য জানতে পারলে কখনও মিথ্যার পেছনে ছুটবেনা, আমাদের মধ্যে এ বিষয়টির খুবই অভাব; প্রচারে প্রসার তথা প্রচার মাধ্যমের চরম উৎকর্ষ্যরে যুগে যদি আমরা সর্বস্তরের মুসলমানদের নিকট হক্ব বা সত্য পৌছে দিতে না পারি বা এর লক্ষে পরিকল্পনা গ্রহণ না করি তবে এর চেয়ে দূর্ভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে? আসলে এ দেশে যারা অলী-আউলিয়া, পীর-মাশায়েখ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে আশ্রয় নিয়েছিল, তারাতো সুন্নীই ছিল। পরবর্তীকালে ইসলামের নামে নানা ভ্রান্ত মতবাদের আর্বিভাবে সরল প্রাণ মুসলমানগন বাতিলের খপ্পরে পড়ে। বিভিন্ন বাতিল মতবাদ প্রচার-প্রসারের পিছনে যে, বহুমূখী কর্মকান্ড কার্যকর করেছিল, সে অনুপাতে ভ্রান্তি মোকাবেলায় সময়োচিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে অতীত সর্ম্পকেও ধারণা লাভ করা যায়, বাংলাদেশের অনেক এলাকার মুসলমানরা নিজেদের আসল পরিচয় জানে না। তারা যে আউলিয়া কিরাম তথা হযরত শাহ্জালাল (রহ.) হযরত শাহ আব্দুল্লাহ গাজীপুরী (রহ.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার অনুসারী এ কথাও ভুলে গেছে। আজকে মিলাদ-ক্বিয়ামকে যারা জগন্যতম বিদআ’ত বলে বিশ্বাস করে, অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে তাদের পূর্ব-পুরুষরা মিলাদ-ক্বিয়াম, ফাতেহা, নযর-নেয়াজ, উরস পালন করত। যখন সরল প্রাণ মুসলমানকে এ সব বিষয়ে ভুল বুঝানো হচ্ছিল তখন তার সফল মোকাবেলা করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। পাশাপাশি কোন ভ্রান্ত মতবাদ সর্ম্পকে ধারণা দিতে বেশ সময়ের ব্যপার ছিল আর এর ফাঁকে ভ্রান্তির জালে জাতী অবরূদ্ধ হয়ে শতধা বিভক্ত। অপর দিকে হক্ব পন্থীরা প্রথম দিকে অতটা গুরুত্ব না দিয়ে উদাসিনতার মধ্যে ডুবে থাকল। এর ফলে তারা তাদের মূল টার্গেটে পৌছে গেল। যেমন:- খারেজী -ওহাবী মতবাদ, এ ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠার পেছনে বহুমূখী অঙ্গ-সংগঠন সারা বিশ্বে একযোগে কাজ করছে। যেমন, মওদুদী, নব্য সালাফী যারা আহলে হাদীস দাবীদার, ভন্ডনবী দাবীদার ইলিয়াস ছয় উসূলি তাবলীগ-ক্বাওমী-হেফাজতী (এদের সংক্ষিপ্ত নাম বিদআ’তী) এদের বাতিল খপ্পরে থেকে বাঁচতে হলে “শানে মহিউদ্দিন”সহ সুন্নীয়তের মুখপত্র সমূহ নিয়মিত অধ্যয়ন করে ইমান- আমল তাজা করতে হবে। পাশাপাশি যেহেতু প্রত্যেক সুন্নী মুসলমানকে বিশেষত: সুন্নী ওলামা-মাশায়েখ, পীর-বুযুর্গ, শিক্ষাবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী সবাইকে সুন্নীয়তের ব্যপক প্রচার-প্রসারের লক্ষে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করতে হবে। আর সম্মিলিতভাবে কোন কাজ করলে কোন দিন তা অসাধ্য হয়না। তার বহু নযীর বিদ্যমান। সকল পীর- মাশায়েখ সুন্নী মতাদর্শের অনুসারী এ হিসাবে তাঁদের দরবার গুলো এক একটি সুন্নীয়তের প্রাণ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠা প্রয়োজন। দেশবাসী সংখ্যার দিক থেকে সুন্নী মুসলমানের সংখ্যা এখনো অনেক বেশি। সমন্বয়হীনতার কারনে জনসম্মুখ্যে প্রকাশ হচ্ছেনা। তাই শুধু ঐক্যের কথা বলে লাভ নেই আসুন যে সব আক্বিদা বিশ্বাসের সাথে ঐক্যমত্য পোষনকারীদেরকে সুন্নী হিসাবে গন্য করা হবে সে বিষয়ে একাত্বতা পোষন করি ও বিরোধীদেরকে বর্জন করি।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআ’তের শুদ্ধ আক্বীদা বনাম বিদআ’তীদের কুফরি ও বাতিল আক্বীদা
১.    মহান আল্লাহ তায়ালা চিরন্তন সকল উত্তম গুনাবলীর অধিকারী; তিনি সর্বপ্রকার দোষ-ক্রটি থেকে পবিত্র। (অন্যদিকে দেওবন্দী আক্বীদা- আল্লাহ তায়ালা মিথ্যা বলতে পারেন (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। যারা এ কথা বলতে পারেন তারা কি করে সুন্নী হতে পারে? বরং তারা মুসলমানও না।
২.    সকল নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালামগন মাসুম (নিস্পাপ)। অন্যদিকে দেওবন্দী আক্বীদা নবী-রাসূলগন কোন কোন সময় গুনাহ করেছেন বা আল্লাহ তায়ালা তাদের থেকে হিফাজতের পর্দা নিয়ে তাদেরকে বান্দা প্রমান করার জন্য দু’ একটি গুনাহ করাইয়াছেন (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। যারা এ কথা বলতে পারেন তারা কি করে সুন্নী হতে পারে? নি:সন্দেহে এরা বাতিল।
৩.    নবী পাক সর্বশ্রেষ্ট এবং সর্বশেষ নবী অতএব যারা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে নেতিবাচক ধারনা করে আর বলে; নবী আমাদের মত মানুষ। বলকে একজন বড় ভাইয়ের সম্মান পাওয়ার যোগ্য। এবং তাঁর পরে কোন নবী আসলে তাঁর খাতামিয়্যাতের (শেষ নবী হওয়ার) কোন অসুবিধা হবেনা। যারা এসমস্ত আাক্বীদা পোষন করছে তারা নি:সন্দেহে কাফের অথচ তারা একশ্রেণীর লোকদের নিকট বড়বড় মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক। সাম্প্রতিক একটি ঘটঁনা- জাকির নায়ক তার এক লেকচারে বলেছে- নবী হওয়া আল্লাহর ইচ্ছাধীন কিন্তু কেউ নবী হতে চাওয়া দোষের কিছু নেই!! আপসোস! বর্তমানে না বুঝে অনেক লোক তাকে মানছে।
৪.    নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের সৃস্টি আর মাটির সৃস্টি যারা বলে তারা সুন্নী নয়।
৫.    নবী পাক শাফায়াতের অধিকারী, তাঁর শাফায়াতের মাধ্যমে হাশরের ময়দানে বিচার কার্য শুরু করা হবে, যারা এ আক্বীদার বিপরীত আক্বীদা পোষন করে তারা সুন্নী নয়।
৬.    সকল নবী-রাসূল জীবিত (ইহা তাদের মু’জিজাহ), শুহাদা অলীগন জীবিত (ইহা তাদের কারামাত)। যারা তাদেরকে মৃত বলবে তারা সুন্নী নয়।
৭.    হাজির-নাযীর অর্থাৎ নবী পাক বর্তমান উম্মাতের সকল প্রকার অবস্থা অবলোকনে স¤পূর্ণ সক্ষম তার নিকট উম্মাতের অবস্থা গোপন নয়। এবং তিনি কোন সময় যে কোন স্থানে উপস্থিত হতে পারেন। এটা যারা মানে না তারা সুন্নী নয়।
৮.    সাহাবায়ে কিরাম সত্যের মান-দন্ড যারা এটা মানে না তারা সুন্নী নয়।
৯.    নবী-রাসূলগনের পরে শ্রেষ্ঠ উম্মাত হযরত আবু বাকার, হযরত উমার ফারুক, হযরত উসমান. হযরত আলী, বদরী সাহাবাগন, উহুদী সাহাবাগন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈনগন।
১০.    নবী পাকের ইলমে গায়েব আছে; যা প্রদত্ত। এটা যারা মানেনা তারা সুন্নী নয়।
১১.    নবী-রাসূল, আউলিয়াগন আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ইন্তেকাল পূর্ববর্তী-পরবর্তী সময়ে সাহায্যকারী এবং তাদের হতে প্রদত্ত ক্ষমতা চাওয়া জায়েজ।
১২.    নবী পাকের আওলাদ এবং সাহাবায়ে কিরামকে ভালবাসা, শ্রদ্ধা-ভক্তি করা ঈমানের পরিচায়ক। আর যারা এগুলোর বিপরীত আচরন দেখাবে তারা এ উম্মাতের মুনাফিক্ব। হাদীসে পাকে তারা খারেজী বিদআ’তী নামে পরিচিত।
১৩.    চার মাজহাবের যে কোন একটি অনুসরন করা অবশ্যই ওয়াজিব এটাকে ‘তাক্বলীদ’ বলে। যারা এটা মানেনা তারা সুন্নী নয়; নি:সন্দেহে বাতিল।
১৪.    ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, জশনে-জুলুস, ক্বিয়াম, উরুস, ফাতেহা, নযর-নেয়াজ, দুরবর্তী স্থানে গিয়ে মাযার যিয়ারত, জাণজার নামাযের পর হাত তুলে দোআ; করা, শবে বারাত, শবে মি’রাজ, আশুরা পালন, কারবালার স্মরনে আলোচনা মুহব্বাত ও ঈমানের আলামাত, (তাজিয়া-মরচিয়া করা নিষিদ্ধ), নামাযের পর হাত তুলে দোআ’ করা, আজানের আগে এবং মুনাজাতের আগে দূরূদ-সালাম পড়ে হাত তুলে দোআ’ করা নি:সন্দেহে কুরআন, হাদীস ইজমা, কিয়াস সম্মত;যারা এগুলো মানে তারা সুন্নী। আর যারা এগুলোর বিপরীত তারা বাতিল, ফাসিক্ব, বিদআ’তী।
১৫.    আউলিয়া কিরামগনের বিলায়াত স্বীকৃতি দেয়া। যারা এটা মানে না তারা বিদআ’তী বাতিল।
আসুন সকল মুসলমানগন কুরআন, হাদীস, ইজমা, ক্বিয়াস, সম্মত উল্লেখিত আক্বীদা পোষন করে মুসলিম ঐক্য গঠন করে বাতিল ও অমুসলিম হায়নাদের হাত থেকে মুক্তি লাভ করে দেশ ও জাতীয় সমৃদ্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করি। অপরদিকে যারা ইসলামের লিবাসে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী কার্যকলাপেলিপ্ত তারা ইয়াহুদীদের ডলার ভোগী পোষ্য গোলাম। এরা যেকোন দেশ-জাতীর দুশমন। তাই আমরা আউলিয়া কিরামের পথে-মতে উজ্জিবিত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের আদর্শে ঐক্যবদ্ব হই। বি-হুরমাতি সাইয়্যেদিল মুরসালীন। আমীন।।
 
হযরত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুমহান চরিত্র ও অনুপম আদর্শ
শাইখুল হাদীস আল্লামা আল্হাজ্ব শাহ মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান মুজাদ্দেদী
পীর সাহেব নয়াকান্দী দরবার শরীফ, হোমনা, কুমিল্লা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র ও আদর্শ ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক সংরক্ষিত। তাই তাঁর চরিত্র ছিল নিরংকুশ, নিঃসন্দেহে ক্রটিমুক্ত, সুমহান ও সর্বশ্রেষ্ঠ। জাতী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য নির্দ্বিধায় গ্রহণযোগ্য আদর্শ। তাঁর চরিত্র ও আদর্শরে ব্যাপারে কারো মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ থাকলেও সে যতই আমলধারী হোক না কেন, দাঁিড়, টুপি ও লেবাসে যতই সুন্নাতের পাবন্দী হোক না কেন, সে কিছুতেই ঈমানদার নয়। তার আমল, লেবাস কোন কাজেই আসবেনা বরং সবই বরবাদ হয়ে যাবে। তাই কবির ভাষায়-
“ইশক্বে মাহবুবে খোদা জিস দেলমে হাছেল নেহি
লাখো মুমিনহো মগার ইমান মে কামেল নেহি”
‘নবীজীর প্রেম ভালবাসা যার অন্তরে নেই, সে লাখো বার মুমিন হলেও ঈমানের দিক থেকে পরিপূর্ন নয়’। প্রিয় নবীজীর চরিত্রের সার্টিফিকেট দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে হাকীমে এরশাদ ফরমান-وانك لعلي خلق عظيم  (ওয়া ইন্নাকা লা-আলা খুলুক্বিন আ’জীম) অর্থাৎ আর নিশ্চয়ই আপনি সর্বোত্তম ও সুমহান চরিত্রের অধিকারী। আর তাঁর চরিত্র ও আদর্শ নির্দ্বিধায়, নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য। তিনি ছাড়া আর অন্য কেহ এ মহান চরিত্র আদর্শের অধিকারী হতে পারেনি। তাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর চরিত্রের গ্রহণযোগ্যতার প্রমান স্বরূপ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- ‘ لقد كان لكم في رسول الله أسوة حسنة (লা-ক্বাদ কানা লাকুম ফি রাসূলিল্লাহি উসওয়াতুন হাসানাতুন) নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য উত্তম আদর্শ’। সকল সৃষ্টির প্রতি তাঁর দয়া ও মমত্ববোধের দরুন তাঁকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ লক্ববে ভুষিত করে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- وما أرسلناك الا رحمة للعالمين (ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আ’লামীন) হে নবী! আমি আপনাকে সমস্ত জগতের জন্য একমাত্র করুনার আধাঁর হিসাবে প্রেরণ করেছি। প্রিয় নবী হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোটা জীবনটাই সকলের জন্য নিরংকুশ ও ক্রুটিহীনভাবে গ্রহণযোগ্য আদর্শ। তিনি হচ্ছেন সর্বকালের মহা মানব। অমুসলিম, চির ইসলাম বিদ্ধেষী দার্শনিক, পন্ডিত, সাহিত্যিক, কবি, রাজনীতিবিদ, সকলেই এক বাক্যে এ কথা অকপটে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এর একটি দৃষ্টান্ত নিম্নে প্রদত্ত্ব হলো-
স্বভাতই মাইকেল হার্টের ন্যায় একজন নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক ও হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বৈচিত্রময় গুনাবলীতে ভুয়সী প্রশংসা করে তাঁকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ব্যক্তিরূপে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। ঞযব ঐঁহফৎবফ – “সু পযড়রপব ড়ভ সড়যধসসধফ (ং) ঃড় ষবধফ ঃযব ষরংঃ ড়ভ ঃযব ড়িৎষফ’ং সড়ংঃ রহভষঁবহঃরধষ ঢ়বৎংরড়হং সধু ংঁৎঢ়ৎরংব ংড়সব ৎবধফবৎং ধহফ সধু নব য়ঁবংঃরড়হবফ নু ড়ঃযবৎং নঁঃ যব ধিং ঃযব ড়হষু সধহ রহ যরংঃড়ৎু যিড় ধিং ংঁড়ৎবসবষু ংঁপপবংংভঁষ ড়হ নড়ঃয ঃযব ৎবষরমরড়ঁং ধহফ ংবপঁষধৎ ষবাবষং.” পৃথিবীর ইতিহাসে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের তালিকায় শীর্ষদেশে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্থাপনে আমার সিদ্ধান্ত বহু পাঠককে বিস্মিত করতে পারে এবং অনেকের নিকট তা প্রশ্নাতীত হতে পারে। কিন্ত ইাতহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় ও বৈষয়িক উভয় পর্যায়েই চরমভাবে সফলকাম ছিলেন। ধর্ম বৈষয়িক বিষয়ের এই অভুতপূর্ব ও নজীরবহীন সংমশ্রণেই তাঁেক ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ব্যক্তিরূপে পরিচিত করে।”
ইনসাইক্লোপেডিয়া অব ব্রিটানিয়ায়    বলা হয়েছে- ড়ভ ধষষ ৎবষরমরড়ঁং ঢ়বৎংড়হধষরঃরবং ড়ভ ঃযব ড়িৎষফ, সড়যধসসধফ (ং) ধিং ঃযব সড়ং ংঁপপবংংভঁষ’ পৃথিবীর সমগ্র ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের মধ্যে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সর্বাধিক সফলতা লাভ করেন।” বস্তুত বিশ্ব মনীষার শ্রীবৃদ্ধি ও উৎকর্ষ সাধনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবদান অনস্বীকার্য। এ বিষয়ে মনীষী আলফ্রেড দ্যা লামার্টিন-এর অমর উক্তি প্রণিধাযোগ্য-
ঢ়যরষড়ংড়ঢ়বৎ, ড়ৎধঃড়ৎ, ধঢ়ড়ংঃষব, ষবমরংষধঃড়ৎ, ধিৎৎরড়ৎ, পড়হয়ঁবৎড়ৎ ড়ভ রফবধং, ৎবংঃড়বৎ ড়ভ ৎধঃরড়হধষ ফড়মসধং, ড়ভ ধ পঁষঃ রিঃযড়ঁঃ রসধমব ঃযব ভড়ঁহফবৎ ড়ভ ঃবিহঃু ঃবৎৎবংঃৎরধষ বসঢ়রৎবং ধহফ ড়ভ ড়হব ংঢ়রৎরঃঁধষ বসঢ়রৎব, ঃযধঃ রং সঁযধসসধফ (ং) ধং ৎবমধৎফং ধষষ ংঃধহফধৎফং নু যিরপয যঁসধহ মৎবধঃহবংং সধু নব সবধংঁৎবফ, বি সধু বিষষ ধংশ, রং ঃযবৎব ধহু সধহ মৎবধঃবৎ ঃযবহ যব? দার্শনিক, বাগ্নী, ধর্ম প্রবর্তক, আইন প্রণেতা, মতবাদ বিজয়ী ধর্মমতের এবং প্রতিমাবিহীন উপাসনা পদ্ধতির পুন:সংস্থাপক, বিশটি পার্থিব সাম্রাজ্যের এবং একটি ধর্ম-সাম্রাজ্যের সংস্থাপক কর্তা এ দেখ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে সমস্ত মাপকাটির দ্বারা মানবী মহত্ত্ব পরিমাপ করা হয়ে থাকে, সে গুলোর প্রত্যেকটির আলোকে তাঁকে বিবেচনা করা হলে, আমরা এ কথা সহজেই জানতে পারি, কোন মানব কি তাহা অপেক্ষা মহত্তর? (চলবে)

গত সংখ্যার সংশোধনী
ভুল: اذا صلي أحدكم علي الميت যদি তোমাদের কেহ কোন মৃত ব্যক্তির উপর জানাযার নামায পড়ে।
শুদ্ধ: জানাযা নামাযের পর দোআ’ করার জন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে নির্দেশ দিয়েছেনعن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم اذا صليتم الجنازة علي الميت فاخلصوا له بالدعاء (أبوداؤد - مشكاة
হজরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা যখন কোন মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পড়বে তখন তার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া’ করবে। (আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ ১খন্ড, ১৪৬ পৃষ্ঠা, অধ্যায়, জানাযার লাশ নিয়ে চলা ও জানাজার নামায।) উক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা স্পস্টত প্রমানিত যে, জানাযার পর মোনাযাত করার নির্দেশ রয়েছে। বিনা কারনে আসল অর্থ পরিবর্তন করা বা রূপক অর্থ গ্রহণ করা নাজায়েজ।

