নূরুল ইরফান ফি তাফসীরলি কুরআন
ড. মাওলানা এ, কে, এম মাহবুবুর রহমান
অধ্যক্ষ, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
যুগ্ন-মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন।
بسم اللہ الرحمن الر حیم
اقرأ باسم ربك الذی خلق- خلق الانسان من علق- اقرأ وربك الاکرم- الذى علم بالقلم- علم الانسان ما لم یعلم
“পড়ুন আপনার রবকে চেনার জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাটবদ্ধ রক্ত থেকে পড়ুন আপনার রবকে যে মহা মহিম, যিনি শিক্ষা দিচ্ছেন কলমের মাধ্যমে, শিক্ষা দিচ্ছেন মানুষকে যা সে জানতো না।”
কুরআন মাজীদের সর্ব প্রথম নাযিলকৃত আয়াত
بسم اللہ الرحمن الرحیم
“পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে” (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু)
এ আল্লাহ নামে কী মধু আছে যে তাঁর নাম পড়তে হবে, এ আল্লাহ নামে কি বুঝায়? এ প্রসঙ্গে খাজা আবদুল্লাহ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু আজ থেকে ১১শ বছর আগে লিখেছেন
اسم یدل علی جلال من لم یزل – اسم یخبر عن جمال من لم یزل
اسم ینبہ اقبال من لم یزل – اسم یشیر الی افضال من لم یزل
فالعارف شھد جلالہ فطاش – والصفی شھد جمالہ فعاش
ولولی شھد اقبالہ فارتاش – والمرید شھد افضاله فقام
یطلب مع کفایۃ المعاش
“আল্লাহ নাম এমন যার বড়ত্ব অবিনশ্বর, যার জামাল-সৌন্দর্য চিরন্তন, যে নামে রয়েছে এমন সৌভাগ্য যা ক্ষয় হওয়ার নয়, যে নাম মর্যাদার রক্ষা কবচ যা চিরন্তন, আরেফ-আল্লাহ প্রেমিক তাঁর জালাল বা মহানত্ব দেখে বেখেয়াল, পূতঃপবিত্র সূফী তাঁর জামাল প্রত্যক্ষ করে সঞ্চার করেছে জীবনিশক্তি, ওলী তাঁর সৌভাগ্য দেখে শিহরিত, মুরিদ সুমহান মর্যাদা দেখে জীবন ধারনের সবটুকু দিয়ে তাঁকে খুজে পেতে সদা তৎপর।” (কাশফুল আসরার ১০/৫৫৩)
আল্লাহ নাম তো মজলিশের শান্তি, অসহায়ের সহায়, এ নাম তো হৃদয়গ্রাহী, যে নামের দয়া সৃষ্টি ব্যাপী, যে নাম সৃষ্টির মুখে মুখে উচ্চারিত, যে নাম আশেকের প্রাণ, যে নামের নূরে মুমিনের দেল আলোকিত, ব্যাথিত হৃদয়ের আরোগ্য যে নামে, যে নামের মধু আহরণে আল্লামা খাকানী রহমতুল্লাহে আলাইহি ত্রিশ বছর মুরাকাবা মুশাহাদা করে ঘোষনা দিলেন:
پس از سی سال اين معانی محقق شد بخاقانی
که يک دم باخدا بودن به از تخت سليمانی
“ত্রিশ বছর সাধনার পর বুঝিল পীর খাকানী, এক নিশ্বাস আল্লাহর সাথে থাকা সোলায়মানের রাজত্বের চেয়ে অনেক গুন উত্তম।”
কুরআন মাজীদের সর্ব প্রথম আয়াত আল্লাহর জাত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সিফাত বা গুন দিয়ে শুরু হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল শুরুতেই তায়াউজ (تعوذ) বা اعوذ باللہ من الشیطان الرجیم বলতে হয় নি কেন ? অথচ আল্লাহ ঘোষনা দিয়েছেন فاذا قرأت القران فاستعذ باللہ من الشیطان الرجیم
“যখনই কুরআন পড়বেন তখনই বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবেন।” (সূরা নাহল-৯৮)
এর জবাব হল শয়তান মালাউন এত বেশি শক্তিশালী হওয়ার পরও যার কলবে আল্লাহর যিকির চলে সেখানে থাকতে পারেনা। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন
الشیطان جاثم علی قلب ابن ادم فاذا ذکر اللہ خنس واذا غفل وسوس
“শয়তান আদম সন্তানের কলবে জেঁকে বসে থাকে যখনই আল্লাহর যিকির করে ছিটকে পড়ে এবং যখনই কলবের যিকির বন্ধ থাকে সে কুমন্ত্রনা দেয়।” (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ-১৩/৩৬৯) আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ- إِنَّمَا سُلْطَانُهُ عَلَى الَّذِينَ يَتَوَلَّوْنَهُ وَالَّذِينَ هُمْ بِهِ مُشْرِكُونَ
“নিশ্চয়ই তাঁর কোন আধিপত্য নাই তাদের উপর যারা ঈমান আনে ও তাদের রবেরই উপর তাওয়াক্কুল রাখে। তাঁর আধিপত্য তো কেবল তাদেরই উপর যারা তাকে অভিভাবকরুপে গ্রহণ করে এবং যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে (সূরা নাহল ৯৯-১০০) প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্তাগত ভাবেই নূর, জাবালে নূরে নূরের জালওয়ায় আপাদমস্তক যার নূরানী হয়েছে, নূরের ফেরেশতা রুহুল কুদ্দুস জীব্রাইল আলাইহিস সালাম যেখানে উর্দ্ধজগতের নূরের পাওয়ার হাউজের আথে নূরের চ্যানেল ওপেন করেছেন যেখানে শয়তানের ক্ষমতা চলেনা। প্রিয় নবীর নূরের তাজাল্লী বা আলোক প্রভা এত প্রখর যে শয়তান তাঁর আকৃতি ধারণ করতে পারেনা। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান:-
(صحيح مسلم - (৭ / ৫৪) -فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لاَ يَتَمَثَّلُ بِى
অর্থাৎ: শয়তান কখনও আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না, কারণ প্রিয় নবীর সুরত মোবারকের তিনটি স্তর রয়েছে (০১) সুরতে বাশারী বা মানবীয় সুরত (০২) সুরতে মালাকী বা ফেরেশতা জগতের আকৃতি (০৩) সুরতে হাক্কী বা প্রিয় নবীর নূরের আসল সুরত।
(মাদারেজুন নবুওয়্যাহ- শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেসে দেহলবী রাহমাতুল্লাাহে আলাইহ)
সুরতে বাশারী বা মানবীয় সুরতে এ পার্থিব জগতে পদার্পন, অবস্থান, কার্যসম্পাদন সবই ছিলো মানব-দানবের হেদায়েতের জন্য। হযরত জীব্রাইল আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে সাহাবায়ে কেরামগনের সামনে হযরত দেহইয়াতুল কালবী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সুরতে এসে সরকারে দোআলমের সাথে কথা বলেছেন, প্রশ্ন করেছেন, কুরআন শুনিয়েছেন ও শুনেছেন তখনও মানবীয় সুরতে নূরের ফেরেশতা নূরই ছিলেন। তদ্রূপ প্রিয় নবী মানবীয় সুরতে নূরে মুজাসসাম যার সুরত শয়তানের ধারন করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। এজন্যই সরকারে দু আলম এরশাদ করেছেন
من رآني فقد رأى الحق (صحيح البخاري - ৬ /২৫৬৮ )
অর্থাৎ যে আমাকে দেখেছে সে সত্যিই দেখেছে (সহি বুখারী-৬/২৫৬৮)। প্রিয় নবীজীর এ শানে উজমা বুঝতে হলে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। আর তা হল মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়া। মানব সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় চারটি অবস্থা দেখা যায়। মানুষ মাটি, বীর্য, ফুৎকার ও হাড্ডি দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দিয়ে। এরশাদ হচ্ছে-
إِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِنْدَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ [آل عمران : ৫৯]
অর্থ: আল্লাহর নিকট নিশ্চয়ই ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্ত সাদৃশ। তিনি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন। অত:পর তাকে বলেছিলেন, ‘হও’ ফলে সে হয়ে গেল। (সুরা আলে ইমরান-৫৯)
হযরত আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা এবং হযরত ঈসা আলাইহিস সালামও আল্লাহর বান্দা। এ বান্দা হিসেবে সাদৃশ্য রয়েছে কিন্তু সৃষ্টি হিসেবে সম্পূর্ণ আলাদা। পিতা-মাতা ছাড়া আদমের ৯০ হাত দীর্ঘ শরীরে নূরে মোহাম্মদীর পাওয়ার ঢুকিয়ে মহান আল্লাহ “কুন”-হও এর ক্ষমতাবলে সৃষ্টি করলেন তাঁকে। আর হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন পিতা ছাড়া মায়ের উদরের মাধ্যমে। সাইয়্যেদেনা ঈসা আলাইহিস সালামের সৃষ্টি হল আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত জীব্রাইল আলাইহিস সালামের ফুৎকারের মাধ্যমে। এরশাদ হচ্ছে-
وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهِ مِنْ رُوحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهِ وَكَانَتْ مِنَ الْقَانِتِينَ -
“আরো দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, ইমরান তনয়া মারইয়ামের যিনি তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেছিলেন, ফলে আমি তার মধ্যে রূহ ফুঁকিয়ে দিয়েছিলাম এবং তিনি তার প্রতিপালকের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহ সত্য বলে গ্রহণ করেছিলেন, তিনি ছিলেন অনুগতদের অন্যতম”। (সূরা তাহরিম-১২) কুরআন স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে- হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম মাটি বা বীর্যের সৃষ্টি নন, তার সৃষ্টি জীব্রাইল আলাইহিস সালামের ফুৎকারে। যা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি শক্তি। অন্যান্য মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করলেন علق বা জমাটবদ্ধ রক্ত দিয়ে। যেমন এরশাদ হচ্ছে:-
خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ
অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টি করেছেন জমটবদ্ধ রক্ত থেকে। (সুরা আলাক-২)
এ রক্ত সৃষ্টি হয়েছে মানুষের বীর্য দিয়ে। যেমন এরশাদ হচ্ছে:-
فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ - خُلِقَ مِنْ مَاءٍ دَافِقٍ - يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ
“সুতরাং মানুষ গবেষণার দৃষ্টিতে দেখুক কী হতে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে। যা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও পাঁজরাস্থির মধ্য হতে। (সূরা আত-তারেক-৫,৬,৭)
মহান আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেন,
هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُنْ شَيْئًا مَذْكُورًا - إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا-
“কাল প্রবাহে মানুষের উপর তো এমন এক সময় এসেছিল যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। আমিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য, এবং তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন। (সূরা দাহর-১,২)
তিনি আরো এরশাদ করেন:-
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ - ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ - ثُمَّ خَلَقْنَاالنُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ -
“আমিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান হতে, অত:পর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি জমাটবদ্ধ রক্তে। এরপর জমাটবদ্ধ রক্তকে পিন্ডতে পরিণত করি, পিন্ডকে পরিণত করি অস্থি-পাঁজরে; অত:পর হাড়গুলিকে ঢেকে দেই গোশত দিয়ে, তাতে সে এক ভিন্ন সৃষ্টিতে পরিণত হয়। তাইতো সর্বোত্তম ¯্রষ্টা আল্লাহ কত মহান। (সূরা মুমিনূন-১২,১৩,১৪) এ আয়াত প্রমাণ করে মানুষ সরাসরি মাটি নয় বরং মাটিতে উৎপাদিত খাদ্য খাওয়ার পর যে রক্ত হয় তার ৮০ ফোটা থেকে ১ ফোটা বীর্য তৈরী হয়। একফোটা বীর্যের ৫ লক্ষ ভাগের একভাগ থেকে মানুষ সৃষ্টি হয় যা এতই ক্ষুদ্র যে সাধারণ যন্ত্রে ও দেখা যায় না।
চতুর্থ পর্যায়ে দেখা যায় হযরত হাওয়া আলাইহাস সালামকে আল্লাহ সৃষ্টি করেন من ضلع الايسر অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালামের বাম পাঁজরের হাড়দিয়ে। এবং পঞ্চম ও শেষ পর্যায়ে দেখা যায় প্রিয় নবীজীকে সৃষ্টি করেন নূর দিয়ে।
যেমন এরশাদ হচ্ছে:-
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ -
“নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর ও সুস্পষ্ট কিতাব। (সূরা আল মায়েদা-১৫)
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:-
أنا دعوة أبي إبراهيم وبشرى أخي عيسى ورأت أمي حين حملت بي أنه خرج منها نور أضاء لها قصور الشام-
“অর্থাৎ- আমি আমার পিতা ইবরাহীমের দোয়া, আমার ভাই ঈসার প্রদত্ত সুসংবাদ, আমি আমার মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় তার পেট থেকে একটি নূর বের হয় যার তাজাল্লীতে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ দেখতে পান। (সীরাতে ইবনে হিশাম-১/৩০২) অন্য বর্ণনায় এসেছে:
ثم اِنَّ أُمِّي رَأَتْ فِي الْمَنَامِ أَنَّ الَّذِي فِي بَطْنِهَا نُورٌ
অর্থ:- “এরপর আমার মা ঘুমের ঘোরে দেখলেন তার পেটে যিনি আছেন তিনি নূর”। (মাওয়াহেবুল লাদুন্যিয়াহ-১/৭৪, মুসনাদে আহমদ-৪/১২৭, আল মুসতাদরাক লিল হাকেম-২/৪৫৩, ইবনু হিব্বান-৪/৬৪) প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরে মুজাস্সাম হওয়ার কারণে শয়তান তাঁকে কুমন্ত্রণা দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা। প্রিয় নবীজীর সুরত ধারণ করতে পারেনা। তাই মহান আল্লাহ কুরআনুল কারীম নাযিলের সূচনায় তা’আউয বা আউযুবিল্লাহ বলার প্রয়োজন হয়নি। পরবর্তীতে উম্মতের শিক্ষার জন্য শয়তান যেন কুরআন তিলাওয়াতে কুমন্ত্রনা দিতে না পারে এ জন্য আউযুবিল্লাহ পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
لااله الاالله জিকিরের ফজিলত
মাও. মুহাম্মদ মামুনুর রশীদ আল-ক্বাদেরী আলআযহারী
মিশর আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় হাদীস বিভাগে ডিগ্রি প্রাপ্ত
قال عليه الصلاة والسلام من قال لااله الاالله مخلصا دخل الجنة ( أخرج الطبراني من حديث زيد بن أرقام رضي الله تعالي عنه)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি আন্তরিক হয়ে বলবে لااله الاالله যে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
ক্স الاخلاص এর ব্যাখ্যাঃ
(১) قال يحي بن معاذ رحمه الله عليه الاخلاص: الاخلاض ان يخلص العبد دينه لله وعمل
(২) قال سعيدبن جبير رضي الله عنه تمييزالعمل من العيوب كتمييز اللبن من الفرات والدم
(غنيت الطالبي مجالس في مواعظ القران ص ১১০)
قال رسول الله صلي الله عليه وسلم أفضل ما قلته انا والنبيين من قبلي لااله الاالله وحده لا شريك
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন সর্বোত্তম যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ বলেছি لااله الاالله وحده لا شريك له
فاعلم انه لااله الاالله অতপর আপনি জেনে রাখুন নিশ্চই তিনি হলেন لااله الاالله (অপরিবর্তনীয় কালিমা) যা ওহী দ্বারা সাব্যস্ত فاعلم اشارتا الي لايكفي غيره (حاشية الصاوي) আপনি জেনে রাখুন এর দ্বারা ইঙ্গিত হলো لااله الاالله ছাড়া তাওহীদ যথেষ্ট নয়-
أشار الشيخ عبدالقادرالجلاني رضي الله عنه بقوله: أنفوا ثم أثبتوا –أنفوا عنه وأثبتوا له مالا يليق به ما يليق به وهو رضيه به لنفسه ورضيه له رسوله صلي الله عليه وسلم ادا فعلت هدا زال التشبيه والتعطيل من قلوبكم- (الفتح الرباني المجلس السابع والاربعون ص ১৫১)
فاذكروني أذكركم অর্থাৎ- অতঃপর তোমরা আমার যিকির কর আমি তোমাদের যিকির করব।
وقيل اذكروني باالتوحيد والايمان فاماالدكر (القسم الثالث غنيت الطالبي) أذكركم بالدرجات والجنان لااله الاالله
ক্স কালিমায়ে তাওহীদ لااله الاالله)) لا : নাই (লায়ে নফি জিনস) যা তার সমগোত্রীয় সকল কিছু নিষিদ্ধ করে ইলাহ (اله) সকল উপাস্য উদ্দেশ্য অনির্ধারিতالا আলাদাকারী হরফ হরফে ইসতিসনাخراج ما بعد الا من حكم م قبله هوا যা তার পূর্বে مستثني منهযার থেকে مستثني আলাদা করা হয়েছে। (الا রেফের পরে) مستثني আলাদা কৃত অংশটিকে الا রেফের পূর্ব হতে হুকুমগত আলাদা করে থাকে অথবা ইল্লা (الا) হলো এমন হরফ যা الا এর পরের অংশকে তার পূর্বের অংশের হুকুম হতে আলাদা করে যথাঃ لا اله+الا+الله
بأنه كان عالما امره بالثبات عليها ان المراد من الايت نفي الالهت المتعددت واثبات الواحدالفرد
কালেমা ভাঙ্গলে অর্থ থাকেনা যথা ভাত ভা-ত আলাদা উচ্চারণ করলে অর্থ হয় না। তাই কালাম (বাক্য না বলে) কালেমা (শব্দ) বলার হেকমত হলো যাতে এটি অপরীবর্তনীয় لااله الاالله থেকে যায়। অনুরূপ لااله الاالله محمد رسول الله কেও কালেমা বলা হয়েছে অথচ আলাদা করলে অর্থপূর্ণ রূপ দিতে পারে لااله الاالله তাওহীদ আর محمد رسول الله রিসালাত দুটি পূর্ণ কালামকে কালেমা বলার মূল হিকমত হলো তাওহীদ ছাড়া রিসালাত, রিসালাত ছাড়া তাওহীদ ইমানের জন্য যথেষ্ট নয় বরং দুটিই একটি অপরটির ইমানের সম্পূরক। আর لااله الاالله ভাঙ্গলে কালেমা তাওহীদ থাকে না এ ছাড়া মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলেরمنع كمال الايمان بشهادة لااله الله مالم تقترن بها شهادة الرسول وهو قولك محمد رسول الله للامام ابو حامد الغزالي رضي الله عنه- ج১॥ص১৪১ মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। তাই لااله الااللهই তাওহীদ এর বাণী الاالله নয়।
ক্স পবিত্র নাম সমূহ দ্বারা যিকির করার জন্য নির্দেশ:
মহান আল্লাহ পবিত্র কালাম পাকে এরশাদ ফরমান নিশ্চয়ই তার জন্য রয়েছে সুন্দরতম পবিত্র নাম সমূহ, যা দ্বারা যিকির করার জন্য নির্দেশ ও দিয়েছেন এভাবে ولله الأسماءالحسني فادعوه بها আল্লাহ তায়ালার জন্য রয়েছে পবিত্র ও সুন্দর নাম সমূহ উহা দ্বারা তোমরা তাঁকে ডাক।
ক্স পবিত্র কোরআনে ক্বারীমে এ নাম সমূহ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন:
ولله الاسماء الحسني فدعوه بها وذروا الذين يلحدون في اسماءه- الاعراف১৮০
অর্থাৎ আল্লাহর জন্য রয়েছে পবিত্র সুন্দরতম নাম সমূহ আর তোমরা তাকে উহা দ্বারা ডাক (সুরা আল আ’বাফ এবং ছেড়ে দাও তাদেরকে যারা মহান আল্লাহর নাম সমূহের পরিবর্তন করে আয়াতের يلحدون في اسماءه এর অর্থ হলো يحرفون في اسماءه অর্থাৎ তারা তাঁর নাম মোবারকে পরিবর্তন করে। বা يتركون القصد তারা উদ্দেশ্য ছেড়ে দেয়। এখানে لااله যদি নফি অংশটুকু বাদ দেয়া হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে (সা) মূল উদ্দেশ্য বাদ পড়েনা? কারণ لااله الاالله এটি তাওহীদের মূলমন্ত্র। فاعلم انه لااله الاالله এখানে আল্লাহ নিজের পরিচয় দিয়েছেন।
উক্ত নাম সমূহের সংখ্যা সম্পর্কে তিরমিযী ইবনে মাজাহ সহ বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত আছে تسعت وتسعين اسما من أحصاها دخل الجنت أن لله নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য রয়েছে ৯৯ নাম মোবারক যে ব্যক্তি তা গণনা করবে সে জান্নাতী হবে।
ক্স لااله الالله ৯৯ নাম মোবারক থেকে:
وفي روايت وابن ماجه لااله الاالله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو علي كل شئ قدير لااله الاالله له الأسماءالحسني
ক্স ৯৯ নাম মোবারক:
وزاد الامام الترمدي --- هوالله الذي لااله الا هو جل جلاله الرحمان جل جلاله الرحيم جل جلاله المالك جل جلاله القدوس جل جلاله السلام جل جلاله م المؤمن جل جلاله المهيمن جل جلاله العزيز جل جلاله الجبار المتكبر جل جلاله الخالق جل جلاله الباري جل جلاله المصور جل جلاله الغفار جل جلاله القهار جل جلا له الوها ب جل جلاله الرزاق جل جلاله الفتاح جل جلاله العليم جل جلاله القابض جل جلاله الباسط جل جلاله الخافض جل جلاله الرافع جل جلاله المعز جل جلاله المدل جل جلاله السميع جل جلاله البصير جل جلاله الحكم جل جلاله العدل جل جلاله اللطيف جل جلاله الخبير جل جلاله الحليم جل جلاله العظيم جل جلاله الغفور جل جلاله الشكور جل جلاله العلي الكبير جل جلاله الحفيظ جل جلاله المقيت جل جلاله الحسيب جل جلاله الجليل جل جلاله الكريم جل جلاله الرقيب جل جلاله الواسع جل جلاله الحكيم جل جلاله م الودود جل جلاله المجيد جل جلاله الباعث جل جلاله الشهيد جل جلاله الحق جل جلاله الوكيل جل جلاله القوي جل جلاله المتين جل جلاله الولي جل جلاله الحميد جل جلاله المحصي جل جلاله المبدئ جل جلاله المعيد جل جلاله المحي جل جلاله المميت جل جلاله الحي جل جلاله القيوم جل جلاله الواحد جل جلاله الماجد جل جلاله الاحد الصمد جل جلاله القادر جل جلاله المقتدر جل جلاله المقدم جل جلاله المؤخر جل جلاله الأول جل جلاله الأخر جل جلاله الظاهر جل جلاله الباطن جل جلاله الوالي جل جلاله المتعالي جل جلاله البر جل جلاله التواب جل جلاله المنعم جل جلاله المنتقم جل جلاله العفو جل جلاله الرؤف جل جلاله مالك الملك جل جلاله دوالجلالوالاكرام جل جلاله الرب جل جلاله المقسط جل جلاله الجامع جل جلاله الغني جل جلاله المغني جل جلاله المعطي جل جلاله المانع جل جلاله الضار جل جلاله النافع جل جلاله النور جل جلاله الهادي جل جلاله البديع جل جلاله الباقي جل جلاله الوارث جل جلاله الرشيد جل جلاله الصبور جل جلاله