আশ্শিফা বি-তা’রীফি হুকুক্বিল মুস্তফা
(মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যাবতীয়     অধিকারের পরিচয় সম্বলিত সমাধান)
মুল: ইমাম ক্বাযী আয়ায আল মালেকী (রাহমাতুল্লাহি তায়া’লা আলাইহি)
অনুবাদ: মুহাম্মাদ মামুনুর রশীদ আল্ ক্বাদেরী আল্ আযহারী

(পূর্বে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে)
অথচ তিনি (আল্লাহ তায়া’লা) তাঁর প্রশংসা হতে অংশ হিসাবে رؤف ورحيم (রাউফ-রাহীম) প্রশংসা মালা দ্বারা আবৃত করেছেন। এবং তাকে সৃষ্টির নিকট একজন সত্যবাদী দূত হিসাবে প্রেরন করেছেন। وجعل طاعته طاعته (ওয়া জাআ’লা ত্বাআতাহু ত্বআতাহ) অর্থাৎ তাঁর নবী পাকের) অনূসরনই তারঁই (আল্লাহ তায়ালার) অনুসরন। নবীপাকের সিদ্বান্তই তার সিদ্বান্ত কওে দিয়েছেন। من يطع الرسول فقد أطاع الله  (মায়্যুত্বি উররাসূলা ফাক্বাদ আত্বাআল্লাহ) অর্থাৎ যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এর অনুসরন করল (প্রকৃতপক্ষে) তিনি আল্লাহ তায়া’লার অনুসরন করল। আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেছেন وماارسلناك الا رحمة للعالمين (ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আ’লামীন) অর্থাৎ আপনাকে আমি সমগ্র জাহানের জন্য রহমত রূপে প্রেরন করেছি। ইমাম আবু বকর মুহাম্মাদ বিন ত্বাহের বলেন- মহান আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রহমতের পোশাক বা সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত করেছেন। যাতে তিনি হতে পারেন তার সকল জীবনাদর্শ দ্বারা সকল সৃষ্টির উপর রহমত। যে তার এ রহমতের ভাগী হবে সে দু’জাহানের সকল অপছন্দ কাজ হতে মুক্তি প্রাপ্ত এবং দু’জাহানে সকল পছন্দনীয় বিষয়ে অর্জনকারী।
আপনারা দেখেননি যে, আল্লাহ আয়া’লা তাঁর শানে কি বলেছেন وماارسلناك الا رحمة للعالمين- তাই তাঁর হায়াতে জিন্দীগি ছিল রহমত; ইন্তেকালপরবর্তীও রহমত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান  حياتي خيرلكم ومماتي خيرلكم- (হায়াতী খাইরুল্লাকুম ওয়া মামাতী খাইরুল্লাকুম) অর্থাৎ তোমাদের জন্য আমার হায়াতে জিন্দীগিও কল্যাণ; আমার ইন্তেকাল পরবর্তীও তোমাদের জন্য কল্যাণ (অর্থাৎ দু’টোই কল্যানের ক্ষেএে সমান)। তিনি আরো এরশাদ করেছেন- اذا أراد الله رحمة بأمة قبض نبيها قبلها فجعله زلها فرطا وسلفا “অর্থাৎ যখন আল্লাহ তায়ালা কোন উম্মাতের উপর রহমত করতে চান তখন ঐ উম্মাতের নবীকে রহমত প্রপ্তির পূর্বে উঠিয়ে নেন। এবং তাঁকে উম্মাতের ওসিলা/শাফায়া’তের জন্য স্থলাভিষিক্ত করেন”।
ইমাম সমারকান্দী (রহ.) বলেন: رحمة للعالمين এর অর্থ হবে তিনি জ্বিন-ইনসানের জন্য রহমত, বলা হয়েছে তিনি সকল সৃষ্টির জন্য রহমত। মুমিনদের জন্য রহমত হলো হেদায়াত দ্বারা, আর মুনাফিকদের জন্য রহমত হলো হত্যা করা হতে নিরাপদ দ্বারা। (অর্থাৎ নবী পাকের জামানার মুনাফিকদেরকে হত্যা করার অনুমতি থাকার পরও তিনি তাঁর রহমতের কারনে তাদেরকে হত্যা না করে দুনিয়াতে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন), এবং কাফেরদের জন্য রহমত হলো বিলম্বে আজাব দেয়া। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়ল্লাহ আনহুমা বলেন তিনি মুমিন-কাফির সকলের জন্য রহমত। সুতরাং পরিপূর্ণ প্রাপ্ত হয়েছে মুমিনগন আর মিথ্যাবাদী উম্মাতেরা যে সমস্ত আযাব প্রাপ্ত হয়েছে তা নবী পাকের শান-মান না প্রকাশ করার কারনে।
বর্ণিত আছে- নবী পাক জিব্রাইল (আ.) -কে বললেন তুমি কি এ রহমত হতে কিছু পেয়েছ? জিব্রাইল আ. বলেন জি হ্যাঁ আমি শেষ পরিনতি সর্ম্পকে খুবই ভীত ছিলাম অত:পর আল্লাহ তায়ালা আমার উপর প্রশংসা করেন اذا أراد الله رحمة بأمة قبض نبيها قبلها فجعله لها فرطا وسلفا আর ইহাতে আমাকে আশ্বস্থ করা হলো। হযরত ইমাম জা’ফর সাদেক্ব রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত-আল্লাহ তায়ালার বাণী- فسلام لك من أصحاب اليمين অর্থাৎ জান্নাতবাসীদের পক্ষ থেকে আপনার জন্য সালাম। আপনার অস্তিত্বের, আপনার সম্মানের কারনে তাদের উপর সালাম শান্তি বর্ষিত।
আল্লাহ তায়ালার এরশাদ ফরমান الله نور السموات والارض مثل نوره (আল্লাহু নূরুস্সামাতি ওয়াল আরদ্ মাছালু নূরিহী) (সুরা নুর) হযরত কা’বুল আহবার (রা.) হতে ও ইবনে যুবায়ের (রাদ্বি.) বলেন অত্র আয়াতে দ্বিতীয় নুর দ্বারা উদ্দেশ্য হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহর বাণী- مثل نوره (মাছালু নুরিহী) তাঁর পবিত্র নুরের উদাহরণ অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নুর মোবারকের উদাহরণ। হযরত সাহল বিন আব্দুল্লাহ বলেন- আয়াতের ১ম নুরের অর্থ হলো আল্লাহ তায়ালা আসমান-জমীনের হাদী বা হেদায়াতকারী অত:পর ২য় নূর মাছালু নুরিহী হলো নুরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য কেননা তাঁর নূর মোবারক তাঁর সকল পিতামহের পৃষ্ঠদেশে জমা ছিল, যা একটি প্রদীপের ন্যায়। আয়াতে উল্লেখিত مصباح (মিছবাহ) প্রদীপ হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ক্বালব মোবারক, الزجاجة (আযজুজাতু) সচ্ছ কাচ’ হলো তাঁর বক্ষ মোবারক, উজ্জল তারকার ন্যায় হলো তাঁর ঈমান এবং হিকমাত দ্বারা পরিপূর্ণ। আর আয়াতে বর্ণিত يوقد من شجرة مباركة (ইউক্বাদু মিন শাজারাতিম মোবারাকাতিন) বরকতময় বৃক্ষ’ অর্থাৎ হযরত ইব্রাহীম আলাহিস সালাম হতে প্রজ্জলিত। বরকতময় বৃক্ষের উদাহরণ হলো আল্লাহর বাণী-يكاد زيتها يضئ)  (ইয়া কাদু যাইতুহা ইউদ্বিউ) অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াতের পবিত্র তৈল দ্বারা আলোকময় হয়। এ তৈল প্রজ্জলিত হওয়ার পূর্বেই মানুষের জন্য প্রকাশ হয়ে যাবে। বলা হয়েছে এ আয়াতে কারীমা দ্বারা অন্য কিছুও উদ্দেশ্য হতে পারে, আর এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালাই অধিক ভাল জানেন।
অবশ্যই আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনে পাকে এ স্থান ছাড়াও অন্য স্থানেও নবী পাককে نور নূর, সিরাজ, মুনীর হিসাবে নামকরণ করেছেন। মহান আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ ফরমান- قد جاءكم من الله نور وكتاب مبين (ক্বাদ জা-আকুম মিনাল্লাহি নুরুও-ওয়া কিতাবুম মুবিন) (সুরা মায়েদা-১৫) তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে নূর (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও কিতাব (আল-কুরআনুল কারীম)। আবার অন্যত্র আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ ফরমান- ياأيها النبي اناأرسلناك شاهدا ومبشرا ونذيرا وداعيا الي الله باذنه سراجا منيرا (ইয়া আয়্যুহান্নাবিয়্যু ইন্না আরসালনাকা শাহেদাও ওয়া মুবাশশিরাও ওয়া নাযীরাও ওয়া দায়ি’য়ান ইলাল্লাহি বিইযনিহী ওয়া সিরাজাম মুনীরা) অর্থাৎ হে গায়েবের সংবাদদানকারী! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি একজন হাজের-নাযের, শুভ-সংবাদদাতা, ভীতি প্রদর্শনকারী এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর দিকে আহ্বানকারী উজ্জলপ্রদীপ-দ্বীপাদ্বার রূপে। এ ভাবে অন্য আয়াতে
الم نشرح لك صدرك الي اخرالسورة (আলাম নাশরাহ লাকা সাদরাকা) অর্থাৎ আমি কি আপনার বক্ষ মোবারক কে প্রশস্ত করে দেইনি? সূরার শেষ পর্যন্ত। شرح (শারাহা) وسع (ওয়াস্সাআ’) অর্থাৎ তিনি প্রশস্ত করেছেন। صدر (সদর) দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য হলো (قلب) ক্বালব হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন- شرحه بنور الاسلام) শারাহাহু বি নূরিল ইসলাম (তাঁর বক্ষমোবারককে ইসলামের নুর দ্বারা প্রশস্ত করে দিয়েছেন।
হযরত সাহল রাহ. বলেন بنور الرسالة (বি নূরির রিসালাত) রিসালাতের নূর দ্বারা আপনার বক্ষ মোবারককে প্রশস্ত করেদিয়েছেন। হযরত হাসান বছরী রাহ বলেন-হিকমাত এবং ইলম দ্বারা পরিপূর্ন হয়েছে। আয়াতের অর্থে বলা হয়েছে-তিনি আপনার ক্বলবকে পবিত্র করেননি? যাতে কোন প্রকার ওয়াস-ওয়াসা ক্বলব গস্খহণ করতে না পারে।
ووضعنا عنك وزرك الذي انقض ظهرك (ওয়াওয়া দ্বা’না আন্কা বিযরাকা* আল্লাযি আনক্বাদ্বা যাহরাকা) আমরা কি আপনার বোঝাকে সরিয়ে দেইনি যা আপনার পৃষ্ঠকে নুয়ে দিয়েছে?। বলা হয়েছে- আপনার অতীতে গুনাহ করা হতে পবিত্র রেখেছেন অর্থাৎ নবুওয়্যাত প্রকাশের পূর্বে। বলা হয়েছে- এ আয়াত শরীফ দ্বারা উদ্দেশ্য জাহিলিয়্যাতের দিন গুলো জাহিলিয়্যাতের কর্ম-কান্ড হতে পবিত্র রাখার অর্থে। আরো বলা আছে- এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য রিসালাতের দায়িত্ব পৌছানো পর্যন্ত আপনার বোঝাকে হালকা করেছি।
হযরত মাওয়ারদী ও সুলামি রাহ. বলেন- যদি এরূপ না হত তবে গুনাহ আপনার পৃষ্ঠদেশ ভারী হত। হযরত ইমাম সামারকান্দী রাহ. বলেন- ওযারা ফা’না লাকা যিকরাকা ইয়াহইয়া ইবনে আদম রাহ. বলেন-নবুওয়াত দ্বারা আপনার শান-মা কে বুলন্দ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- যখন আমার যিকির করা হবে তখন আমার সাথে আপনার যিকির করা হবে এ কালিমায় لا اله الا الله محمد رسول الله (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) في الاذان والاقامة (ফিল আযানে ওয়াল ইক্বামাতে) এবং আযানে, ইক্বামাতে। হযরত ইমাম আবুল ফদ্বল কাজী আয়াজ (রাহ.) বলেন- আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর নিজের সিফাতী নাম মোবারক নবী পাকের নাম হিসাবে নির্ধারন যা তাঁর জন্য এ মহান নিয়া’মাত, উন্নত অবস্থান, এছাড়া তাঁর ক্বলব মোবারক ঈমান ও হেদায়াতের জন্য প্রশস্ত করে দিয়েছে। ইহা তাঁর উপর এক মহান কারামাত। আরও তিনি ইলম ও হিকমা সংরক্ষনের জন্য তাঁর বক্ষ মোবারক প্রশস্ত করে দিয়েছেন। আর জাহিলিয়্যাতের সকল প্রকার অপবিত্রতা ও বোঝা হতে তাঁকে মুক্ত রেখেছেন। আল্লাহ তায়ালা অপছন্দ করেছেন, যে দ্বীনটি সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী সে দ্বীনের মধ্যে জাহিলিয়্যাতের সে সমস্ত বিষয় গুলোর উপর চলা। এবং তাঁর রিসালাত-নবুয়্যাতের দায়িত্ব পালনে সহজ করে দিয়েছেন যাতে করে সহজে মানুষের নিকট পৌছাতে পারেন, যা আমি তাদের নিকট অবতীর্ন করেছি। তাঁর মহান অবস্থান, মর্যাদা, তাঁর যিকির বুলন্দ, এবং তাঁর নাম মোবারকই মহান আল্লাহর নাম মোবারক হিসাবে নির্ধারন সম্পর্কিত বিষয়ে সতর্ক করানো।
হযরত ক্বাতাদা (রাদ্বি.) বলেন ورفعنا لك ذكرك (ওয়া রাফা’না লাকা যিকরাকা) আলাহ তায়ালা দুনিয়া-আখেরাতে তাঁর যিকির বুলন্দ করেছেন্ এমন কোন খতীব নেই, নেই কোন তাশাহহুদ পাঠকারী, নেই কোন সালাত আদায়কারী ব্যক্তি, যে এ কথা বলেনা اشهد ان لا اله الا الله محمدا رسول الله  (আশ্হাদু আন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ) অর্থাৎ সকলেই এ শাহাদাতের স্বীকৃতি দিতে হয় হযরত আবু সাঈদ (রাদ্বি.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন- أتاني جبريل عليه السلام فقال: ان ربي وربك يقول تدري كيف رفعت ذكرك فقلت:الله ورسوله اعلم قال:اذا ذكرت ذكرت معي (আতানী জিবরিলু আলাইহিস্ সালাম ফা-ক্বলা ইন্না রাব্বি ওয়া রাব্বাকা ইয়া-ক্বুলু তাদরি কাইফা রাফা’তু যিকরাকা? ফা-ক্বুলতু আল্লাহু ওয়া রাসূলুহু আ’লাম ক্বালা : ইযা যুকিরতু যুকিরতা মায়ী’) অর্থাৎ একদা আমার নিকট হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম আসলেন অত:পর আমাকে বললেন আমার-আপনার রব বললেন আপনি কি জানেন যে, কিভাবে আমি আপনার যিকিরকে সমুন্নত করেছি? আমি (বর্ণনাকারী সাহাবী রাদ্বি.) বললাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক ভাল জানেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: (আল্লাহ তায়ালা বললেন) যখন আমার যিকির করা হবে, তখন আমার সাথে আপনার যিকিরও করা হবে (হাদীসে কুদসী শরীফ) جعلت تمام الايمان بذكرك معي (জাআলতু তামামাল ঈমানে বি-যিকরিকা মায়ী’)।
হযরত আতা (রাদ্বি.) বর্ণনা করেন আমার সাথে আপনার যিকিরকে ঈমানের পরিপূর্ণতা করেছি। جعلتك ذكرا من ذكري فمن ذكرك ذكرني (জাআলতুকা যিকরাম মিন যিকরী ফা-মান যাকারাকা যাকারানী) অর্থাৎ আপনার যিকিরকে আমার যিকিরের স্থলাভিষিক্ত করেছি, যে আপনার যিকির করবে সে যেন আমার যিকিরই করলো। قال جعفر بن محمد الصادق: لا يذكرك أحد بالرسالة الا ذكرني بالربوبية (ক্বালা জা’ফারুবনু মুহাম্মাদ আস্সাদিক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) লা-ইয়ায কুরুকা আহাদুন বির-রিসালাতি ইল্লা যাকারানী বির-রুবুবিয়্যাতি অর্থাৎ হযরত ইমাম জা’ফার বিন মুহাম্মাদ সাদিক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন যে কেহ আপনার রিসালাতের (ইয়া রাসূলাল্লাহ) যিকির করলো সে যেন আমার রুবুবিয়্যাতের (ইয়া রাব্বাল আলামীন) যিকির করলো। কেউ এক্ষেত্রে ইঙ্গিত করেছেন مقام الشفاعة (মাক্বামুশ্ শাফাআত)
নবী পাকের طاعة ত্বাআত অনুসরনকে আল্লাহ তায়ালার অনুসরন হিসাবে উল্লেখ এবং নবী পাকের নাম মোবারক তাঁর (আল্লাহর) নাম মোবারক। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ ফরমান- أطيعوا الله والرسول  (আত্বীউল্লাহা ওয়ার-রাসূলা) অর্থাৎ তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরন করো। أمينوا بالله ورسوله  (আমীনু বিল্লাহি ওয়া রাসূলাহু) অর্থাৎ তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ইমান আনো। এ আয়াতে পাকের واو (ওয়াও) বর্ণটি আত্বফে মুশাররিকা অর্থাৎ পূর্বে-পরে দু’টি এক-অভিন্ন বুঝানোর জন্য আসে। আর এভাবে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত অন্য কাউকে আল্লাহর সাথে একই বাক্যে একত্রিত করা জায়েয হবেনা।
হযরত হুজয়ফা (রাদ্বি.) নবী পাক হতে বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন لا يقولن احدكم ماشاء الله فلان ولكن ماشاء الله ثم شاء فلان অর্থাৎ তোমাদের কেউ যেন এ কথা না বলে আল্লাহ যা চান অমুক ব্যক্তি যা চান, কিন্তু এ কথা বলবে আল্লাহ যা চান অত:পর অমুক যা চান। হযরত ইমাম আলী খাত্তাবী (রাহ.) বলেন নবী পাক সাহাবায়ে কিরামগনকে এ আদব শিক্ষা দিয়েছেন যাতে করে তাঁরা আল্লাহ তায়ালার চাওয়ার পূর্বে কারো চাওয়া স্থান না দেন। হযরত ইমাম আলী খাত্তাবী (রাহ.) বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে এ আদবের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন যে আল্লাহর চাওয়া সকলের চাওয়ার পূর্বে প্রধান্য দেয়ার জন্য। তাই হাদীসে উল্লেখিত ثم ছুম্মা নসখে তারাখীর জন্য ব্যবহার হয়েছে যা واو ওয়াও হরফের বিরোধী। আর ওয়াও আসে অংশীদারিত্ব বুঝানোর জন্য। অনুরূপ অন্য হাদীসে পাকে এসেছে নিশ্চয় একজন খতীব নবী পাকের সামনে খুতবা দিতে শুরু করলেন এ বলে-من يطيع الله ورسوله ومن يعصهما  অত:পর নবী পাক তাকে বললেন بئس خطيب القوم انت! তিনি সমালোচনা করে বললেন দাঁড়াও বা তুমি চলে যাও। আবু সুলাইমান বলেন হরফে কিনায়া দ্বারা দু’টি ইসমের মধ্যে একত্রিত করা তিনি অপছন্দ করেছেন যেহেতু সমমাননা বুঝায়। আবার কারো মতে من يعصهما  বলে থামার ধরুন তিনি অপছন্দ করেছেন। আর আবু সুলাইমান এর মতে সহীহ হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন ومن يعصهما فقد غوي বলা অধিক শুদ্ধ। ومن يعصهما এর মধ্যে থামার ব্যাপারে কোন কিছু উল্লেখ করেন নাই। অবশ্য এ ক্ষেত্রে তাফসীরকারকগন ও অভিধানবেত্তাগন মতানৈক্য করেছেন।
মহান আল্লাহ তায়ালার বানী- ان الله وملائكته يصلون علي النبي  (ইন্নাল্লাহা ওয়া মালায়িকাতাহু ইউস্বাল্লুনা আলান্নাবিয়্যি) يصلون দ্বারা আল্লাহর ও ফেরেস্তাদের সালাত পড়ার বিষয়টি কি একত্রে বর্তাবে না এরকম নয়? কিছু ওলামাগন মত দেন দুটি একত্রে হবে। আর অন্যরা তুলনার কারনে নিষেধ করেছেন। তারা يصلون জমীর বা সর্বনামটি ফেরেস্তাদের অর্থে ব্যাবহার করেছেন সুতরাং এতে করে আয়াতের উহ্য অর্থ দাঁড়ায় ان الله يصلي وملائكته يصلون علي النبي – (ইন্নাল্লাহা ইউসাল্লি ওয়া মালাইকতাহু ইউসাল্লুনা আলান্নাবীয়্যি)
অবশ্যই হযরত উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন- আল্লাহর নিকট আপনার মর্যাদা হতে এও যে, جعل طاعتك طاعته فقد قال تعالي من يطيع الرسول فقد أطاع الله (জাআ’লা ত্বা-আতাকা ত্বা-আতাহু ফাক্বাদ ক্বালা তায়া’লা (মায়্যুতী উর রাসূলা ফাক্বাদ আত্বা’আল্লাহ) আপনার অনুসরনই তাঁর (আল্লাহর) অনুসরন করেছেন নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন- যে রাসূলের অনুসরন করলো সে আল্লাহর অনুসরনই করলো।
আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ ফরমান-قل ان كنتم تحبون الله فاتبوني يحببكم الله  (ক্বুল ইনকুনতুম তুহিব্বুনাল্লাহা ফাত্তাবিউ’নী ইউহবিব কুমুল্লাহা) আপনি বলুন যদি তোমরা আল্লাহকে ভাল বাসতে চাও আমার অনুসরন করো এতে আল্লাহ তোমাদেরকে ভাল বাসবেন। বর্ণিত আছে- নিশ্চয়ই উক্ত আয়াত খানা যখন অবতীর্ন হয় মক্কার মুশরিকরা বলতে শুরু করলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম চায় আমরা তাকে ‘হানান’ হিসাবে মেনে নেই, যেমনি খ্রীস্টানরা ঈসা আলাইহিস সালাম কে ‘হানান’ হিসাবে মেনে নিয়েছে। অত:পর আল্লাহ তায়া’লা উক্ত আয়াত অবতীর্ন করেন- قل أطيعوا الله والرسول (ক্বুল আত্বীউল্লাহা ওয়ার রাসূলা) বলুন তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরন করো। নবী পাকের অনুসরণ কে আল্লাহ তাঁর নিজ অনুসরণ হিসাবে নির্ধারন করলেন।

পবিত্র গেয়ারভী শরীফের গুরুত্ব ও ইতিহাস
মাওলানা খোরশেদ আলম আল্ ক্বাদেরী

এম, এম, এফ, বি, এ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর)
গেয়ারভী শব্দাটি উর্দু, এখানে ১১ সর্ম্পকিত রজনী উদ্দেশ্য, আরবী মাস রাত্র দিয়ে গননা শুরু, তাই মুহাররমের দিক থেকে ১০ তারিখ দিবাগত রাত্রিকে (১১) গেয়ারভী শরীফ বলে। নিম্নে উক্ত রজনীর সংক্ষিপ্ত গুরুত্ব ও ইতিহাস তুলে ধরছি বি-ইযনিল্লাহ
হাকীমুল উম্মাত মুফতি আহমাদ ইয়ার খাঁন নঈমী গুজরাটি (রাহ) স্বীয় রচিত তাফসীর গ্রন্থ ‘আহসানুত ত্াফসীর’ সংক্ষেপে তাফসীরে নঈমী’র প্রথম পারা সূরা বাক্বারা ২৭ নং আয়াত, পৃষ্ঠা ২৯৭ তে হযরত আদম এর তাওবা প্রসংগে সংক্ষেপে গেয়ারভী শরীফের ভিত্তি ও ইতিকথা বর্ণনা করেন। সেখানে তিনি প্রসিদ্ধ আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগনের গেয়ারভী শরীফ পালনের ইতিহাস বর্ণনা করেন।
১.    হযরত আদম এর গেয়ারভী শরীফ পালন- সমগ্র মানব জাতীর আদি পিতা-মাতা হযরত আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালাম নিষিদ্ধ গন্ধব গাছের ফল খেয়ে আল্লাহর হুকুমে দুনিয়াতে এসে কৃতকর্মের মাসূল হিসাবে ৩৬০ বছর কাঁদলেন এবং তাওবা করলেন, অবশেষে নবীপাকের অসীলায় তাদের তাওবা কবুল করা হলো। যেদিন তাদের তাওবা কবুল করা হয় ঐ দিনটি ছিল মুহাররমের ১০ তারিখ, আর ঐদিন রাতে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া স্বরূপ যে ইবাদাত করেছেন ঐ ইবাদাতই গেয়ারভী শরীফ আর ঐ রাত্রটি ছিল আরবী চান্দের হিসাবে ১১ তারিখ।
২.    হযরত নুহ আলাইহিস সালাম মহা প্লাবনের সময় রজব মাসের ১০ থেকে মুহাররমের ১০ তারিখ পুর্যন্তু ছয় মাস ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে কিশতির মধ্যে ভাসমান অবস্থায় ছিল। অতপর আল্লাহ তায়া’লার অশেষ রহমতে ৬ মাস পর তাঁর কিশতী জুদী পর্বতের ছুড়ায় ঠেকল। পানি কমে আশলে কিশতী হতে নেমে আসেন, যেদিন তিনি প্লাবন থেকে মুক্তি পেলেন সেদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। আর ১০ তারিখ দিবাগত চান্দ্র মাস অনুযায়ী ১১ তারিখ সকল সঙ্গীদের নিয়ে রাতভর শুকরিয়ার ইবাদাত করলেন। এটি ছিল হযরত নূহ আলাইহিস সালামের গিয়ারভী শরীফ।
৩.    হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে কোনো রকমে হক্বের দাওয়াত থেকে বিরত রাখতে না পেরে এবং সকল প্রকার বাহাস-মোনাজারায় নিস্তানাবুদ হয়ে অবশেষে জালিম বাদশাহ নমরুদ হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করলো। চল্লিশদিন পূর্যন্ত তাঁকে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডের মধ্যে রাখা হলো। অবশেষে তাঁর একটি পশম মোবারকর জ্বালাতে পারেনি। আল্লাহ তায়ালার হুকুমে অগ্নিকুন্ড ফুল বাগানে পরিণত হয়। যেদিন তিনি আগুন থেকে মুক্তি পেলেন ঐদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। ১০ তারিখ দিবাগত রাতে ১১ তারিখে তিনি আল্লাহ তাযালার দরবারে শুকরিয়ার ইবাদাত করেন। আর এটি ছিল হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের গিয়ারভী শরীফ পালন।
৪.    হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম আপন প্রিয়তম পুত্র হযরত ইফসুফ আলাইহিস সালামকে হারিয়ে চল্লিশ বছর একাধারে কান্নারত ছিলেন। কুরআন শরীফে ১২ পারায় সূরা ইউসুফে বর্নিত বহু ঘটনার পর অবশেষে তিনি হারানো পুত্র কে ফিরে পেলেন এবং তাঁর অন্ধ চক্ষু হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের জামার বরকতে ফিরে পেলেন। এই দীর্ঘ ছল্লিশ বছরের বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার দিনটি ছিল আশরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। হযরত ইয়াকুুব আলাইহিস সালাম দিনের বেলায় মুক্তি পেয়ে ১১ রজনীতে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়ার বিশেষ ইবাদাত করলেন আর এটি ছিল হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের গেয়ারভী শরীফ।
৫.    হযরত আইয়্যুব আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ তায়ালার পরীক্ষা স্বরূপ দীর্ঘ ১৮ বছর কুষ্ঠ রোগে ভুগছিলেন। এত বেশি পোকা তাঁর শরীর মোবারকে ছিল যে পুরা শরীরের গোশত খেয়ে হার দেখা যেত। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা ১৮ বছর পর যে দিনটিতে রোগ থেকে মুক্তি দিলেন সে দিনটি ছিল আশুরা তথা ১০ মুহাররমের দিন। আর তিনি রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে ১১ রজনীতে ইবাদত্-বন্দীগি করেন। আর এটি ছিল তাঁর গেয়ারভী শরীফ।
৬.    হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও বনী ইসরাইলকে মিশরের অধিপতি ফেরাউন অনেক কষ্ট দিয়েছিল। আল্লাহর নবীর সাথে বেয়াদুবী যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং তার খোদায়ী দাবীর মেয়াদ ফুরিয়ে যায়, ঠিক তখনি আল্লাহর নির্দেশে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর অনুসারী নিয়ে মিশর ছেড়ে চললেন। প্রথিমধ্যে নীলনদ পারি দিতে হবে অন্য দিকে ফেরাউনের বিশাল বাহিনী পিছনে আক্রমনের জন্য ফেরাউন নিজে নের্তৃত্ব দিয়ে আসছে কিন্তু কিভাবে নীলনদ পাড়ি জমাবে? খোদায়ী নির্দেশ আসল হে মুসা তোমার হাতের লাঠি পানিতে নিক্ষেপ কর, তিনি নিক্ষেপ করলেন অমনিতে ১২টি রাস্তা হয়ে গেল। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর অনুসারীদেরকে নিয়ে নির্বিঘেœ পানির মধ্যখান দিয়ে তৈরী রাস্তা দিয়ে পার হয়ে গেলেন। আর পরিনতিতে ফেরাউন তার বিশাল সৈন্য সামন্ত নিয়ে নীল নদে ডুবে মরলেন। যে দিন এঘটনায় মুসা নবীর মুক্তি তাঁর দুশমন ফেরাউনের পানিতে ডুবে সমূলে ধ্বংস সেদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। তাই হযরত মুসা আলাইহিস সালাম মহা পরিত্রানের ধরুন ১০ তারিখ দিবাগত রাত ১১ তারিখ তাঁর অনুসারীদের কে নিয়ে এক বিশেষ শুকরিয়ার এবাদাত করেন। আর তাই ছিল হযরত মুসা আলইহিস সালামের গেয়ারভী শরীফ পালন।
৭.    হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহর হুকুমে তিনি তাঁর কাওমের নিকট ধর্মের দাওয়াত দিতে গেলে উল্টো তিনি অত্যাচার নির্যাতনের স্বীকার হলেন। রাগে আর ক্ষোভে তিনি দেশ ত্যাগের সিদ্বান্ত নিয়ে রওয়ানা হয়ে যান। প্রতিমধ্যে নদী পড়ে যায়। আর নদীতে কোন খেয়াও ছিলনা। এমতাবস্থায় উপায় অন্তর না পেয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে পরীক্ষা স্বরূপ বিশাল আকৃতির একটি মাছ এসে তাঁকে খেয়ে ফেলে। আর তিনি মাছের পেটে বসে বসে ‘‘লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলিমীন’ যিকির করেন। যেদিন তিনি মাছের পেট থেকে মুক্তি পেলেন ঐদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। ১০ তরিখ দিবাগত ১১ তারিখ রজনীতে হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বিশেষ এবাদাত করেন। আর এটি ছিল তাঁর গেয়ারভী শরীফ পালন।
৮.    হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম একশটি বিয়ে করেন এতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে এ বিষয়ে ইঙ্গিত প্রদান করেন। হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম এতে লজ্জিত ও অনূতপ্ত হয়ে তাওবা করেন এবং তাঁর তাওবা যেদিন কবুল করা হয় ঐদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। ১০ তরিখ দিবাগত ১১ তারিখ রজনীতে হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বিশেষ এবাদাত করেন। আর এটি ছিল তাঁর গেয়ারভী শরীফ পালন।
৯.    হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম একবার জ্বীন জাতী দ্বারা রাজ্য ও সিংহাসনহারা হয়েছিলেন। জ্বীনেরা তার মু’জিজার আংটিটি লুকিয়ে ফেলে তাঁর রাজ্য-সিংহাসন হাত ছাড়া হয়ে যায়। এতে তিনি আল্লাহর দরবারে লজ্জিত ওধনুতপ্ত হয়ে তাওবা করেন। অবশেষে চল্লিশ দিন পরে আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর অনুগ্রহ করে তাঁর আংটিটি উদ্বার করে দেন। যেদিন তিনি আংটিটি পেয়ে যান ঐদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। ১০ তরিখ দিবাগত ১১ তারিখ রজনীতে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বিশেষ এবাদাত করেন। আর এটি ছিল তাঁর গেয়ারভী শরীফ পালন।
১০.    আল্লাহর নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম একবার ইয়াহুদীদের ঘৃন্যতম ষড়যন্তের স্বীকার হন। ইয়াহুদী রাজা হেরোডেটাস হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে গেস্খপতার করে শূলীতে করে তাকে হত্যা করার সিদ্বান্ত নেয়। যখন তাকে ধরে শূলীতে উঠাবে ঠিক ঐসময়ে যে জল্লাদ একাজটি করবে ঐ জল্লাদকে ঈসা আলাইহিস সালামের হুবহুব আকৃতির হয়ে যায়। তারা ঈসা নবী ভেবে তাকে শূলীতে করে হত্যা করে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বন্ধুকে তাদের ষড়যন্তের হাত থেকে মুক্ত করে আসমানে উঠিয়ে নেন। একারনে খ্রীষ্টানদের আক্বীদা তাদের নবী তাদের কৃত পাপের জন্য আত্মহুতি দিয়েছেন। যেদিন তাঁকে আসমানে তুলে নেন ঐদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। ১০ তরিখ দিবাগত ১১ তারিখ রজনীতে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বিশেষ এবাদাত করেন। আর এটি ছিল তাঁর গেয়ারভী শরীফ পালন।
১১.    আল্লাহ তায়ালা পিয়ারা হাবীব, আমাদের আকা, দুজাহানের মুক্তিরকাণ্ডারী, হজরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামা ১৪শত সাহাবী নিয়ে ওমরার উদ্দেশ্য মক্কাভিমুখে রওয়ানা করেন। মক্কার অদূরে হুদায়বিয়া নামক স্থানে পৌছলে মক্কার কুরাইশদের কর্তৃক বাধাপাপ্ত হন। ১৯দিন পর অবশেষে একটি চুক্তির মাধ্যমে এমর্মে সিদ্বান্ত হয় যে, এ বছর ওমরা না করে মদীনায় ফিরে যাবে। সাহাবায়ে কিরামগন এটাকে গ্লানী মনে করে মনক্ষুন্ন হলেন তারপর হজরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কুরাগামীম স্থানে গিয়ে যাত্রা বিরতি করেন; এরই মধ্যে সূরা আল-ফাত্হ এর কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়। উক্ত সূরায় কুরাইশদের সাথে এ চুক্তিকে মহাবিজয় হিসাবে ঘোষণা করা হয় এতে সাহাবায়ে কিরাম (রা.) প্রশান্তি অর্জিত হল। যেদিন মহাবিজয় হিসাবে ঘোষণা করা হয় ঐদিনটি ছিল আশুরা তথা মুহাররমের ১০ তারিখ। ১০ তরিখ দিবাগত ১১ তারিখ রজনীতে হযরত হজরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামা আলাইহিস সালাম সাহাবায়ে কিরামগণকে নিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বিশেষ এবাদাত করেন। আর এটি ছিল তাঁর গেয়ারভী শরীফ পালন।
উক্ত বরকতময় আমলটি আমরা কিভাবে পেলাম? হুজুর গাউছুল আ’জম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী পাকের মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লামার মাহফিল সবসময় অতি সম্মানের সহিত পালন করতেন। একবার নবী পাক উক্ত আমলটির প্রতি খুশি হয়ে তাঁেক হাদিয়া স্বরূপ উক্ত গেয়ারভী শরীফটি দান করেন। তাই কেউ যদি ভক্তি-শ্রদ্ধা নিয়ে নিয়মিতভাবে গেয়ারভী শরীফ আদায় করে তাহলে নবী আলাইহিমুস সালাম গনের আমলের বরকত-রহমত পাবে ইন্শাআল্লাহ। এড়াড়াও উক্ত আমলটি ক্বাদেরীয়া তরীকার সালিক বা মুরীদদের জন্য আবশ্যিক ওজিফা।
বি:দ্র: আমাদের প্রতিনিধি হওয়ার জন্য কমপক্ষে ২০ কপি ম্যাগাজিন প্রতি মাসে ক্রয় করতে হবে।

আউলিয়া জীবনী
হজরত শাহজালাল মুর্জারদ ইয়ামানী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু বাংলাদেশের জাহিরী-বাত্বিনী বাদ্শা
মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণী

(পূর্বে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে)
ইয়ামন থেকে রওয়ানা হয়ে বাগদাদ পৌছালেন। বহুলোক সেখানেও তাঁর কাছে দীক্ষা নিল এবং কত লোক তাঁর সফর সঙ্গী হলো। তিনি বাগদাদে বেশি বিলম্ব না করে শীঘ্রই হিন্দুস্থানের পথে রওয়ানা হয়ে পড়লেন।
হিন্দুস্থানের তৎকালীন রাজধানী ছিল দিল্লি। পাঠান শাসক ফিরোজ শাহ তোঘলক তখন হিন্দুস্থানের শাসক।
হযরত শাহ্জাল (রহ.) হযরত নিযমুদ্দিন আউলিয়া (রহ.) এর সাথে সাক্ষাত ও তাঁর আতিথ্য গ্রহণ:
বাগদাদ থেকে হিন্দুস্থানের রাজধানী দিল্লী শহর বহু দূরে অবস্থিত। বহু পাহাড় প্রান্তর দুর্গম পথ অতিক্রম করে হযরত শাহজালাল (রহ.) দিল্লীর শহরে পৌছেন। একজন মহান বুযর্গের আগমনী সংবাদ শুনে দিল্লীর বহু লোক হযরত শাহজালাল (রহ.) এর নিকট বাইআ’ত গ্রহণ করেন। এরই মধ্যে তৎকালীন দিল্লীর শহর কুতুব হযরত নিজামুদ্দিন (রহ.) এ সংবাদ জানতে পেরে হযরত নিজামুদ্দিন (রহ.) তাঁকে দরবারে আমন্ত্রন করেন। হযরত শাহজালাল (রহ.) তাঁর আমন্ত্রনে হাজির হলে একজন আরেকজনকে দেখে কাশফ বা অন্তচক্ষু দ্বারা চিনতে পারলেন, কি উদ্দেশ্য তাঁর এ সফর তা বুঝতে পারলেন। অবশেষে হযরত নিজামুদ্দিন (রহ.) এর খানেকায় কিছুদিন কাটার পর যে উদ্দেশ্যে সফর তা তিনি করলেন অর্থাৎ তিনি বাংলাদেশের সিলেট ভুমিতে রওয়ানা হলেন। বিদায়কালে হযরত নিযামুনি আউলিয়া (রহ.) তাঁর বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ এক জোড়া কবুতর উপহার দিলেন। আজও সেই কবুতর বিদ্যমান; যা জালালী কবুতর হিসাবে পরিচিত।
রাজা গোবিন্দের গৌড় রাজ্য:
সে সময় দিল্লীতে পাঠান খিলজী বংশের মুসলিম শাসন বর্তমান থাকলেও বাংলার সিলেট বা গৌড় রাজ্য দিল্লীর মুসলিম শাসনাধীন ছিলনা। রাজা প্রবল পরাক্রমশালী এবং বীর ছিল। কিন্তু চরিত্র ছিল ভীষণ খারাপ। তার মত পরধর্ম বিদ্বেষী শাসক খুব কমই ছিল। বিশেষভাবে মুসলমানদের সে চরম দুষমন ছিল।
শেখ বুরহানুদ্দিনের প্রতি চরম নিষ্ঠুর আচরন:
রাজা গোবিন্দের শাসনামলে ১৩টি মুসলিম পরিবার ছাড়া সকলে ছিল গোড়া হিন্দু। কিন্তু তাদের ধর্ম-কর্ম করতে বড়ই বেগ পেতে হতো। প্রকাশ্যে কোন প্রকার ধর্মীয় কাজ করা নিষিদ্ধ ছিল এমনকি গরু কুরবানী পর্যন্ত। হযরত শেখ বুরহানুদ্দিন (রহ.)-এর বহু বৎসর ধরে কোন সন্তান জন্ম নেয়নি। বহু কান্নাকাটি দোআ’ মোনাজাতের পর আল্লাহ তায়ালা তাকে একটি পুত্র সন্তান দান করলেন। এবার সাত দিনের মাথায় তাঁর আকীকা করা আবশ্যক কারণ বহু বৎসর পর আল্লাহ তায়ালা একটি সন্তান দান করলেন; শুকরিয়া আদায় না করলে যে আল্লাহর দানের শুকরিয়া আদায় হবেনা। যদিও বা আকীকা করা সুন্নাত। তাই কাজটি করতে হবে অত্যান্ত গোপনে। যেহেতু হিন্দু রাজা এটিকে দেবতা তুল্য মনে করে তার পূজা করে থাকে। হযরত বুরহানুদ্দিন (রহ.) একটি গরু কুরবানী করলেন অত্যান্ত গোপনে। এবং মুসলিম পরিবার গুলোর মধ্যে বন্টন করে দিলেন। তকদীরের লিখন হয়না খন্ডন; কোথায় থেকে একটি চিল উড়ে এসে চোঁ মেরে একটুকরো গোশত নিয়ে হিন্দু মন্দিরের সামনে পেলে এত করে গরু কুরবানীর বিষয়টি আর গোপন থাকল না। রাজা গৌড় গোবিন্দ লোক মারফত গরু কুরবানীর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে শেখ বুরহানুদ্দিন কে রাজ দরবারে তলব করল। শেখ বুরহানুদ্দিন (রহ.) রাজার দরবারে পৌছলেন এবং রাজা তাঁর নিকট কুরবানীর বিষযটি জানতে চাইলে তিনি অকপটে তা স্বীকার করলেন। রাজা অমনিতে তার জল্লাদকে নির্দেশ দিল যে হাত দ্বারা আমাদের দেবতাকে যবাই করেছে ঐ হাতটি গোড়ালি সহ কেটে দাও। তার নির্দেশে শেখ বুরহানুদ্দিন (রহ.) ডান হাত কেটে দেয়া হল। তখন তিনি বেহুশ হয়ে পড়ে যান। যখন তার হুশ ফিরল ততক্ষনে তার ছোট নিস্পাপ সন্তানটিকে যবাই করে দেয়া হয়। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন...)। (চলবে)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সংগঠন সংবাদ
গাজীপুরী ক্বাদেরীয়া সংগঠন, দারোগাবাড়ী, কুমিল্লা।
হযরত শাহজালাল (রা.) এর ৬৯৫ তম ওরস পালিত
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ১৪ইং তারিখে সুলতানুল বাঙ্গাল হাদিয়ে বাঙ্গাল হযরত শাহজালাল মুজাররদী আল-ইয়ামানী (রা.) এর ৬৯৫ তম উরস মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯.০০টায় মিলাদ-কিয়াম ও কাসিদা পাঠ এবং সকাল ১০টায় মাজারে গিলাফ চড়ানোর মাধ্যমে ওরস শরীফের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। মাজারে প্রথম গিলাফ চড়ান মাজারের বর্তমান মোতয়াল্লী সের-ই-কওম ফতেহ উল্লাহ আল আমান। পরে মোতয়াল্লী সাহেবের নেতৃত্বে এবং প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় মিলাদ-কিয়াম ও মুনাজাত করেন (কুমিল্লার) শাহপুর দরবার শরীফের গদ্দীনিশীন পীর সাহেব ক্বিবলা আলহাজ্ব অধ্যাপক শাহজাদা মুহাম্মদ পিয়ারা আল-ক্বাদেরী। পরে প্রসাশনের বিভিন্ন মহলসহ সর্বস্তরের জনগণ সারাদিন ব্যাপী মাজারে গিলাফ চড়ান। পরে রাত ১১টায় আরেক দফা কাসিদা পাঠ ও মিলাদ মাহফিল শেষে রাত ৩.৩০ মিনিটে আখেরী মুনাজাত ও তাবারুক বিতরেন মাধ্যমে উক্ত ওরস শরীফের সমাপ্তি ঘটে।

(মুড়াগাঁও, গোলপুরা, লক্ষ্মীপুর) শাখা কমিটি গঠন
০৮/১০/২০১৪ ইং তারিখে গাজীপুরী ক্বাদেরীয়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহা সচিব মাও. মুুহাম্মাদ মামুনুর রশীদ আল্ ক্বাদেরী আল আযহারী ও সহকারী প্রচার সম্পাদক মাও. আবদুল আউয়াল আল ক্বাদেরী উপস্থিতিতে নিমোক্ত কমিটি গঠন করা হয়।
১.    সভাপতি: জনাব ইমাম হোসাইন আলক্বাদেরী, পেশ ইমাম মুড়াগাঁও জামে মসজিদ, শাহরাস্তি, চাঁদপুর।
২.    সহ-সভাপতি: মুহম্মাদ বিল্লাল হোসাইন এম, এ (ইংলিশ) জগন্নাথ বিশ্বদ্যিলয়।
৩.    সাধারন সম্পাদক: মুহাম্মাদ আলাউদ্দিন এম, এ ভিক্টোরিয়া কলেজ।
৪.    সহ-সম্পাদক: মুহাম্মাদ কামাল হোসাইন, শিক্ষক গোলপুরা আইডিয়াল স্কুল।
৫.    অর্থ-সম্পাদক: মুহাম্মাদ মহসিন হোসাইন ফাজিল (বি, এ) রাজাপুরা আল আমিন সিনিয়র মাদ্রাসা।
৬.    প্রচার সম্পাদক: মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান শাহাদাত।
৭.    দপ্তর সম্পাদক: মহাম্মাদ আব্দুল কাদের সুজন।
৮.    সাহিত্য সাংস্কৃতি সম্পাদক: মুহাম্মাদ ওসমান গনি সবুজ।
সদস্য:    হাফেজ মুহাম্মাদ মীর শীদ
    মহাম্মাদ মাহবুবুল আলম রাকিব
    মুহাম্মাদ স্বপন হোসাইন

উঘারিয়া অষ্টগ্রাম শাখা কমিটি, শাহরাস্তি দক্ষিণ
গাজীপুরী ক্বাদেরীয়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহা সচিব মাওলানা মুুহাম্মাদ মামুনুর রশীদ আল্ ক্বাদেরী আল আযহারী ও হাফেজ মাওলানা মুুহাম্মাদ ইলমুল হুদা জুনায়েদ আল ক্বাদেরী’র উপস্থিতিতে নিম্নোক্ত কমিটি গঠন করা হয়।
১. সভাপতি: জনাব আবু জা’ফর
২. সহ-সভাপতি: নূরুল হুদা শিবলী
    সহ-সভাপতি: মুহাম্মাদ আবদুর রাহিম বাবলু
    সহ-সভাপতি: জাবেদ আনসারী রবিন।
    সহ-সভাপতি: আবুল বাশার
    সহ-সভাপতি: মুহাম্মাদ ইসমাইল হোসাইন।
৩. সাধারন সম্পাদক: মহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
৪. সাধারণ সম্পাদক: নূরুল আমীন রিপন
৫. সহ-সম্পাদক: মাজহারুল ইসলাম
৬. অর্থ-সম্পাদক: আজাদ হোসাইন আলক্বাদেরী
৭. সাংগঠনিক সম্পাদক: আবু তাহের সুমন
৮. প্রচার সম্পাদক: আক্কাস আলী
৯. দপ্তর সম্পাদক: মুজিবুর রহমান
১০. সাহিত্য সাংস্কৃতি সম্পাদক: নাহিদুল হাসান রাজু

শানে মহিউদ্দিন ৪র্থ সংখা


নূরুল ইরফান ফি তাফসীরিল কুরআন-৪
ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান
অধ্যক্ষ, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন

بسم الله الرحمن الرحیم
اقرأ باسم ربك الذی خلق- خلق الانسان من علق- اقرأ وربك الاکرم- الذى علم بالقلم- علم الانسان ما لم یعلم
“পড়ুন আপনার রবকে চেনার জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাটবদ্ধ রক্ত থেকে পড়ুন আপনার রবকে যে মহা মহিম, যিনি শিক্ষা দিচ্ছেন কলমের মাধ্যমে, শিক্ষা দিচ্ছেন মানুষকে যা সে জানতো না।”
রাব্বুল আলামীন প্রথমেই তাঁর জাতী নাম ‘আল্লাহ’ এবং দয়া ও মায়ার দু’টি সিফাত দিয়ে সব কিছুর সূচনা করা ও তাঁরই নাম জপতে জপতে কর্ম সম্পাদন করতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
بسم الله الرحمن الرحیم
“পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে”
প্রথমে ভাবতে হবে; সে আল্লাহর পরিচয় কি ? তাঁর ক্ষমতাই বা কী ? মন মুকুরে সেই আল্লাহর পরিচয় বদ্ধমূল হলেই তাঁর নাম নিতে উৎসাহ সৃষ্টি হতে পারে। এবার আসুন তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টা করি।
الله শব্দ হল এমন একটি اسم বা বিশেষ্য যার দ্বিবচন বা বহু বচন হয় না। কেননা আল্লাহ এক-অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নাই। আল্লাহ নামটি ইসমে যাত অর্থাৎ সত্ত্বাবাচক নাম। যে নামের যিকির করলে মনে অনাবিল প্রশান্তি নেমে আসে। যেমন আল্লাহ তায়ালা নিজেই এরশাদ করেন-
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ [الرعد : ২৮]
অর্থাৎ এটা সতসিদ্ধ কথা যে আল্লাহর যিকির অন্তরসমূহে প্রশান্তি আনে। (সূরা রা’দ-২৮)
আল্লাহ নামটি কুরআন মজীদে ৯৮০ বার এসেছে। আল্লাহ নামের উৎস নিয়ে আল্লামা মেইবদী রহমতুল্লাহে আলাইহি প্রায় এক হাজার বছর পূর্বে যে বক্তব্য পেশ করেছেন তা খুবই চমৎকার। তিনি লিখেন-
بعض گفتند اشتقاق از اَلِهَ است یقال آلِهَتُ الیه ای سکنت الیه فکان الخلق سیکون عند ذکره ویطمئنون الیه وبه قال- أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
অর্থ: কোন কোন মনীষী কুরআন গবেষক বলেছেন- الله আরবী শব্দটি اَلِهَ (আলেহা) শব্দ থেকে উৎকলিত। আরবগণ বলে থাকেন, آلِهَتُ الیه (আলেহাতু ইলাইহে) অর্থ- سکنت الیه তাঁর কাছে গিয়ে প্রশান্তি লাভ করেছি। কেননা সৃষ্টি তাঁর যিকির করার সময় শান্তি পায় এবং তাতেই স্বস্তি লাভ করে। যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, এটা সতসিদ্ধ কথা যে আল্লাহর যিকির অন্তরসমূহে প্রশান্তি আনে। (.. .. ..)
কোন কোন গবেষক বলেন, الله নামটি اَلَهْتُ فى الشيء অর্থাৎ- تَحيرت فيه فكان العقول تتحير فى كنه صفته وعظمته والاحاطة بكيفيته ‘বস্তুর মাঝে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছি, অর্থ তাতে দিক-বিদিক হারা হয়ে পড়েছে যেন আল্লাহর গুণের মাহাত্ম্য, তাঁর বড়ত্ব এবং তার আকৃতি-প্রকৃতি বুঝতে গিয়ে বুদ্ধি-বিবেক-জ্ঞান সব খেই হারিয়ে ফেলেছে।’ (কাশফুল আসরার-১/৬) এক কথায় বলা যায় আল্লাহ এমন এক সত্তা যার যাত নিয়ে ভাবতে গেলে, বুঝতে চাইলে সসীম সৃষ্টি দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাঁর কুল-কিনারাহীন অস্তিত্বের কিছুই বুঝতে সক্ষম হয় না তিনিই তো ‘আল্লাহ’।
এ জন্যই পেয়ারা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান,
تفكروا في خلق الله، ولا تفكروا في الله
“আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা কর, আল্লাহর জাত বা সত্তা নিয়ে গবেষণা করো না।” (কানযুল উম্মাল- ৩/১০৬)
কারণ,
الاستواء معلوم والكيفية مجهولة والإيمان به واجب والسؤال عنه بدعة-(الملل والنحل للشهرستانى- ১৯১/ )
‘তাঁর (আল্লাহর) আরশে সমাসীন হওয়াটা জ্ঞাত বিষয়। তাঁর আকৃতি-প্রকৃতি অজ্ঞাত। এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব। এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদআত।’ (আল মিলাল ওয়ান নিহাল-শাহ্রাসতানী-১/৯১ পৃ.)
আল্লাহর অস্তিত্ব তো দূরের কথা আল্লাহর গুণবাচক নামের গূঢ় রহস্য উদঘাটনও কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কবি বলেন,
تحير القلب فى آثار قدرته + تحير الطرف فى انوار لآلائه
অর্থাৎ:- তাঁর কুদরতের নিদর্শন দেখে অন্তর দিশেহারা + তাঁর নূরের রশ্মিতে চোখ ছানাবড়া
তাই আল্লাহ নাম নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা তাঁর সাদৃশ্য আছে বলে মত প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ তাঁর পরিচয় দিয়েছেন কুরআন মজীদ, তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জির ও আসমানী একশত সহিফায়। সকল ক্ষেত্রেই তাঁর অসীম কুদরত ও গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। যেমন ঃ
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ وَيَوْمَ يَقُولُ كُنْ فَيَكُونُ قَوْلُهُ الْحَقُّ وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ [الأنعام : ৭৩]
“তিনিই যথাবিধি আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন। যখন তিনি বলেন ‘হও’ তখনই হয়ে যায়। তাঁর কথাই সত্য। যে দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সে দিন তাঁরই আধিপত্য হবে। তিনি অদৃশ্য-দৃশ্যমান সর্ববিষয়ে জ্ঞাত এবং বিজ্ঞানময়-অভিজ্ঞ।” (সূরা আনআম-৭)
هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ [يونس : ৫[
“তিনি (আল্লাহ) সূর্যকে তেজোদীপ্ত ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তার মনযিলসমূহ নির্দিষ্ট কওে দিয়েছেন, যাতে তোমরা বর্ষের গণণা ও কাল (সংখ্যা) অবগত হতে পার।” (সূরা ইউনুস-৫)
اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ بِلِقَاءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ (২) وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ [الرعد : ২ ، ৩[
“তিনি সে আল্লাহ; সু-উচ্চ করেছেন আকাশসমূহকে খুঁটি ছাড়া যা তোমরা দেখছো এরপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। আর অধীন করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে। প্রত্যেকটি সুনির্ধারিত মেয়াদের জন্য কক্ষপথে চলছে। তিনিই কার্য সম্পাদন করছেন নিদর্শণাবলীর বিশদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যাতে তোমরা তোমাদের পরওয়ার দিগারের সাথে সাক্ষাতের বিষয় সম্পর্কে ইয়াক্বিন তথা দৃঢ়তা অর্জন করতে সক্ষম হও। তিনিই যমীনকে বিস্তৃত করেছেন তাতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা ও নদ-নদী আর সকল প্রকার ফল-ফলাদী। সৃষ্টি করেছেন প্রত্যেককে জোড়ায় জোড়ায়। রাতের মাঝে দিন। এ সবে গবেষকদের জন্য নিদর্শণ বিদ্যমান রয়েছে।” (রা’দ-২,৩)
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ [البقرة : ২৫৫]
“আল্লাহ; নাই কোন ইলাহ তিনি ছাড়া, চিরঞ্জীব-চিরস্থায়ী। তাঁকে না তন্দ্রা আচ্ছাদন করে না নিদ্রা পেয়ে বসে। আকাশ মন্ডলী ও ভূ মন্ডলে যা কিছু সব তাঁর। তার কাছে যে সুপারিশ করবে তাঁরই হুকুমে করতে পারবে, তিনি তাদের সামনে-পেছনের সবকিছু জানেন, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া জ্ঞানের কোন কিছুই কেউ আয়ত্ব করতে পারেনা। তাঁর ক্ষমতার কুরসী আকাশ ও যমীন পরিব্যাপ্ত। তিনি এ উভয়ের রক্ষণাবেক্ষণে অবসাদগ্রস্ত হন না। আর তিনি সু উচ্চ, সু-মহান।” (সূরা আল-বাকারা-২৫৫)   
আল্লাহ তাঁর পরিচয় প্রিয় নবীর কন্ঠে ব্যক্ত করে এরশাদ করেন,
قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ [آل عمران : ২৬[
“প্রিয় হাবীব বলুন ! হে আল্লাহ ! রাজত্বের মালিক। যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন, যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন। যাকে চান সম্মান দান করেন আর যার থেকে ইচ্ছা সম্মান ছিনিয়ে নেন। আপনারই ক্ষমতায় সকল কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। রাতকে দিনের মাঝে এবং দিনকে রাতের মাঝে অনুপ্রবেশ ঘটান। মৃত থেকে জীবিত এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। যাকে ইচ্ছা হিসাব ছাড়া রিযিক দান করেন।” (সূরা আলে ইমরান-২৬)
পবিত্র কুরআন মজীদের পরতে পরতে মহান আল্লাহর ক্ষমতা, সৃষ্টি, বৈচিত্রময় গুণাবলী অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় সর্বোচ্চ সাহিত্যিক ভঙ্গিতে বর্ণিত হয়েছে। এ সকল সিফাত বা গুণাবলীও অবিনশ্বর। সৃষ্টি কোন গুণ অর্জন করলে তার মান, প্রকৃতি, কার্যকারিতা পরিবর্তন হয়। সব সময় এক পর্যায়ে থাকেনা। কিন্তু সকল শক্তির আধার আল্লাহর গুণাবলী সৃষ্টির পূর্বে যেমন ছিল এখনও তাই আছে এবং অনাদি-অনন্তকাল পর্যন্ত একই অবস্থায় থাকবে।
তবে তার অবস্থা সম্পর্কে সহি আকিদা পোষণ করা অত্যাবশ্যকীয়।
যে রহমান ও রহীমের নামে সব কিছু করব, যার কাছে জ্বীন ও মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে পানাহ চাইব। সর্ব প্রথম তাঁর অস্তিত্ব, অসীমতা, ক্ষমতা ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। তাঁর কুরআন দিয়ে তাঁকে চিনতে পারলেই তাঁর বড়ত্বের সম্মানে মনে যে খাশিয়াত (خشية) বা ভয় এবং তাঁর ক্ষমতার বিশালত্বে যে খওফ (خوف) বা ভয় মনে আসবে তার ফলে নিরাশ মনে আশার সঞ্চার হবে যে, শয়তান যতবড়ই হোক না কেন, যত ক্ষমতাই তার থাকুক না কেন; রহমান-রহীম আল্লাহর দয়া ও মায়ায় আমি নিরাপদ থাকব। যে আল্লাহ এত দয়ার এত মায়ার তাঁর সম্পর্কে যে আকীদা পোষণ করতে হবে তা হল,
واجب لوجود الموجود اى ان ذات الله تعالى
অর্থাৎ ‘তাঁর অস্তিত্ব অত্যাবশ্যকীয়। আল্লাহর জাত বা সত্ত্বার অস্তিত্ব বিদ্যমান।’ যদি তাঁর অস্তিত্ব স্বীকার করা না হয় তাহলে সবকিছু অনস্তিত্ব হতো। কোন সৃষ্টির অস্তিত্ব কল্পনা করা যেত না। আল্লাহু সুবহানাহু তায়ালা এরশাদ করেন-
وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ [الصافات : ৯৬[
অর্থ: ‘আল্লাহ তোমাদেরকে এবং তোমাদের কর্মকে সৃষ্টি করেছেন।’ (আস সাফ্ফাত-৯৬)
والله قديم- معنى القدم ان الله سبحانه وتعالى اول الوجود-
আল্লাহ অবিনশ্বর, প্রাচীনত্ব বা অবিনশ্বরের অর্থ হল আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অস্তিত্বের কোন প্রথম নেই্ জাগতিক হিসেবে ১ম, ২য় ৩য় এসব হিসাবের ঊর্দ্ধে তিনি।
هو الباقى و معنى البقاء ان الله تعالى لا اخر لوجوده-
তিনি চিরস্থায়ী। বাকা বা স্থায়ীত্বের অর্থ হল তাঁর অস্তিত্বের শেষ ও নেই।
শুরু-শেষের কোন সংজ্ঞা আল্লাহর অস্তিত্বের সাথে সম্পৃক্ত নয়। আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক আকীদা পোষণ করার তওফীক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের দান করুন।