ক্স উক্ত নাম দ্বারা সীমাবদ্ধ করার হিকমত:
এ সমস্ত নাম মোবারক দ্বারা সীমাবদ্ধ করার হিকমত সম্পর্কে ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী বর্ণনা করতে গিয়ে তাফসিরে কবীরে বলেন-وأسماءلله محصورت في نوعين عدم افتقاره الي غيره وثبوت افتقاره غيره اليه আল্লাহ তায়ালার নাম সমূহ দু’প্রকারে সীমাবদ্ধ তাঁর (আল্লাহর) অন্যের প্রতি অমুখাপেক্ষিতা এবং অন্যরা তাঁর প্রতি মুখাপেক্ষিতা সাব্যস্ত করা।
জানা আবশ্যক যে প্রতিটি পবিত্র নাম মোবারক দ্বারা নামকরণ করার বিশেষ হিকমত রয়েছে। কেননা প্রত্যেকটি ইসম মাসদার হতে উৎকলিত যথা- كريم নাম মোবারক كرم থেকে سميع নামটি سمع -থেকে উৎকলিত। ইচ্ছে করলে ইহা পরিবর্তন করা যাবে না। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা এ সকল নাম নিজের জন্য খাস করার পিছনে তাঁর বিশেষ হিকমত রয়েছে তাহলে কি তার পরিপূর্ণতা বা কামালিয়্যাত এবং সকল নুকছানিয়্যাত বা ত্র“টিপূর্ণতা হতে পবিত্রতা যা শব্দগত অর্থগত দু’দিক থেকে সাব্যস্ত হবে।
শরীয়তে মুহাম্মদীয়ার বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি জিনিস সাব্যস্ত করা হয়েছে ওহীয়ে ইলাহি দ্বারা তা দু’ভাবে (১) ওহীয়ে মাতলু বা পবিত্র (২) ওহীয়ে গায়রে মাতলু বা পবিত্র হাদীসে নববী (৩) ইজমা দ্বারা আর তাও কোরআন সুন্নাহর সাথে পূর্ণ সামঞ্জশীল হবে। এবং একজনও যদি বিরোধী হয় তা ইজমাহ হবে না। (৪) কিয়াস, এটি মুজাতাহিদ ইজতিহাদ করবেন তবে কোরআন সুন্নাহর সাথে পূর্ণ মিল থাকবে।
সম্মানিত ওলামাগণ শুধু তারজীহ, তাওফীক করতে পারেন তাও হবে পূর্ণ বা অংশবিশেষ কোন দলীলের ভিত্তিতে।
এবার দেখার বিষয় মহান আল্লাহ তায়ালা নাম মোবারক কিসের ভিত্তিতে সাব্যস্ত শরীয়তে দলীল দু’ভাবে সাব্যস্ত হয় توقيفي তাওকী¡ফি যা পবিত্র কোরআন হাদীস বা ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত হবে তবে হাদীস শরীফ হতে হবে অন্তত হাসান পর্যায়ের হাদীস শরীফ, যথা جواد এবং سخي -এর মধ্যে جواد ইহা توقيفي তাওক্বীফী আর سخي এটি ইসতিলাহি আর এখন جواد এটি মহান আল্লাহর সিফাতী নাম আর সাখী এটি একটি পরিভাষায়।
ক্স তরীকতে ক্বাদেরীয়ায় গাউছুল আজম (রাদিআল্লাহু আনহু) যিকিরের ওজীফা
প্রকাশ থাকে যে, আমাদেরকে দেখতে হবে তরীকতে ক্বাদেরীয়ায় গাউছুল আজম (রাদিআল্লাহু আনহু) এ যিকিরের ওজীফা দিয়েছেন কিনা (শাখাসমূহ) বর্ণনা করেছেন। الاورادالقادريت নামক কিতাবে গাউছে পাক (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন সাতটি নফসে সাতটি মাকাম, সাতটি মাকামে দমনে সাতটি মৌলিক যিকির, প্রত্যেক মৌলিক উসূলের জন্য কিছু শাখা যিকির, নিম্নে এ সন্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি বি ইজনিল্লাহ।
নামসমূহের অর্থসমূহ: এবং প্রথম যিকিরটি أصول অপরটি فروع
১. النفس الامارة প্রথম আত্মা আম্মারা: لااله الاالله অর্থ আল্লাহ -ছাড়া আর কোন সত্য মা’বুদ নাই।-لا مراد الاالله لا مقصودالاالله –لامعبود بحق الا الله
২. النفس اللوامة দ্বিতীয় আত্মা লাউয়্যাহমাহ: الله অর্থাৎ স্বয়ং তিনিই অস্তিত্ববান يا نوريا باسط ياالله ياهادي يا الله
৩. النفس الملهمة তৃতীয় আত্মা মুলহিমা: هو অর্থাৎ তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই يا هوأنت هو-هو انت يا الله
৪. النفس المطمئنت চতুর্থ আত্মা মুত্বমাইন্নাহ: حق অর্থাৎ যিনি সত্যিই বাস্তবের সহিত অবস্থিত।يا مغيث هوالحق- يا فرد هو انت الحق يا حق انت الحق-
৫. النفس الراضيت পঞ্চম আত্মা রাদিয়া: حي -অর্থাৎ যার জন্য হায়াত সাবেত।يا حي لا حي غيره يا حي انت الحي يا حي افنني عني وابقني بك
৬. النفس المرضيت ষষ্ঠ আত্মা মারদিয়্যাহ: قيوم অর্থাৎ তিনিই প্রতিষ্ঠিত তাঁর হুকুম দ্বারা সৃষ্টির মাঝে আসমান জমিনে যা আছে। يا كافي يا غني يا قيوم يا قيوم الازلي يا الله
৭. النفس الصميمت أو الكاملت أوالصافية ৭ম আত্মা চামিমা: قهار অর্থাৎ মহাপরাক্রমশালী শেষ বিচারদিনের অধিকারী قيوم قهار جبار قهار عظيم قهار قادر قهار الحكم لله الواحد القهار
নফি- ইসবাত
নফি- ইসবাত اثبات –نفي এটি হলো না হ্যাঁ এর যিকির অর্থাৎ এর দুটি অংশ। الاالله- এ প্রকার যিকির পবিত্র কোরআন হাদীস ইজমা কিয়াস দ্বারা সমর্থিত নয়। এ যিকিরের দুটি অংশের প্রথম অংশটি প্রত্যেকটি অবস্থা এক ও অভিন্ন থাকবে। কিন্তু ২য় অংশটি অবস্থা বেধে পরিবর্তন হবে। তাদের জবাব যারা শুধু ইল্লাল্লাহ (الا الله) বলে। নিম্নে পবিত্র কোরআন হাদীস দ্বারা তার দলিল পেশ করছি (محمد১৯)-فاعلم أنه لا اله الا الله
অতপর আপনি জেনে রাখুন: নিশ্চয়ই তিনি لا اله الا الله
টীকা: হে মাহবুব! ইলম ও ইয়াকীনের উপর কায়েম থাকুন। কিংবা হুকুকুল ইয়াকীন (বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিত্তিক নিশ্চিত বিশ্বাস) দ্বারা জেনে নাও। অন্যথায় হুজুর তো তাওহীদ সম্পর্কে প্রথম থেকে জানতেন ও মানতেন।
ক্স কোরআন দ্বারা অকাট্যভাবে নফি- ইসবাত لا اله الا الله -لا اله الا انت -لا اله الا انا-لااله الا هو
অত্র নফি ইসবাত সমূহের ১ম অংশটি لا اله এর কোন পরিবর্তন নেই। বরং ২য় অংশটির অবস্থা ভেদে পরিবর্তন হয়েছে।
১. لا اله الا الله এ প্রকার যিকির عوام দের জন্য অর্থাৎ তরীকতের পরিভাষায় مريد যিনি তার জন্য।
واتبع ما أوحي اليك من ربك لا اله الا هو الغنيت الطالبي طريق الحق عزوجل)) আপনি অনুসরণ করুন যা আপনার নিকট আপনার রবের পক্ষ থেকে ওহী করা হয়েছে। আর তা لااله الا هو
২. لااله الاهو এ প্রকার যিকির خواص- দের জন্য অর্থাৎ তরীকতে যারা مراد - তাদের জন্য টি (هو সর্বনাম) এমন সর্বনাম যা গায়েবকে নির্দেশ করে থাকে دعاء اخر — لا اله الا هو هو أهل الكبرياءوالعظمة
৩. لا اله الا انتএ প্রকার যিকির خواص الخواص অর্থাৎ খাসের খাস ব্যক্তিদের জন্য। কারণ হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম انت (আপনি) যিকির করেছেন। অথচ انت (আনতা) দ্বারা কি বুঝিয়েছে তা মহান আল্লাহ তাঁর ভাষায় বলেন لا اله الا انت মাছের পেটে যখন ছিলেন তখন তিনি মা’জুর তাই انت পর্যন্ত বলা শুদ্ধ হয়েছে। তবে الا انت বলেননি এ রকম انت যিকির জায়েজ নাই حالة اضرارية বা (আবশ্যক অবস্থা) ছাড়া যখন কোন ব্যক্তি অক্ষম হয়ে পড়ে) তখন ভিন্ন কথা। আরো একটি দলিল হযরত বিলাল রাদিআল্লাহু আনহু যখন তিনি ক্রীতদাস ছিলেন তাকে খুবই নির্যাতন করে, এমনকি জিহবাতে পর্যন্ত পেরেক মেরেছিল যাতে করে তিনি আল্লাহর একত্ববাদের যিকির না করতে পারেন। ঐ অবস্থায় তিনি শুধু আহাদ (أحد) এ যিকির করেছেন।
৪. لا اله الا انا
উক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে الا انت বা الا أحد-الاالله-الا هو এ ধরণের ইসবাত যিকির কেউ কোন দিন করেননি বরং الا ছাড়া انت-الله-هو-أحد দ্বারা যিকির কররেছেন। এছাড়া মহান আল্লাহ দুনিয়ার মানুষের জন্য ইউনুস (আলাইহিস সালামের) أنت যিকির ضميرأنت- সর্বনাম দিয়ে দুনিয়ার মানুষকে نفي- اثبات শিক্ষা দিয়েছেন। আর আমরা যখনি বিপদে পড়ি তখন এ প্রকারের নফি ইসবাত এর কালেমা যপন করে থাকি যা আামদের নিকট يونس ختم খতমে ইউনুস নামে পরিচিত।
ক্স শরীয়তে আল্লাহর পরিচয় কিভাবে সাব্যস্ত হয়, ওহী দ্বারা না যুক্তি দ্বারা?
এবার দেখুন শরীয়তে আল্লাহর পরিচয় কিভাবে সাব্যস্ত হয়, ওহী দ্বারা না যুক্তি দ্বারা? যেটাকে আক্বিদার পরিভাষায় বলা وجوب معرفت الله وصفاته بالسمع لابالعقل আল্লাহ তায়ালার মারেফাত (পরিচিতি) ওহী দ্বারা সাব্যস্ত আক্বল বা যুক্তি দ্বারা নয়।
(باب جماع توحيد الله عز وجل وصفاته وأسماءه—كتاب أصول اعتقادأهل السنت والجماعت من الكتاب والسنت واجماع الصاحبت والتابعين ومن بعدهم—المجلد الاول للامام الحافظ ابي القاسم هبت الله ابن الحسين بن منصور الطبري المعروف با للألكائ)
ক্স হিকমত: যদি মানুষ আল্লাহর পরিচিতি যুক্তি দ্বারা করতে যায় বা পেতে চায় তবে তা সম্ভব নয়। কারণ যুক্তি হলো পঞ্চইন্দ্রিয় কেন্দ্রিক যা গায়েবকে স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখেনা, আর যে আক্বল পঞ্চইন্দ্রিয় বাইরে স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখে না তা কি করে عالم الغيب অদৃশ্য জগতের সম্পর্কে বুঝতে পারবে। তাই আল্লাহ তায়ালার পরিচয় ওহী لااله الاالله দ্বারা সাব্যস্ত করা হয়েছে যা توقيفي বা ওহী দ্বারা সাব্যস্ত। ইসতিলাহী বা পরিভাষাগত নয়। মূলত তার কারণে আমাদের প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে عالم الشهادة (বা পৃথিবী) থেকে عالم الغيب (অদৃশ্যজগতে) নিয়ে তাকে সাক্ষাত করান। (সুবহানাল্লাহ)
আর আল্লাহ পরিচয়ের মুলমন্ত্র হলো لااله الاالله যা অপরিবর্তনীয় সর্বাবস্থায়। যা যুক্তি দিয়ে বাড়াবাড়ি ছাড়া فاعلم انه لااله الاالله- অতপর আপনি জেনে রাখুন নিশ্চই তিনি হলেন لااله الاالله (অপরিবর্তনীয় কালিমা) যা ওহী দ্বারা সাব্যস্ত فاعلم اشارتا الي لايكفي غيره(حاشية الصاوي) আপনি জেনে রাখুন এর দ্বারা ইঙ্গিত হলো لااله الاالله ছাড়া যথেষ্ট নয় এখন কি করে ব্যাকরণের মানদন্ডে الاالله বললে চলবে বলে ফাতওয়া দিলে বক্তব্যটি যথেষ্ট নয় একটি যুক্তিমাত্র তাই ওহীর মানদন্ডে এবং উসূলের মানদন্ডে যুক্তি সম্পূর্ণ ভুল এবং বাতেল প্রমাণিত হল-
فيجب علي كل مكلف من ذكر أو أنثي وجوبا عينا معرفت كل عقيدة بدليل فاعلم انه لااله الاالله ولواجماليا (جوهرت التوحيد ص-৫৭ (
প্রত্যেক নর-নারী মুকাল্লাদ (শরীয়তের হুুকম মানতে সক্ষমব্যক্তি) এর উপর প্রত্যেকটি আক্বিদার পরিচয় জানা (وجوب عيني) ওয়াজিব যদিও সংক্ষিপ্ত দলিল (لااله الاالله) দ্বারা হয়, لااله الاالله মহান আল্লাহর পরিচিতির সংক্ষিপ্ত দলিল যা প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব।
ক্স কারা শুদ্ধ?
বিঃদ্রঃ (১) যারা নফি -ইসবাত لااله الاالله সম্পূর্ণ যিকির করেন তারাও কালিমা অস্বীকার করেন না বরং পূর্ণ যিকির করার জন্য তারা তাকিদ দিয়ে থাকেন। যারা الاالله যিকির করেন, তারা কালিমা অস্বীকার করেন না বরং ব্যকরণের কায়েদায় জায়েজ ফাতওয়া দিয়ে থাকেন। আর এমতাবস্থায় কারা শুদ্ধ ? (২) যারা الاالله যিকির করেন তারাও আহলে সুন্নাতের আক্বিদা পন্থী আর যারা পূর্ণ لااله الاالله যিকির করেন তারাও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত পন্থী এমতাবস্থায় বাতেল কারা ? হকপন্থীদের একে অন্যের সাথে আমলে ভিন্নতা থাকতে পারে (হক আক্বিদার বিরোধী কুফরি)
জবাব যারা الاالله যিকির করে তারা একটি ইসলামের কায়েদার খেলাফ করছেন। কায়েদা হলো لااله الاالله বরংالاالله না। তবে এটি তাদের খাতায়ে ইজতিহাদি যেহেতু কোরআন সুন্নাহ ইজমা কিয়াস কোন অবস্থায় শুদ্ধ নয় বরং সয়ীহ কুরআন হাদীসের খেলাফ। الاالله যিকির কারীরা যেহেতু لا اله الاالله মানে এবং তারা আহলে স্নুাতের আক্বীদা পন্থী সেহেতু তা ইজতিহাদি খাতা। আর যারা الاالله না করে পূর্ণ যিকির করে তারা সহীহ পূর্ণ শরীয়াতে কায়েদা মান্য করার দরুন তারা দ্বিগুন সাওয়াব পাবে।
শানে মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
শাহ্সুফি আলহাজ্ব প্রফেসর শেখ শাহজাদা মুহাম্মদ পিয়ারা আল-ক্বাদেরী
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সুন্দর, শ্রেষ্ঠ মর্যাদা প্রথম সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও স্রষ্ঠার সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি আল্লাহর জাতি নূর থেকে সৃষ্ট হুজুর। (قد جاءكم من الله نور -المائدة ১৫)
অর্থাৎ তোমাদের নিকট এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর। (সূরা মায়েদা-১৫)
মানুষ আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহকে মাহমুদ নাম দিয়েছে। আর আল্লাহ পাক হুজুর কে প্রশংসা করে নাম রেখেছেন মুহাম্মদ চরম প্রশংসিত। সর্বপ্রথম সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি করে আল্লাহ প্রতি মুহুর্তে সর্বদা বৃদ্ধি করে চলেছেন। ورفنا لك ذكرك -الانشراح)) অর্থাৎ আমি আপনার যিকিরকে সমুন্নত করেছি। (সূরা ইনশিরাহ)
সমস্ত ফেরেস্তাদের যে নিয়ে আল্লাহ সালাম পাঠাচ্ছেন নবীর উপর এবং কেয়ামতের সময় হাসরের মাঠে হুজুরকে মাকামে মাহমুদার মর্যাদায় ভূষিত করবেন। আল্লাহ বলেন-
عسي ان يبعثك ربك مقاما محمودا (الاحزاب) قال هي الشفاعة
অর্থাৎ আপনার মহান রব আপনাকে মাকামে মাহমুদ দান করবেন। (সূরা- আহযাব)
নিজের আরশের উপর আল্লাহর কুদরতি নূরানী কুরসির পাশে একটি কুদরতি নূরানী কুরসি শুধু হুজুরের জন্য রাখবেন।
(عن ابن مسعود رضي الله عنه قال صلي الله عليه وسلم انه قيامه عن يمين العرش قال ذالك يوم ينزل الله تبارك وتعالي علي كرسيه –الشفاء بتعريف المصطفي ২১৭)
হুজুরকে সাফায়াতের ক্ষমতা দান করবেন। হুজুর (দঃ) স্বপ্নে দেখলে আগের ও পরের সমস্ত গুনা মাফ হয়ে যায়, দোজখ হারাম হয়ে যায়।
(من رأني لا تحركه النار -المواهب اللدنية)
অর্থাৎ আমার দর্শন যে লাভ করবে (স্বপ্নযোগে হোক বা সরাসরি হোক) তাকে জাহান্নামের আগুন পোড়াতে পারবে না। (মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ)
আর হুজুরের উপর দরুদ পড়লে সাথে সাথে আল্লাহর তরফ থেকে দশটি রহমত নাজিল হয়। দশটি গুনাহ আমলনামা থেকে বাদ দেয়া হয় দশটি নেক আমলনামায় যোগ হয়। পরকালের দশটি স্তর উত্তীর্ণ হয়ে যায়। যতবার পড়ি ততবারই এই সমস্ত মর্যাদা লাভ করা যায়। কত বড় মাহাত্ম্য শ্রেষ্ঠত্ব ও দিয়ে আল্লাহ হুজুরকে সৃষ্টি করেছেন তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনা। দুরূদ এমন একটি আমল যেটি সয়ং আল্লাহ তায়ালা তাঁর ফেরেস্তাদেরকে নিয়ে পড়ছেন। আল্লাহ বলেন-
(ان الله وملائكته يصلون علي النبي يا ايها الدين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما - الاحزاب)
অর্থাৎ নিশ্চই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেস্তাগণ কনবীর (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দুরূদ পড়ছেন, হে ঈমানদানগণ তোমরাও নবীর উপর দুরূদ পড় এবং আদবের সহিত সালাম প্রদান কর। (সূরা- আহযাব)
আল্লাহর যিনি এত বড় সৃষ্টি তার মর্যাদা যে কত বড় তা আমরা কিভাবে কল্পনার মধ্যে আনব যা কোন দিন সম্ভব নয়। আদম নবী হয়েও সাড়ে তিনশত বৎসর কেঁদেছেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মাফ করেন নাই কিন্তু যেই মুহুর্তে হুজুরের ওছিলায় মাফ চেয়েছেন আল্লাহ সাথে সাথে মাফ করে দিয়েছেন যখন নবী দুনিয়াতে আসেন নাই। আল্লাহ তায়ালা হুজুর কে কলেমায় আজানে একামতে নামাজে শরীক রেখেছেন।
(وقيل وي الاذان والاقامة وقيل اذا ذكرت ذكرت معي في قول لا اله الله محمد رسول الله)
ইলাহ ও খালেক ছাড়া নবী সব গুণ বা সিফাত আল্লাহ হুজুর কে দান করেছেন। আল্লাহর ক্ষমতা নিজস্ব আর হুজুরের ক্ষমতা আল্লাহ প্রদত্ত। আল্লাহকে আমরা সেজদা করি রাসূল আমরা মহব্বত ও অনুসরণ করি ও আদেশ পালন করি, যা সুন্নাত। আমরা আহলে সুন্নাত, আহলে হাদিস নই। যা একমাত্র সঠিক ও বেহেশতি দল। আল্লাহর আদেশ অমান্য করে গুনাহ করলে আল্লাহ বলেন আমার কাছে না তিনি বা নবীর কাছে যাও, নবী সুপারিশ করলে মাফ করে দেব। আল্লাহ বলেন-
ولو أنهم اذ ظلموا انفسهم جاؤك فاستغفروا الله واستغفر لهم رسول لوجدوا الله توبا رحيما( النساء)
দোয়া কবুলের জন্য হুজুরের সুপারিশ প্রয়োজন। তাই আনুগত্য হুজুরের সর্ব অবস্থায় প্রয়োজন। আল্লাহ বলেন- قل ان كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفوررحيم
অর্থাৎ হে নবী আপনি বলেদিন তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসতে চাও তোমরা আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ সমূহকে মাফ করে দিবেন। নিশ্চই আল্লাহ অতিশয়, ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
হুজুর সৃষ্টি না হলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতনা। আমরা সৃষ্টি হয়েছি হুজুরের ওছিলায় বেহেস্তে যাব হুজুরের পরিচিতিতে, দোয়া কবুল গুনা মাফ হয় হুজুরের ওছিলায় শাফায়াত পাব হুজুরের ওছিলায় আল্লাহর ভালবাসা পাব হুজুরের গোলামীতে দুনিয়ায় ও বেহেস্তের নেয়ামত সবই হুজুরের ওছিলায় ইসলাম ও আল্লাহর সান্নিধ্য হুজুরের ওছিলায়। সমস্ত কিছুই আমরা আল্লাহর আদেশ মানা সম্ভব হুজুরের গোলামী ও অনুসরণে হুজুরের মহব্বত ইবাদত আল্লাহর মহব্বত এবাদত। হুজুরের ভালবাসা ঈমান, নাজাত ও মাগফেরাত। এগুলি সবই আল্লাহকে পাওয়ার জন্য আল্লাহ হুজুরের অনুসরণ মহব্বতের সাথে করার তৌফিক দান করুন। আমিন। মদিনা শরীফের রহমত হুজুরের ওছিলায়। মাদিনা শরীফে গাছ কাটলে বিনা প্রয়োজনে শাস্তি হবে। মদিনাবাসীর বিরুদ্ধে ক্ষতি করার চিন্তা করলে ক্ষতি না করলেও শাস্তি হবে। রিয়াজুল জান্নাত মদীনা শরীফে, মদিনার বরকত মক্কা শরীফের দ্বিগুন করার দোয়া হুজুর করেছেন-
عن النبي صلي الله عليه وسلم قال اللهم حبب الينا المدينة كحبنا مكة أو أشد
অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, হে আল্লাহ তুমি আমাদের নিকট মদিনাকে মক্কার ন্যায় প্রিয় করে অথবা তার চাইতে বেশী ভালবাসার তাওফিক দাও। (বুখারী, মুসলিম)
মদীনা শরীফের হেফাজতী হবে। হাসরের তান্ডব মদীনা শরীফে হবে না। হাউজে কাউছারের মূল হবে হুজুরের মদীনা শরীফে মিম্বরের পাদদেশে। দাজ্জাল মদীনা শরীফে ঢুকতে পারবেনা।
শবে বরাতের আমল ও ফযীলত
মাও মুহাম্মদ ওসমান গণি আল-ক্বাদেরী
তিরমিযী শরীফে আছে, হযরত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পেলামনা। দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাকীতে ছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন তুমি কি আশঙ্কা করেছিলে যে, তোমার আল্লাহ ও রাসূল অবিচার করবেন? আমি আরয করলাম হে আল্লাহর রাসূল আমি মনে করেছিলাম আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর নিকট তাশরীফ নিয়েছেন। তখন হুযুর এরশাদ করলেন আল্লাহ তায়ালা শা’বানের এ রাতে নিকটতম আসমানের দিকে অবতরণ করেন। (তিরমিযী ইবনে মাজাহ)। অন্য রেওয়ায়েতে আছে-
হযরত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা শা’বানের ১৫ তারিখ পূর্ব রাত ছিল। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পালা আমার ঘরে ছিল। তিনি আমার নিকট তাশরীফ রাখছিলেন। আমি রাত্রে জাগ্রত হলাম। আমি বিছানায় হুযুরকে পেলাম না। তাঁকে তালাশ করার জন্য মদিনা মুনাওয়ারার গলিতে বেরিয়ে পড়লাম। শেষ পর্যন্ত বস্তির বাইরে গেলাম। তখন মদীনা মুনাওয়ারার কবরস্থানে (জান্নাতুল বাকীতে) তাঁকে যিকির ও দোআরত অবস্থায় পেলাম।
শবে বরাতের রাতকে শবে কদর ও বলা হয়:
মিরআতুল মানাজীহ নামক মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে মুফতী আল্লামা আহমাদ ইয়ারখান নঈমী (রঃ) লিখেন শবে বরাতের রাতকে শবে কদর ও বলা হয়। অর্থাৎ সমগ্র বছরের ব্যবস্থাপনার বিষয়াদীর ফয়সালার রাত। কদর মানে অনুমান বা নির্ণয় করা। মহান রব ইরশাদ ফরমান- “হা-মীম! ওয়ালকিতা-বিল মুবীন। ইন্না আনজালনাহু ফীলাইলাতিম মুবারাকাতিন ইন্না কুন্না মুনজিরিন”। (সুরা দুখান, ১-৪)
অর্থঃ হা-মীম! শপথ সেই স্পষ্ট কিতাবের আমি উহাকে এক বরকতময় (বরাতের) রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি, আমি সতর্ককারী ছিলাম। ঐ (শবেবরাতের) রাত্রিতে প্রত্যেক হিকমত পূর্ণ কাজ বন্টন করে দেওয়া হয়। (সূরা দুখান আয়াত ১-৪) আবার ২৭ রমজানকে ও শবেকদর বলা হয়। অর্থাৎ সংকীর্ণতার রাত কদর মানে সংকীর্ণ হওয়া। ঐ রাতে ফেরেশতাগণ এত বেশি অবতীর্ণ হন যে পৃথিবীপৃষ্ঠে সংকুলান হয়না। মহান রব ইরশাদ ফরমাচ্ছেন- “তানাজালুল মালা ইকাতুঅররুহু ফীহা”।