بسم الله الرحمن الرحيم
দারসূল হাদীস
ফাযায়েলে হজ্জ্ব ও বায়তুল্লাহ দর্শন
মাওলানা মুফতী কাজী আবুল বাশার আলক্বাদেরী
প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, ফকির বাজার ইসলামিয়া ছুন্নিয়া সিনিয়র মাদরাসা
সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও জাতীয় ইমাম সমিতি, বুড়িচং, কুমিল্লা।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেনে-
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ -
অর্থাৎ মানুষরে মধ্যে যারা বায়তুল্লাহ পৌঁছার সার্মথ্য রাখে তাদরে উপর আল্লাহর উদ্দশ্যেে এ গৃহরে হজ্ব করা ফরয। আর কউে যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদরে জনেে রাখা উচতি য,ে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টজিগতরে প্রতি মুখাপক্ষেী নন। [সূরা আলে ইমরান: ৯৭]
হজ্ব প্রত্যকে মুসলমানরে উপর সারা জীবনে একবারই ফরয হয়। একবার ফরয হজ্ব আদায়রে পর পরর্বতী হজ্বগুলো নফল হসিবেে গণ্য হব।ে এ সর্ম্পকে হাদীস শরীফে র্বণতি হয়ছে,ে আবু হুরায়রা রা. র্বণনা করনে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদরে উদ্দশ্যেে ভাষণ দলিনে। তনিি বললনে-
يا أيها الناس! إن الله كتب عليكم الحج، فحجوا، فقال رجل : أكل عام يا رسول الله؟ فكست حتى قالها ثلاثا، ثم قال : لو قلت نعم لوجبت ولما استطعتم-
  হে মানবসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদরে উপর হজ্ব ফরয করছেনে। সুতরাং তোমরা হজ্ব করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ্ব করতে হব?ে তনিি চুপ রইলনে এবং লোকটি এভাবে তনিবার জজ্ঞিসে করল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললনে, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর হজ্ব করা) ফরয হয়ে যতেো, কন্তিু তোমাদরে পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না। [সহীহ মুসলমি, হাদীস : ১৩৩৭ (৪১২); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১০৬০৭; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৩৭০৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫০৮; সুনানে নাসায়ী ৫/১১০; শরহে মুশকলিুল আছার, হাদীস : ১৪৭২; সুনানে দারাকুতনী ২/২৮১]
যারা হজ্বরে সফররে সৌভাগ্য লাভ করনে তারা যনে আল্লাহর মহেমান। তাই প্রত্যকেরে উচতি র্সবদা আল্লাহর আনুগত্য ও তার ইশক-মুহববতরে অনুভূতি নযি়ে সখোনে অবস্থান করা। বায়তুল্লাহ ও আল্লাহর অন্যান্য শআের ও নর্দিশনরে প্রতি সম্মান প্রর্দশন করা। সকল প্রকার গুনাহ থকেে বঁেচে থাকা। দ্বন্দ-কলহ, ঝগড়া-ববিাদ এবং অন্যায়-অশ্লীলতা থকেে র্সবাত্মকভাবে দূরে থাকা। কুরআন-হাদীসে এ সর্ম্পকে বশিষে হুকুম নাযলি হয়ছে।ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করনে-
الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللَّه- 
 (অর্থাৎ) হজ্বরে নর্দিষ্টি কয়কেটি মাস আছ।ে যে ব্যক্তি সসেব মাসে (ইহরাম বঁেধ)ে নজিরে উপর হজ্ব অবধারতি করে নযে় সে হজ্বরে সময় কোনো অশ্লীল কথা বলবে না, কোনো গুনাহ করবে না এবং ঝগড়া করবে না। তোমরা যা কছিু সৎর্কম করবে আল্লাহ তা জাননে। [সূরা বাকারা : ১৯৭]
উক্ত আয়াতে তনিটি বষিয় থকেে বশিষেভাবে নষিধে করা হয়ছে।ে
এক.    ইহরাম অবস্থায় অশ্লীল কথা বলা। এমনকি স্ত্রীর সাথে যৌন উত্তজেনামূলক কথা বলাও নষিদ্ধি।
দুই.    কোনো ধরনরে গুনাহয় লপ্তি হওয়া। ইহরাম অবস্থার বশিষে গুনাহ যমেন শরীররে কোনো স্থানরে চুল, পশম বা নখ কাটা, আতর বা সুগন্ধি লাগানো, পশু শকিার করা, শরীরে উকুন মারা থকেে যরেূপ বরিত থাকবে তমেনি সাধারণ অবস্থার গুনাহ যমেন অন্যকে কষ্ট দওেয়া, কু-দৃষ্টি ও গীবত শকোয়তে থকেওে বরিত থাকব।ে
তনি.    ঝগড়া-ববিাদে লপ্তি হওয়া।
১. বায়তুল্লাহ প্রদক্ষিণের ফযীলত:
ইবনে উমর (রা.) হতে র্বণতি, তনিি বলনে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনছে-ি
من طاف أسبوعا يحصيه وصلى ركعتين كان له كعدل رقبة قال وسمعته يقول : ما رفع رجل قدما ولا وضعها إلا كتب له عشر حسنات وحط عنه عشر سئيات ورفع له عشر درجات-
যে ব্যক্তি যথাযথভাবে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে তার একটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব হয়। তাওয়াফরে প্রতি কদমে আল্লাহ তার একটি করে গুনাহ মাফ করনে, একটি করে নকেী লখেনে এবং দশটি র্মযাদা বৃদ্ধি করনে। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৪৪৬২; সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৯৫৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭৫৩; মুসতাদরাকে হাকমে, হাদীস : ১৮৪২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৫৬৮৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস : ১২৮০৬]
ইবনে আববাস (রা.) র্বণনা করনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
ينزل الله كل يوم على حجاج بيته الحرام عشرين ومائة رحمة : ستين للطائفين وأربعين للمصلين وعشرين للناظرين-
আল্লাহ তাআলা বায়তুল্লাহর হজ্বকারীদরে উপর প্রতদিনি একশত বশিটি রহমত নাযলি করনে, তার ষাটটি তাওয়াফকারীদরে জন্য, চল্লশিটি মুসল্লীদরে জন্য এবং বশিটি র্দশকদরে জন্য। [শুয়াবুল ঈমান বায়হাকী, হাদীস : ৪০৫১; তারগীব: ১৭৮৬]
২. তালবিয়া (লাব্বাইকা আল্লাহুম লাব্বাইক) পাঠের ফযীলত:
আবু বকর সদ্দিীক (রা.) হতে র্বণতি-
أن النبي صلى الله عليه وسلم سئل : أي الحج أفضل؟ قال : الحج والثج-
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জজ্ঞিসে করা হল, কোন হজ্ব র্সবোত্তম? তনিি বললনে, যে হজ্বে উচ্চস্বরে তালবযি়া পাঠ করা হয় এবং কুরবানী করা হয়। [সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৮২৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৯২৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৬৩১; মুসতাদরাকে হাকমে, হাদীস : ১৬৯৭; সুনানে দারমিী, হাদীস : ৮১৫১; মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ৭১; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ১১৭]
সাহল ইবনে সাদ (রা.) র্বণনা করনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
ما من مسلم يلبي إلا لبى من عن يمينه أو عن شماله من حجر أو شجر أو مدر حتى تنقطع الأرض من هاهنا إلى هاهنا-
যে কোনো মুসলমান তালবযি়া পাঠ করল, তার তালবযি়া পাঠরে অনুসরণে তার ডান ও বামরে বৃক্ষরাজি সবকছিুই তার সাথে তালবযি়া পাঠ কর,ে যতক্ষণ না যমীন তার এদকি তথা ডান ও বাম র্পাশ্ব হতে ধ্বংস হয়ে যায়। -সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৮২৮; সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৯২১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৬৩৪; মুসতাদরাকে হাকমে, হাদীস : ১৬৯৮; সুনানে কুবরা, বাইহাকী, ৫/৪৩
আবু হুরায়রা (রা.) র্বণনা করনে, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
أمرني جبريل برفع الصوت في الإهلال، فإنه من شعار الحج-
জব্রিীল আমাকে উচ্চস্বরে তালবযি়া পাঠরে আদশে করছেনে। কনেনা তা হজ্বরে নর্দিশন। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৩১৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৬৩০]
৩. নারী, বৃদ্ধ ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল হজ্জ্ব:
উম্মুল মুমনিীন আয়শো (রা.) হতে র্বণতি, তনিি বলনে-
يا رسول الله! نرى الجهاد أفضل العمل، أفلا نجاهد؟ قال : لا، لكن أفضل الجهاد حج مبرور-
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো জহিাদকে র্সবোত্তম আমল মনে কর।ি আমরা কি জহিাদ করব না? তনিি বললনে, না। বরং তোমাদরে নারীদরে জন্য র্সবোত্তম জহিাদ হল হজ্বে মাবরূর। [সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫২০; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৪৪২২; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৩৬০৭; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৩৭০২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৪৭১৭; শরহু মুশকলিলি আছার, হাদীস : ৫৬০৯]
অন্য র্বণনায় রয়ছে-ে
আয়শো (রা.) বলনে, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আপনাদরে সাথে জহিাদ করব না? তনিি বললনে, তোমাদরে জন্য সবচযে়ে সুন্দর ও উত্তম জহিাদ হল হজ্বে মাবরূর। আয়শো রা. বলনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম থকেে এ কথা শুনার পর হতে আমি হজ্ব ছাড়নি।ি [সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৬১; মুসনাদে আহমদ,  হাদীস : ২৪৪৯৭; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৩২৬]
আবু হুরায়রা (রা.) হতে র্বণতি, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
إن كان قاله جهاد الكبير والضعيف والمرأة الحج والعمرة-
অর্থাৎ বৃদ্ধ, র্দুবল ও নারীর জহিাদ হল হজ্ব ও উমরা। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ৯৪৫৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৯৭০৯; সুনানে নাসায়ী ৫/১১৩; তবারানী আওসাত, হাদীস : ৮৭৪৬; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৩৫০]
৪. হজ্জ্ব ও ওমরা পালনকারীর দুআ আল্লাহ কবুল করেন:
জাবরি (রা.) র্বণনা করনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
الحجاج والعمار وفد الله دعاهم فأجابوه وسألوه فأعطاهم-
অর্থাৎ হজ্ব ও উমরাকারীগণ আল্লাহর প্রতনিধিি দল। তারা দুআ করলে তাদরে দুআ কবুল করা হয় এবং তারা কছিু চাইলে তাদরেকে তা দওেয়া হয়। [মুসনদে বাযযার, হাদীস : ১১৫৩; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫২৮৮; তবারানী, হাদীস : ১৭২১]
আবু হুরায়রা (রা.) র্বণনা করনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
وفد الله ثلاثة :الغازي والحاج والمعتمر-
অর্থাৎ তনি প্রকাররে লোক আল্লাহ তাআলার প্রতনিধিি গাযী, হজ্ব ও উমরাকারী। [সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৩৬৯২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১১; মুসতাদরাকে হাকমে, হাদীস : ১৬৫৩; সুনানে নাসায়ী ৫/১১৩; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৫/২৬২]
৫. হজ্ব ও উমরা পালনকালে মৃত্যুবরণকারীর ফযীলত:
ইবনে আববাস (রা.) হতে র্বণতি-
بينما رجل واقف مع رسول الله صلى الله عليه وسلم بعرفة إذ وقع عن راحلته فأقعصته، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : اغتسلوه بماء وسدر، وكفنوه بثوبيه ولا تخمروا رأسه ولا تخطوه، فإنه يبعث يوم القيامة ملبيا-
এক ব্যক্তি আরাফাতরে ময়দানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরে সাথে উফূফরত ছলিনে। হঠাৎ তনিি বাহন থকেে নীচে পড়ে গলেনে। এতে তার ঘাড় মটকে গলে এবং তনিি মারা গলেনে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললনে, তাকে বড়ইপাতা সদ্ধিকরা পানি দযি়ে গোসল দাও, তার দুই কাপড় দযি়ে তাকে কাফন পরাও। তাকে সুগন্ধি লাগওি না এবং তার মাথাও আবৃত করো না। কনেনা তাকে কযি়ামতরে দনি তালবযি়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হব।ে [সহীহ বুখারী, হাদীস : ১২৬৭; সহীহ মুসলমি, হাদীস : ১২০৬; সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৯৫১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩০৮৪]
আবু হুরায়রা (রা.) হতে র্বণতি, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
من خرج حاجا فمات كتب له أجر الحاج إلى يوم القيامة، ومن خرج معتمرا فمات كتب له أجر المعتمر إلى يوم القيامة، ومن خرج غازيا فمات كتب له أجر الغازي إلى يوم القيامة-
অর্থাৎ যে ব্যক্তি হজ্বরে উদ্দশ্যেে বরে হল, অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, কযি়ামত র্পযন্ত তার হজ্বরে সওয়াব লখো হব।ে আর যে ব্যক্তি উমরার উদ্দশ্যেে বরে হল, আর সে অবস্থায় তার মৃত্যু হল কযি়ামত র্পযন্ত তার জন্য উমরার সওয়াব, লখো হব।ে যে ব্যক্তি জহিাদরে উদ্দশ্যেে বরে হল, এবং তাতে তার মৃত্যু হল, কযি়ামত র্পযন্ত তার জন্য মুজাহদিরে সওয়াব লখো হব।ে [মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৬৩৫৭; তবারানী আউসাত, হাদীস : ৫৪৮০]
৬. হাজরে আসওয়াদ ও রূকনে ইয়ামানী র্স্পশ করার ফযীলত:
ইবনে ওমর (রা.) র্বণনা করনে-
سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : إن مسحهما كفارة للخطايا-
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনছে,ি হাজরে আসওয়াদ ও রূকনে ইয়ামানীর র্স্পশ পাপসমূহকে মুছে দযে়। [সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৯৫৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৫৭০১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭২৯; মুসতাদরাকে হাকমে, হাদীস : ১৮৪২]
ইবনে আববাস (রা.) হতে র্বণতি রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
والله ليبعثه الله يوم القيامة له عينان يبصر بهما، ولسان ينطق به ويشهد على من استلمه بحق-
অবশ্যই আল্লাহ তাআলা কযে়ামতরে দনি হাজরে আসওয়াদকে উঠাবনে। তার দুটি চোখ থাকব,ে যা দযি়ে সে দখেতে পাব।ে একটি জহিবা বা মুখ থাকব,ে যা দযি়ে সে কথা বলবে এবং যারা তাকে যর্থাথভাবে র্স্পশ করছেে তাদরে পক্ষে সাক্ষ্য দবে।ে [সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৯৬১; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২১৫; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৩৭০৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭২৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৯৪৪; মুসতাদরাকে হাকমি, হাদীস : ১৭২৩]
৭. আরাফার দিনের ফযীলত:
অব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) হতে র্বণতি, নবী করীম সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
إن الله عز وجل يباهي ملائكته عتيبة عرفة بأهل، فيقول : انظروا إلى عبادي أتوني شعثا غبرا-
অর্থাৎ আরাফার অধবিাসীদরে ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ফরেশেতাদরে নকিট র্গব করনে এবং তাদরেকে বলনে, তোমরা আমার বান্দাদরে দকিে তাকযি়ে দখে, তারা এলোমলেো চুল,ে ধূলোমলনি অবস'ায় আমার কাছে এসছে।ে [মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭০৮৯; তাবরানী, হাদীস : ৫৭৫]
আয়শো (রা.) বলনে, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
ما من يوم أكثر من أن يعتق الله فيه عبدا من النار من يوم عرفة وأنه ليدنو ثم يباهي بهم الملائلكة فيقول : ما راء هؤلاء-
অর্থাৎ আরাফার দনি অপক্ষো এমন কোনো দনি নইে যদেনি আল্লাহ তাআলা অত্যাধকি পরণিামাণে জাহান্নাম থকেে মুক্ত করনে এবং তনিি নকিটর্বতী হন। আর ফরেশেতাদরে নকিট তাদরেকে নযি়ে র্গব করে বলনে, এরা কি চায়? [সহীহ মুসলমি, হাদীস : ১৩৪৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩০১৪; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৩৯২৬; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৬/২৫১]
৮. হজ্বে মাবরূররে প্রতদিান হল জান্নাত:
আবু হুরায়রা (রা.) হতে র্বণতি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة-
এক উমরা আরকে উমরা র্পযন্ত মধ্যর্বতী সময়রে গুনাহর ক্ষতপিূরণ হয়ে যায়। আর হজ্বে মাবরূররে প্রতদিান তো জান্নাত ছাড়া আর কছিুই নয়। [সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৭৭৩; সহীহ মুসলমি, হাদীস : ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৩৫৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৩; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৩৬৯৫; সুনানে তরিমযিী, হাদীস : ৯৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৭৮২]
জাবরি (রা.) হতে র্বণতি, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
الحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة، قيل : وما بره؟ قال : إطعام الطعام وطيب الكلام-
অর্থাৎ হজ্বে মাবরূররে প্রতদিান জান্নাত ছাড়া আর কছিুই নয়। জজ্ঞিাসা করা হল, হজ্বরে সদাচার কী? তনিি বললনে, খানা খাওয়ানো এবং উত্তম কথা বলা (র্অথাৎ অর্নথক ও অশ্লীল কথার্বাতা পরত্যিাগ করা)।
অন্য র্বণনায় রয়ছে,ে খানা খাওয়ানো ও বশেি বশেি সালাম করা (সালামরে বস্তিার ঘটানো) [সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ৩০৭২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস : ৪১১৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৪৪৮২; মুসতাদরাকে হাকমে, হাদীস : ১৮১২; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৮৮১৭]
আল্লাহ জাল্লা শানুহু আল্লাহর ঘরের সকল মেহমানকে হজ্জে মাবরূর নসীব করুক। আমীন।

আশ্শিফা বি-তা’রীফি হুকুক্বিল মুস্তফা
(মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যাবতীয়     অধিকারের পরিচয় সম্বলিত সমাধান)
মুল: ইমাম ক্বাযী আয়ায আল মালেকী (রাহমাতুল্লাহি তায়া’লা আলাইহি)
অনুবাদ: মুহাম্মাদ মামুনুর রশীদ আল্ ক্বাদেরী আল্ আযহারী