অর্থঃ এতে ফিরিশতাগণ ও জিব্রাঈল অবতীর্ণ হয়- (তরজমা-কানজুল ঈমান সুরা কদর-৪) শবে বরাতের রাতে গুণাহগার মুমিনদের কে ক্ষমা করে দেয়া হয়। কুফুরী ও বদ আক্বীদার উপর মৃত্যুবরণ কারী কাফিরদেরকে নয়।
শবে বরাত এর ফযিলত সম্পর্কিত সিহাহ ছিত্তার হাদীস:
সিহাহছিত্তার অন্যতম ইবনে মাজাহ শরীফে হযরত আবু মুসা আশআরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। হুযুর এরশাদ করেছেন- আল্লাহ তাআলা ১৫শা’বানের রাতে বদান্যতার দৃষ্টি দান করেন। তখন কাফির অথবা হিংসুক ব্যতিত আপন সব সৃষ্টিকে ক্ষমা করেছেন। (ইবনু মাজাহ) আর ইমাম আহমদ (রঃ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনায় আছে দুজন ব্যতিত হিংসুক ও নর হত্যাকারী। (মিশকাত শরীফ বাবু কিয়ামির শাহরি রমাদ্বানা অধ্যায়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য)
মিশকাত শরীফের একই অধ্যায়ে আরো আছে- হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যখন ১৫ শাবানের রাত হয় তখন রাতে জাগ্রত রয়ে ইবাদত করো এবং দিনের বেলায় রোযা রাখো। কেননা ঐ রাতে আল্লাহ তায়ালা সূর্য অস্ত যেতেই নিকটবর্তী (প্রথম) আসমানের দিকে রহমত নাযিল করেন। অতঃপর বলেন কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? (থাকলে) আমি তাকে জীবিকা দেবো। কোন রুগ্ন ব্যক্তি আছো কি? আমি তাকে আরোগ্য দান করবো। কেউ কি এমন আছো! কেউ কি এমন আছো! এভাবে ফজর হওয়া পর্যন্ত (ডাকবেন) (ইবনু মাজাহ শরীফ)
ইবাদতের সময়কালঃ উত্তম হচ্ছে এ রাতে সমগ্র রাত জেগে ইবাদত করা। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তবে রাতের প্রথমভাগে শুয়ে পড়বে এবং শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়বে কবর যিয়ারত করবে এবং তিনদিন রোযা রাখবে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। কারণ একটি মাত্র নফল রোযা রাখা জায়েজ হলেও উত্তম নয়। অন্যান্য রাতের শেষভগে এ বদান্যতা প্রদর্শন করা হয় কিন্তু এ রাত প্রারম্ভে থেকেই বরকতময়। ওই সব লোক বড়ই সৌভাগ্যবান যারা এ রাত জেগে ইবাদত করে। কিন্তু ওইসব লোক বড়ই হতভাগা যারা আতশবাজী ও সিনেমা দর্শন ইত্যাদিতে রাত অতিবাহিত করে। (যুল মিরআত)
শবে বরাতের দিনে হালুয়া রুটি বিলিয়ে দিলে মনে হিংসা থাকেনাঃ হাদীস শরীফে আছে- হিংসুক মানুষ, হত্যাকারী ব্যতিত সকলকে আল্লাহ পাক এ বরকতময় রাতে ক্ষমা করে দেন। এখানে হিংসা মানে পার্থিব হিংসা ও শত্র“তা আর হত্যা মানে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। অন্যথায় কাফিরদের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ রাখা এবং জিহাদে কাফিরদের হত্যা করা, ডাকাত, ব্যভিচারী ও মানুষ হত্যাকারীকে হত্যা করা ইবাদত। কোন কোন স্থানে শবে বরাতের দিনে একে অপরকে হালুয়া রুটি ইত্যাদি তোহফা প্রেরণ করে। নিজেদের ভুলত্র“টির জন্য পরস্পর ক্ষমা চেয়ে নেয়। এসব কিছুর মূল হচ্ছে উপরোক্ত হাদীস শরীফ। কারণ অন্যায়ভাবে শুধু শুধু হিংসা বিদ্বেষ ও শত্র“তা পোষণকারী এ রাতের রহমতরাজী থেকে বঞ্চিত। আর এ তোহফা উপটৌকন হিংসা বিদ্ধেষ দূরীভূত করার মাধ্যম। তাছাড়া এ রাত ইবাদত সমূহের রাত। আর দান-খয়রাত ও হাদিয়া প্রদান করা এবং মানুষকে খানা প্রদান করা ও ইবাদত। এসব দান খয়রাতের পথে বাধা সৃষ্টি করা ও এটাকে শিরক বলা জঘন্য মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
খাদ্য প্রদানে উৎসাহ প্রদান না করা মূলত কিয়ামতকেই অস্বীকার করাঃ এ রাতে মিছকীনকে হালুয়া রুটি ইত্যাদি খাদ্য প্রদান করতে দেখলে এক ধরণের লোকেরা এটাকে বিদআত শিরক ইত্যাদি বলে এবং খাদ্য প্রদান করতে বাধা দেয়। যারা খাদ্য প্রদান করতে একে অপরকে উৎসাহ দেয়না কুরআনের ভাষায় তারাই কিয়ামতকে অস্বীকারকারী। যেমন আল্লাহ পাক বলেন- “আরাইতাল্লাজী ইয়ুকাজজিবুবিদদীন ফাজালিকাল্লাজী ইয়াদুউল ইয়াতীম অলা ইয়াহুদ্দু আলা ত্বআমিল মিছকীন”।
অর্থঃ আপনি কি সেই লোকটিকে দেখেছেন? যে কিয়ামত (প্রতিফল) দিবসকে অবিশ্বাস করে অনন্তর সে তো ঐ ব্যক্তি যে এতিমকে ধাক্কা দিয়ে তাড়ায়। আর অভাবগ্রস্তকে আহার্য প্রদানে উৎসাহ প্রদান করেনা। (সূরা মাউন ১-৩)
মিশকাত শরীফের একই অধ্যায়ে উল্লেখ আছে- হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, হুযুর এরশাদ করেছেন তুমি কি জানো যে এ রাত অর্থাৎ ১৫ই শাবানে কী রয়েছে? আরজ করলেন হে আল্লাহর রাসূল তাতে কী আছে? হুযুর এরশাদ করলেন এ রাতে ঐ বছরে ভূমিষ্ট হবে এমন মানব শিশুদেরকে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ বছর মৃত্যুবরণকারী মানুষদের ও লিপিবদ্ধ করা হয়। তদুপরি এ রাতে তাদের আমলগুলি উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়। আর তাদের রিযিক অবতরণ করা হয়। তিনি আরজ করলেন হে আল্লাহর রাসূল কেউ কি আল্লাহর রহমত ব্যতিত জান্নাতে যাবে না? তখন তিনি তিনবার বলেছেন আল্লাহ তাআলার রহমত ব্যতিত কেউই জান্নাতে যাবেনা। আমি আরজ করলাম হে আল্লাহর রাসূল আপনি ও না? তদুত্তরে হুযুর আপন হাত শরীফ আপন মাথার উপর রখলেন আর এরশাদ করলেন “আমিও না তবে (ঘটনা) এ যে, আল্লাহ তাআলা আমাকে তাঁর রহমত দ্বারা ঢেকে নেন। এটা তিনবার বলেছেন। (বাইহাক্বী, দাওয়াত ই কাবীর)
উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রঃ) তার বিশ্ববিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ সিরাতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ এ উল্লেখ করেছেন যে, ফিরিশতাগণ লাওহে মাহফুয থেকে গোটা বছর সংঘটিত হবে এমন ঘটনাবলী এরাতে সহীফা (লিপি) গুলোতে কপি করেছেন। আর প্রতিটি সহীফা বা লিপি ওই সব ফিরিশতাকে অর্পণ করেন, যাঁদের দায়িত্বে এসব কাজ অর্পিত।
সুতরাং মৃত্যুবরণকারীদের তালিকা মৃত্যুদূত ফিরিশতাকে জন্মগ্রহণকারীদের তালিকা সন্তান গঠনকারী ফিরিশতাদের আর জীবিকারাজীর তালিকা হযরত মীকাঈলকে দিয়ে দেয়া হয়। এ দৃষ্টিতে এ রাতকে শবে ক্বদর ও বলা হয়। কারণ শবে কদর অর্থ পরিমাণ র্নিধারণের রাত।
অবান্তর আপত্তির বেড়াজালে বরকতময় রজনী শবে বরাত
মাওলানা কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বাশারী
পবিত্র আল কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন-
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِين- فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ- َ
অর্থাৎ আমি এটি (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। আমিতো সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। (সূরা দুখান, আয়াত ৩-৪)
এখানে উল্লেখিত لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ এর ব্য্যাখায় মুফাস্সিরীনে কিরাম থেকে দুটি অভিমত বর্ণিত হয়েছে। তাফসীরে রুহুল মাআনীসহ বিভিন্ন তাফসীরে উল্লেখ আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.), কাতাদাহ, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের, হাসান বসরীসহ জমহুর মুফাসসিরীনের মতে لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ বা বরকতময় রজনী বলতে শবে কদর উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে হযরত ইকরামা ও একদল মুফাসসিরের মতে, বরকতময় রজনী বলতে শবে বরাত উদ্দেশ্য। ইমাম কুরতুবী, আল্লামা ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী, ইমাম রাযী, আল্লামা মাহমুদ আলুসী বাগদাদী প্রখ্যাত মুফাসসিরগণ স্ব স্ব তাফসীরে গ্রন্থে বরকতময় রাত্রির ব্যাখ্যায় উপরোক্ত দুটি মতই উল্লেখ করেছেন।
বরকতময় রজনীর তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) শবে কদরের কথাই বলেছেন। তবে তাঁর বিভিন্ন বর্ণনা থেকে শবে বরাতের বিশেষত্বের দিকও ফুটে উঠেছে। তাঁর থেকে বর্ণিত আছে যে, সকল বিষয় সিদ্ধান্ত হয় শা’বান মাসের মধ্যরাতে অর্থাৎ শবে বরাতে এবং এগুলো সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় রামাদান মাসের ২৭ তম রাতে অর্থাৎ শবে কদরে (তাফসীরে রুহুল মাআনী, ২৫ তম খন্ড, পৃষ্ঠা ১১৩)।
আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহাম্মদ আল বাগদাদী তদীয় তাফসীরে খাযিন এ উল্লেখ করেছেন
يبر فيها امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات وروي البغوي بسنده ان النبي صلي الله عليه وسلم قال تقطع الاجال من شعبان الي شعبان حتي ان الرجل لينكح ويولد له وقد خرج اسمه في الموتي وعن ابن عباس ان الله يقضي الاقضية في ليلة النصف من شعبان ويسلمها الي اربابها في ليلة القدر-
অর্থাৎ শবে বরাতে বছরের সকল বিষয়াবলীর তালিকা করা হয় এবং জীবিতদের মৃতদের তালিকায় হস্তান্তর করা হয়। ইমাম বাগাভী স্বীয় সনদে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন এক শাবান থেকে পরবর্তী শাবান পর্যন্ত জীবনকাল নির্ধারিত হয়। এমনকি একজন মানুষ বিয়ে করে তাঁর সন্তান হয় অথচ তার নাম মৃত ব্যক্তিদের তালিকায় বের করে রাখা হয়ে গেছে। আর ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহ তায়ালা সকল বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শাবানের মধ্যবর্তী রাতে এবং তা সংশ্লিষ্ট ফেরেশতার নিকট সমপর্ণ করেন লাইলাতুর কদরে। (তাফসীরে খাযিন, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ১৪৩)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাস মাহে শা’বআন:
শাবান মাসের অত্যধিক ফযীলতের কারণে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসকে তাঁর নিজের মাস বলে অভিহিত করেছেন। হযরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন -
شهر رمضان شهر الله وشهر شعبان شهري- شعبان المطهر ورمضان المكفر-
অর্থাৎ রামাদান আল্লাহর মাস এবং শা’বান আমার মাস। শা’বান পবিত্রতা দানকারী আর রামাদান গুনাহমোচনকারী। (কানযুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৪৭ হাদীস নং ২৩৬৮৫ ইবনে আসাকির, দায়লামী, আল জামিউস সগীর লিস্ সুয়ুতী)
শা’বান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাস হওয়ার কারণ হলো তিনি এ মাসে আবশ্যকতা ছাড়া অধিক রোযা রাখ সে অর্থাৎ নফল হিসেবে অধিক রোযা রাখতেন। আর রামাদান আল্লাহর মাস হওয়ার কারণ হলো আল্লাহ তায়ালা এ মাসে রোযা রাখা ফরয করে দিয়েছেন। ফলে এ মাসে রোযা রাখা বান্দার প্রতি আল্লাহর হক হিসেবে পরিগণিত। (ফায়যুল কাদীর লিল মানাভী, ১৪তম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪০৫)
হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত অপর হাদীসে আছে,
كان رسول الله صلي الله عليه وسلم يصوم حتي نقول لايفطر ويفطر حتي نقول لايصوم فما رايت رسول الله صلي الله عليه وسلم استكمل صيام شهر الا رمضان وما رايته اكثر صياما منه في شعبان-
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে রোযা রাখা আরম্ভ করতেন যে আমরা বলতাম তিনি আর রোযা বাদ দিবেন ন্ াআর যখন রোযা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম তিনি রোযা রাখবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রামাদান ছাড়া অন্য কোনো মাসে রোযা পূর্ণ করতে দেখিনি এবং শা’বান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে অধিক রোযা রাখতে দেখিনি। (বুখারী,صوم شعبان باب ,মুসলিম باب صيام النبي صلي الله عليه وسلم في غير رمضان)
লা-মাযহাবী মালাকীদের দৃষ্টিতে শবে বরাত:
বর্তমান বিশ্বে লা-মাযহাবী, সালাফী, ওয়াহাবী, নজদী যারা শবে বরাতকে অর্থাৎ শবে বরাতের রোযা ও নফল নামায পড়াকে বিদআ’ত ফতোয়া প্রদান করছেন। তাদের বদ আক্বিদার গুরু যারা তারাও শবে বরাতকে স্বীকার করেছেন এবং ফযীলতপূর্ণ রাত্রি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আমি নিম্নে তাদের প্রণীত বই থেকে কিছু উক্তি উপস্থাপন করছি।
ক্স সালাফীদের মান্যবর ব্যক্তি ইবনে তাইমিয়া একজন গায়র মুকাল্লিদ পন্ডিত ছিলেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সাথে বিভিন্ন মাসআলায় তার বিরোধ রয়েছে। তিনি কবর যিয়ারত এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফরকে নাজায়েয বলেছেন। লা-মাযহাবী ও আধুনিক সালাফীগণ তাকে ইমাম হিসেবে মান্য করেন। তিনি শবে বরাত সম্পর্কিত কোনো কোনো হাদীসের সনদের সমালোচনা করলেও স্বীকার করেছেন যে শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে অনেক মারফু হাদীস ও আছার রয়েছে। তার বক্তব্য হলো-ৎ
فقد روي في فضلها من الاحاديث المرفوعة والاثار ما يقفضي انها ليلة مفضلة وان من السلف من كان يخصها بالصلاة فيها وصوم شعبان قد جاءت فيه احاديث صحيحة-
অর্থাৎ শা’বানের মধ্যবর্তী রাতের ফযীলত সম্পর্কে অনেক মারফু হাদীস ও আছার বর্ণিত হয়েছে যা থেকে বুঝা যায় যে এটি একটি মর্যাদাবান রাত। সালফে সালিহীনের কেউ কেউ এ রাতকে নামাযের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতেন। আর শা’বান মাসের রোযার বিষয়ে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
ক্স একইভাবে সাম্প্রতিক সময়ে যিনি হাদীসের সনদ নিয়ে অধিক আলোচনা সমালোচনা করেছেন এবং পূর্বসূরী মুহাদ্দিসীনে কিরামের মতামতকে পাশ কাটিয়ে নিজস্ব বিবেচনায় বিভিন্ন হাদীসকে যঈফ মাওযু ইত্যাদি বলেছেন এমনকি ইমাম বুখারী (র.) এর আদাবুল মুফরাদ, ইমাম তিরমিযী (র.) এর সুনানে তিরমিযী, ইমাম ইবনে মাজাহ (র.) এর সুনানে ইবনে মাজাসহ মুহাদ্দিসীনে কিরাম ও সর্বসাধারণের নিকট গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন সহীহ হাদীসের কিতাবের বিভিন্ন হাদীসকে যঈফ বলেছেন, এমনকি উক্ত হাদীসের কিতাবসমূহকে সহীহ ও যঈফ এ দুভাগে বিভক্ত করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন সেই নাসির উদ্দিন আলবানীও শবে বরাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসকে সহীহ বলেছেন এবং শবে বরাতের ফযীলতকে স্বীকার করেছেন। তিনি হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে বলেছেন আল্লাহ তায়ালা শাবানের মধ্যবর্তী রাতে (অর্থাৎ শবে বরাতে) তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর মুশরিক ও হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকল বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন। তিনি এ সম্পর্কে বলেছেন-
حديث صحيح روي عن جماعة من الصحابة من طرق مخلتفة يشد بعضها بعضا وهم معاذ جبل و ابو ثعلبة الخشني وعبد الله بن عمرو وابي موسي الاشعري وابي هريرة شة-Ðوابي بكر الصديق و عوف ابن مالك وعا
অর্থাৎ এ হাদীস সহীহ। একদল সাহাবী থেকে বিভিন্ন সনদে এটি বর্ণিত হয়েছে যা একে অন্যকে শক্তিশালী করে। এ হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবায়ে কিরামগণ হলেন ১. হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.) ২. আবু সা’লাবা আল খুশায়নী (রা.) ৩. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) ৪. আবু মুসা আল-আশআরী (রা.) ৫. আবু হুরায়রাহ (রা.) ৬. আবু বকর (রা.) ৭. আউফ ইবনে মালিক (রা.) ৮. হযরত আয়েশা (রা.)। সুতরাং শবে বরাত সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস নেই এ রকম কথা বলা নিঃসন্দেহে মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। যেমনটি পূর্বোক্ত নাসির উদ্দিন আলবানী বলেছেন। (সিলসিলাতুল আহা দিসস সহীহা, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৩৫)
ক্স তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাকার আবদুর রহমান মুবারকপুরী ও একজন লা মাযহাবী আলিম ছিলেন। তিনি আয়েশা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন اعلم انه قد فضيلة ليلة النصف من شعبان عدة احاديث مجموعها يدل علي ان لها اصلا- অর্থাৎ জেনে রাখো শা’বানের মধ্যবর্তী রাতের (শবে বরাতের) ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যেগুলো সম্মিলিতভাবে প্রমাণ করে যে শবে বরাতের ভিত্তি রয়েছে। (তুহফাতুল আওয়াযী, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৫) আবদুর রহমান মুবারকপুরী উপরোক্ত বক্তব্যে পর শবে বরাত সম্পর্কিত বিভিন্ন হাদীস উল্লেখ করত এগুলোর সনদ আলোচনা শেষে বলেন فهذه الاحاديث بمجموعها حجة علي من زعم انه لم يثبت في فضيلة ليلة النصف من شعبان شي والله تعالي اعلم- অর্থাৎ যারা বলে থাকেন শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে কোনো প্রমাণ্য দলীল নেই এ সকল হাদীস সম্মিলিতভাবে তাদের বিপক্ষে দলীল। (তুহফাতুল আওয়াযী, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৭)
ক্স আল্লামা আনোয়ার শাহ কশ্মিরী (র.) এর নিম্নোক্ত বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি তিরমিযী শরীফে হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, هذه الليلة ليلة البراءة وصع الروايات في فضل ليلة البراءة واما ذكر ارباب الكتب من الضعاف والمنكرات فلا اصل لها- অর্থাৎ এ রাত হলো লাইলাতুল বারাত। আর লাইলাতুল বারা’আত এর ফযীলত সম্পর্কিত বর্ণনাসমূহ সহীহ। বিভিন্ন গ্রন্থকার যঈফ ও মুনকার বলে যা উল্লেখ করেছেন এর কোনো ভিত্তি নেই। (আরফুশ শাযি, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭১)
জেনে রাখা ভাল: এ রাত্রটি অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত।
১। লাইলাতুল বরাত, ২। লাইলাতুত্ দোয়া, ৩। আরবী ভাষাভাষী অঞ্চলে নিসফুম মিন শা’বান, ৪। মালেশিয়ায় নিসফু শাবান, ৫। তুর্কিভাষাভাষীরা বলে বিরাতি কান্দিলি, ৬। এই পাক ভারত উপমহাদেশে শবে বরাত নামে পরিচিত।
প্রসঙ্গ ভন্ড নবী
মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন আল-ক্বাদেরী
প্রভাষক বদরপুর সিনিয়র মাদরাসা, চাঁদপুর।
অনুবাদঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, খুব শীঘ্রই আমার উম্মতের মধ্যে ৩০ জন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব ঘটবে। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর নবী বলে ধারণা করবে। অথচ আমিই শেষ নবী আমার পরে আর কোন (নতুন) নবী নেই।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর কেউ যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নবী রাসূল হওয়ার দাবী করে কিংবা কেউ যদি খতমে নবুওয়তের আক্বীদাকে অস্বীকার করে তবে সে মিথ্যাবাদী ও কাফির। কুরআন হাদীস ইজমা কিয়াস তথা ইসলামী শরীয়তের দলীল চতুষ্টয় দ্বারা এ আক্বীদা প্রমাণিত।
অনুবাদঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাক জবানে ইরশাদ করেন। শেষ যুগে অনেক মিথ্যুক দাজ্জাল বের হবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব হাদীস (কথা) বর্ণনা করবে যা তোমরা বা তোমাদের পিতৃপুরুষ (হক্কানী ওলামায়ে কেরামরা) শুনে নাই। তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাক তারা যেন তোমাদেরকে গোমরাহ, ফিতনা বা বিপদাপন্ন করতে না পারে। (মুসলিম)
বর্তমান যুগের দেওবন্দীদের মধ্যে আশরাফ আলী থানভী ও এমন একজন দাজ্জাল কাজ্জাব ও মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার। তার থেকে সাবধান না থাকলে ঈমান আক্বীদা বরবাদ হয়ে যাবে। তাই তার কুফুরী বক্তব্য গুলোর মধ্যে কতিপয় মন্তব্য উল্লেখ করা হলোÑ
১. একদিন মৌ. আশরাফ আলী থানভীর এক মুরীদ তার কাছে পত্র লিখে তার স্বপ্নের কথা জানালেন যে আমি ঘুমের মধ্যে কালিমা পড়তেছি-
অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই আশরাফ আলী আল্লাহর রাসূল। (নাউযুবিল্লাহ) আমি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জেগে উঠে শব্দ করে কালিমা পড়তে চাইলাম কিন্তু আমার মুখ দিয়ে এমনটাই বের হচ্ছে। আমার মুখ সংযত রাখতে পারলামনা। এবার আমি দুরুদ শরীফ পড়তে লাগলাম-
اللهم صلي علي سيدنا ونبينا اشرف علي واله وسلم.
আমার জিহবা দ্বারা সঠিক কথা উচ্চারণ করতে পারছিলাম না। এতে আমার কোন সমস্যা হবে কিনা। জনাব থানভী সাহেব উত্তর দিলেনÑ তুমি সুন্নাতের উপরই কায়েম আছো। (দেখুন রিছালা আল ইমদাদ) মুরীদ তাকে আল্লাহর রাসূল ও নবী বলে দাবী করলো জিহবার অক্ষমতা প্রকাশ করলো আর তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বাদ দিয়ে নিজেকে রাসূল ও নবী বানানোর জন্য মুরীদের কথাকে হক ও সুন্নাত বলে সমর্থন দিল (নাউজুবিল্লাহ)
২. মৌলভী আশরাফ আলী সাহেব বৃদ্ধকালে তার অল্প বয়স্কা এক মহিলা মুরীদকে বিবাহ করেন। এ বিবাহের আগে তার কোন এক মুরীদ স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, মৌলভী আশরাফ আলীর ঘরে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) তাশরীফ এনেছেন। এর তাবীর প্রসঙ্গে মৌলভী আশরাফ আলী সাহেব বলেন- কোন অল্প বয়স্কা মহিলা আমার হাতে আসবে। কেননা হুযুর (দঃ) এর সাথে আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) এর যখন বিবাহ হয় তখন তার বয়স ছিল সাত (৭) বছর মাত্র। এ স্বপ্নে তার ইঙ্গিতই রয়েছে যে, আমি হলাম বৃদ্ধ এবং বিবি সাহেবা হচ্ছে বালিকা। (মৌলভী আশরাফ আলী রচিত রিসালাতুল ইমদাদ দ্রষ্টব্য)। ব্যাখ্যাঃ মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান-
-
অর্থঃ নবী মুমিনদের জানের চেয়ে ও আরো নিকটে ও সবচেয়ে আপনজন এবং তাঁর স্ত্রীগণ হচ্ছে তাদের মা। (সূরা আহযাব) বিশেষ করে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) এর সেই উচ্চ মর্যাদা রয়েছে যে, সারা বিশ্বের মায়েরা তাঁর পবিত্র চরণে উৎসর্গীত। কোন মুর্খ ব্যক্তিও মাকে স্বপ্নে দেখে স্ত্রী হিসেবে তা’বীর করবেনা। তাই এটা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) এর প্রতি অবমাননাকর বরং তার শানে সুস্পষ্ট বেয়াদবী ও গোস্তাখী বুঝা যায়। মাকে স্ত্রী হিসেবে তা’বীর করার চেয়ে জঘন্য বেয়াদবী এবং কুফুরী আর কি হতে পারে। মূলত তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে, আমি ও তো একজন নবী ও রাসূল (!) তাই আমিও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মতই কুমারী মেয়েকে বিবাহ করবো। (নাউজুবিল্লাহ)
৩. আশরাফ আলী সাহেব তার হিফজুল ঈমান পুস্তকে লিখেছেন যে, গায়েব অদৃশ্যের জ্ঞান যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট রয়েছে তেমন গায়েব তো প্রত্যেক শিশু পাগল বরং প্রত্যেক পশু এবং চতুস্পদ জন্তুর ও রয়েছে। তিনি আরো বলেন হুযুরের পবিত্র সত্তার মধ্যে ইলমে গায়েব (অদৃশ্য জ্ঞান) এর অস্তিত্বকে স্বীকার করা যদি যায়েদের কথানুযায়ী শুদ্ধ হয়, তবে জিজ্ঞাস্য এই দাঁড়ায় যে, ঐ গায়ব দ্বারা কি কতেক ইলমে গায়ব বুঝানো উদ্দেশ্য? না সামগ্রিক ইলমে গায়েব? যদি কতেক ইলমে গায়বতো যায়েদ আমর বরং প্রতিটি শিশু ও পাগল বরং সকল জানোয়ার এবং সকল গৃহ পালিত পশুরও আছে। আর যদি সামগ্রিক ইলমে গায়ব বুঝানো উদ্দেশ্য হয় এভাবে যে, তার একটি মাত্র সংখ্যা ও বাদ না পড়ে তবে এটা বাতিল হওয়া নক্বলী ও আকলী দলীল দ্বারা প্রমাণিত।
দেখুন ঐ লোকটা কীভাবে কোরআনে আযীমকে পরিত্যাগ করে নিজের ঈমানকে চিরবিদায় করে দিলো কারণ মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান-
অর্থঃ তিনি (নবী) গায়েবের বিষয় বলতে কৃপণ নন। (সূরা তাকবীর ২৪ অনুবাদ কানযুল ঈমান)
সে এটা জিজ্ঞাসা করতে লাগল যে, নবী ও পশু জানোয়ারের মধ্যে পার্থক্য কী? এমনিভাবেই আল্লাহর পক্ষ থেকে মোহর লাগিয়ে দেয় হয় প্রতিটি অহংকারী প্রবঞ্চকের অন্তরে। ইরশাদ হচ্ছে-
অর্থঃ আল্লাহ পাক তাদের অন্তরে ও কর্নে মোহরাঙ্কিত করে দিয়েছেন এবং চোখে পর্দা করে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (সূরা বাকারা-৭, তরজমা কানযুল ঈমান)
আ’লা হযরত আজীমুল বারকাত ইমামে আহলে সুন্নাত আহমদ রেযাখান ফাযেলে বেরলভী (রঃ) বলেন আপনি কখনো দেখতে পাবেন না যে, কোন ব্যক্তি হুযুর মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মান মর্যাদা খাটো করে আর এমতাবস্থায় সে মহান প্রতিপালক আল্লাহপাককে সম্মান ও করে। আল্লাহরই কছম হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মান মর্যাদা হানি ঐ ব্যক্তিই করে যে (গোপনে বা প্রকাশ্যে) মহান প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার মর্যাদা হানি করে। যেমন মহামহিম আল্লাহ বলেন- এবং ঐ যালিমগণ আল্লাহর যথার্থ মূল্যায়ন করেনি।
অর্থাৎ যে ব্যক্তি রাসূলকে অনুসরণ করল (ভালবাসার মাধ্যমে) সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই অনুসরণ করল।
কারণ তার নাপাক দুর্গন্ধময় ভাষণের গতিকে যদিও মহান আল্লাহ তাআলার ইলমের দিকে প্রবাহিত না ই করা হয়। তবুও কোন কাফির ইচ্ছা করলে সেটাকে অবশ্যই আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতা পর্যন্ত হুবহু নির্বিঘেœ প্রবাহিত করতে পারবে। তখন উদাহরণ স্বরূপ বলা যাবে যে, যদি কোন বিধর্মী কাফের যে মহান আল্লাহ তাআলার ব্যাপক কুদরতকে অস্বীকার করে করে সে যদি এই মুরতাদ নবীর দুশমন দেওবন্দী ওহাবী আশরাফ আলী থানবীর নিকট শিক্ষা লাভ করতে যায়, তবে তো সে (আল্লাহর কুদরত সম্পর্কেও সেরূপ যুক্তি তর্কে লিপ্ত হয়ে) বলবে মহান আল্লাহ পাকের সত্তার মধ্যে কুদরত আছে বলে যদি কোন মুসলমানদের কথানুযায়ী স্বীকার করা হয় যদি তা শুদ্ধও হয় তবে জিজ্ঞাস্য এই দাঁড়ায় যে, এ কুদরত দ্বারা কি কতেক বস্তুর উপর কুদরত বুঝায়? না সমস্ত বস্তুর উপর বুঝায়? যদি কতেকের উপর কুদরত বুঝায় তাহলে এতে মহান আল্লাহ পাকের কী বিশেষত্ব আছে? এমন কুদরততো যায়েদ আমর বরং প্রতিটি শিশু এবং পাগল বরং সমস্ত পশু প্রাণী জানোয়ার এবং সকল গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তুরও রয়েছে। আর যদি সকল বস্তুর উপর কুদরত বুঝায় এমনি ভাবে যে সে সব বস্তুর কোন একটা সংখ্যাও বাদ না পড়ে, তবে তাও বাতিল হওয়া নক্বলী ও আক্বলী (উদ্ধৃতিগত ও যুক্তিগত) দলীল দ্বারা প্রমাণিত। কারণ সব বস্তুর মধ্যে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার মহান পবিত্র সত্তাও অন্তর্ভূক্ত। (অর্থাৎ তাঁর মহান সত্তাও তাঁর কুদরতের অধীন হয়ে যাবে) অথচ তাঁর স্বীয় জাত (সত্তা) তাঁর কুদরতের অধীনে নয়। অন্যথায় তিনিও কোন কুদরতের অধীনস্থ হয়ে যাবেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ পাক জাত মুমকিন (সম্ভাবনাময় অন্যভাষায় অস্তিত্বে আসার জন্য অপরের মুখাপেক্ষী) হয়ে যাবেন। তাঁর জাত তখন ওয়াজিব (যাঁর অস্তিত্ব স্বয়ং সম্পূর্ণ অত্যাবশ্যকীয় কারো মুখাপেক্ষী নয় এমন) থাকবেনা। ফলে, তিনিই ইলাহ হিসেবে ও বিদ্যমান থাকবেন না।
সুধীপাঠক মন্ডলী! পাপাচার ও আল্লাহ ও রাসূলের উক্ত নাফরমানির দিকে নজর দিন। এক পাপাচার কীভাবে অন্য পাপাচারের দিকে টেনে নিয়ে যায়? আল্লাহ পাকের আশ্রয় প্রার্থনা করছি যিনি সমগ্র জাহানের খালিক ও মালিক।
সারকথা এই যে, উপরোক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাদের বানানো তথাকথিত হাকীমুল উম্মাত? আশরাফ আলী থানভী ইজমা ই উম্মাত অনুযায়ী কাফির মুরতাদ মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার ও ইসলাম বহির্ভূত। বাযযাযিয়াহ, দুরার, গুরার, ফাতাওয়ায়ে খাইরিয়াহ, মাজমাউল আনহুর এবং দুররুল মুখতার প্রভৃতি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে এ জাতীয় কাফির বেদ্বীনদের সম্পর্কে বলা হয়েছে-
অর্থাৎ যে কেউ তার কুফর ও আযাব এর ব্যাপারে সন্দেহ করবে সেও স্বয়ং কাফির।
শেফা শরীফে বলা হয়েছে-
অর্থাৎ আমরা তাকেই কাফির বলি, যে এমন ব্যক্তিকে কাফির বলে না, যে মিল্লাতে ইসলাম ব্যতিত অন্য কোন মিল্লাতকে বিশ্বাস করে অথবা তাদের প্রতি নীরব সমর্থন দেয় কিংবা তাদের ভ্রষ্টতায় সন্দেহ পোষণ করে। (দেখুন হুসামুল হেরমাইন আলা মানহারিল কুফরী অল মায়ন)
আউলিয়া জীবনাল্লেখ্য
হযরত গাউছুল আ’জম মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানী (রা.)
আয়েশা আখতার
কামিল ২য় বর্ষ (হাদিস) গাজীমুরা আলিয়া মাদ্রাসা লাকসাম কুমিল্লা
পবিত্র নাম মোবারক ও নসব শরীফ:
আব্দুল কাদের বিন আবু সালেহ মুসাজঙ্গী দুসত বিন আবু আব্দুল্লাহ বিন ইয়াহইয়া আযযাহেদ বিন মুহাম্মদ বিন দাউদ বিন মুসা বিন আব্দুল্লাহ বিন মুসা আল জাউন বিন আব্দুল্লাহ আল মাহদ্ব উপাধি মাজাল্ল বিন হাসান আল মুছান্না বিন হাসান বিন আলী বিন আবু তালেব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)
হযরত গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বংশ হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে-
আর সহীহ সূত্রে হযরত আমীরুল মু’মিনিন হযরত আলী বিন আবী তা’লিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) পর্যন্ত তার বংশীয় ধারা, বিরোধীদের দুর্বল দলীল সমূহ ও তাদের সংকীর্ণতার জন্য এবং পর্যাপ্ত প্রমাণসমূহের সাব্যস্তকারীদের পর্যপ্ত শক্তিশালী দলীল সমূহ প্রকাশ হলো। সহীহ সূত্রে হযরত গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর বংশ ধারা হযরত আমীরুল মুমিন হযরত আলী বিন আবী তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। এবং উক্ত নসব শরীফ নিয়ে বিরুদ্ধবাদীদের দূর্বল দলীল সমূহ তাদের সংকীর্ণতা এবং নসব শরীফ যারা আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) পর্যন্ত সাব্যস্তকারীদের শক্তিশালী দলীলসমূহ প্রমাণিত হলো।
উপনাম এবং লকবসমূহ:
বিশ্ব বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থসমূহ তাঁর উপনাম বলা হয়েছে আবু মুহাম্মদ আর তাঁর জন্মস্থান বলা হয়েছে আল জিলী বা আল্ জিলানী, আল্ কিনানী।
বিশ্ববিখ্যাত ইমামগণের দেয়া উপাধিসমূহ:
১. ইমাম এ লকবটি হযরত ইমাম সামআনী (রহঃ) এভাবে বর্ণনা করেন-
(হাম্বলীগণের ইমাম ও তাঁর সময়ের তাদের শায়খ। (ইমাম ইবনে হাম্বলী হতে বর্ণিত)
২. ইমাম যাহারী (রহঃ) যে উপাধি দিয়ে তাঁর বিশ্ববিখ্যাত কিতাব- মধ্যে বর্ণনা করেন তাহলো শায়খুল ইসলাম (ইসলামের শায়খ)
এছাড়াও গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বৈশিষ্ট্যের দিক লক্ষ করে যুগে যুগে ইমামগণ অসংখ্য উপাধি তাঁকে দিয়েছেন নিম্নে (১) সুলতানুল আরেফীন (২) তাজুল মুহাক্কীকীন (৩) সাবীউল হুমাইয়্যা (৪) মিছবাহুজ জনাম এছাড়াও গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ১১টি নাম মোবারক নাম রয়েছে-
পরীক্ষিত এ সমস্ত নাম যে কোন রোগীর জন্য খুবই উপকারী জ্বীনের প্রভাব মুক্তির জন্য এ নাম মোবারক ব্যক্তির গলায় মধ্যে দিলে জ্বীনের প্রভাব মুক্ত হয়। এভাবে সকল রোগের জন্য উপকার পরীক্ষিত।
হুজুর গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) পবিত্র বিলাদত/জন্ম: হযরত গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) জিলান নামক শহরে ৪৭১ হিজরী/ ৪৭০ হিজরী সনে জন্মগ্রহণ করেন। এ জন্য তাঁর নিসবাত জিলানী।
সফরঃ হুজুর গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ৪৮৮ সনে তাঁর নিজ শহর হতে বাগদাদে আসেন তখন তার বয়স ছিল ১৮। তৎকালীন বাগদাদে পৃথিবী খ্যাত আলেমদের কাছ থেকে তিনি জ্ঞানার্জন করেন। যার ফলপ্রসূতে অল্প সময়ে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অগাধ ইলম অর্জন করে পৃথিবী খ্যাত আলেমদের অন্যতম হন। হযরত ইমাম যাহবী (রহঃ) তাঁর “সিয়ারু আ’লামিন নুবানা” নামক বিশ্বখ্যাত কিতাবে ২০/৪৩৯ পৃষ্ঠায় হযরত গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) পরিচয় এভাবে দিয়েছেন-
নিশ্চয়ই তিনি হলেন শেখ, ইমাম, আলেম, যাহেদ, আরেফ, কুদওয়া (মডেল) বা আদর্শ শাইখুল ইসলাম। ইলমুল আউলিয়া (আউলিয়াগণের ইলমের মডেল) যিনি মহিউদ্দিন।
হাম্বলী মাজহাবের ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী (রহঃ) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত- নামক কিতাবে ১ম খন্ড/২৯০ পৃষ্ঠায় বলেন-
গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হলেন যুগের শেখ আরেফীনগণের আদর্শ (মডেল) সমস্ত মাশায়েখদের সুলতান, মাকামাত কারামাতে, সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। (চলবে)
কার্যকরী কমিটি গঠন
গত ২৭/০২/২০১৪ ইং তারিখে গাজীপুরী ক্বাদেরীয়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খানকায়ে সোবহানীয়া শাহপুর দরবার শরীফে সংগঠনের কার্যকরী কমিটি গঠনপূর্বক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় উক্ত সংগঠনের প্রধান পৃষ্টপোষক শাহপুর দরবার শরীফের গদ্দিণীশিনপীর ছাহেব আলহাজ্ব অধ্যাপক মুহাম্মদ পিয়ারা আল-ক্বাদেরী প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায় গাজীপুরী ক্বাদেরীয়া সংগঠনের কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। নিম্নে সংগঠিত কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা পদবীসহ প্রকাশ করা হলো:
সভাপতি
আলহাজ্ব মাও. মুফতী কাজী আবুল বাশার আল-ক্বাদেরী
সহ-সভাপতি
শেখ শাহ্জাদা ইয়াসির আহমদ সোবহান
শেখ শাহ্জাদা আহসান হাবিব সোবহানী (কাওসাইন)
ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল আলম শামিম
মোঃ শাহাদাৎ হোসেন পাটোয়ারী
মহাসচিব
মাও. মুহাম্মদ মামুনুর রশীদ আল-ক্বাদেরী আল আযহারী
সহকারী সচিব
মাও. কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বাশারী
ড. মাওলানা এ, কে, এম মাহবুবুর রহমান
অধ্যক্ষ, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
যুগ্ন-মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন।
بسم اللہ الرحمن الر حیم
اقرأ باسم ربك الذی خلق- خلق الانسان من علق- اقرأ وربك الاکرم- الذى علم بالقلم- علم الانسان ما لم یعلم
“পড়ুন আপনার রবকে চেনার জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাটবদ্ধ রক্ত থেকে পড়ুন আপনার রবকে যে মহা মহিম, যিনি শিক্ষা দিচ্ছেন কলমের মাধ্যমে, শিক্ষা দিচ্ছেন মানুষকে যা সে জানতো না।”
কুরআন মাজীদের সর্ব প্রথম নাযিলকৃত আয়াত
بسم اللہ الرحمن الرحیم
“পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে” (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু)
এ আল্লাহ নামে কী মধু আছে যে তাঁর নাম পড়তে হবে, এ আল্লাহ নামে কি বুঝায়? এ প্রসঙ্গে খাজা আবদুল্লাহ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু আজ থেকে ১১শ বছর আগে লিখেছেন
اسم یدل علی جلال من لم یزل – اسم یخبر عن جمال من لم یزل
اسم ینبہ اقبال من لم یزل – اسم یشیر الی افضال من لم یزل
فالعارف شھد جلالہ فطاش – والصفی شھد جمالہ فعاش
ولولی شھد اقبالہ فارتاش – والمرید شھد افضاله فقام
یطلب مع کفایۃ المعاش
“আল্লাহ নাম এমন যার বড়ত্ব অবিনশ্বর, যার জামাল-সৌন্দর্য চিরন্তন, যে নামে রয়েছে এমন সৌভাগ্য যা ক্ষয় হওয়ার নয়, যে নাম মর্যাদার রক্ষা কবচ যা চিরন্তন, আরেফ-আল্লাহ প্রেমিক তাঁর জালাল বা মহানত্ব দেখে বেখেয়াল, পূতঃপবিত্র সূফী তাঁর জামাল প্রত্যক্ষ করে সঞ্চার করেছে জীবনিশক্তি, ওলী তাঁর সৌভাগ্য দেখে শিহরিত, মুরিদ সুমহান মর্যাদা দেখে জীবন ধারনের সবটুকু দিয়ে তাঁকে খুজে পেতে সদা তৎপর।” (কাশফুল আসরার ১০/৫৫৩)
আল্লাহ নাম তো মজলিশের শান্তি, অসহায়ের সহায়, এ নাম তো হৃদয়গ্রাহী, যে নামের দয়া সৃষ্টি ব্যাপী, যে নাম সৃষ্টির মুখে মুখে উচ্চারিত, যে নাম আশেকের প্রাণ, যে নামের নূরে মুমিনের দেল আলোকিত, ব্যাথিত হৃদয়ের আরোগ্য যে নামে, যে নামের মধু আহরণে আল্লামা খাকানী রহমতুল্লাহে আলাইহি ত্রিশ বছর মুরাকাবা মুশাহাদা করে ঘোষনা দিলেন:
پس از سی سال اين معانی محقق شد بخاقانی
که يک دم باخدا بودن به از تخت سليمانی
“ত্রিশ বছর সাধনার পর বুঝিল পীর খাকানী, এক নিশ্বাস আল্লাহর সাথে থাকা সোলায়মানের রাজত্বের চেয়ে অনেক গুন উত্তম।”
কুরআন মাজীদের সর্ব প্রথম আয়াত আল্লাহর জাত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সিফাত বা গুন দিয়ে শুরু হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল শুরুতেই তায়াউজ (تعوذ) বা اعوذ باللہ من الشیطان الرجیم বলতে হয় নি কেন ? অথচ আল্লাহ ঘোষনা দিয়েছেন فاذا قرأت القران فاستعذ باللہ من الشیطان الرجیم
“যখনই কুরআন পড়বেন তখনই বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবেন।” (সূরা নাহল-৯৮)
এর জবাব হল শয়তান মালাউন এত বেশি শক্তিশালী হওয়ার পরও যার কলবে আল্লাহর যিকির চলে সেখানে থাকতে পারেনা। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন
الشیطان جاثم علی قلب ابن ادم فاذا ذکر اللہ خنس واذا غفل وسوس
“শয়তান আদম সন্তানের কলবে জেঁকে বসে থাকে যখনই আল্লাহর যিকির করে ছিটকে পড়ে এবং যখনই কলবের যিকির বন্ধ থাকে সে কুমন্ত্রনা দেয়।” (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ-১৩/৩৬৯) আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ- إِنَّمَا سُلْطَانُهُ عَلَى الَّذِينَ يَتَوَلَّوْنَهُ وَالَّذِينَ هُمْ بِهِ مُشْرِكُونَ
“নিশ্চয়ই তাঁর কোন আধিপত্য নাই তাদের উপর যারা ঈমান আনে ও তাদের রবেরই উপর তাওয়াক্কুল রাখে। তাঁর আধিপত্য তো কেবল তাদেরই উপর যারা তাকে অভিভাবকরুপে গ্রহণ করে এবং যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে (সূরা নাহল ৯৯-১০০) প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্তাগত ভাবেই নূর, জাবালে নূরে নূরের জালওয়ায় আপাদমস্তক যার নূরানী হয়েছে, নূরের ফেরেশতা রুহুল কুদ্দুস জীব্রাইল আলাইহিস সালাম যেখানে উর্দ্ধজগতের নূরের পাওয়ার হাউজের আথে নূরের চ্যানেল ওপেন করেছেন যেখানে শয়তানের ক্ষমতা চলেনা। প্রিয় নবীর নূরের তাজাল্লী বা আলোক প্রভা এত প্রখর যে শয়তান তাঁর আকৃতি ধারণ করতে পারেনা। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান:-
(صحيح مسلم - (৭ / ৫৪) -فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لاَ يَتَمَثَّلُ بِى
অর্থাৎ: শয়তান কখনও আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না, কারণ প্রিয় নবীর সুরত মোবারকের তিনটি স্তর রয়েছে (০১) সুরতে বাশারী বা মানবীয় সুরত (০২) সুরতে মালাকী বা ফেরেশতা জগতের আকৃতি (০৩) সুরতে হাক্কী বা প্রিয় নবীর নূরের আসল সুরত।
(মাদারেজুন নবুওয়্যাহ- শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেসে দেহলবী রাহমাতুল্লাাহে আলাইহ)
সুরতে বাশারী বা মানবীয় সুরতে এ পার্থিব জগতে পদার্পন, অবস্থান, কার্যসম্পাদন সবই ছিলো মানব-দানবের হেদায়েতের জন্য। হযরত জীব্রাইল আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে সাহাবায়ে কেরামগনের সামনে হযরত দেহইয়াতুল কালবী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সুরতে এসে সরকারে দোআলমের সাথে কথা বলেছেন, প্রশ্ন করেছেন, কুরআন শুনিয়েছেন ও শুনেছেন তখনও মানবীয় সুরতে নূরের ফেরেশতা নূরই ছিলেন। তদ্রূপ প্রিয় নবী মানবীয় সুরতে নূরে মুজাসসাম যার সুরত শয়তানের ধারন করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। এজন্যই সরকারে দু আলম এরশাদ করেছেন
من رآني فقد رأى الحق (صحيح البخاري - ৬ /২৫৬৮ )
অর্থাৎ যে আমাকে দেখেছে সে সত্যিই দেখেছে (সহি বুখারী-৬/২৫৬৮)। প্রিয় নবীজীর এ শানে উজমা বুঝতে হলে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। আর তা হল মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়া। মানব সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় চারটি অবস্থা দেখা যায়। মানুষ মাটি, বীর্য, ফুৎকার ও হাড্ডি দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দিয়ে। এরশাদ হচ্ছে-
إِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِنْدَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ [آل عمران : ৫৯]
অর্থ: আল্লাহর নিকট নিশ্চয়ই ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্ত সাদৃশ। তিনি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন। অত:পর তাকে বলেছিলেন, ‘হও’ ফলে সে হয়ে গেল। (সুরা আলে ইমরান-৫৯)