প্রথম পাঠ
মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথায় ও কাজের অতি উচ্চ সম্মান প্রসংগেঃ
ইমাম ফাকীহ কাজী আয়াজ আবুল ফজল বলেনঃ বিষয়টি গোপন নয় যে, যিনি সামান্যতম কিছু ইলম চর্চা করেন, অথবা বুঝার ক্ষেত্রে অতি সামান্য দৃষ্টিও রয়েছে যে, মহান আল্লাহর তা’জিম আমাদের নবীপাকের প্রতি, তাঁকে মর্যাদাসমূহ সৌন্দর্যসমূহ, এবং তাঁর উত্তম আদর্শ সমূহ দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করণপূর্বে-পরে কোন সৃষ্টি তার নাগাল পাওয়া অসম্ভব। এবং তাঁর মহান শান-মান সম্পর্কে সতর্কীকরণ যা সম্পর্কে আলোচনায় সৃষ্টির জবান সমূহ, লেখকের কলম সমূহ অক্ষম।
আর এ সমস্ত বিষয় সমূহ হতে কিছু বিষয় মহান আল্লাহ তাঁর পবিত্র কিতাবে (আল কুরআন) স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর মহান অবস্থান সম্পর্কে সর্তক করেছেন। আর প্রশংসা করেছেন তাঁর নৈতিক চরিত্র সমূহ, বাহ্যিক আচার-আচরণ সমূহ হতে। এছাড়া তাঁর মহান আদর্শকে আঁকড়িয়ে ধরতে এবং তাঁর সকল কিছু অনুসরণ-অনুকরণ করার উপর তিনি বান্দাদেরকে উৎসাহিত করেছেন ।
মহান আল্লাহ (জাল্লাজালালুহ) যিনি তাঁকে সম্মানিত করেছেন, শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন অতঃপর পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করেছেন এরপর উহার সানা-প্রশংসা করলেন। অতএব পরিপূর্ণ প্রতিদান এবং তাঁর জন্য ফজল শুরুতে এবং পুনঃপুনঃ দিলেন । তাঁর জন্য দুনিয়া এবং আখেরাতে প্রশংসা। আর এর মধ্য হতে যা কামালিয়াতের ও জালালিয়্যাতের দিক থেকে অধিক পরিপূর্ণ, তাঁর সৃষ্টি সাহায্যের জন্য। এবং তাঁকে অতিউত্তম প্রশংসিত সৌন্দর্য্য, অনুপম চরিত্রসমূহ, অতি উত্তম ভাষা, এবং বিভিন্ন ফজিলত দ্বারা বিশেষিত করা, এবং তাকে প্রকাশ্যে মু’জিজা স্পষ্ট দলিলা-দিল্যাহ এবং স্পষ্ট কারামাত সমূহ দ্বারা সাহায্য করা। যারা তাঁর সমসাময়িক ছিলেন তারাই প্রত্যক্ষ করেছেন, এবং যা তাকে সরাসরি পেয়েছেন। এবং তাদের পরে যারা জেনেছেন (তাবেয়ীগণ) বাস্তব জ্ঞান আমাদের তা বাস্তবে পৌছা পর্যন্ত এগুলো বর্ণনা করেছেন , আর এভাবে নবীপাকের নুর সমূহ আমাদের উপর পূর্ণ হয়েছে (আমাদের নিকট কাজী শহীদ আবুল হুসাইন বিন মুহাম্মদ আল হাফিজ
হযরত ইমাম আব্দুর রাজ্জাক হতে বর্ণনা করেন তিনি হযরত মা’মার হতে তিনি হযরত কাতাদা (রাদি.) হতে, কাতাদা হযরত আনাস (রাদি.) হতে বর্ণনা করেন- নিশ্চয়ই নবীপাকের নিকট মে’রাজের রজনীতে উজ্জ্বল অবয়বে লেগামসহ একটি বুরাক আনা হল। অতঃপর তার উপর তিনি আরোহন করতে চাইলেন এবং করলেন, অতপর জিব্রাইল (আঃ) বুরাককে বলল, তুমি কি জান যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে তুমি লাফাচ্ছ!। তোমার মধ্যে যিনি আরোহন করছেন তাঁর চেয়ে এত সম্মানিত আল্লাহর নিকট আর কেহ নেই।
তোমার মধ্যে তাঁর চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কেই কখনো আরোহন করেনি।
প্রথম অধ্যায়
মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর মহান শান-মান কত মহান আল্লাহর নিকট তা প্রকাশঃ
জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই কোরআন শরীফে স্পষ্ট অসংখ্য আয়াত রয়েছে যেগুলো মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্পর্কে চমৎকার বর্ণনা ফুটে উঠেছে। তাঁর সৌন্দর্য সমূহের বর্ণনা, তাঁর নির্দেশনার প্রতি সতর্কতা এবং মর্যাদার প্রতি তা’জিম সম্পর্কিত বর্ণনা-
১ম পরিচ্ছদঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসা, গুনগান, বারংবার তাঁর উত্তম আদর্শ সমূহের সম্পর্কে যা এসেছে তার আলোচনায় যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- لقد جاءكم رسول من أنفسكم (লা-ক্বদ যা-আকুম রাসুলুম মিন আনফুসিকুম)।
ইমাম সমারকান্দী বলেন- কারীগণের কিছু কারীগণ উক্ত আয়াতে من أنفسكم (মিন আনফাসিকুম) ফা হরফের মধ্যে যবর যোগে পড়েছেন। আর অধিকাংশ কেরাতের ইমামগণ পেশ যোগে পড়েছেন।
ইমাম কাজী আয়াজ (রহঃ) বলেন- আল্লাহ তায়ালা মুমিনগন, অথবা আরব অথবা মক্কাবাসীগণ অথবা সমস্ত মানুষকে মুফাসসিরিনগণের খেতাবের মতানৈক্যেও নির্দেশনার ভিত্তিতে জানিয়েছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ তায়ালা) তাদের মধ্যে তাদের হতে একজন রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছেন। তাঁকে তারা সকলে চিনে জানে, তাঁর অবস্থান সম্পর্কে, তাঁর সত্যবাদীতা, এবং তাঁর আমানতদারীতা সম্পর্কে এমনভাবে জানে যে তারা তাকে মিথ্যার কোন অভিযোগ দিতে পারবেনা। তাদের জন্য নসিহত রেখেছেন যে, তিনি তাদের মধ্য থেকে হওয়া (বংশীয়), আর অবশ্যই তিনি আরবে দিক থেকে শুধুই জন্ম, আত্মীয়তার সম্পর্কে আবদ্ধ, নতুবা তিনি সকল দেশ, জাতি, সকলের জন্য রাসুল।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী الا المودة في القربي (ইল্লাল মাওয়াদ্দাতা ফিল কুরবা) অর্থাৎ তিনি তাদের মধ্যে অধিক শ্রেষ্ঠ, অধিক উন্নত এবং অধিক মর্যাদায় ভুষিত হওয়া দলীল হিসাবে বর্ণনা করেন। من أنفسكم (মিন আন ফাসিকুম)ফা-হরফে যবর যোগে অর্থাৎ আনফাসিকুম। আর ইহাই চুরান্ত প্রশংসা। অত:পর তাঁর প্রশংসিত গুনাবলী, অসংখ্য প্রশংসনীয় বিষয়ে গুনাগুন যে, তাঁর তাদেরকে হেদায়াতের সঠিক মতবাদের উপর, ইসলামের উপর অটল থাকার আকাংখা, তারা (সকল উম্মতগন) হেদায়াত পাবে, সঠিক জ্ঞান পাবে এবং তারা ইসলাম সঠিক পর্যায়ের পাবে এতে নবী পাকের যে আকাক্সক্ষা এবং তাঁর কষ্ট, দুনিয়া আখেরাতে ক্ষতি না হয় এবং পথ চলতে গিয়ে তাঁর কষ্ট, দয়া, এছাড়াও তাদের মধ্যে মুমিনগণের প্রতি তাঁর উদারতা ও দয়া বর্ণনা করেছেন।
কিছু তাফসিরকারকগণ বলেন- নবী পাককে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর ৯৯ নাম মোবারক হতে দু’টি নাম মোবারক দান করেছেন رؤوف (রাউফ) দয়াদ্র, رحيم (রাহীম) দয়ালু। উল্লেখিত আয়াতে কারীমার অনুরূপ অন্য আয়াতে এসেছে, মহান আল্লাহর বাণী-لقد من الله علي المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم
(লা-ক্বাদ মান্নাল্লাহ আলাল মুমিনিনা ইজ রাআছা ফিহিম রাসালান মিন আন ফুসিহিম)। অন্য আয়াতে هوالذي بعث في الاميين رسولا منهم (হুয়াল্লাজি বাআছা ফিল উম্মিয়িনা রাসুলান মিন্হুম)।
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহর বাণীكما ارسلنا فيكم رسولا منكم
(কামা আরসালনা ফি-কুম রাসূলান মিন কুম)।
হযরত আলী ইবনে আবী ত্বালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত- মহান আল্লাহর বাণী (মিন আনফুসিকুম) তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্য থেকে এর অর্থ বংশক্রমে, বৈবাহিক সুত্রে, বংশীয় মর্যাদার সুত্রে, (তোমাদের মধ্য হতে) আদম (আঃ) হতে আমার কোন পুরুষরাই যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলনা। প্রত্যেকেই বৈবাহিক সুত্রে আবদ্ধ ছিলেন। হযরত ইবনে কালবী (রাদিঃ) বলেন- আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর জন্য উনার পূর্ববর্তী ৫০০ জন মাতার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। আর আমি তাদের কাউকে যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল বা জাহিলিয়্যাতের কোন কু-প্রথার জাতি  ছিল এমনটি পাইনি (সকলকে পবিত্র হিসাবে পেয়েছি।)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) হতে বর্ণিত-মহান আল্লাহর বানী وتقلبك في الساجد ين (ওয়া তাক্কাল্লুবাকা ফিস সাজিদিন) হযরত ইবনে আব্বাস (রাদি) এ আয়াতের অর্থ এভাবে বলেনقال من نبي الي نبي حتي أخرجتك نبيا
(ক্বালা মিন নাবিয়্যিন ইলা নাবিয়্যি হাত্তা আখরাজতুকা) অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) বলেন- একজন নবী থেকে অন্য আরেকজন নবী এভাবে আপনাকে স্থানান্তর করা হয়েছিল অবশেষে আপনাকে নবী হিসাবে দুনিয়াতে পাঠানো পর্যন্ত।
হযরত ইমাম জাফর বিন মুহাম্মদ আস সাদেক (রাদিঃ) বলেন- মহান আল্লাহ জানেন যে, সকল সৃষ্টি তাঁর অনুসরন করা অক্ষম, তাই তাদের নিকট তাঁর সঠিক পরিচয় তুলে ধরেছেন যাতে করে তারা জানতে পারে যে, তারা কেহ তাঁর খেদমাতের যোগ্যতাও রাখেন না। আর তাদের মাঝে এবং তাঁর মাঝে শুধু মাখলুক হিসাবে আকৃতিগতভাবে তাদের জাতী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। (চলবে)

 কসিদা দরশানে হযরত শাহ্ জালাল ইয়ামানি (রাঃ)

শায়খুল ক্বোররা গাওছে জামান হযরত শাহ্ সুফী ক্বারী গাজী
আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুস সোবহান আল্-ক্বাদেরী (রাঃ) এঁর রচনাকৃত।
প্রতিষ্ঠাতা ঃ শাহপুর দরবার শরীফ, কুমিল¬া ।
সংকলনে ঃ শেখ আহসান হাবিব সোবহানী (কাওসাইন)
পীরে ত্বরিকত ও আওলাদ, শাহপুর দরবার শরীফ।

বুলবুলে সের ওয়ে চামানি
শাহ্জালালে ইয়েমনী
ইয়েমেনের শাহজালাল তিনি বাগানের সু-উচ্চ বৃক্ষের বুলবুল সদৃশ।
কাশেফে সেররে খোদা
নায়েবে মাক্কি মাদানী
যিনি আল¬াহর ভেদের প্রকাশক ও মাক্বী মাদানীর প্রতিনিধি
ক্বেবলায়ে দিল ক্বাবায়ে জাঁ
কেবলা নোমা জানে জাহাঁ
যিনি দিলের কেবলা ও প্রানের ক্বাবা কেবলার দিক নির্দেশ ও বিশ্বের প্রাণ
তোম পর ফেদা জান ও তন
আয় সিলহেটি রুহে মনি
তোমার প্রতি জীবন ও দেহ উৎসর্গ হে সিলেটবাসী ও প্রান চালিকা শক্তি।
বাদ সেহের জু হু গুজার
করদে খবর মেরে উধার
হে সমীরন যদি তুমি এদিকে আস তবে আমার খবর বয়ে নিয়ে যাও এবং আমার খবর পৌছে দিও
হিজরে সে হায় জাঁ তু বালব
আয় শাহে খুবানে মনি
হে প্রীয় সুদর্শন সম্রাট আপনার বিরহে আমার প্রাণ ওষ্টাগত।
এশক মেঁ হো ওয়ায়েছকরন
তুমহি তুহো কুতুবে জামান
হযরত ওয়াইস করনীর ন্যায় আপনি একজন আশেক, আপনিতো জামানার কুতুব
সিনে মেঁ সোবহাঁ কা জলন
দে বুজা বারআনে মনি।
সোবহানের হৃদয়ের জ্বালা রহমতের বৃষ্টি দ্বারা নির্বাপিত করুন।

এসো রওজা শরীফ জিয়ারতে যাই
নবী প্রেমের অমীয় সুধা পিলাই
মাওলানা কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বাশারী

রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করার বৈধতা প্রসঙ্গে :
প্রেমিক প্রেমাস্পদের নিকটে যেতে মানবেনা কোন বাধা বিপত্তি, উপেক্ষা করবে শত প্রতিকুল পরিস্থিতি, ডিঙ্গিয়ে যাবে বাধার প্রাচীর প্রতিবন্ধকতার উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিবে সে কুন্ঠাবোধ করবেনা সে তো দুর্দমনীয় বিশ্বপ্রেমিক তার প্রেমের সোনালী পথের মাঝে ছড়ানো সকল কন্টকগুলো সে নীরবে তুলে নিবে পথকে করে নিবে সুগম।
তাইতো নবী প্রেমিকদেরকে ও কেহ রুখতে পারেনা তারা ছুটে যায় রওজার পানে যতই রওজা জিয়ারতের ব্যাপারে নাজায়েজের ফতোয়া আসুক না কেন।
যারা রওজা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাকে না জায়েজ বলে। আসুন তাদের এই বক্তব্যকে একটু বিশ্লেষণ করে দেখি, কেন ই বা আমরা বাধার সম্মুখিন হই।
রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্য সফর করার হুকুম :
জমহুর আলেমদের মতে, রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্য সফর করা সম্পর্ণ জায়েজ বরং নৈকট্য লাভের মাধ্যম। প্রবৃত্তির অনুসারী কিছু ওলামা বলেন রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নাই। এই বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কিছু আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ ।
প্রথমেই আমরা পক্ষে অবস্থান কারী ওলামায়ে কেরামদের মতামত উল্লেখ্য করবো।
এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে উদ্বৃতি প্রণিধান যোগ্য।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
عن ابن عمر رض الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من زرقبرى وجبت له شفاعتى – (روع دارقطنى)
হযরত ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, পেয়ারা নবী রাসূলে কারিম (দ:) বলেন- যে আমার রওজা শরীফ জিয়ারত করবে তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়।
যে আমল দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুপারিশ পাওয়া যাবে সে আমল করতে গিয়ে যদি সফর কেন জান ও মাল সবই দিতে হয় তবূও চুড়ান্ত সফলতা নিশ্চিত করতে তা করা উচিৎ আর এটিই সিগ্ধ মস্তিষ্ক সম্পন্ন লোকদের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়ার কথা।
এমন ফজিলত পেতে যদি সফর করতে হয় তবে সফর করবে । এটাতো একটি সাধারণ বিষয় এটাকে হাসিল করার কোন প্রশ্নই আসে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও এরশাদ করেন-
عن عبد الله بن عمر رضى الله عنه عن النيى صلى الله عليه وسلم قال من حج البيت ولم يزرنى فقد جفانى-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ্জ করল অথচ আমার রওজা শরীফ জিয়ারত করলনা সে আমার সাথে অবিচার করলো ।
উল্লেখ্য যে মক্কা ও মিনা ও মুজদালেফায়ই হজ্জের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ, আর হজ্জের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অত্র হাদীসের উপর আমল করার জন্য কেউ মদিনা শরীফে গেলে তো সফর করা নাজায়েজ হলে তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করতে এমন গুরুত্ব দিতেন না।
নবীজি আরো বলেন-
من زارنى بعد موتى فكأنما زارنى فى حياتى واناحى-
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আমার ইন্তেকালের পর আমার রওজা জিয়ারত করল সে যেন আমার হায়াতে (জীবদ্দশায়) সাক্ষাৎ করল। আর আমি রওজা শরীফে জীবিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তার জীবদ্দশায় সাক্ষাৎ করার ফজিলত তো সবার কাছে সুস্পষ্ট আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর্দায় চলে যাওয়ার পর তার (দঃ) রওজা জিয়ারত যদি তাঁর জীবদ্দশায় জিয়ারতের মতোই হয় তবে এমন মহত কাজ সম্পাদনের নিমিত্তে সফর করা নাজায়েজ কেন ?
এবার আমরা দৃষ্টিকে একটু প্রসারিত করে দেখাবো যে সাহাবায়ে কেরাম ও তাদের পরবর্তী সৎকর্মশীল থেকে এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় কিনা যে তারা সফর করে রওজা শরীফ জিয়ারত করেছেন।
হযরত আবু দারদা (বা) থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর (রাঃ) এর খিলাফতের আমলে বিজিত বাইতুল মোকাদ্দাসে খলীফার অনুমতি ক্রমে হযরত বিলাল (রাঃ) থেকে গেলেন। সেখানে অবস্থান কালে হযরত বিলাল (রাঃ) স্বপ্নে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে দেখলেন, এ কেমন রূঢ় আচরণ বেলাল? হে বেলাল আমার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য কি তোমার এখনও সময় হয় নাই, এ স্বপ্ন দেখে সে চিন্তিত অবস্থায় জেগে ওঠলো এবং ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন। তিনি আর দেরী না করে বাহনে আরোহন করে মদিনা শরীফের অভিমুখে রওয়ানা হলেন। মদিনায় পৌঁছার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা শরীফের সন্নিকটে এসে অঝোর নয়নে কান্না কাটি করতে লাগলেন এবং তার মুখমন্ডল রওজা শরীফের সাথে মিশাচ্ছেন প্রেম-মহাব্বতে মুখমন্ডলকে গড়াগড়ি করাচ্ছেন) এর পর হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ) এর নিকট আসলেন তাদের কে জড়িয়ে ধরে চুমা খেলেন । হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ) তাকে আগের মত করে একটু আজান শুনাতে বললেন যেভাবে সে মসজিদে নববীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য আজান দিতেন, তাই তিনি মসজিদের ছাদে ওঠে আজানের স্থানে এসে আজান দিতে লাগলেন । যখন তিনি আল্লাহু আকবার ” বললেন আবেগে উদ্বেলে যেন তিনি মদিনা শরীফ প্রকম্পিত হয়ে ওঠলো, যখন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললেন, মদিনার প্রকাম্পন আরো বেড়ে গেল, আর যখন তিনি আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বললেন তরুণীরা তাদের নিভৃত প্রকোষ্ট থেকে বেড়িয়ে পড়লো আর তারা বলতে লাগল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি পূনরুথিত হয়েছেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর্দায় যাওয়ার পর ঐ দিনের মত আর কোন দিন এত কান্না কাটি করতে দেখা যায়নি। রাসূল (দঃ) এর জীবদ্দশায় হযমত বিলাল (রাঃ) এর আজান শুনে সেদিন সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে এবং বেদনার স্মৃতি তাদের মানসে ভেসে ওঠে তারা নিজেকে যেন সামলাতে পারছিলেন না।
হযরত ইবনে আবি আসেম (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
ففر بلال فى زمن صرر الصحابة رسول عمر بن عبد العزيز فزمن........... فصوالمسجد الامر غيره-
অর্থাৎ অতঃপর হযরত বিলাল (রাঃ) নেতৃস্থানীয় সাহাবায়ে কেরামদের যুগে এবং হযরত ওমর বিন আব্দুল আজিজের দূত প্রধান প্রধান তাবেয়ীদের যুগে শামদেশ থেকে মদিনা মুনাওয়ারায় সফর করে আসেন তাদের এই সফরের কারণ একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা শরীফ জিয়ারত ও তাকে ছালাম জানানোই ছিল উদ্দেশ্য। পার্থীব কোন কারণ ছিলনা এমনকি মসজিদে নববী ও কারণ ছিল না শুধু মাত্র রওজা শরীফ জিয়ারতই এর কারণ ছিল।
এসকল বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিয়মান হল যে, নিছক রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা সম্পূণ জায়েজ বরং উত্তম কার্যাবলীর মধ্যে অন্যতম এবং আল্লাহ ও রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। আর এ কাজটি সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন-তাবেতাবেয়ীন সহ সকল সালেহীনগণ করেছেন।
বিরুদ্ধবাদীদের দলীল ও তার জবাব তারা কেবল প্রবৃত্তির অনুসরণ করেই খুবই অসাড় ও নাযুক দলিল উপস্থাপন করে থাকে ।
তাদের দলিল হলঃ
عن ابى هريرة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال لاتشد الرحال الا الى ثلاثه مساجد  المسجد الحرام ومسجد الرسول صلم ومسجد الاقصى- (متفق عليه)
হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্য সফরের প্রস্তুতি নেয়া যাবেনা, তা হল মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা, (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
প্রাসঙ্গিক আলোচনা ঃ
অত্র হাদীস খানা ইমাম বুখারী (রাঃ) তার সহীহুল বুখারীতে كتاب فضل الصلاة فى مسجد قله رالمدينة মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ার ফজিলত’ নামক অধ্যায়ে উল্লেখ করেন আর অত্র হাদীস দ্বরা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন ফজিলত লাভের উদ্দেশ্য কেবল এই তিন মসজিদে সফর করে যাওয়ার যর্থাথতা রয়েছে । আর অন্য মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করে কষ্ট ক্লেশ বাড়ানোর কোন প্রয়োজন নাই কারণ এই তিন মসজিদ ছাড়া অন্যান্য মসজিদের ফজিলত এক ও অভিন্ন।
আর এই তিন মসজিদের নামাজ আদায়ের ব্যাপারে ফজিলত বর্ণিত আছে, তাই সে ফজিলত লাভের উদ্দেশ্যই সফর করার যথার্থতা রয়েছে, যা অন্যান্য ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।
আর ইমাম বুখারী (রাঃ) এর মত মুজতাহিদ অত্র হাদীস দ্বারা রওজা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর না জায়েজ প্রমাণ করেননি। আর আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর নিচ্ছে, বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু পথভ্রষ্ট আলেম অত্র হাদীস দ্বারা রওজা জিয়ারতের উদ্দেশ্য সফর নাজায়েজ বলে যাচ্ছে। যা বুখারী শরীফের অত্র হাদীসের অধ্যায়ের সাথে আর তাদের বক্তব্যের লেস মাত্রও মিল নাই বরং সম্পূর্ণই মনগড়া বক্তব্য। হাদীসটিকে পুক্সক্ষানুরূপে বিশ্লেষণ করলে তার মর্মার্থ আরো সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা যাবে। لاتشد الرحال الا الى ثلاثة  مساجد হাদীসের এই অংশটুকুর ব্যাখ্যায় পাওয়া যায়-
এখানে مستثنى مفرغ   হয়েছে অর্থাৎ তার مثتسنى منه অনুল্লেখ, ধরে নেয়া যায় পূর্ন বাক্যটি হবে  تشدالرجال الى مسجد الا الى مساجد الله لانه اولا تشد الرجال الى مقان الا المساجدا لله
উহ্য  مثتسنى منهটি দুই ধরণের হতে পারেعام وخاص (খাছ অথবা আম) অর্থাৎ নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট প্রথমটি মেনে নিলে হাদীসের অর্থ যুক্তি ও পুর্নাঙ্গ হয়। আর তখন প্রথম প্রকার হলে অর্থ হবে তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে সফর করা বৈধ নয়, আর দ্বিতীয় প্রকার হলে অর্থ হবে তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন স্থানে সফর করা বৈধ নয়।
প্রথম অর্থের দ্বারা তিন মসজিদের ফজিলত বুঝায়। আর দ্বিতীয় অর্থের দ্বারা তিন মসজিদ ছাড়া অন্য সকল স্থানে সফর করা নিষেধাজ্ঞা বুঝায়, যা যুক্তিযুক্ত নয়। আর দ্বিতীয়টি মেনে নিলে এলেম অন্বেষনের উদ্দেশ্য দীর্ঘ সফর করা, ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফর করা, দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে সফর করা, আত্মীয় স্বজনের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সফর করা এমনকি হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে সফর করা সবই অবৈধ আর তা কোন মোহাদ্দেসীনে কেরাম গ্রহণ করেন নাই।
সুতরাং প্রমাণিত হল যে, অত্র হাদীস তিন মসজিদে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও ফজিলতের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে আর এ হাদীসের মধ্যে مثتسنى টি متصل এবং প্রথম অর্থই প্রযোজ্য হবে।
কিন্তু অত্যন্ত দুখের সাথে বলতে হয় একদল আলেম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বিদ্বেষ পোষণ হেতু এর দ্বীনের বহু আমলকে মিটিয়ে দেওয়ার নিমিত্তেই কেবল অত্র হাদীসের বিকৃত অর্থ করে থাকে এবংمستثنى কে منقطع, ধরে হাদীসটি রওজা জিয়ারতের ক্ষেত্রে চালিয়ে দেয় আর এই অসাড় ও ভিত্তিহীন দলিল ও যুক্তিকে পুজি করে তারা রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা অবৈধ বলে, এবং সরলমনা মুসলমানদেরকে রাসূল (দঃ) থেকে দূরে সরানোর অভিসন্ধিতে লিপ্ত হচ্ছে আর এমন হাদীস দ্বারা দলীল দিচ্ছে যে হাদীসের সাথে আর রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করার সাথে কোন সর্ম্পকই নেই।
তাদের ঈমান হরণের এই বিষাক্ত ছোবল থেকে আল্লাহ পাক গোটা উম্মতে মোহাম্মদীকে পরিত্রান দান করুক এবং সবাইকে ইশকে রাসূল (দঃ) এর সুধা পান করার। আমিন ছুম্মা আমিন।