হযরত আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা এবং হযরত ঈসা আলাইহিস সালামও আল্লাহর বান্দা। এ বান্দা হিসেবে সাদৃশ্য রয়েছে কিন্তু সৃষ্টি হিসেবে সম্পূর্ণ আলাদা। পিতা-মাতা ছাড়া আদমের ৯০ হাত দীর্ঘ শরীরে নূরে মোহাম্মদীর পাওয়ার ঢুকিয়ে মহান আল্লাহ “কুন”-হও এর ক্ষমতাবলে সৃষ্টি করলেন তাঁকে। আর হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন পিতা ছাড়া মায়ের উদরের মাধ্যমে। সাইয়্যেদেনা ঈসা আলাইহিস সালামের সৃষ্টি হল আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত জীব্রাইল আলাইহিস সালামের ফুৎকারের মাধ্যমে। এরশাদ হচ্ছে-
وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهِ مِنْ رُوحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهِ وَكَانَتْ مِنَ الْقَانِتِينَ -
“আরো দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, ইমরান তনয়া মারইয়ামের যিনি তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেছিলেন, ফলে আমি তার মধ্যে রূহ ফুঁকিয়ে দিয়েছিলাম এবং তিনি তার প্রতিপালকের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহ সত্য বলে গ্রহণ করেছিলেন, তিনি ছিলেন অনুগতদের অন্যতম”। (সূরা তাহরিম-১২) কুরআন স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে- হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম মাটি বা বীর্যের সৃষ্টি নন, তার সৃষ্টি জীব্রাইল আলাইহিস সালামের ফুৎকারে। যা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি শক্তি। অন্যান্য মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করলেন علق বা জমাটবদ্ধ রক্ত দিয়ে। যেমন এরশাদ হচ্ছে:-
خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ
অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টি করেছেন জমটবদ্ধ রক্ত থেকে। (সুরা আলাক-২)
এ রক্ত সৃষ্টি হয়েছে মানুষের বীর্য দিয়ে। যেমন এরশাদ হচ্ছে:-
فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ - خُلِقَ مِنْ مَاءٍ دَافِقٍ - يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ
“সুতরাং মানুষ গবেষণার দৃষ্টিতে দেখুক কী হতে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে। যা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও পাঁজরাস্থির মধ্য হতে। (সূরা আত-তারেক-৫,৬,৭)
মহান আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেন,
هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُنْ شَيْئًا مَذْكُورًا - إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا-
“কাল প্রবাহে মানুষের উপর তো এমন এক সময় এসেছিল যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। আমিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য, এবং তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন। (সূরা দাহর-১,২)
তিনি আরো এরশাদ করেন:-
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ - ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ - ثُمَّ خَلَقْنَاالنُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ -
“আমিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান হতে, অত:পর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি জমাটবদ্ধ রক্তে। এরপর জমাটবদ্ধ রক্তকে পিন্ডতে পরিণত করি, পিন্ডকে পরিণত করি অস্থি-পাঁজরে; অত:পর হাড়গুলিকে ঢেকে দেই গোশত দিয়ে, তাতে সে এক ভিন্ন সৃষ্টিতে পরিণত হয়। তাইতো সর্বোত্তম ¯্রষ্টা আল্লাহ কত মহান। (সূরা মুমিনূন-১২,১৩,১৪) এ আয়াত প্রমাণ করে মানুষ সরাসরি মাটি নয় বরং মাটিতে উৎপাদিত খাদ্য খাওয়ার পর যে রক্ত হয় তার ৮০ ফোটা থেকে ১ ফোটা বীর্য তৈরী হয়। একফোটা বীর্যের ৫ লক্ষ ভাগের একভাগ থেকে মানুষ সৃষ্টি হয় যা এতই ক্ষুদ্র যে সাধারণ যন্ত্রে ও দেখা যায় না।
চতুর্থ পর্যায়ে দেখা যায় হযরত হাওয়া আলাইহাস সালামকে আল্লাহ সৃষ্টি করেন من ضلع الايسر অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালামের বাম পাঁজরের হাড়দিয়ে। এবং পঞ্চম ও শেষ পর্যায়ে দেখা যায় প্রিয় নবীজীকে সৃষ্টি করেন নূর দিয়ে।
যেমন এরশাদ হচ্ছে:-
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ -
“নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর ও সুস্পষ্ট কিতাব। (সূরা আল মায়েদা-১৫)
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:-
أنا دعوة أبي إبراهيم وبشرى أخي عيسى ورأت أمي حين حملت بي أنه خرج منها نور أضاء لها قصور الشام-
“অর্থাৎ- আমি আমার পিতা ইবরাহীমের দোয়া, আমার ভাই ঈসার প্রদত্ত সুসংবাদ, আমি আমার মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় তার পেট থেকে একটি নূর বের হয় যার তাজাল্লীতে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ দেখতে পান। (সীরাতে ইবনে হিশাম-১/৩০২) অন্য বর্ণনায় এসেছে:
ثم اِنَّ أُمِّي رَأَتْ فِي الْمَنَامِ أَنَّ الَّذِي فِي بَطْنِهَا نُورٌ
অর্থ:- “এরপর আমার মা ঘুমের ঘোরে দেখলেন তার পেটে যিনি আছেন তিনি নূর”। (মাওয়াহেবুল লাদুন্যিয়াহ-১/৭৪, মুসনাদে আহমদ-৪/১২৭, আল মুসতাদরাক লিল হাকেম-২/৪৫৩, ইবনু হিব্বান-৪/৬৪) প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরে মুজাস্সাম হওয়ার কারণে শয়তান তাঁকে কুমন্ত্রণা দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা। প্রিয় নবীজীর সুরত ধারণ করতে পারেনা। তাই মহান আল্লাহ কুরআনুল কারীম নাযিলের সূচনায় তা’আউয বা আউযুবিল্লাহ বলার প্রয়োজন হয়নি। পরবর্তীতে উম্মতের শিক্ষার জন্য শয়তান যেন কুরআন তিলাওয়াতে কুমন্ত্রনা দিতে না পারে এ জন্য আউযুবিল্লাহ পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
لااله الاالله জিকিরের ফজিলত
মাও. মুহাম্মদ মামুনুর রশীদ আল-ক্বাদেরী আলআযহারী
মিশর আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় হাদীস বিভাগে ডিগ্রি প্রাপ্ত
قال عليه الصلاة والسلام من قال لااله الاالله مخلصا دخل الجنة ( أخرج الطبراني من حديث زيد بن أرقام رضي الله تعالي عنه)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি আন্তরিক হয়ে বলবে لااله الاالله যে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
ক্স الاخلاص এর ব্যাখ্যাঃ
(১) قال يحي بن معاذ رحمه الله عليه الاخلاص: الاخلاض ان يخلص العبد دينه لله وعمل
(২) قال سعيدبن جبير رضي الله عنه تمييزالعمل من العيوب كتمييز اللبن من الفرات والدم
(غنيت الطالبي مجالس في مواعظ القران ص ১১০)
قال رسول الله صلي الله عليه وسلم أفضل ما قلته انا والنبيين من قبلي لااله الاالله وحده لا شريك
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন সর্বোত্তম যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ বলেছি لااله الاالله وحده لا شريك له
فاعلم انه لااله الاالله অতপর আপনি জেনে রাখুন নিশ্চই তিনি হলেন لااله الاالله (অপরিবর্তনীয় কালিমা) যা ওহী দ্বারা সাব্যস্ত فاعلم اشارتا الي لايكفي غيره (حاشية الصاوي) আপনি জেনে রাখুন এর দ্বারা ইঙ্গিত হলো لااله الاالله ছাড়া তাওহীদ যথেষ্ট নয়-
أشار الشيخ عبدالقادرالجلاني رضي الله عنه بقوله: أنفوا ثم أثبتوا –أنفوا عنه وأثبتوا له مالا يليق به ما يليق به وهو رضيه به لنفسه ورضيه له رسوله صلي الله عليه وسلم ادا فعلت هدا زال التشبيه والتعطيل من قلوبكم- (الفتح الرباني المجلس السابع والاربعون ص ১৫১)
فاذكروني أذكركم অর্থাৎ- অতঃপর তোমরা আমার যিকির কর আমি তোমাদের যিকির করব।
وقيل اذكروني باالتوحيد والايمان فاماالدكر (القسم الثالث غنيت الطالبي) أذكركم بالدرجات والجنان لااله الاالله
ক্স কালিমায়ে তাওহীদ لااله الاالله)) لا : নাই (লায়ে নফি জিনস) যা তার সমগোত্রীয় সকল কিছু নিষিদ্ধ করে ইলাহ (اله) সকল উপাস্য উদ্দেশ্য অনির্ধারিতالا আলাদাকারী হরফ হরফে ইসতিসনাخراج ما بعد الا من حكم م قبله هوا যা তার পূর্বে مستثني منهযার থেকে مستثني আলাদা করা হয়েছে। (الا রেফের পরে) مستثني আলাদা কৃত অংশটিকে الا রেফের পূর্ব হতে হুকুমগত আলাদা করে থাকে অথবা ইল্লা (الا) হলো এমন হরফ যা الا এর পরের অংশকে তার পূর্বের অংশের হুকুম হতে আলাদা করে যথাঃ لا اله+الا+الله
بأنه كان عالما امره بالثبات عليها ان المراد من الايت نفي الالهت المتعددت واثبات الواحدالفرد
কালেমা ভাঙ্গলে অর্থ থাকেনা যথা ভাত ভা-ত আলাদা উচ্চারণ করলে অর্থ হয় না। তাই কালাম (বাক্য না বলে) কালেমা (শব্দ) বলার হেকমত হলো যাতে এটি অপরীবর্তনীয় لااله الاالله থেকে যায়। অনুরূপ لااله الاالله محمد رسول الله কেও কালেমা বলা হয়েছে অথচ আলাদা করলে অর্থপূর্ণ রূপ দিতে পারে لااله الاالله তাওহীদ আর محمد رسول الله রিসালাত দুটি পূর্ণ কালামকে কালেমা বলার মূল হিকমত হলো তাওহীদ ছাড়া রিসালাত, রিসালাত ছাড়া তাওহীদ ইমানের জন্য যথেষ্ট নয় বরং দুটিই একটি অপরটির ইমানের সম্পূরক। আর لااله الاالله ভাঙ্গলে কালেমা তাওহীদ থাকে না এ ছাড়া মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলেরمنع كمال الايمان بشهادة لااله الله مالم تقترن بها شهادة الرسول وهو قولك محمد رسول الله للامام ابو حامد الغزالي رضي الله عنه- ج১॥ص১৪১ মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। তাই لااله الااللهই তাওহীদ এর বাণী الاالله নয়।
ক্স পবিত্র নাম সমূহ দ্বারা যিকির করার জন্য নির্দেশ:
মহান আল্লাহ পবিত্র কালাম পাকে এরশাদ ফরমান নিশ্চয়ই তার জন্য রয়েছে সুন্দরতম পবিত্র নাম সমূহ, যা দ্বারা যিকির করার জন্য নির্দেশ ও দিয়েছেন এভাবে ولله الأسماءالحسني فادعوه بها আল্লাহ তায়ালার জন্য রয়েছে পবিত্র ও সুন্দর নাম সমূহ উহা দ্বারা তোমরা তাঁকে ডাক।
ক্স পবিত্র কোরআনে ক্বারীমে এ নাম সমূহ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন:
ولله الاسماء الحسني فدعوه بها وذروا الذين يلحدون في اسماءه- الاعراف১৮০
অর্থাৎ আল্লাহর জন্য রয়েছে পবিত্র সুন্দরতম নাম সমূহ আর তোমরা তাকে উহা দ্বারা ডাক (সুরা আল আ’বাফ এবং ছেড়ে দাও তাদেরকে যারা মহান আল্লাহর নাম সমূহের পরিবর্তন করে আয়াতের يلحدون في اسماءه এর অর্থ হলো يحرفون في اسماءه অর্থাৎ তারা তাঁর নাম মোবারকে পরিবর্তন করে। বা يتركون القصد তারা উদ্দেশ্য ছেড়ে দেয়। এখানে لااله যদি নফি অংশটুকু বাদ দেয়া হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে (সা) মূল উদ্দেশ্য বাদ পড়েনা? কারণ لااله الاالله এটি তাওহীদের মূলমন্ত্র। فاعلم انه لااله الاالله এখানে আল্লাহ নিজের পরিচয় দিয়েছেন।
উক্ত নাম সমূহের সংখ্যা সম্পর্কে তিরমিযী ইবনে মাজাহ সহ বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত আছে تسعت وتسعين اسما من أحصاها دخل الجنت أن لله নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য রয়েছে ৯৯ নাম মোবারক যে ব্যক্তি তা গণনা করবে সে জান্নাতী হবে।
ক্স لااله الالله ৯৯ নাম মোবারক থেকে:
وفي روايت وابن ماجه لااله الاالله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو علي كل شئ قدير لااله الاالله له الأسماءالحسني
ক্স ৯৯ নাম মোবারক:
وزاد الامام الترمدي --- هوالله الذي لااله الا هو جل جلاله الرحمان جل جلاله الرحيم جل جلاله المالك جل جلاله القدوس جل جلاله السلام جل جلاله م المؤمن جل جلاله المهيمن جل جلاله العزيز جل جلاله الجبار المتكبر جل جلاله الخالق جل جلاله الباري جل جلاله المصور جل جلاله الغفار جل جلاله القهار جل جلا له الوها ب جل جلاله الرزاق جل جلاله الفتاح جل جلاله العليم جل جلاله القابض جل جلاله الباسط جل جلاله الخافض جل جلاله الرافع جل جلاله المعز جل جلاله المدل جل جلاله السميع جل جلاله البصير جل جلاله الحكم جل جلاله العدل جل جلاله اللطيف جل جلاله الخبير جل جلاله الحليم جل جلاله العظيم جل جلاله الغفور جل جلاله الشكور جل جلاله العلي الكبير جل جلاله الحفيظ جل جلاله المقيت جل جلاله الحسيب جل جلاله الجليل جل جلاله الكريم جل جلاله الرقيب جل جلاله الواسع جل جلاله الحكيم جل جلاله م الودود جل جلاله المجيد جل جلاله الباعث جل جلاله الشهيد جل جلاله الحق جل جلاله الوكيل جل جلاله القوي جل جلاله المتين جل جلاله الولي جل جلاله الحميد جل جلاله المحصي جل جلاله المبدئ جل جلاله المعيد جل جلاله المحي جل جلاله المميت جل جلاله الحي جل جلاله القيوم جل جلاله الواحد جل جلاله الماجد جل جلاله الاحد الصمد جل جلاله القادر جل جلاله المقتدر جل جلاله المقدم جل جلاله المؤخر جل جلاله الأول جل جلاله الأخر جل جلاله الظاهر جل جلاله الباطن جل جلاله الوالي جل جلاله المتعالي جل جلاله البر جل جلاله التواب جل جلاله المنعم جل جلاله المنتقم جل جلاله العفو جل جلاله الرؤف جل جلاله مالك الملك جل جلاله دوالجلالوالاكرام جل جلاله الرب جل جلاله المقسط جل جلاله الجامع جل جلاله الغني جل جلاله المغني جل جلاله المعطي جل جلاله المانع جل جلاله الضار جل جلاله النافع جل جلاله النور جل جلاله الهادي جل جلاله البديع جل جلاله الباقي جل جلاله الوارث جل جلاله الرشيد جل جلاله الصبور جل جلاله
ক্স উক্ত নাম দ্বারা সীমাবদ্ধ করার হিকমত:
এ সমস্ত নাম মোবারক দ্বারা সীমাবদ্ধ করার হিকমত সম্পর্কে ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী বর্ণনা করতে গিয়ে তাফসিরে কবীরে বলেন-وأسماءلله محصورت في نوعين عدم افتقاره الي غيره وثبوت افتقاره غيره اليه আল্লাহ তায়ালার নাম সমূহ দু’প্রকারে সীমাবদ্ধ তাঁর (আল্লাহর) অন্যের প্রতি অমুখাপেক্ষিতা এবং অন্যরা তাঁর প্রতি মুখাপেক্ষিতা সাব্যস্ত করা।
জানা আবশ্যক যে প্রতিটি পবিত্র নাম মোবারক দ্বারা নামকরণ করার বিশেষ হিকমত রয়েছে। কেননা প্রত্যেকটি ইসম মাসদার হতে উৎকলিত যথা- كريم নাম মোবারক كرم থেকে سميع নামটি سمع -থেকে উৎকলিত। ইচ্ছে করলে ইহা পরিবর্তন করা যাবে না। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা এ সকল নাম নিজের জন্য খাস করার পিছনে তাঁর বিশেষ হিকমত রয়েছে তাহলে কি তার পরিপূর্ণতা বা কামালিয়্যাত এবং সকল নুকছানিয়্যাত বা ত্র“টিপূর্ণতা হতে পবিত্রতা যা শব্দগত অর্থগত দু’দিক থেকে সাব্যস্ত হবে।
শরীয়তে মুহাম্মদীয়ার বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি জিনিস সাব্যস্ত করা হয়েছে ওহীয়ে ইলাহি দ্বারা তা দু’ভাবে (১) ওহীয়ে মাতলু বা পবিত্র (২) ওহীয়ে গায়রে মাতলু বা পবিত্র হাদীসে নববী (৩) ইজমা দ্বারা আর তাও কোরআন সুন্নাহর সাথে পূর্ণ সামঞ্জশীল হবে। এবং একজনও যদি বিরোধী হয় তা ইজমাহ হবে না। (৪) কিয়াস, এটি মুজাতাহিদ ইজতিহাদ করবেন তবে কোরআন সুন্নাহর সাথে পূর্ণ মিল থাকবে।
সম্মানিত ওলামাগণ শুধু তারজীহ, তাওফীক করতে পারেন তাও হবে পূর্ণ বা অংশবিশেষ কোন দলীলের ভিত্তিতে।
এবার দেখার বিষয় মহান আল্লাহ তায়ালা নাম মোবারক কিসের ভিত্তিতে সাব্যস্ত শরীয়তে দলীল দু’ভাবে সাব্যস্ত হয় توقيفي তাওকী¡ফি যা পবিত্র কোরআন হাদীস বা ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত হবে তবে হাদীস শরীফ হতে হবে অন্তত হাসান পর্যায়ের হাদীস শরীফ, যথা جواد এবং سخي -এর মধ্যে جواد ইহা توقيفي তাওক্বীফী আর سخي এটি ইসতিলাহি আর এখন جواد এটি মহান আল্লাহর সিফাতী নাম আর সাখী এটি একটি পরিভাষায়।
ক্স তরীকতে ক্বাদেরীয়ায় গাউছুল আজম (রাদিআল্লাহু আনহু) যিকিরের ওজীফা
প্রকাশ থাকে যে, আমাদেরকে দেখতে হবে তরীকতে ক্বাদেরীয়ায় গাউছুল আজম (রাদিআল্লাহু আনহু) এ যিকিরের ওজীফা দিয়েছেন কিনা (শাখাসমূহ) বর্ণনা করেছেন। الاورادالقادريت নামক কিতাবে গাউছে পাক (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন সাতটি নফসে সাতটি মাকাম, সাতটি মাকামে দমনে সাতটি মৌলিক যিকির, প্রত্যেক মৌলিক উসূলের জন্য কিছু শাখা যিকির, নিম্নে এ সন্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি বি ইজনিল্লাহ।
নামসমূহের অর্থসমূহ: এবং প্রথম যিকিরটি أصول অপরটি فروع
১. النفس الامارة প্রথম আত্মা আম্মারা: لااله الاالله অর্থ আল্লাহ -ছাড়া আর কোন সত্য মা’বুদ নাই।-لا مراد الاالله لا مقصودالاالله –لامعبود بحق الا الله
২. النفس اللوامة দ্বিতীয় আত্মা লাউয়্যাহমাহ: الله অর্থাৎ স্বয়ং তিনিই অস্তিত্ববান يا نوريا باسط ياالله ياهادي يا الله
৩. النفس الملهمة তৃতীয় আত্মা মুলহিমা: هو অর্থাৎ তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই يا هوأنت هو-هو انت يا الله
৪. النفس المطمئنت চতুর্থ আত্মা মুত্বমাইন্নাহ: حق অর্থাৎ যিনি সত্যিই বাস্তবের সহিত অবস্থিত।يا مغيث هوالحق- يا فرد هو انت الحق يا حق انت الحق-
৫. النفس الراضيت পঞ্চম আত্মা রাদিয়া: حي -অর্থাৎ যার জন্য হায়াত সাবেত।يا حي لا حي غيره يا حي انت الحي يا حي افنني عني وابقني بك
৬. النفس المرضيت ষষ্ঠ আত্মা মারদিয়্যাহ: قيوم অর্থাৎ তিনিই প্রতিষ্ঠিত তাঁর হুকুম দ্বারা সৃষ্টির মাঝে আসমান জমিনে যা আছে। يا كافي يا غني يا قيوم يا قيوم الازلي يا الله
৭. النفس الصميمت أو الكاملت أوالصافية ৭ম আত্মা চামিমা: قهار অর্থাৎ মহাপরাক্রমশালী শেষ বিচারদিনের অধিকারী قيوم قهار جبار قهار عظيم قهار قادر قهار الحكم لله الواحد القهار
নফি- ইসবাত
নফি- ইসবাত اثبات –نفي এটি হলো না হ্যাঁ এর যিকির অর্থাৎ এর দুটি অংশ। الاالله- এ প্রকার যিকির পবিত্র কোরআন হাদীস ইজমা কিয়াস দ্বারা সমর্থিত নয়। এ যিকিরের দুটি অংশের প্রথম অংশটি প্রত্যেকটি অবস্থা এক ও অভিন্ন থাকবে। কিন্তু ২য় অংশটি অবস্থা বেধে পরিবর্তন হবে। তাদের জবাব যারা শুধু ইল্লাল্লাহ (الا الله) বলে। নিম্নে পবিত্র কোরআন হাদীস দ্বারা তার দলিল পেশ করছি (محمد১৯)-فاعلم أنه لا اله الا الله
অতপর আপনি জেনে রাখুন: নিশ্চয়ই তিনি لا اله الا الله
টীকা: হে মাহবুব! ইলম ও ইয়াকীনের উপর কায়েম থাকুন। কিংবা হুকুকুল ইয়াকীন (বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিত্তিক নিশ্চিত বিশ্বাস) দ্বারা জেনে নাও। অন্যথায় হুজুর তো তাওহীদ সম্পর্কে প্রথম থেকে জানতেন ও মানতেন।
ক্স কোরআন দ্বারা অকাট্যভাবে নফি- ইসবাত لا اله الا الله -لا اله الا انت -لا اله الا انا-لااله الا هو
অত্র নফি ইসবাত সমূহের ১ম অংশটি لا اله এর কোন পরিবর্তন নেই। বরং ২য় অংশটির অবস্থা ভেদে পরিবর্তন হয়েছে।
১. لا اله الا الله এ প্রকার যিকির عوام দের জন্য অর্থাৎ তরীকতের পরিভাষায় مريد যিনি তার জন্য।
واتبع ما أوحي اليك من ربك لا اله الا هو الغنيت الطالبي طريق الحق عزوجل)) আপনি অনুসরণ করুন যা আপনার নিকট আপনার রবের পক্ষ থেকে ওহী করা হয়েছে। আর তা لااله الا هو
২. لااله الاهو এ প্রকার যিকির خواص- দের জন্য অর্থাৎ তরীকতে যারা مراد - তাদের জন্য টি (هو সর্বনাম) এমন সর্বনাম যা গায়েবকে নির্দেশ করে থাকে دعاء اخر — لا اله الا هو هو أهل الكبرياءوالعظمة
৩. لا اله الا انتএ প্রকার যিকির خواص الخواص অর্থাৎ খাসের খাস ব্যক্তিদের জন্য। কারণ হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম انت (আপনি) যিকির করেছেন। অথচ انت (আনতা) দ্বারা কি বুঝিয়েছে তা মহান আল্লাহ তাঁর ভাষায় বলেন لا اله الا انت মাছের পেটে যখন ছিলেন তখন তিনি মা’জুর তাই انت পর্যন্ত বলা শুদ্ধ হয়েছে। তবে الا انت বলেননি এ রকম انت যিকির জায়েজ নাই حالة اضرارية বা (আবশ্যক অবস্থা) ছাড়া যখন কোন ব্যক্তি অক্ষম হয়ে পড়ে) তখন ভিন্ন কথা। আরো একটি দলিল হযরত বিলাল রাদিআল্লাহু আনহু যখন তিনি ক্রীতদাস ছিলেন তাকে খুবই নির্যাতন করে, এমনকি জিহবাতে পর্যন্ত পেরেক মেরেছিল যাতে করে তিনি আল্লাহর একত্ববাদের যিকির না করতে পারেন। ঐ অবস্থায় তিনি শুধু আহাদ (أحد) এ যিকির করেছেন।
৪. لا اله الا انا
উক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে الا انت বা الا أحد-الاالله-الا هو এ ধরণের ইসবাত যিকির কেউ কোন দিন করেননি বরং الا ছাড়া انت-الله-هو-أحد দ্বারা যিকির কররেছেন। এছাড়া মহান আল্লাহ দুনিয়ার মানুষের জন্য ইউনুস (আলাইহিস সালামের) أنت যিকির ضميرأنت- সর্বনাম দিয়ে দুনিয়ার মানুষকে نفي- اثبات শিক্ষা দিয়েছেন। আর আমরা যখনি বিপদে পড়ি তখন এ প্রকারের নফি ইসবাত এর কালেমা যপন করে থাকি যা আামদের নিকট يونس ختم খতমে ইউনুস নামে পরিচিত।
ক্স শরীয়তে আল্লাহর পরিচয় কিভাবে সাব্যস্ত হয়, ওহী দ্বারা না যুক্তি দ্বারা?
এবার দেখুন শরীয়তে আল্লাহর পরিচয় কিভাবে সাব্যস্ত হয়, ওহী দ্বারা না যুক্তি দ্বারা? যেটাকে আক্বিদার পরিভাষায় বলা وجوب معرفت الله وصفاته بالسمع لابالعقل আল্লাহ তায়ালার মারেফাত (পরিচিতি) ওহী দ্বারা সাব্যস্ত আক্বল বা যুক্তি দ্বারা নয়।
(باب جماع توحيد الله عز وجل وصفاته وأسماءه—كتاب أصول اعتقادأهل السنت والجماعت من الكتاب والسنت واجماع الصاحبت والتابعين ومن بعدهم—المجلد الاول للامام الحافظ ابي القاسم هبت الله ابن الحسين بن منصور الطبري المعروف با للألكائ)
ক্স হিকমত: যদি মানুষ আল্লাহর পরিচিতি যুক্তি দ্বারা করতে যায় বা পেতে চায় তবে তা সম্ভব নয়। কারণ যুক্তি হলো পঞ্চইন্দ্রিয় কেন্দ্রিক যা গায়েবকে স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখেনা, আর যে আক্বল পঞ্চইন্দ্রিয় বাইরে স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখে না তা কি করে عالم الغيب অদৃশ্য জগতের সম্পর্কে বুঝতে পারবে। তাই আল্লাহ তায়ালার পরিচয় ওহী لااله الاالله দ্বারা সাব্যস্ত করা হয়েছে যা توقيفي বা ওহী দ্বারা সাব্যস্ত। ইসতিলাহী বা পরিভাষাগত নয়। মূলত তার কারণে আমাদের প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে عالم الشهادة (বা পৃথিবী) থেকে عالم الغيب (অদৃশ্যজগতে) নিয়ে তাকে সাক্ষাত করান। (সুবহানাল্লাহ)
আর আল্লাহ পরিচয়ের মুলমন্ত্র হলো لااله الاالله যা অপরিবর্তনীয় সর্বাবস্থায়। যা যুক্তি দিয়ে বাড়াবাড়ি ছাড়া فاعلم انه لااله الاالله- অতপর আপনি জেনে রাখুন নিশ্চই তিনি হলেন لااله الاالله (অপরিবর্তনীয় কালিমা) যা ওহী দ্বারা সাব্যস্ত فاعلم اشارتا الي لايكفي غيره(حاشية الصاوي) আপনি জেনে রাখুন এর দ্বারা ইঙ্গিত হলো لااله الاالله ছাড়া যথেষ্ট নয় এখন কি করে ব্যাকরণের মানদন্ডে الاالله বললে চলবে বলে ফাতওয়া দিলে বক্তব্যটি যথেষ্ট নয় একটি যুক্তিমাত্র তাই ওহীর মানদন্ডে এবং উসূলের মানদন্ডে যুক্তি সম্পূর্ণ ভুল এবং বাতেল প্রমাণিত হল-
فيجب علي كل مكلف من ذكر أو أنثي وجوبا عينا معرفت كل عقيدة بدليل فاعلم انه لااله الاالله ولواجماليا (جوهرت التوحيد ص-৫৭ (
প্রত্যেক নর-নারী মুকাল্লাদ (শরীয়তের হুুকম মানতে সক্ষমব্যক্তি) এর উপর প্রত্যেকটি আক্বিদার পরিচয় জানা (وجوب عيني) ওয়াজিব যদিও সংক্ষিপ্ত দলিল (لااله الاالله) দ্বারা হয়, لااله الاالله মহান আল্লাহর পরিচিতির সংক্ষিপ্ত দলিল যা প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব।
ক্স কারা শুদ্ধ?
বিঃদ্রঃ (১) যারা নফি -ইসবাত لااله الاالله সম্পূর্ণ যিকির করেন তারাও কালিমা অস্বীকার করেন না বরং পূর্ণ যিকির করার জন্য তারা তাকিদ দিয়ে থাকেন। যারা الاالله যিকির করেন, তারা কালিমা অস্বীকার করেন না বরং ব্যকরণের কায়েদায় জায়েজ ফাতওয়া দিয়ে থাকেন। আর এমতাবস্থায় কারা শুদ্ধ ? (২) যারা الاالله যিকির করেন তারাও আহলে সুন্নাতের আক্বিদা পন্থী আর যারা পূর্ণ لااله الاالله যিকির করেন তারাও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত পন্থী এমতাবস্থায় বাতেল কারা ? হকপন্থীদের একে অন্যের সাথে আমলে ভিন্নতা থাকতে পারে (হক আক্বিদার বিরোধী কুফরি)
জবাব যারা الاالله যিকির করে তারা একটি ইসলামের কায়েদার খেলাফ করছেন। কায়েদা হলো لااله الاالله বরংالاالله না। তবে এটি তাদের খাতায়ে ইজতিহাদি যেহেতু কোরআন সুন্নাহ ইজমা কিয়াস কোন অবস্থায় শুদ্ধ নয় বরং সয়ীহ কুরআন হাদীসের খেলাফ। الاالله যিকির কারীরা যেহেতু لا اله الاالله মানে এবং তারা আহলে স্নুাতের আক্বীদা পন্থী সেহেতু তা ইজতিহাদি খাতা। আর যারা الاالله না করে পূর্ণ যিকির করে তারা সহীহ পূর্ণ শরীয়াতে কায়েদা মান্য করার দরুন তারা দ্বিগুন সাওয়াব পাবে।
শানে মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
শাহ্সুফি আলহাজ্ব প্রফেসর শেখ শাহজাদা মুহাম্মদ পিয়ারা আল-ক্বাদেরী
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সুন্দর, শ্রেষ্ঠ মর্যাদা প্রথম সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও স্রষ্ঠার সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি আল্লাহর জাতি নূর থেকে সৃষ্ট হুজুর। (قد جاءكم من الله نور -المائدة ১৫)
অর্থাৎ তোমাদের নিকট এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর। (সূরা মায়েদা-১৫)
মানুষ আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহকে মাহমুদ নাম দিয়েছে। আর আল্লাহ পাক হুজুর কে প্রশংসা করে নাম রেখেছেন মুহাম্মদ চরম প্রশংসিত। সর্বপ্রথম সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি করে আল্লাহ প্রতি মুহুর্তে সর্বদা বৃদ্ধি করে চলেছেন। ورفنا لك ذكرك -الانشراح)) অর্থাৎ আমি আপনার যিকিরকে সমুন্নত করেছি। (সূরা ইনশিরাহ)
সমস্ত ফেরেস্তাদের যে নিয়ে আল্লাহ সালাম পাঠাচ্ছেন নবীর উপর এবং কেয়ামতের সময় হাসরের মাঠে হুজুরকে মাকামে মাহমুদার মর্যাদায় ভূষিত করবেন। আল্লাহ বলেন-
عسي ان يبعثك ربك مقاما محمودا (الاحزاب) قال هي الشفاعة
অর্থাৎ আপনার মহান রব আপনাকে মাকামে মাহমুদ দান করবেন। (সূরা- আহযাব)
নিজের আরশের উপর আল্লাহর কুদরতি নূরানী কুরসির পাশে একটি কুদরতি নূরানী কুরসি শুধু হুজুরের জন্য রাখবেন।
(عن ابن مسعود رضي الله عنه قال صلي الله عليه وسلم انه قيامه عن يمين العرش قال ذالك يوم ينزل الله تبارك وتعالي علي كرسيه –الشفاء بتعريف المصطفي ২১৭)
হুজুরকে সাফায়াতের ক্ষমতা দান করবেন। হুজুর (দঃ) স্বপ্নে দেখলে আগের ও পরের সমস্ত গুনা মাফ হয়ে যায়, দোজখ হারাম হয়ে যায়।
(من رأني لا تحركه النار -المواهب اللدنية)
অর্থাৎ আমার দর্শন যে লাভ করবে (স্বপ্নযোগে হোক বা সরাসরি হোক) তাকে জাহান্নামের আগুন পোড়াতে পারবে না। (মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ)
আর হুজুরের উপর দরুদ পড়লে সাথে সাথে আল্লাহর তরফ থেকে দশটি রহমত নাজিল হয়। দশটি গুনাহ আমলনামা থেকে বাদ দেয়া হয় দশটি নেক আমলনামায় যোগ হয়। পরকালের দশটি স্তর উত্তীর্ণ হয়ে যায়। যতবার পড়ি ততবারই এই সমস্ত মর্যাদা লাভ করা যায়। কত বড় মাহাত্ম্য শ্রেষ্ঠত্ব ও দিয়ে আল্লাহ হুজুরকে সৃষ্টি করেছেন তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনা। দুরূদ এমন একটি আমল যেটি সয়ং আল্লাহ তায়ালা তাঁর ফেরেস্তাদেরকে নিয়ে পড়ছেন। আল্লাহ বলেন-
(ان الله وملائكته يصلون علي النبي يا ايها الدين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما - الاحزاب)
অর্থাৎ নিশ্চই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেস্তাগণ কনবীর (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দুরূদ পড়ছেন, হে ঈমানদানগণ তোমরাও নবীর উপর দুরূদ পড় এবং আদবের সহিত সালাম প্রদান কর। (সূরা- আহযাব)
আল্লাহর যিনি এত বড় সৃষ্টি তার মর্যাদা যে কত বড় তা আমরা কিভাবে কল্পনার মধ্যে আনব যা কোন দিন সম্ভব নয়। আদম নবী হয়েও সাড়ে তিনশত বৎসর কেঁদেছেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মাফ করেন নাই কিন্তু যেই মুহুর্তে হুজুরের ওছিলায় মাফ চেয়েছেন আল্লাহ সাথে সাথে মাফ করে দিয়েছেন যখন নবী দুনিয়াতে আসেন নাই। আল্লাহ তায়ালা হুজুর কে কলেমায় আজানে একামতে নামাজে শরীক রেখেছেন।
(وقيل وي الاذان والاقامة وقيل اذا ذكرت ذكرت معي في قول لا اله الله محمد رسول الله)
ইলাহ ও খালেক ছাড়া নবী সব গুণ বা সিফাত আল্লাহ হুজুর কে দান করেছেন। আল্লাহর ক্ষমতা নিজস্ব আর হুজুরের ক্ষমতা আল্লাহ প্রদত্ত। আল্লাহকে আমরা সেজদা করি রাসূল আমরা মহব্বত ও অনুসরণ করি ও আদেশ পালন করি, যা সুন্নাত। আমরা আহলে সুন্নাত, আহলে হাদিস নই। যা একমাত্র সঠিক ও বেহেশতি দল। আল্লাহর আদেশ অমান্য করে গুনাহ করলে আল্লাহ বলেন আমার কাছে না তিনি বা নবীর কাছে যাও, নবী সুপারিশ করলে মাফ করে দেব। আল্লাহ বলেন-
ولو أنهم اذ ظلموا انفسهم جاؤك فاستغفروا الله واستغفر لهم رسول لوجدوا الله توبا رحيما( النساء)
দোয়া কবুলের জন্য হুজুরের সুপারিশ প্রয়োজন। তাই আনুগত্য হুজুরের সর্ব অবস্থায় প্রয়োজন। আল্লাহ বলেন- قل ان كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفوررحيم
অর্থাৎ হে নবী আপনি বলেদিন তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসতে চাও তোমরা আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ সমূহকে মাফ করে দিবেন। নিশ্চই আল্লাহ অতিশয়, ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
হুজুর সৃষ্টি না হলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতনা। আমরা সৃষ্টি হয়েছি হুজুরের ওছিলায় বেহেস্তে যাব হুজুরের পরিচিতিতে, দোয়া কবুল গুনা মাফ হয় হুজুরের ওছিলায় শাফায়াত পাব হুজুরের ওছিলায় আল্লাহর ভালবাসা পাব হুজুরের গোলামীতে দুনিয়ায় ও বেহেস্তের নেয়ামত সবই হুজুরের ওছিলায় ইসলাম ও আল্লাহর সান্নিধ্য হুজুরের ওছিলায়। সমস্ত কিছুই আমরা আল্লাহর আদেশ মানা সম্ভব হুজুরের গোলামী ও অনুসরণে হুজুরের মহব্বত ইবাদত আল্লাহর মহব্বত এবাদত। হুজুরের ভালবাসা ঈমান, নাজাত ও মাগফেরাত। এগুলি সবই আল্লাহকে পাওয়ার জন্য আল্লাহ হুজুরের অনুসরণ মহব্বতের সাথে করার তৌফিক দান করুন। আমিন। মদিনা শরীফের রহমত হুজুরের ওছিলায়। মাদিনা শরীফে গাছ কাটলে বিনা প্রয়োজনে শাস্তি হবে। মদিনাবাসীর বিরুদ্ধে ক্ষতি করার চিন্তা করলে ক্ষতি না করলেও শাস্তি হবে। রিয়াজুল জান্নাত মদীনা শরীফে, মদিনার বরকত মক্কা শরীফের দ্বিগুন করার দোয়া হুজুর করেছেন-
عن النبي صلي الله عليه وسلم قال اللهم حبب الينا المدينة كحبنا مكة أو أشد
অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, হে আল্লাহ তুমি আমাদের নিকট মদিনাকে মক্কার ন্যায় প্রিয় করে অথবা তার চাইতে বেশী ভালবাসার তাওফিক দাও। (বুখারী, মুসলিম)
মদীনা শরীফের হেফাজতী হবে। হাসরের তান্ডব মদীনা শরীফে হবে না। হাউজে কাউছারের মূল হবে হুজুরের মদীনা শরীফে মিম্বরের পাদদেশে। দাজ্জাল মদীনা শরীফে ঢুকতে পারবেনা।
শবে বরাতের আমল ও ফযীলত
মাও মুহাম্মদ ওসমান গণি আল-ক্বাদেরী
তিরমিযী শরীফে আছে, হযরত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পেলামনা। দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাকীতে ছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন তুমি কি আশঙ্কা করেছিলে যে, তোমার আল্লাহ ও রাসূল অবিচার করবেন? আমি আরয করলাম হে আল্লাহর রাসূল আমি মনে করেছিলাম আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর নিকট তাশরীফ নিয়েছেন। তখন হুযুর এরশাদ করলেন আল্লাহ তায়ালা শা’বানের এ রাতে নিকটতম আসমানের দিকে অবতরণ করেন। (তিরমিযী ইবনে মাজাহ)। অন্য রেওয়ায়েতে আছে-
হযরত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা শা’বানের ১৫ তারিখ পূর্ব রাত ছিল। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পালা আমার ঘরে ছিল। তিনি আমার নিকট তাশরীফ রাখছিলেন। আমি রাত্রে জাগ্রত হলাম। আমি বিছানায় হুযুরকে পেলাম না। তাঁকে তালাশ করার জন্য মদিনা মুনাওয়ারার গলিতে বেরিয়ে পড়লাম। শেষ পর্যন্ত বস্তির বাইরে গেলাম। তখন মদীনা মুনাওয়ারার কবরস্থানে (জান্নাতুল বাকীতে) তাঁকে যিকির ও দোআরত অবস্থায় পেলাম।
শবে বরাতের রাতকে শবে কদর ও বলা হয়:
মিরআতুল মানাজীহ নামক মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে মুফতী আল্লামা আহমাদ ইয়ারখান নঈমী (রঃ) লিখেন শবে বরাতের রাতকে শবে কদর ও বলা হয়। অর্থাৎ সমগ্র বছরের ব্যবস্থাপনার বিষয়াদীর ফয়সালার রাত। কদর মানে অনুমান বা নির্ণয় করা। মহান রব ইরশাদ ফরমান- “হা-মীম! ওয়ালকিতা-বিল মুবীন। ইন্না আনজালনাহু ফীলাইলাতিম মুবারাকাতিন ইন্না কুন্না মুনজিরিন”। (সুরা দুখান, ১-৪)
অর্থঃ হা-মীম! শপথ সেই স্পষ্ট কিতাবের আমি উহাকে এক বরকতময় (বরাতের) রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি, আমি সতর্ককারী ছিলাম। ঐ (শবেবরাতের) রাত্রিতে প্রত্যেক হিকমত পূর্ণ কাজ বন্টন করে দেওয়া হয়। (সূরা দুখান আয়াত ১-৪) আবার ২৭ রমজানকে ও শবেকদর বলা হয়। অর্থাৎ সংকীর্ণতার রাত কদর মানে সংকীর্ণ হওয়া। ঐ রাতে ফেরেশতাগণ এত বেশি অবতীর্ণ হন যে পৃথিবীপৃষ্ঠে সংকুলান হয়না। মহান রব ইরশাদ ফরমাচ্ছেন- “তানাজালুল মালা ইকাতুঅররুহু ফীহা”।
অর্থঃ এতে ফিরিশতাগণ ও জিব্রাঈল অবতীর্ণ হয়- (তরজমা-কানজুল ঈমান সুরা কদর-৪) শবে বরাতের রাতে গুণাহগার মুমিনদের কে ক্ষমা করে দেয়া হয়। কুফুরী ও বদ আক্বীদার উপর মৃত্যুবরণ কারী কাফিরদেরকে নয়।
শবে বরাত এর ফযিলত সম্পর্কিত সিহাহ ছিত্তার হাদীস:
সিহাহছিত্তার অন্যতম ইবনে মাজাহ শরীফে হযরত আবু মুসা আশআরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। হুযুর এরশাদ করেছেন- আল্লাহ তাআলা ১৫শা’বানের রাতে বদান্যতার দৃষ্টি দান করেন। তখন কাফির অথবা হিংসুক ব্যতিত আপন সব সৃষ্টিকে ক্ষমা করেছেন। (ইবনু মাজাহ) আর ইমাম আহমদ (রঃ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনায় আছে দুজন ব্যতিত হিংসুক ও নর হত্যাকারী। (মিশকাত শরীফ বাবু কিয়ামির শাহরি রমাদ্বানা অধ্যায়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য)
মিশকাত শরীফের একই অধ্যায়ে আরো আছে- হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যখন ১৫ শাবানের রাত হয় তখন রাতে জাগ্রত রয়ে ইবাদত করো এবং দিনের বেলায় রোযা রাখো। কেননা ঐ রাতে আল্লাহ তায়ালা সূর্য অস্ত যেতেই নিকটবর্তী (প্রথম) আসমানের দিকে রহমত নাযিল করেন। অতঃপর বলেন কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? (থাকলে) আমি তাকে জীবিকা দেবো। কোন রুগ্ন ব্যক্তি আছো কি? আমি তাকে আরোগ্য দান করবো। কেউ কি এমন আছো! কেউ কি এমন আছো! এভাবে ফজর হওয়া পর্যন্ত (ডাকবেন) (ইবনু মাজাহ শরীফ)
ইবাদতের সময়কালঃ উত্তম হচ্ছে এ রাতে সমগ্র রাত জেগে ইবাদত করা। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তবে রাতের প্রথমভাগে শুয়ে পড়বে এবং শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়বে কবর যিয়ারত করবে এবং তিনদিন রোযা রাখবে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। কারণ একটি মাত্র নফল রোযা রাখা জায়েজ হলেও উত্তম নয়। অন্যান্য রাতের শেষভগে এ বদান্যতা প্রদর্শন করা হয় কিন্তু এ রাত প্রারম্ভে থেকেই বরকতময়। ওই সব লোক বড়ই সৌভাগ্যবান যারা এ রাত জেগে ইবাদত করে। কিন্তু ওইসব লোক বড়ই হতভাগা যারা আতশবাজী ও সিনেমা দর্শন ইত্যাদিতে রাত অতিবাহিত করে। (যুল মিরআত)
শবে বরাতের দিনে হালুয়া রুটি বিলিয়ে দিলে মনে হিংসা থাকেনাঃ হাদীস শরীফে আছে- হিংসুক মানুষ, হত্যাকারী ব্যতিত সকলকে আল্লাহ পাক এ বরকতময় রাতে ক্ষমা করে দেন। এখানে হিংসা মানে পার্থিব হিংসা ও শত্র“তা আর হত্যা মানে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। অন্যথায় কাফিরদের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ রাখা এবং জিহাদে কাফিরদের হত্যা করা, ডাকাত, ব্যভিচারী ও মানুষ হত্যাকারীকে হত্যা করা ইবাদত। কোন কোন স্থানে শবে বরাতের দিনে একে অপরকে হালুয়া রুটি ইত্যাদি তোহফা প্রেরণ করে। নিজেদের ভুলত্র“টির জন্য পরস্পর ক্ষমা চেয়ে নেয়। এসব কিছুর মূল হচ্ছে উপরোক্ত হাদীস শরীফ। কারণ অন্যায়ভাবে শুধু শুধু হিংসা বিদ্বেষ ও শত্র“তা পোষণকারী এ রাতের রহমতরাজী থেকে বঞ্চিত। আর এ তোহফা উপটৌকন হিংসা বিদ্ধেষ দূরীভূত করার মাধ্যম। তাছাড়া এ রাত ইবাদত সমূহের রাত। আর দান-খয়রাত ও হাদিয়া প্রদান করা এবং মানুষকে খানা প্রদান করা ও ইবাদত। এসব দান খয়রাতের পথে বাধা সৃষ্টি করা ও এটাকে শিরক বলা জঘন্য মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
খাদ্য প্রদানে উৎসাহ প্রদান না করা মূলত কিয়ামতকেই অস্বীকার করাঃ এ রাতে মিছকীনকে হালুয়া রুটি ইত্যাদি খাদ্য প্রদান করতে দেখলে এক ধরণের লোকেরা এটাকে বিদআত শিরক ইত্যাদি বলে এবং খাদ্য প্রদান করতে বাধা দেয়। যারা খাদ্য প্রদান করতে একে অপরকে উৎসাহ দেয়না কুরআনের ভাষায় তারাই কিয়ামতকে অস্বীকারকারী। যেমন আল্লাহ পাক বলেন- “আরাইতাল্লাজী ইয়ুকাজজিবুবিদদীন ফাজালিকাল্লাজী ইয়াদুউল ইয়াতীম অলা ইয়াহুদ্দু আলা ত্বআমিল মিছকীন”।
অর্থঃ আপনি কি সেই লোকটিকে দেখেছেন? যে কিয়ামত (প্রতিফল) দিবসকে অবিশ্বাস করে অনন্তর সে তো ঐ ব্যক্তি যে এতিমকে ধাক্কা দিয়ে তাড়ায়। আর অভাবগ্রস্তকে আহার্য প্রদানে উৎসাহ প্রদান করেনা। (সূরা মাউন ১-৩)
মিশকাত শরীফের একই অধ্যায়ে উল্লেখ আছে- হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, হুযুর এরশাদ করেছেন তুমি কি জানো যে এ রাত অর্থাৎ ১৫ই শাবানে কী রয়েছে? আরজ করলেন হে আল্লাহর রাসূল তাতে কী আছে? হুযুর এরশাদ করলেন এ রাতে ঐ বছরে ভূমিষ্ট হবে এমন মানব শিশুদেরকে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ বছর মৃত্যুবরণকারী মানুষদের ও লিপিবদ্ধ করা হয়। তদুপরি এ রাতে তাদের আমলগুলি উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়। আর তাদের রিযিক অবতরণ করা হয়। তিনি আরজ করলেন হে আল্লাহর রাসূল কেউ কি আল্লাহর রহমত ব্যতিত জান্নাতে যাবে না? তখন তিনি তিনবার বলেছেন আল্লাহ তাআলার রহমত ব্যতিত কেউই জান্নাতে যাবেনা। আমি আরজ করলাম হে আল্লাহর রাসূল আপনি ও না? তদুত্তরে হুযুর আপন হাত শরীফ আপন মাথার উপর রখলেন আর এরশাদ করলেন “আমিও না তবে (ঘটনা) এ যে, আল্লাহ তাআলা আমাকে তাঁর রহমত দ্বারা ঢেকে নেন। এটা তিনবার বলেছেন। (বাইহাক্বী, দাওয়াত ই কাবীর)
উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রঃ) তার বিশ্ববিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ সিরাতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ এ উল্লেখ করেছেন যে, ফিরিশতাগণ লাওহে মাহফুয থেকে গোটা বছর সংঘটিত হবে এমন ঘটনাবলী এরাতে সহীফা (লিপি) গুলোতে কপি করেছেন। আর প্রতিটি সহীফা বা লিপি ওই সব ফিরিশতাকে অর্পণ করেন, যাঁদের দায়িত্বে এসব কাজ অর্পিত।
সুতরাং মৃত্যুবরণকারীদের তালিকা মৃত্যুদূত ফিরিশতাকে জন্মগ্রহণকারীদের তালিকা সন্তান গঠনকারী ফিরিশতাদের আর জীবিকারাজীর তালিকা হযরত মীকাঈলকে দিয়ে দেয়া হয়। এ দৃষ্টিতে এ রাতকে শবে ক্বদর ও বলা হয়। কারণ শবে কদর অর্থ পরিমাণ র্নিধারণের রাত।
অবান্তর আপত্তির বেড়াজালে বরকতময় রজনী শবে বরাত
মাওলানা কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বাশারী
পবিত্র আল কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন-
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِين- فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ- َ
অর্থাৎ আমি এটি (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। আমিতো সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। (সূরা দুখান, আয়াত ৩-৪)
এখানে উল্লেখিত لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ এর ব্য্যাখায় মুফাস্সিরীনে কিরাম থেকে দুটি অভিমত বর্ণিত হয়েছে। তাফসীরে রুহুল মাআনীসহ বিভিন্ন তাফসীরে উল্লেখ আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.), কাতাদাহ, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের, হাসান বসরীসহ জমহুর মুফাসসিরীনের মতে لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ বা বরকতময় রজনী বলতে শবে কদর উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে হযরত ইকরামা ও একদল মুফাসসিরের মতে, বরকতময় রজনী বলতে শবে বরাত উদ্দেশ্য। ইমাম কুরতুবী, আল্লামা ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী, ইমাম রাযী, আল্লামা মাহমুদ আলুসী বাগদাদী প্রখ্যাত মুফাসসিরগণ স্ব স্ব তাফসীরে গ্রন্থে বরকতময় রাত্রির ব্যাখ্যায় উপরোক্ত দুটি মতই উল্লেখ করেছেন।