হজ্ব আদায়ে কতিপয় ভুল-ভ্রান্তি
কাজী রাকিবুর রহমান বাশারী
দাখিল পরীক্ষার্থী, ২০১৪
দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা

হজ্বের সঠিক মাসআলার জ্ঞান যেমন জরুরি, তেমনি তা আদায়ের কৌশল এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে করণীয় বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখাও জরুরি। হজ্বে যে সকল ভুল হতে দেখা যায় তা সাধারণত উদাসীনতার কারণেই হয়ে থাকে। তাই নিম্নে সচরাচর ঘটে থাকে এমন কিছু ভুল উল্লেখ করা হচ্ছে। যেন হাজ্বীগণ এ সকল ভুল-ভ্রান্তি- থেকে বেঁচে সুষ্ঠুরূপে হজ্ব আদায়ে সক্ষম হন। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।
ইহরামের আগে দুই রাকাত নামাযের জন্য ইহরাম বিলম্বিত করা:
ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নামায পড়ার নিয়ম আছে। তাই অনেককে দেখা যায়, এই দুই রাকাত নামাযের সুযোগ না পাওয়ার কারণে ইহরাম বিলম্বিত করতে থাকে। এমনকি এ নামায পড়তে না পারার কারণে কেউ কেউ ইহরাম ছাড়াই মীকাতের ভেতরে পর্যন্ত চলে যায় অথচ ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নয়। তারা যেহেতু ইহরামের আগে দুই রাকাত নামায আদায়কে জরুরি মনে করে তাই তারা এমনটি করে থাকে। অথচ ইহরামের আগে নামায পড়া সকল মাযহাবেই মুস্তাহাব; জরুরি কিছু নয়। পক্ষান্তরে ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা নাজায়েয। সুতরাং ইহরামের আগে নামাযের সুযোগ পেলে তো তা আদায় করা চাই, কিন্তু সুযোগ না পেলে সে কারণে ইহরাম বাঁধাকে বিলম্ব করবে না। (সহীহ মুসলিম ১/৩৭৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১২৯০০; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ ৯৮; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৫/৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮১-৪৮২)
ইহরাম বাঁধার নিয়ম সংক্রান্ত ভ্রান্তি সমূহ:
অনেকে মনে করে থাকে যে, ইহরামের কাপড় পরে নামায পড়ার পর নিয়ত করলেই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। এ ধারণা ভুল। এগুলো দ্বারা ইহরাম সম্পন্ন হয় না। নিয়ত আরবীতে করা হোক বা বাংলাতে, সশব্দে করা হোক বা মনে মনে এর দ্বারা ইহরাম সম্পন্ন হয় না; বরং নিয়তের পর তালবিয়া পড়লে ইহরাম পূর্ণ হয়। অতএব বোঝা গেল, ইহরাম সম্পন্ন হয় দুই কাজের সমন্বয়ে : ১. হজ্ব বা উমরার নিয়ত করা ও ২. তালবিয়া পড়া। (জামে তিরমিযী ১/১০২; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ ৬৫; মানাকি মোল্লা আলী কারী পৃ ৮৯)
মক্কাগামীদের জন্য জিদ্দায় ইহরাম বাঁধা:
কেউ কেউ আগে থেকেই ইহরাম বাঁধা ঝামেলা মনে করে এবং ভাবে যে, ইহরাম বেঁধে নিলেই তো ইহরামের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়ে যাবে। বিমান যেহেতু জিদ্দায় অবতরণ করবে তাই জিদ্দায় ইহরাম বাঁধার ইচ্ছায় ইহরামকে বিলম্বিত করে। অথচ মীকাতের বাইরের হাজ্বীদের জন্য ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নেই। উপমহাদেশ থেকে গমনকারী হাজ্বীদের জন্য মীকাত হল কারনুল-মানাযিল ও যাতে ইরাক যা অতিক্রম করেই জেদ্দায় যেতে হয়। যদি কেউ বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করে তবে তার জন্য পুনরায় মীকাতে ফিরে এসে ইহরাম বেঁধে যাওয়া জরুরি। যদি তা না করে তবে দম ওয়াজিব হবে। যেহেতু বিমানে থাকা অবস্থায় মীকাতের জায়গা নির্ধারণ করা কঠিন বা ঐ সময় ঘুমিয়ে পড়া, অন্যমনষ্ক থাকা ইত্যাদি হতে পারে। তাই বিমানে চড়ার আগে কিংবা বিমানে উঠেই ইহরাম বেঁধে নেওয়ার কথা বলা হয়। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৭০২; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ ৮৪; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ ৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২১; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৫/৭৬; রদ্দুল মুহতার ২/৪৭৭)
সেলাইবিহীন কাপড় বা চপ্পলের জন্য ইহরাম বিলম্বে বাঁধা:
কেউ কেউ ইহরামের কাপড় না পরে বিমানে উঠে যায়। অথবা মদীনা থেকে গাড়িতে উঠে পড়ে। এরপর যখন গাড়ি বা বিমানের মধ্যে পরিধানের কাপড় বদলিয়ে ইহরামের কাপড় পরা কষ্টকর হয় কিংবা কাপড় লাগেজে থেকে যায়। তখন তারা সেলাইবিহীন কাপড় পরতে না পারার কারণে ইহরাম বিলম্বিত করতে থাকে। এমনকি ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করে ফেলে। ফলে দম ওয়াজিব হয়ে যায়। অথচ মীকাত অতিক্রমের আগে সেলাইযুক্ত কাপড়ের অবস্থায়ই যদি ইহরাম বেঁধে নিত এবং গাড়ি বা বিমান থেকে অবতরণের পরেই ইহরামের কাপড় পরে নিত তবে তার অন্যায়টা দম ওয়াজিব হওয়ার মতো বড় হত না। ইহরাম অবস্থায় এ কয়েক ঘণ্টা (১২ ঘণ্টার কম) সেলাই করা কাপড় পরে থাকার কারণে একটি পূর্ণ সদকা ফিতর আদায় করে দিলেই চলত।-জামে তিরমিযী ১/১৭১; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ ৩০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৫৪৭
ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করা যাবে না:
কেউ কেউ মনে করে, যে কাপড়ে ইহরাম বাঁধা হয়েছে সে কাপড় হালাল (ইহরাম শেষ) হওয়ার আগ পর্যন্ত বদলানো যাবে না। এটা একটা ভুল ধারণা। ওই কাপড় নাপাক না হলেও বদলানো যাবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস: ১৫০১০, ১৫০১১; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ ৯৮; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ ৭১)
তাওয়াফের সময় ছাড়াও ইযতিবা করা:
অনেককে দেখা যায়, ইহরামের প্রথম থেকেই ইযতিবা (বাম কাঁধের উপর চাদর রেখে ডান বগলের নিচ দিয়ে নিয়ে পরিধান করা) করে থাকে এবং হালাল হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকাকে শরয়ী হুকুম মনে করে। এটি ভুল। এভাবে নামায পড়লে নামায মাকরূহ হবে। আবার কেউ কেউ তাওয়াফের সময় ইযতিবা করে এবং এ অবস্থায় সায়ীও করে থাকে এবং তাওয়াফের মতো সাঈতেও তা করা শরয়ী বিধান মনে করে। অথচ সাঈতে ইযতিবা’র বিধান নেই। এমনকি সকল তাওয়াফেও এটি সুন্নত নয়; বরং যে তাওয়াফের পর সাঈ করতে হয় শুধু সেই তাওয়াফেই ইযতিবা করতে হয়। সুতরাং নফল তাওয়াফে ইযতিবা নেই। কেননা নফল তাওয়াফের পর সাঈ নেই। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৫; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ ১২৯; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৫/২১৭)

আল্লামা শায়েখ নুরুল ইসলাম ফারুকী (রাহ.)-কে নৃশংস হত্যায়
শোক ও প্রতিবাদ সমাবেশ


সুন্নী জনসাধারনের নয়নমনি শহীদ আল্লামা শায়েখ নুরুল ইসলাম ফারুকী (রাহ.)-কে নৃশংস ভাবে হত্যার প্রতিবাদে গত ৩০-০৮-২০১৪ ইং তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক শোক ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুরেশ্বর দরবার শরীফের পীর ছাহেব শাহসূফী বেলাল নূরী আশ-সুরেশ্বরী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহপুর দরবার শরীফের গদ্দিনীশিন পীর ছাহেব শাহসুফী অধ্যাপক শাহজাদা মুহাম্মদ পেয়ারা আল ক্বাদেরী। অনুষ্ঠানে আরো দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কিরামগণ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় বক্তারা বলেন আল্লামা ফারুকী (রাহ.) এভাবে নৃশংস হত্যার শিকার হওয়ায় বাংলাদেশের সুন্নীয়তের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। হত্যায় জড়িত বেঈমান খুনিদের অতিসত্বর চিহ্নিত করে ফাসীর দন্ডে দন্ডায়মান করার ও জোড় দাবী জানানো হয়। পরিশেষে মিলাদ-কিয়াম ও মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন, শাহপুর দরবার শরীফের গদ্দিনীশিন পীর ছাহেব শাহসুফী অধ্যাপক শাহজাদা মুহাম্মদ পেয়ারা আল ক্বাদেরী।

আউলিয়া জীবনী
হজরত শাহজালাল মুজাররদ ইয়ামানী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু) বাংলাদেশের জাহিরী-বাত্বিনী বাদ্শা
মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণী

হজরত  শাহজালাল মুজাররদ ইয়ামানীর জন্ম ও স্থান: হযরত শাহজালাল (রহঃ) তুরস্কের অন্তর্গত কুনিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শায়খ মাহমুদ (রহঃ) ছিলেন মক্কার কুরাইশ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি। তার মাতা ছিলেন বোখারার সৈয়দ বংশীয়া এক ধর্মপরায়ণা মহিলা। হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর বয়স যখন মাত্র তিন মাস,তখন তাঁর এই প্রাণের  পুত্র শিশু সন্তানকে একমাত্র পরম সহায় আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দিয়ে পরলোক গমন করেন। আহমদ কবীর সোহরাওয়ার্দী নামক তাঁর এক বিজ্ঞ আলিম মাতুল ছিলেন। তিনিই তখন এগিয়ে এসে পিতা-মাতাহারা ইয়াতীম শিশু ভাগ্নেকে স্বীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন।
হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) এর বাল্য বৈশিষ্ট্য ও শিক্ষা: হযরত শাহ্জালাল (রহঃ)-এর শৈশব থেকেই চরিত্র ছিল অতিশয় নির্মল ও নিষ্পাপ। সমবয়সী সাধারণ শিশুদের সাথে তিনি মেলা-মেশা করতেন না। কারও সাথে তাঁর কোন বিষয় নিয়ে এতটুকু ঝগড়াঝাটি হতোনা। নিতান্ত শান্ত শিষ্ট অথচ গম্ভীর প্রকৃতির বালক ছিলে তিনি। শৈশবকাল থেকে কোন দিনই তিনি কারও সাথে একটি মিথ্যা কথা বা কটু কথা বলেননি। মানুষের প্রতি দয়া-মমতা, পরোপকার, বিনয়, নম্রতা, অন্যের সাথে সদ্ব্যবহার এবং সদাচরণ প্রভৃতি গুণাবলী তাঁর মাঝে বাল্যকাল থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল।
বালক হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তাঁর স্বীয় মাতুলের কাছে। তাঁর মেধা ও স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত তীক্ষè। কোন সবক একবার ছাড়া তার দুবার পড়ার প্রয়োজন হতো না। এরূপ শোনা যায়, একদিন ঘটনাক্রমে বালক শাহ্জালাল (রহঃ) একটি নির্জন প্রান্তরে গিয়ে পড়েছিলেন। এ সময় হঠাৎ এক সৌম্যদর্শন মহী পুরুষ তাঁর কাছে এসে তাঁর মুখ হা করিয়ে নিজের মুখের কিছুটা লালা তার জিহ্বায় লাগিয়ে দিলেন। সে দিন থেকে হযরত শাহ্জালালের শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রসারতা আরও বেশি বৃদ্ধি পেল। কথিত আছে যে, ঐ সৌম্য দর্শন মহাপুরুষ ছিলেন হযরত খাজা খিযির (আঃ)।
হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) উচ্চশিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের সাথে সাথে সুবিখ্যাত বক্তারূপেও গণ্য হলেন। তাঁর মামা হযরত আহমদ কবীর সোহরাওয়ার্দী (রহঃ) একাধারে মশহুর আলিম এবং সুবিখ্যাত কামিল অলী ছিলেন। হযরত শাহ্জালাল (রহঃ)-এর শিক্ষার ভার গ্রহণ করে নানা বিদ্যায় তাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে লাগলেন। এভাবে কুরআন, হাদীস, ফিকহ, আদব এবং অন্যান্য বিবিধ ব্যবহারিক শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান অর্জন করে ইলমে শরীয়তে দেশের এক সুবিখ্যাত আলিম রূপে গণ্য হলেন।
বাঘ ও হরিণের কাহিনী :
আল্লাহ্ তাঁর উচ্চ পর্যায়ের কামিল অলিদেরকে এমন ঐশী ক্ষমতা দান করেন যে, তাঁরা আল্লাহর সৃষ্ট পশুপাখিদের কথাও বুঝতে পারেন। বনের পশুপাখিরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এসব অলী দরবেশদের কাছে আসে তাদের দ্বারা সমস্যা ও সংকট দূর করে লয়।
হযরত আহম্মদ কবীর (রহ.)-এর খানকার পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে সহসা একটি হরিণ ছুটে এসে হযরত আহম্মদ কবীর (রহ.)-এর খানকায় প্রবেশ করে। তাঁর কাছে আবেদন জানাল, হে আল্লাহর অলি জঙ্গলের একটি বড় বাঘ আমার একটি কচি শাবকদের ধরে খেয়ে ফেলেছে। বাকি গুলোকেও খাবার জন্যে উদগ্রীব হয়েছে। আপনি এ বাঘটিকে যথোপযুক্ত শাসন ও শায়েস্তা করে দিন।
হযরত আহমদ কবীর (রহ.) হরিণের আবেদন শুনে ভারি দুঃখ পেলেন। তিনি তার ভাগ্নে হযরত শাহ জালালকে বলেন, বাবা তুমি বাঘটিকে শায়েস্তা করে এসো। হযরত শাহজালাল (রহ.) তার সামনে গিয়ে সজোরে তার মুখে এমন এক মুষ্ঠাঘাত করলেন যে তাতেই সে চারিদিকে আঁধার দেখে প্রায় অর্ধমৃত হয়ে পড়ল এবং ঐ জঙ্গল ছেড়ে অন্যত্র চলে গেল। হরিণটি হযরত শাহ্জালালের প্রতি চিরকৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তাঁর অকুন্ঠ প্রশংসা করতে লাগল।
স্বপ্নযোগে হিন্দুস্থান গমনের নির্দেশ লাভ :
একদা গভীর রাতে নিদ্রাভিভুত হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) স্বপ্নযোগে দেখলেন, এক প্রশান্ত ও সৌম্য চেহারা বিশিষ্ট মহাপুরুষ তার সামনে উপস্থিত হয়ে তাকে লক্ষ্য করে বললেন, হিন্দুস্থান  নামক এক রাজ্যে অধর্ম ও পাপাচারের ঢল বয়ে যাচ্ছে, তুমি শীঘ্রই সেখানে গিয়ে মানুষের মাঝে আল্লাহর বাণী প্রচার করবে এবং দ্বীন ইসলামের প্রতি সবাইকে আহ্বাণ জানাবে।
প্রত্যুষে ফজরের নামাজ আদায় করেই হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) গিয়ে হাজির হলেন পীর মামা হযরত আহম্মদ কবীর (রহঃ) এর কাছে। তাঁর কাছে তিনি তাঁর স্বপ্নবৃত্তান্ত আদ্যান্ত বর্ণনা করলেন। তা শুনে তিনি বললেন, তুমি মহানবীর নির্দেশ মাথায় নিয়ে এখনই হিন্দুস্থান যাত্রার আয়োজন কর। তিনি আরো বললেন, হে বৎস! ঐ দেশটি আমাদের দেশ থেকে বহু পূর্বে অবস্থিত, তথায় আমি কোন দিন যাইনি। তোমাকে দেশটির কোন নিদর্শনও বলে দিতে পারছিনা। তবে তুমি এই মাটির কোটাটি গ্রহণ কর। যেখানে গিয়ে দেখবে তথাকার মাটির রং ও ঘ্রাণ এই কৌটার মাটির রং ও ঘ্রানের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে তবে সেখানেই তুমি যাত্রা বিরতি করে অবস্থান গ্রহণ করবে।
হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) এর ইয়ামান গমন এবং সেখান থেকে হিন্দুস্থান যাত্রা :
হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) স্বপ্ন দেখে স্বাভাবিক কারণেই হিন্দুস্থান রওয়ানা করার মনস্থ করলেন যে, হিন্দুস্থান যাওয়ার পথে তাঁর পূর্বপূরুষদের বাসস্থান ইয়ামন নগরীটি হয়ে যাবেন।
তিনি তাঁর বারজন সহচরসহ একদা পীর হযরত আহমদ কবীর (রহঃ) এর  কাছ থেকে দোয়া ও আশীর্বাদসহ বিদায় নিয়ে রওয়ানা হয়ে পড়লেন। কয়েকদিন পথ চলার পর হযরত শাহজালাল (রহঃ) তাঁর সহচরদের নিয়ে ইয়ামনের রাজধানীতে গিয়ে পৌছালেন। এ সময় ইয়ামনের শাসনকর্তা ছিল এমন এক ব্যক্তি, যে পীর বুজুর্গদের প্রতি ছিল দারুণ শত্র“ভাবাপন্ন। অভ্যাসবশেই সে কোন পীরদের সাথে সদ্ব্যবহার করত না।
ইয়ামনের বাদশাহর মৃত্যু এবং তার পুত্র আলী ইয়ামনীর হযরত শাহ্জালালের শিষ্যত্ব গ্রহণ :
হযরত শাহজালাল (রহঃ) ইয়ামন পৌঁছার সাথে সাথে তথাকার বাদশাহ নিজ মনের কুটিলতায়ই মনে করলো যে, এই দরবেশ এসেছেন তার ক্ষতিসাধন করতে। তাই তাকে প্রাণে মারার জন্য এক খাদেমের দ্বারা দরবেশের আপ্যায়নের বাহানায় এক গ্লাস বিষ মিশ্রিত শরবত তাঁকে পান করতে দিল। আল্লাহর প্রিয় অলী তাঁর কাশফের দ্বারা বিষয়টি বুঝে ফেললেন। অতএব তিনি গ্লাসের শরবত সাথে সাথে পান না করে তা সামনে রেখে দিয়ে বাদশাহকে বললেন, এ শরবতে বিষ মিশিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য কি?
বাদশাহ বলল, কি বলেন আপনি? শরবতে বিষ মিশানো হবে কেন?
কিন্তু এ কথা বললে কি হবে? ইয়ামনের বাদশাহর এ অপকর্মের কথা ইয়ামনের রাজ দরবার এবং রাজপরিবারের সবাই জানত। বাদশাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র আলী ইয়ামনী ছিল পিতৃচরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রকৃতির লোক।
এদিকে হযরত শাহজালাল (রহঃ) বাদশাহকে বললেন, ওহে বাদশাহ! এহেন কুটিলতা ছেড়ে সৎ পথে এসো, আল্লাহকে ভয় কর। তিনি অসীম শক্তিমান।
বাদশাহ্ বলল, যদি তাই হয় তবে আপনি এ শরবত পান করুন। আপনার আল্লাহ্  কতটা শক্তিমান তা পরীক্ষা হয়ে যাক।
হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) বললেন, তুমি তাঁকে পরীক্ষা করতে চাও, তবে কর। এ বলে তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে এক চুমুকে তীব্র হলাহল মিশ্রিত শরবতটুকু পান করে ফেলেন। রাজদরবারের উপস্থিত লোকগণ অবাক বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেল। হযরত শাহ্জালালের কিছুই হলনা। কিন্তু সাথে সাথে ইয়ামেনের বাদশাহের দেহে ভীষণভাবে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। সে ছটফট করে কিছু সময়ের মধ্যে প্রাণ ত্যাগ করল।
রাজপুত্র আলী ইয়ামেনী হযরত শাহ্জালালের চরণ যুগল ধরে কেঁদে ক্ষমা চাইল।
হযরত শাহ্ জালাল (রহঃ) বলেন, হে রাজপুত্র তোমার পিতার পাপের কাফফারা তোমারই করতে হবে। তুমি ধর্মপথে স্থির থেকে পিতার আসনে বসে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী দেশ শাসন এবং প্রজাপালন কর।
সে বলল হুযুর! আমাকে আপনি দীক্ষা দান করে আপনার শিষ্যভুক্ত করুন। আমি এখন থেকে আপনার সাহচর্যে থাকতে চাই। এই পার্থিব রাজ-রাজত্বের প্রতি আমার এতটুকু লালসা নেই। শাহ্ জালাল (রহঃ) তাঁকে বহু বুঝালেন, কিন্তু সে কিছুতেই শুনে না! অগত্যা বাধ্য হয়ে তাকে সাথে নিয়ে চললেন। কিন্তু পথে এভাবে ভক্ত ও মুরীদ জুটে যাওয়ায় তাঁর সঙ্গীদের সংখ্যা অনেক গুণ বেড়ে গেল।
ইয়ামন থেকে রওয়ানা  হযে বাগদাদ পৌছালেন। বহুলোক সেখানেও তাঁর কাছে দীক্ষা নিল এবং কত লোক তাঁর সফর সঙ্গী হলো। তিনি বাগদাদে কাল বিলম্ব না করে শীঘ্রই হিন্দুস্থানের পথে রওয়ানা হয়ে পড়লেন।
হিন্দুস্থানের তৎকালীন রাজধানী ছিল দিল্লি। পাঠান শাসক ফিরোজ শাহ তোঘলক তখন হিন্দুস্থানের শাসক।
(ইনশাআল্লাহ বাকি অংশ আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে)।

নারায়ে তাকবীর    আল্লাহু আকবার
নারায়ে রিসালাত    ইয়া রাসূলাল্লাহ
    সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ওরস মোবারক
স্থান: হযরত শাহজালাল ইয়ামানী (রা.) এর মাজার শরীফ প্রাঙ্গন।
সুন্নী মুমিন মুসলমানদের জন্য আনন্দের সংবাদ আগামী ১৫-০৯-২০১৪ ইং, রোজ: সোমবার, সকাল ১০ ঘটিকায় সুলতানুল বাঙ্গাল হযরত শাহজালাল মুজাররদী আল ইয়ামানী (রা.) এর ৬৯৫ তম উরস শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত উরস শরীফের যাবতীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করবেন, বর্তমান মোওয়াল্লী মুহতারাম ফতেহ উল্লাহ আমান। উক্ত উরস শরীফে জিকির-আযকার ও দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করবেন (কুমিল্লার) শাহপুর দরবার শরীফের গদ্দিনীশিন পীর ছাহেব শাহসুফী অধ্যাপক শাহজাদা মুহাম্মদ পেয়ারা আল ক্বাদেরী। উক্ত উরস শরীফ দলে দলে যোগদান করে অলী-আল্লাহগনের রূহানী ফয়েজ বরকত লাভে ধন্য হউন। আমীন।

জানাযার নামাযের পর দো’আ প্রসঙ্গে শরীয়তের হুকুম
অধ্যক্ষ মুফতি মাও. আব্দুর রব আল ক্বাদেরী

খতীব হজরত মাঁদ্দাহ খাঁ (রাহমাতুল্লাহি আলাই) জামে মসজিদ, আলীগঞ্জ, হাজীগঞ্জ।
একজন মুসলমান মারা যাওয়ার পর তিনটি অবস্থা পরিলক্ষিত হয় ১. জানাযার নামাযের পূর্বে, ২.জানাযা নামাযের পর দাফনের পূর্বে ৩.দাফনের পর, এ তিন অবস্থায় মৃত ব্যক্তির জন্য দো’আ বা ইছালে সাওয়াব করা সর্বসম্মতিতে জায়েজ এবং উত্তম। অবশ্য মৃত ব্যক্তির গোসলের আগে লাশের পাশে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবেনা কেননা তখন লাশ নাপাক থাকে। গোসলের পর লাশের নিকট কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ব । এক ধরনের আলেম নামধারীরা জানাযার আগে এবং দাপনের পরে দোয়া’ করা জায়েজ মনে করলেও জনাযার নামাযের পর দোআ’ করা নাজায়েজ, হারাম, বিদআত, এমনকি শিরক পর্যন্ত ফাতওয়া দিয়ে থাকে। নিম্মে সহীহ দলিলাদিল্লাহ দ্বারা তাদের ভ্রান্ত আক্বিদা ও আমলের জবাব তুলে ধরছি বিইজনিল্লাহি তাআ’লা
জানাযা নামাযের পর দোআ’ করার জন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে নির্দেশ দিয়েছেনعن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم اذا صلي أحدكم علي الميت فاخلصوا له بالدعاء(أبوداؤد  - مشكاة
হজরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমাদের কেহ যখন কোন মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পড়বে তখন তার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া’ করবে। (আবু দাউদ শরীফ,মিশকাত শরীফ ১খন্ড,১৪৬ পৃষ্ঠা, অধ্যয়, জানাযার লাশ নিয়ে চলা ও জানাজার নামায)। উক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা স্পস্টত প্রমাণিত যে,জানাযার পর মোনাযাত করার নির্দেশ রয়েছে। বিনা কারণে আসল অর্থ পরিবর্তন করা বা রূপক অর্থ গ্রহণ করা নাজায়েজ।
প্রসিদ্ব কিতাব ফাতহুল কাদীর ১৮০ নং পৃষ্ঠায় কিতাবুল জানায়েজ নামক অধ্যয়ে বর্ণিত আছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে দাঁড়িয়ে মুতার যুদ্ধের খবর দিতে গিয়ে হজরত জাফর বিন আবু তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের খবর দেন
অতপর তাঁর জানাজার নামায আদায় করলেন ও তাঁর জন্য দোয়া করলেন এবং লোকদেরকে বললেন তোমরা তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া কর। উল্লেখিত বর্ণনায় দোয়া জানাজার পরেই হয়েছে। তাই ১ম বর্ণনায় দোয়া করার নির্দেশ ২য় বর্ণনায় তাঁর নিজের আমল দ্বারা প্রমানিত হওয়ায় জানাজার নামাযের পর দোয় করা সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাব্যস্ত হলো। শামসুল আয়েম্মা আল্লামা সারখসি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত‘ মাবসূত্ব’ (হানাফী মাজহাবের কিতাব) ২য় খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা একবার এক জানাজার নমাযের পর উপস্থিত হয়ে বললেন যদিও তোমরা আমার আগে নামায পড়ে ফেলেছ কিন্তু দোয়ার বেলায় তোমরা আমার আগে যেয়োনা অর্থাৎ তোমরা আমার সাথে দোয়ায় একত্রিত হও। এ অধ্যয়ে হজরত ইবনে উমার, হজরত ইবনে আব্বাস এবং হজরত ইবনে সালাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকে একযোগে প্রমাণ করা হয়েছে যে, তারাঁ জানাজার নামাজের পর সকলে দোআ করেছেন। তাহাবী শরীফে ১০২ পৃষ্ঠায় বর্র্ণিত আছে-যখন ইমাম আবু হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর জানাজার পর দাফনের আগে ৭০ হাজার বার কুরআন খতম করা হয়।
হজরত ইমাম শায়ারানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত ‘মিযানুল কুবরা’ কিতাবে ৮০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে- হজরত ইমাম আবু হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও ইমাম ছাওরী বলেন যে দাপনের পরে নয় দাফনের আগে সমবেদনা জানান সুন্নাত কেননা দাপনের আগে বিরহ বেদনাটা বেশি থাকে। সুতরাং সুতরাং দাফনের আগে শোক করবেন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোআ করবেন। জানাজা মূলত: নামাজ কারণ এর জন্য ওজু, গোসল, সতর ঢাকা, কিবলা মুখী হওয়া, জায়গা ও কাপড় পাক হওয়া, চারটি তাকবীর এবং জামাতের সহিত আদায় করা আবশ্যক আর সমস্ত আয়েম্মা কিরামগণ এমতটি দিয়েছেন। কারণ দোআ’র জন্য কি এতগুলো শর্ত প্রয়োজন ? বুখারী, মুসলিমসহ সকল
হাদীস শরীফ ও ফিকহের কিতাবে সালাত অধ্যয়ের সাথে সালাতুল জানাজার আলোচনা করা হয়েছে। যারা সালাতুল জানাজকে দোআ’ বলে বেড়ায় এটা তাদের মূর্খতা ছাড়া কিছুইনা, আর মূল কিতাবের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং যেহেতু জানাজার নামাজ সেহেতু প্রত্যেক নামাযের পর বিশেষত ফরজ নামাযের পর দোআ’ করবে এটাই হাদীস শরীফ দ্বারা সমর্থিত। عن أبي امامة ؤضي الله عنه قيل يا رسول الله أي الدعاء أسمع ؟ قال جوف الليل الاخر ودبر الصلوات المكتوبات ( رواه الترمذي والنسائي)
অর্থাৎ হজরত আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সমীপে আরজ করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন সময়ের দোআ’ সবচেয়ে বেশি কবুল হয়? তিনি এরশাদ করলেন শেষ রাতের মধ্যবর্তী সময় ও ফরজ নামায সমূহের পর। (তিরমিযী, নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ কিতাবুদ দাওয়া’ত)
তাই জানাজাও এক প্রকার ফরজ যা ফরজে কিফায়া, আর ফরজে কিফায়ার নামাযের পর দোআ’ হবে এটাই হাদীস শরীফের ভাষ্য। আর বিরোধীদের দাবী অনুযায়ী দোআ’ অর্থে হলে ও অসুবিধা নেই, কারণ দোআ’র পর দোআ’ হলে ব্যক্তি আরো বেশী উপকৃত হবে। এসমস্ত ব্যক্তিরা জিন্দাদের দুষমনি করে
আবার এরা মৃত অসহায় ব্যক্তিদের দুষমন বটে। বর্ণিত আছে দোআ’ও এক প্রকার এবাদাত, এছাড়াও  দোয়ার নির্দেশ রয়েছে-
 الدعاء مخ العبادة (الترمذي)    দোআ’ এবাদাতের মূল (তিরমিযী শরীফ)। তবে এটা কি কারণ থাকতে পারে যে, জনাজার আগে ও দাফনের পরে দোআ’ করা জায়েজ আর জানাজার পর দোআ’ করা নাজায়েজ ? উসূলবিদ বা আইনবিদগণের মতে- কোন কিছুকে নাজায়েজ সাব্যস্ত করতে হলে কুরআন থেকে সরীহ বা স্পস্ট দলীল অথবা হাদীসে পাক থেকে স্পস্ট দলীল অবশ্যই থাকতে হবে । আর হাদীসে পাক হতে হবে অন্তত হাসান পর্যাযের । তবেই গ্রহণযোগ্য হবে নতুবা নয়। অনুরূপ জায়েজের জন্য কোন প্রকার নিষেধ না থাকলেই সংশ্লিষ্ঠ বিষয় জায়েজ। কিন্তু বিরোধীদের নিকট আমাদের প্রশ্ন এমন কোন দলীল কি আপনাদের নাজায়েজ ফাতওয়ার পক্ষে মউজুদ আছে?  তাদের মতে জানাজা দোআ’ হলেও তো, দোআ’র পর দোআ করা নাজায়েজ, এধরনের কোন দলীল তারা দেখাতে পারবেনা। তারা সাধারণ মুসলমানকে সবসময় ধোকা দিয়ে আসছে এ কথা বলে, তাহলো বিদআত। বিদআত কি? বিদআত অর্থ হলো নব আবিস্কার বা নতুন কিছু যার দৃষ্টান্ত পূর্বে ছিলনা । কিন্তু জানাজার নামাজের পর দোয়া’ করার নির্দেষসূচক এবং সাহাবাগণের আমল সম্বলিত হাদীসগুলো কি কারো নতুন বানানো? যাতে এগুলো বিদআত হবে? আর হাদীসের গ্রন্থগুলো কি আমাদের কেহ লিখেছে? যে এগুলো বিদআত? আমল করলে ঈমান থাকবেনা ? বরং জানাজার নামাযের পরে দোআ’ করা বিদআত নয়, নবী পাকের সুন্নাত, সাহবায়ে কিরামগণের আমল দ্বারা প্রমাণিত। যা আমরা উপরে সহীহ দলীল দ্বারা প্রমাণ করেছি।
তাদের জবাবে বলতে চাই যে, সব নতুন বিদআত নয়, বরং বিদআতের সহীহ পরিচয় হলো- এমন কিছু (বক্তব্য, ফাতওয়া, আমল) যা কুরআন ও হাদীসের বিরোধীতা নতুন হউক বা পুরান হউক তাই বিদআত। আর এ অর্থে নবী পাকের, সাহাবায়ে কিরামের জামানায়ও বিদআত ও বিদআতী সম্প্রদায় ছিল তারা হলো খারেজী, শিয়া’সহ পরবর্তী উপদলসমূহ। আজ বর্তমান ওহাবী, জামাতী, নব্য সালাফী বা লা- মাজহাবী, বাংলাদেশ ও হিন্দুস্তানী নব্য তাবলিগী, কাওমী, হেফাজতী সব মূলে তারা খারেজী। তাই উসুলবিদগণের পরিভাষায় খারেজী, শিয়া’ সহ সকল উপদল সমূহ বিদআতী, গোমরাহী, ৭২ জাহান্নামী দল। আর বাকী ১টি দল সহীহ নাজাতী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়া’ত জান্নাতী।