বরকতময় রজনীর তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) শবে কদরের কথাই বলেছেন। তবে তাঁর বিভিন্ন বর্ণনা থেকে শবে বরাতের বিশেষত্বের দিকও ফুটে উঠেছে। তাঁর থেকে বর্ণিত আছে যে, সকল বিষয় সিদ্ধান্ত হয় শা’বান মাসের মধ্যরাতে অর্থাৎ শবে বরাতে এবং এগুলো সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় রামাদান মাসের ২৭ তম রাতে অর্থাৎ শবে কদরে (তাফসীরে রুহুল মাআনী, ২৫ তম খন্ড, পৃষ্ঠা ১১৩)।
আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহাম্মদ আল বাগদাদী তদীয় তাফসীরে খাযিন এ উল্লেখ করেছেন
يبر فيها امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات وروي البغوي بسنده ان النبي صلي الله عليه وسلم قال تقطع الاجال من شعبان الي شعبان حتي ان الرجل لينكح ويولد له وقد خرج اسمه في الموتي وعن ابن عباس ان الله يقضي الاقضية في ليلة النصف من شعبان ويسلمها الي اربابها في ليلة القدر-
অর্থাৎ শবে বরাতে বছরের সকল বিষয়াবলীর তালিকা করা হয় এবং জীবিতদের মৃতদের তালিকায় হস্তান্তর করা হয়। ইমাম বাগাভী স্বীয় সনদে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন এক শাবান থেকে পরবর্তী শাবান পর্যন্ত জীবনকাল নির্ধারিত হয়। এমনকি একজন মানুষ বিয়ে করে তাঁর সন্তান হয় অথচ তার নাম মৃত ব্যক্তিদের তালিকায় বের করে রাখা হয়ে গেছে। আর ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহ তায়ালা সকল বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শাবানের মধ্যবর্তী রাতে এবং তা সংশ্লিষ্ট ফেরেশতার নিকট সমপর্ণ করেন লাইলাতুর কদরে। (তাফসীরে খাযিন, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ১৪৩)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাস মাহে শা’বআন:
শাবান মাসের অত্যধিক ফযীলতের কারণে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসকে তাঁর নিজের মাস বলে অভিহিত করেছেন। হযরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন -
شهر رمضان شهر الله وشهر شعبان شهري- شعبان المطهر ورمضان المكفر-
অর্থাৎ রামাদান আল্লাহর মাস এবং শা’বান আমার মাস। শা’বান পবিত্রতা দানকারী আর রামাদান গুনাহমোচনকারী। (কানযুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৪৭ হাদীস নং ২৩৬৮৫ ইবনে আসাকির, দায়লামী, আল জামিউস সগীর লিস্ সুয়ুতী)
শা’বান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাস হওয়ার কারণ হলো তিনি এ মাসে আবশ্যকতা ছাড়া অধিক রোযা রাখ সে অর্থাৎ নফল হিসেবে অধিক রোযা রাখতেন। আর রামাদান আল্লাহর মাস হওয়ার কারণ হলো আল্লাহ তায়ালা এ মাসে রোযা রাখা ফরয করে দিয়েছেন। ফলে এ মাসে রোযা রাখা বান্দার প্রতি আল্লাহর হক হিসেবে পরিগণিত। (ফায়যুল কাদীর লিল মানাভী, ১৪তম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪০৫)
হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত অপর হাদীসে আছে,
كان رسول الله صلي الله عليه وسلم يصوم حتي نقول لايفطر ويفطر حتي نقول لايصوم فما رايت رسول الله صلي الله عليه وسلم استكمل صيام شهر الا رمضان وما رايته اكثر صياما منه في شعبان-
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে রোযা রাখা আরম্ভ করতেন যে আমরা বলতাম তিনি আর রোযা বাদ দিবেন ন্ াআর যখন রোযা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম তিনি রোযা রাখবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রামাদান ছাড়া অন্য কোনো মাসে রোযা পূর্ণ করতে দেখিনি এবং শা’বান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে অধিক রোযা রাখতে দেখিনি। (বুখারী,صوم شعبان باب ,মুসলিম باب صيام النبي صلي الله عليه وسلم في غير رمضان)
লা-মাযহাবী মালাকীদের দৃষ্টিতে শবে বরাত:
বর্তমান বিশ্বে লা-মাযহাবী, সালাফী, ওয়াহাবী, নজদী যারা শবে বরাতকে অর্থাৎ শবে বরাতের রোযা ও নফল নামায পড়াকে বিদআ’ত ফতোয়া প্রদান করছেন। তাদের বদ আক্বিদার গুরু যারা তারাও শবে বরাতকে স্বীকার করেছেন এবং ফযীলতপূর্ণ রাত্রি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আমি নিম্নে তাদের প্রণীত বই থেকে কিছু উক্তি উপস্থাপন করছি।
ক্স সালাফীদের মান্যবর ব্যক্তি ইবনে তাইমিয়া একজন গায়র মুকাল্লিদ পন্ডিত ছিলেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সাথে বিভিন্ন মাসআলায় তার বিরোধ রয়েছে। তিনি কবর যিয়ারত এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফরকে নাজায়েয বলেছেন। লা-মাযহাবী ও আধুনিক সালাফীগণ তাকে ইমাম হিসেবে মান্য করেন। তিনি শবে বরাত সম্পর্কিত কোনো কোনো হাদীসের সনদের সমালোচনা করলেও স্বীকার করেছেন যে শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে অনেক মারফু হাদীস ও আছার রয়েছে। তার বক্তব্য হলো-ৎ
فقد روي في فضلها من الاحاديث المرفوعة والاثار ما يقفضي انها ليلة مفضلة وان من السلف من كان يخصها بالصلاة فيها وصوم شعبان قد جاءت فيه احاديث صحيحة-
অর্থাৎ শা’বানের মধ্যবর্তী রাতের ফযীলত সম্পর্কে অনেক মারফু হাদীস ও আছার বর্ণিত হয়েছে যা থেকে বুঝা যায় যে এটি একটি মর্যাদাবান রাত। সালফে সালিহীনের কেউ কেউ এ রাতকে নামাযের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতেন। আর শা’বান মাসের রোযার বিষয়ে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
ক্স একইভাবে সাম্প্রতিক সময়ে যিনি হাদীসের সনদ নিয়ে অধিক আলোচনা সমালোচনা করেছেন এবং পূর্বসূরী মুহাদ্দিসীনে কিরামের মতামতকে পাশ কাটিয়ে নিজস্ব বিবেচনায় বিভিন্ন হাদীসকে যঈফ মাওযু ইত্যাদি বলেছেন এমনকি ইমাম বুখারী (র.) এর আদাবুল মুফরাদ, ইমাম তিরমিযী (র.) এর সুনানে তিরমিযী, ইমাম ইবনে মাজাহ (র.) এর সুনানে ইবনে মাজাসহ মুহাদ্দিসীনে কিরাম ও সর্বসাধারণের নিকট গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন সহীহ হাদীসের কিতাবের বিভিন্ন হাদীসকে যঈফ বলেছেন, এমনকি উক্ত হাদীসের কিতাবসমূহকে সহীহ ও যঈফ এ দুভাগে বিভক্ত করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন সেই নাসির উদ্দিন আলবানীও শবে বরাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসকে সহীহ বলেছেন এবং শবে বরাতের ফযীলতকে স্বীকার করেছেন। তিনি হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে বলেছেন আল্লাহ তায়ালা শাবানের মধ্যবর্তী রাতে (অর্থাৎ শবে বরাতে) তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর মুশরিক ও হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকল বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন। তিনি এ সম্পর্কে বলেছেন-
حديث صحيح روي عن جماعة من الصحابة من طرق مخلتفة يشد بعضها بعضا وهم معاذ جبل و ابو ثعلبة الخشني وعبد الله بن عمرو وابي موسي الاشعري وابي هريرة شة-Ðوابي بكر الصديق و عوف ابن مالك وعا
অর্থাৎ এ হাদীস সহীহ। একদল সাহাবী থেকে বিভিন্ন সনদে এটি বর্ণিত হয়েছে যা একে অন্যকে শক্তিশালী করে। এ হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবায়ে কিরামগণ হলেন ১. হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.) ২. আবু সা’লাবা আল খুশায়নী (রা.) ৩. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) ৪. আবু মুসা আল-আশআরী (রা.) ৫. আবু হুরায়রাহ (রা.) ৬. আবু বকর (রা.) ৭. আউফ ইবনে মালিক (রা.) ৮. হযরত আয়েশা (রা.)। সুতরাং শবে বরাত সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস নেই এ রকম কথা বলা নিঃসন্দেহে মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। যেমনটি পূর্বোক্ত নাসির উদ্দিন আলবানী বলেছেন। (সিলসিলাতুল আহা দিসস সহীহা, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৩৫)
ক্স তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাকার আবদুর রহমান মুবারকপুরী ও একজন লা মাযহাবী আলিম ছিলেন। তিনি আয়েশা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন اعلم انه قد فضيلة ليلة النصف من شعبان عدة احاديث مجموعها يدل علي ان لها اصلا- অর্থাৎ জেনে রাখো শা’বানের মধ্যবর্তী রাতের (শবে বরাতের) ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যেগুলো সম্মিলিতভাবে প্রমাণ করে যে শবে বরাতের ভিত্তি রয়েছে। (তুহফাতুল আওয়াযী, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৫) আবদুর রহমান মুবারকপুরী উপরোক্ত বক্তব্যে পর শবে বরাত সম্পর্কিত বিভিন্ন হাদীস উল্লেখ করত এগুলোর সনদ আলোচনা শেষে বলেন فهذه الاحاديث بمجموعها حجة علي من زعم انه لم يثبت في فضيلة ليلة النصف من شعبان شي والله تعالي اعلم- অর্থাৎ যারা বলে থাকেন শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে কোনো প্রমাণ্য দলীল নেই এ সকল হাদীস সম্মিলিতভাবে তাদের বিপক্ষে দলীল। (তুহফাতুল আওয়াযী, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৭)
ক্স আল্লামা আনোয়ার শাহ কশ্মিরী (র.) এর নিম্নোক্ত বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি তিরমিযী শরীফে হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, هذه الليلة ليلة البراءة وصع الروايات في فضل ليلة البراءة واما ذكر ارباب الكتب من الضعاف والمنكرات فلا اصل لها- অর্থাৎ এ রাত হলো লাইলাতুল বারাত। আর লাইলাতুল বারা’আত এর ফযীলত সম্পর্কিত বর্ণনাসমূহ সহীহ। বিভিন্ন গ্রন্থকার যঈফ ও মুনকার বলে যা উল্লেখ করেছেন এর কোনো ভিত্তি নেই। (আরফুশ শাযি, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭১)
জেনে রাখা ভাল: এ রাত্রটি অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত।
১। লাইলাতুল বরাত, ২। লাইলাতুত্ দোয়া, ৩। আরবী ভাষাভাষী অঞ্চলে নিসফুম মিন শা’বান, ৪। মালেশিয়ায় নিসফু শাবান, ৫। তুর্কিভাষাভাষীরা বলে বিরাতি কান্দিলি, ৬। এই পাক ভারত উপমহাদেশে শবে বরাত নামে পরিচিত।
প্রসঙ্গ ভন্ড নবী
মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন আল-ক্বাদেরী
প্রভাষক বদরপুর সিনিয়র মাদরাসা, চাঁদপুর।
অনুবাদঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, খুব শীঘ্রই আমার উম্মতের মধ্যে ৩০ জন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব ঘটবে। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর নবী বলে ধারণা করবে। অথচ আমিই শেষ নবী আমার পরে আর কোন (নতুন) নবী নেই।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর কেউ যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নবী রাসূল হওয়ার দাবী করে কিংবা কেউ যদি খতমে নবুওয়তের আক্বীদাকে অস্বীকার করে তবে সে মিথ্যাবাদী ও কাফির। কুরআন হাদীস ইজমা কিয়াস তথা ইসলামী শরীয়তের দলীল চতুষ্টয় দ্বারা এ আক্বীদা প্রমাণিত।
অনুবাদঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাক জবানে ইরশাদ করেন। শেষ যুগে অনেক মিথ্যুক দাজ্জাল বের হবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব হাদীস (কথা) বর্ণনা করবে যা তোমরা বা তোমাদের পিতৃপুরুষ (হক্কানী ওলামায়ে কেরামরা) শুনে নাই। তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাক তারা যেন তোমাদেরকে গোমরাহ, ফিতনা বা বিপদাপন্ন করতে না পারে। (মুসলিম)
বর্তমান যুগের দেওবন্দীদের মধ্যে আশরাফ আলী থানভী ও এমন একজন দাজ্জাল কাজ্জাব ও মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার। তার থেকে সাবধান না থাকলে ঈমান আক্বীদা বরবাদ হয়ে যাবে। তাই তার কুফুরী বক্তব্য গুলোর মধ্যে কতিপয় মন্তব্য উল্লেখ করা হলোÑ
১. একদিন মৌ. আশরাফ আলী থানভীর এক মুরীদ তার কাছে পত্র লিখে তার স্বপ্নের কথা জানালেন যে আমি ঘুমের মধ্যে কালিমা পড়তেছি-
অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই আশরাফ আলী আল্লাহর রাসূল। (নাউযুবিল্লাহ) আমি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জেগে উঠে শব্দ করে কালিমা পড়তে চাইলাম কিন্তু আমার মুখ দিয়ে এমনটাই বের হচ্ছে। আমার মুখ সংযত রাখতে পারলামনা। এবার আমি দুরুদ শরীফ পড়তে লাগলাম-
اللهم صلي علي سيدنا ونبينا اشرف علي واله وسلم.
আমার জিহবা দ্বারা সঠিক কথা উচ্চারণ করতে পারছিলাম না। এতে আমার কোন সমস্যা হবে কিনা। জনাব থানভী সাহেব উত্তর দিলেনÑ তুমি সুন্নাতের উপরই কায়েম আছো। (দেখুন রিছালা আল ইমদাদ) মুরীদ তাকে আল্লাহর রাসূল ও নবী বলে দাবী করলো জিহবার অক্ষমতা প্রকাশ করলো আর তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বাদ দিয়ে নিজেকে রাসূল ও নবী বানানোর জন্য মুরীদের কথাকে হক ও সুন্নাত বলে সমর্থন দিল (নাউজুবিল্লাহ)
২. মৌলভী আশরাফ আলী সাহেব বৃদ্ধকালে তার অল্প বয়স্কা এক মহিলা মুরীদকে বিবাহ করেন। এ বিবাহের আগে তার কোন এক মুরীদ স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, মৌলভী আশরাফ আলীর ঘরে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) তাশরীফ এনেছেন। এর তাবীর প্রসঙ্গে মৌলভী আশরাফ আলী সাহেব বলেন- কোন অল্প বয়স্কা মহিলা আমার হাতে আসবে। কেননা হুযুর (দঃ) এর সাথে আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) এর যখন বিবাহ হয় তখন তার বয়স ছিল সাত (৭) বছর মাত্র। এ স্বপ্নে তার ইঙ্গিতই রয়েছে যে, আমি হলাম বৃদ্ধ এবং বিবি সাহেবা হচ্ছে বালিকা। (মৌলভী আশরাফ আলী রচিত রিসালাতুল ইমদাদ দ্রষ্টব্য)। ব্যাখ্যাঃ মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান-
-
অর্থঃ নবী মুমিনদের জানের চেয়ে ও আরো নিকটে ও সবচেয়ে আপনজন এবং তাঁর স্ত্রীগণ হচ্ছে তাদের মা। (সূরা আহযাব) বিশেষ করে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) এর সেই উচ্চ মর্যাদা রয়েছে যে, সারা বিশ্বের মায়েরা তাঁর পবিত্র চরণে উৎসর্গীত। কোন মুর্খ ব্যক্তিও মাকে স্বপ্নে দেখে স্ত্রী হিসেবে তা’বীর করবেনা। তাই এটা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) এর প্রতি অবমাননাকর বরং তার শানে সুস্পষ্ট বেয়াদবী ও গোস্তাখী বুঝা যায়। মাকে স্ত্রী হিসেবে তা’বীর করার চেয়ে জঘন্য বেয়াদবী এবং কুফুরী আর কি হতে পারে। মূলত তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে, আমি ও তো একজন নবী ও রাসূল (!) তাই আমিও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মতই কুমারী মেয়েকে বিবাহ করবো। (নাউজুবিল্লাহ)
৩. আশরাফ আলী সাহেব তার হিফজুল ঈমান পুস্তকে লিখেছেন যে, গায়েব অদৃশ্যের জ্ঞান যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট রয়েছে তেমন গায়েব তো প্রত্যেক শিশু পাগল বরং প্রত্যেক পশু এবং চতুস্পদ জন্তুর ও রয়েছে। তিনি আরো বলেন হুযুরের পবিত্র সত্তার মধ্যে ইলমে গায়েব (অদৃশ্য জ্ঞান) এর অস্তিত্বকে স্বীকার করা যদি যায়েদের কথানুযায়ী শুদ্ধ হয়, তবে জিজ্ঞাস্য এই দাঁড়ায় যে, ঐ গায়ব দ্বারা কি কতেক ইলমে গায়ব বুঝানো উদ্দেশ্য? না সামগ্রিক ইলমে গায়েব? যদি কতেক ইলমে গায়বতো যায়েদ আমর বরং প্রতিটি শিশু ও পাগল বরং সকল জানোয়ার এবং সকল গৃহ পালিত পশুরও আছে। আর যদি সামগ্রিক ইলমে গায়ব বুঝানো উদ্দেশ্য হয় এভাবে যে, তার একটি মাত্র সংখ্যা ও বাদ না পড়ে তবে এটা বাতিল হওয়া নক্বলী ও আকলী দলীল দ্বারা প্রমাণিত।
দেখুন ঐ লোকটা কীভাবে কোরআনে আযীমকে পরিত্যাগ করে নিজের ঈমানকে চিরবিদায় করে দিলো কারণ মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান-
অর্থঃ তিনি (নবী) গায়েবের বিষয় বলতে কৃপণ নন। (সূরা তাকবীর ২৪ অনুবাদ কানযুল ঈমান)
সে এটা জিজ্ঞাসা করতে লাগল যে, নবী ও পশু জানোয়ারের মধ্যে পার্থক্য কী? এমনিভাবেই আল্লাহর পক্ষ থেকে মোহর লাগিয়ে দেয় হয় প্রতিটি অহংকারী প্রবঞ্চকের অন্তরে। ইরশাদ হচ্ছে-
অর্থঃ আল্লাহ পাক তাদের অন্তরে ও কর্নে মোহরাঙ্কিত করে দিয়েছেন এবং চোখে পর্দা করে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (সূরা বাকারা-৭, তরজমা কানযুল ঈমান)
আ’লা হযরত আজীমুল বারকাত ইমামে আহলে সুন্নাত আহমদ রেযাখান ফাযেলে বেরলভী (রঃ) বলেন আপনি কখনো দেখতে পাবেন না যে, কোন ব্যক্তি হুযুর মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মান মর্যাদা খাটো করে আর এমতাবস্থায় সে মহান প্রতিপালক আল্লাহপাককে সম্মান ও করে। আল্লাহরই কছম হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মান মর্যাদা হানি ঐ ব্যক্তিই করে যে (গোপনে বা প্রকাশ্যে) মহান প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার মর্যাদা হানি করে। যেমন মহামহিম আল্লাহ বলেন- এবং ঐ যালিমগণ আল্লাহর যথার্থ মূল্যায়ন করেনি।
অর্থাৎ যে ব্যক্তি রাসূলকে অনুসরণ করল (ভালবাসার মাধ্যমে) সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই অনুসরণ করল।
কারণ তার নাপাক দুর্গন্ধময় ভাষণের গতিকে যদিও মহান আল্লাহ তাআলার ইলমের দিকে প্রবাহিত না ই করা হয়। তবুও কোন কাফির ইচ্ছা করলে সেটাকে অবশ্যই আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতা পর্যন্ত হুবহু নির্বিঘেœ প্রবাহিত করতে পারবে। তখন উদাহরণ স্বরূপ বলা যাবে যে, যদি কোন বিধর্মী কাফের যে মহান আল্লাহ তাআলার ব্যাপক কুদরতকে অস্বীকার করে করে সে যদি এই মুরতাদ নবীর দুশমন দেওবন্দী ওহাবী আশরাফ আলী থানবীর নিকট শিক্ষা লাভ করতে যায়, তবে তো সে (আল্লাহর কুদরত সম্পর্কেও সেরূপ যুক্তি তর্কে লিপ্ত হয়ে) বলবে মহান আল্লাহ পাকের সত্তার মধ্যে কুদরত আছে বলে যদি কোন মুসলমানদের কথানুযায়ী স্বীকার করা হয় যদি তা শুদ্ধও হয় তবে জিজ্ঞাস্য এই দাঁড়ায় যে, এ কুদরত দ্বারা কি কতেক বস্তুর উপর কুদরত বুঝায়? না সমস্ত বস্তুর উপর বুঝায়? যদি কতেকের উপর কুদরত বুঝায় তাহলে এতে মহান আল্লাহ পাকের কী বিশেষত্ব আছে? এমন কুদরততো যায়েদ আমর বরং প্রতিটি শিশু এবং পাগল বরং সমস্ত পশু প্রাণী জানোয়ার এবং সকল গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তুরও রয়েছে। আর যদি সকল বস্তুর উপর কুদরত বুঝায় এমনি ভাবে যে সে সব বস্তুর কোন একটা সংখ্যাও বাদ না পড়ে, তবে তাও বাতিল হওয়া নক্বলী ও আক্বলী (উদ্ধৃতিগত ও যুক্তিগত) দলীল দ্বারা প্রমাণিত। কারণ সব বস্তুর মধ্যে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার মহান পবিত্র সত্তাও অন্তর্ভূক্ত। (অর্থাৎ তাঁর মহান সত্তাও তাঁর কুদরতের অধীন হয়ে যাবে) অথচ তাঁর স্বীয় জাত (সত্তা) তাঁর কুদরতের অধীনে নয়। অন্যথায় তিনিও কোন কুদরতের অধীনস্থ হয়ে যাবেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ পাক জাত মুমকিন (সম্ভাবনাময় অন্যভাষায় অস্তিত্বে আসার জন্য অপরের মুখাপেক্ষী) হয়ে যাবেন। তাঁর জাত তখন ওয়াজিব (যাঁর অস্তিত্ব স্বয়ং সম্পূর্ণ অত্যাবশ্যকীয় কারো মুখাপেক্ষী নয় এমন) থাকবেনা। ফলে, তিনিই ইলাহ হিসেবে ও বিদ্যমান থাকবেন না।
সুধীপাঠক মন্ডলী! পাপাচার ও আল্লাহ ও রাসূলের উক্ত নাফরমানির দিকে নজর দিন। এক পাপাচার কীভাবে অন্য পাপাচারের দিকে টেনে নিয়ে যায়? আল্লাহ পাকের আশ্রয় প্রার্থনা করছি যিনি সমগ্র জাহানের খালিক ও মালিক।
সারকথা এই যে, উপরোক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাদের বানানো তথাকথিত হাকীমুল উম্মাত? আশরাফ আলী থানভী ইজমা ই উম্মাত অনুযায়ী কাফির মুরতাদ মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার ও ইসলাম বহির্ভূত। বাযযাযিয়াহ, দুরার, গুরার, ফাতাওয়ায়ে খাইরিয়াহ, মাজমাউল আনহুর এবং দুররুল মুখতার প্রভৃতি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে এ জাতীয় কাফির বেদ্বীনদের সম্পর্কে বলা হয়েছে-
অর্থাৎ যে কেউ তার কুফর ও আযাব এর ব্যাপারে সন্দেহ করবে সেও স্বয়ং কাফির।
শেফা শরীফে বলা হয়েছে-
অর্থাৎ আমরা তাকেই কাফির বলি, যে এমন ব্যক্তিকে কাফির বলে না, যে মিল্লাতে ইসলাম ব্যতিত অন্য কোন মিল্লাতকে বিশ্বাস করে অথবা তাদের প্রতি নীরব সমর্থন দেয় কিংবা তাদের ভ্রষ্টতায় সন্দেহ পোষণ করে। (দেখুন হুসামুল হেরমাইন আলা মানহারিল কুফরী অল মায়ন)
আউলিয়া জীবনাল্লেখ্য
হযরত গাউছুল আ’জম মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানী (রা.)
আয়েশা আখতার
কামিল ২য় বর্ষ (হাদিস) গাজীমুরা আলিয়া মাদ্রাসা লাকসাম কুমিল্লা
পবিত্র নাম মোবারক ও নসব শরীফ:
আব্দুল কাদের বিন আবু সালেহ মুসাজঙ্গী দুসত বিন আবু আব্দুল্লাহ বিন ইয়াহইয়া আযযাহেদ বিন মুহাম্মদ বিন দাউদ বিন মুসা বিন আব্দুল্লাহ বিন মুসা আল জাউন বিন আব্দুল্লাহ আল মাহদ্ব উপাধি মাজাল্ল বিন হাসান আল মুছান্না বিন হাসান বিন আলী বিন আবু তালেব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)
হযরত গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বংশ হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে-
আর সহীহ সূত্রে হযরত আমীরুল মু’মিনিন হযরত আলী বিন আবী তা’লিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) পর্যন্ত তার বংশীয় ধারা, বিরোধীদের দুর্বল দলীল সমূহ ও তাদের সংকীর্ণতার জন্য এবং পর্যাপ্ত প্রমাণসমূহের সাব্যস্তকারীদের পর্যপ্ত শক্তিশালী দলীল সমূহ প্রকাশ হলো। সহীহ সূত্রে হযরত গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর বংশ ধারা হযরত আমীরুল মুমিন হযরত আলী বিন আবী তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। এবং উক্ত নসব শরীফ নিয়ে বিরুদ্ধবাদীদের দূর্বল দলীল সমূহ তাদের সংকীর্ণতা এবং নসব শরীফ যারা আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) পর্যন্ত সাব্যস্তকারীদের শক্তিশালী দলীলসমূহ প্রমাণিত হলো।
উপনাম এবং লকবসমূহ:
বিশ্ব বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থসমূহ তাঁর উপনাম বলা হয়েছে আবু মুহাম্মদ আর তাঁর জন্মস্থান বলা হয়েছে আল জিলী বা আল্ জিলানী, আল্ কিনানী।
বিশ্ববিখ্যাত ইমামগণের দেয়া উপাধিসমূহ:
১. ইমাম এ লকবটি হযরত ইমাম সামআনী (রহঃ) এভাবে বর্ণনা করেন-
(হাম্বলীগণের ইমাম ও তাঁর সময়ের তাদের শায়খ। (ইমাম ইবনে হাম্বলী হতে বর্ণিত)
২. ইমাম যাহারী (রহঃ) যে উপাধি দিয়ে তাঁর বিশ্ববিখ্যাত কিতাব- মধ্যে বর্ণনা করেন তাহলো শায়খুল ইসলাম (ইসলামের শায়খ)
এছাড়াও গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বৈশিষ্ট্যের দিক লক্ষ করে যুগে যুগে ইমামগণ অসংখ্য উপাধি তাঁকে দিয়েছেন নিম্নে (১) সুলতানুল আরেফীন (২) তাজুল মুহাক্কীকীন (৩) সাবীউল হুমাইয়্যা (৪) মিছবাহুজ জনাম এছাড়াও গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ১১টি নাম মোবারক নাম রয়েছে-
পরীক্ষিত এ সমস্ত নাম যে কোন রোগীর জন্য খুবই উপকারী জ্বীনের প্রভাব মুক্তির জন্য এ নাম মোবারক ব্যক্তির গলায় মধ্যে দিলে জ্বীনের প্রভাব মুক্ত হয়। এভাবে সকল রোগের জন্য উপকার পরীক্ষিত।
হুজুর গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) পবিত্র বিলাদত/জন্ম: হযরত গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) জিলান নামক শহরে ৪৭১ হিজরী/ ৪৭০ হিজরী সনে জন্মগ্রহণ করেন। এ জন্য তাঁর নিসবাত জিলানী।
সফরঃ হুজুর গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ৪৮৮ সনে তাঁর নিজ শহর হতে বাগদাদে আসেন তখন তার বয়স ছিল ১৮। তৎকালীন বাগদাদে পৃথিবী খ্যাত আলেমদের কাছ থেকে তিনি জ্ঞানার্জন করেন। যার ফলপ্রসূতে অল্প সময়ে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অগাধ ইলম অর্জন করে পৃথিবী খ্যাত আলেমদের অন্যতম হন। হযরত ইমাম যাহবী (রহঃ) তাঁর “সিয়ারু আ’লামিন নুবানা” নামক বিশ্বখ্যাত কিতাবে ২০/৪৩৯ পৃষ্ঠায় হযরত গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) পরিচয় এভাবে দিয়েছেন-
নিশ্চয়ই তিনি হলেন শেখ, ইমাম, আলেম, যাহেদ, আরেফ, কুদওয়া (মডেল) বা আদর্শ শাইখুল ইসলাম। ইলমুল আউলিয়া (আউলিয়াগণের ইলমের মডেল) যিনি মহিউদ্দিন।
হাম্বলী মাজহাবের ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী (রহঃ) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত- নামক কিতাবে ১ম খন্ড/২৯০ পৃষ্ঠায় বলেন-
গাউছে পাক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হলেন যুগের শেখ আরেফীনগণের আদর্শ (মডেল) সমস্ত মাশায়েখদের সুলতান, মাকামাত কারামাতে, সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। (চলবে)
কার্যকরী কমিটি গঠন
গত ২৭/০২/২০১৪ ইং তারিখে গাজীপুরী ক্বাদেরীয়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খানকায়ে সোবহানীয়া শাহপুর দরবার শরীফে সংগঠনের কার্যকরী কমিটি গঠনপূর্বক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় উক্ত সংগঠনের প্রধান পৃষ্টপোষক শাহপুর দরবার শরীফের গদ্দিণীশিনপীর ছাহেব আলহাজ্ব অধ্যাপক মুহাম্মদ পিয়ারা আল-ক্বাদেরী প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায় গাজীপুরী ক্বাদেরীয়া সংগঠনের কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। নিম্নে সংগঠিত কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা পদবীসহ প্রকাশ করা হলো:
সভাপতি
আলহাজ্ব মাও. মুফতী কাজী আবুল বাশার আল-ক্বাদেরী
সহ-সভাপতি
শেখ শাহ্জাদা ইয়াসির আহমদ সোবহান
শেখ শাহ্জাদা আহসান হাবিব সোবহানী (কাওসাইন)
ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল আলম শামিম
মোঃ শাহাদাৎ হোসেন পাটোয়ারী
মহাসচিব
মাও. মুহাম্মদ মামুনুর রশীদ আল-ক্বাদেরী আল আযহারী
সহকারী সচিব
মাও. কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বাশারী
অর্থ সচিব
মাও. মুহাম্মদ ওসমান গণি আল-ক্বাদেরী
সাংগঠনিক সম্পাদক
হাফেজ মাও. রুহুল আমিন আল-ক্বাদেরী
প্রচার সম্পাদক
মুহাম্মদ কাসওয়া (জিসান)
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক
মাও. আলাউদ্দিন আল-ক্বাদেরী
দপ্তর সম্পাদক
মাও. শামছুদ্দোহা বারী আল-ক্বাদেরী
মিলাদ ও কিয়ামের ফতোয়া
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতি অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুর রব আল-ক্বাদেরী
প্রশ্ন: মিলাদ কিয়াম ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কতুটুকু বৈধ? সাহাবা, তাবেয়ীন ও সালফে সালেহীন কর্তৃক মিলাদ কিয়াম পালনের প্রমাণ আছে কি?
মুহাম্মদ দিদারুল ইসলাম (বি.এ. অনার্স, গণিত বিভাগ), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা।
মিলাদ, মওলেদ এবং মওলুদ এ তিনটি শব্দের আভিধানিক অর্থ নিম্নরূপঃ-
আরবী ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ অভিধান লেসানুল আরব ও বৃহত্তম অভিধান তাজুল আরুছ, কামুছ, মুহকাম, তাহজীব, আছাছ, ছেহাহ ও জওহরী এবং মিছবাহ প্রভৃতি লোগাতে (অভিধানে) বর্ণিত আছে যে, অলীদ, মুওলুদ শব্দের অর্থ নবজাত শিশু। মওলুদুর রিজাল অর্থ মানুষের জন্মকাল, জন্মস্থান ও জন্মদিন ব্যতীত অন্য কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়না। সুতরাং মীলাদুন্নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম বা আগমন কাহিনী ও তৎসংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী আলোচনা করা।
এই মজলিসটি ঈদে মিলাদুন্নবী নামে খ্যাতি অর্জন করেছে। আল্লাহর প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার এ বিশ্ব জগতে আগমন সম্পর্কে সুসংবাদ ও শুভ পদার্পনের কথা পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতে স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজেই বর্ণনা করেছেন-
সুরায়ে তাওবার ১২৮ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-
لقد جاكم رسول من انفسكم عزيز عليه ما عنتم حريص عليكم بالمؤمنين رؤف رحيم
অনুবাদঃ নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট তোমাদের থেকে এমন একজন রাসূল আগমন করেছেন যিনি তোমাদের বিপদাপন্ন হওয়াতে অতিশয় দুঃখিত হন। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী অতিশয় দয়ালু ও করুনাময়।
সুরায়ে বাকারায় ১২নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে-
ربنا وابعث فيهم رسولا منهم يتلو عليهم أياتك ويعلمهم الكتاب والحكمة ويزكيم انك أنت العزيز الحكيم
অনুবাদঃ হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেন ওহে প্রভু! তাঁদের মধ্যে তাদের হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন যিনি আপনার বানীসমূহ তাঁদেরকে পাঠ করে শুনাবেন এবং কিতাব হিকমাত শিক্ষা দিয়ে পবিত্র করবেন। ওহে প্রভূ আপনি অতিশয় পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী।
সুরায়ে ছফ এর ৬ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে-
اذ قال عيس ابن مريم يا بني اسرايئل اني رسول اليكم اليكم مصدقا لما بين يدي من التورة ومبشرا برسول يأتي من بعدي اسمه أحمد فلما جاءهم بالبينات قلوا هذا سحر مبين
অনুবাদঃ যখন হযরত ঈসা (আঃ) বনী ইসরাঈলকে বললেন আমি আল্লাহ তায়ালার রাসূল হিসেবে তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি। তৎসঙ্গে আমার পূর্বে যে তাওরাত এসেছে উহার প্রতি আমার সমর্থন রয়েছে এবং আমার পরে যে রাসূল আসবেন তাঁর নাম হবে আহমদ ঐ রাসূলের সুসংবাদ নিয়ে তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি। আর যখন সে রাসূল তাদের নিকট দলীলসহ আগমন করলেন তখন তারা বলতে লাগলো এটা প্রকাশ্য যাদু।
আসুন আমরা এবার মীলাদ শরীফ সম্পর্কে হাদীস শরীফ হতে তথ্য সংগ্রহ করি:
তিরমিজী শরীফে ২য় খন্ড ২০৪ পৃষ্ঠা মীলাদুন্নবী অধ্যায়ে হযরত মুত্তালিব বিন আব্দুল্লাহ আপন দাদা কায়েস বিন মাখরিমা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন-
باب ما جاء في ميلاد النبي صلي الله عليه وسلم عن المطلب بن عبد الله بن قيس بن مخرمة عن أبيه عن جده قال ولدت أنا ورسول الله صلي الله عليه وسلم عام الفيل قال وسأل عثمان بن عفان قباث بن اشئم احد بني عمربن ليث أنت أكبر أم رسول الله صلي الله عليه وسلم –فقال رسول لله صلي الله عليه وسلم أكبر مني و أن أقدم منه في الميلاد- رواه الترمدي-ج/২ص২০৩
অনুবাদঃ আব্দুল্লার পুত্র মুত্তালিব নিজ দাদা কায়েস বিন মাখরিমা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেছেন আমি ও হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই সালে জন্ম গ্রহণ করেছি। হযরত ওছমান (রাঃ) কিবাছ বিন আশইয়ামকে প্রশ্ন করেন, আপনাদের উভয়ের মধ্যে বয়সে কে বড়? তিনি উত্তরে বলেন বয়সের দিক দিয়ে আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বড় কিন্তু সম্মানে ও মর্যাদার দিক দিয়ে তিনি আমার চেয়ে অনেক বড়।
অত্র হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণিত হলো ছাহাবায়ে কেরাম নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার জন্ম কাহিনী পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করতেন।
বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে-
عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم بعثت م خير قرون بني ادم قرنا فقرنا حتي كنت من القرن الدي منه رواه البخاري
অনুবাদঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন বনী আদমের সর্বোত্তম যুগে আমি প্রেরিত হয়েছি। যুগের পর যুগ অতিক্রমের পর আমি সেই সর্বোত্তম যুগে উপনীত হয়েছি।
মিশকাত শরীফে ৫১৩ পৃঃ বর্ণিত আছে-
عن عرباض بن سارية من رسول الله صلي الله عليه وسلم انه قال اني عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل في طينة وسأخبركم باول امري دعوة ابراهيم وبشارة عيسي ورؤياي امي التي رأت حين وضعتني وقد خرج لها نور اضا لها منه قصور الشام - رواه في شرح السنة
অনুবাদঃ এরবাদ বিন সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট খাতেমুন নাবীয়িন হিসেবে লিখিত ঐ সময় যখন হযরত আদম (আঃ) তার মাটির সাথে সম্পৃক্ত। তোমাদেরকে আমার প্রথম অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করছি। তাহলো আমার জন্য হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর দোয়া, হযরত ঈসা (আঃ) এর সুসংবাদ আর আমার মাতার স্বপ্ন যা তিনি আমার প্রসবকালীন অবস্থায় দেখেছিলেন তখনি তাঁর থেকে এমন এক নূর প্রকাশিত হয়েছে যদ্বরুন সিরিয়ার রাজ প্রাসাদ তার নিকট উদ্ভাসিত হয়।
হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই আগমন দিন উৎযাপন করে মীলাদ কায়েম করেছেন। যেমন মিশকাত শরীফে বর্ণিত আছে-
عن ابي قتادة قال سئل رسول الله صلي الله عليه وسلم عن صوم يوم الاثنين فقال فيه ولدت وفيه انزل
অনুবাদঃ হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সোমবার রোযা রাখা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন ইহা এমন একটি দিন, যে দিন আমি জন্ম লাভ করেছি এবং আমার উপর কুরআন শরীফ নাযিল করা হয়েছে। এ দুটি নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে আমি রোযা রাখি। সুতরাং মিলাদ শরীফ কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
কিয়াম প্রসঙ্গ:
ফরজ কিয়ামঃ ফরজ ও বিতর নামাজে কিয়াম করা ফরজ পবিত্র কুরআনের বাণী- قوموا لله قانتين অর্থাৎ মহান আল্লাহর অনুগত হও চুপ করে দাড়াও।
ওয়াজিব কিয়ামঃ কোন পরিচালক উপবিষ্ট লোকদের কে দাঁড়াতে বললে তখন দাড়ান ওয়াজীব। যেমন পবিত্র কুরআনের বাণী-
واذا قيل لكم تفسحوا في المجالس فامسحوا يفسح الله لكم واذا قيل انشزوا فانشزوا
অর্থাৎ যখন তোমাদের কে কোন দ্বীনী মাহফিলে দাঁড়ানোর জন্য আদেশ করা হয়, তোমরা তৎক্ষণাত দাঁড়িয়ে যাও। এ কিয়াম ওয়াজিব কেননা-
اطاعة اولي الامر واجب
অর্থাৎ শরীয়তের বিরোধী না হওয়া পর্যন্ত আদেশ দাতার হুকুম মান্য করা ওয়াজিব।
সুন্নাত কিয়ামঃ সিজাদায়ে তিলাওয়াতের জন্য কিয়াম করা সুন্নাত, কবর যিয়ারত কালে কিয়াম করা সুন্নাত।
মুস্তাহাব কিয়ামঃ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড ৯৫ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৫৯১ পৃষ্ঠায় হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে হাদীস বর্ণিত-
قال نزل اهل قريظة علي حكم سعد بن معاد فارسل رسول الله صلي الله عليه وسلم الي فاتاه علي حمار فلما دنا قريبا من المسجد قال رسول الله صلي الله عليه وسلم للانصار قوموا لسيدكم اوخيركم –رواه مسلم
অনুবাদঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেছেন বনু কুরাইজা ছা’দ বিন মুয়াজ (রাঃ) এর ফয়সালা মান্য করার শর্তে তাদের দুর্গ হতে নেমে আসে। তখন রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছা’দ বিন মুয়াজকে আনার জন্য পাঠান। ছা’দ বিন মুয়াজ গাধার পিঠে আরোহণ করে যখন মসজিদের নিকটবর্তী হলেন তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদের লক্ষ করে বলেন তোমরা তোমাদের সরদারের সম্মানার্থে দাঁড়াও।
মিশকাত শরীফের ৪০২ পৃঃ এ হাদীসের টীকায় মিরকাত হতে বর্ণিত আছে-
وفي سعد لادلة علي ان قيا م الرء بين يدي الرائس الفاضل والوالي العادل وقيام المتعلم للمعلم مستجب غير مكروه وقال البيهقي هدا القيام يكون علي وجه البر والاكرام كما كان القيام الانصار لسعد وقيام طلحة لكعب
অনুবাদঃ হযরত সা’দ (রাঃ) এর হাদীছ শরীফ হতে প্রমাণিত সম্মানী সরদার ন্যায় বিচারক এবং ওস্তাদের সম্মানার্থে ছাত্রদের এ কিয়াম মুস্তাহাব। মাকরূহ নয়। ইমাম বায়হাকী বলেন ছা’দ বিন মুয়াজের জন্য আনছারদের কিয়াম তালহা (রাঃ) এর কিয়াম কা’ব বিন মালিকের জন্য সম্মানী অর্থাৎ তাজিমী ছিল। এরূপ জমজমের পানি ও অজুর অবশিষ্ট পানি পানের জন্য কিয়াম করা মুস্তাহাব।
সীরাতে হালাবীয়া ১ম খন্ড ১০০ পৃঃ বর্ণিত আছে-
وقد وجد القيام عند دكر اسمه صلي الله عليه وسلم من عالم الأمة ومقتديالأئمة ديناو ورعا الامام تقي الدين السبكي وتابعه علي ذالك مشائخ الاسلام في عصره –فقد حكي بعضهم ان الامام السبكي اجتمع عنده جمع كثير من علماء عصره فأنشد قول البصيري في مدحه صلي الله عليه وسلم لمدح المصطفي-الخط باالدهب علي ورق من خط أحسن من كتب وان تنهض الاشرا ف عند سماعه قياماصفوفا او جثياعلي الركب فعند دالك قيام الامام السبكي رحمه الله وجميع من في المجالس فحصل انس كبير بدالك المجلس مثل ذالك الاقتداء-
অনুবাদঃ হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার প্রশংসামূলক কাছিদা শ্রবনের সময় নেতৃস্থানীয় আলেম ইমামগণের নেতা দ্বীনদারী ও পরহেজগারী সম্পন্ন ব্যক্তি ইমাম তকিউদ্দিন সুবুকী কিয়াম করেছেন। ঐ যামানার মাশায়েখে ইসলাম তার অনুকরণে সকলে কিয়াম করতেন। এ সম্পর্কে জনৈক আলেম ছাহেব বর্ণনা করেছেন একদা ইমাম সুবুকীর দরবারে তৎকালীন বহু বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম সমবেত হন। অতঃপর একজন পাঠক নূর নবীর প্রশংসা ইমাম ছরছরীর ২টি পংতি পাঠ করেন যার অর্থ হলো রোপ্য নির্মিত কাগজের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নবী পাকের উচ্ছাসিত প্রশংসা লিপিবদ্ধ করা এবং তাঁর প্রংশসামূলক কাছীদাহ শ্রবণের সময় ওলামায়ে কেরামের সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া অতীব নগন্য প্রশংসা ও নগন্য সম্মান প্রদর্শন করা বই আর কিছু নয়। ইহা শ্রবন করার সাথে সাথে ইমাম সবুকী ও যারা ঐ মাহফিলে ছিলেন সকলে নবী পাকের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে গেলেন। এতে নূর নবীর প্রতি বিরাট আসক্তি পরিলক্ষিত হয়েছিল এসব ইমামের অনুকরণ ও অনুসরণই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
মোল্লা আলী ক্বারী মিশকাত শরীফের শরাহ মিরকাতে লিখেছেন-
وقد جرت عادة كثير من الناس اذا سمعوا بدكر وضعه صلي الله وسلم ان يقوموا تعظيما له صلي الله عليه وسلم وقد استخرج له الحافظ ابن حجر العسقلاني اصلا من السنة وكذا الحافظ جلال الدين السيوطي رحمه الله رد علي الفاكهاني المالكي في قوله ان عمل المولد بدعة مذمومة – وقد ثبت عن ابن العباس رضي الله عنهما انه يحدث وقائع ولادته صلي الله عليه وسلم فاذا جاء البي صلي الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتي وعن ابي درداء رضي الله عنه انه مر عليه النبي صلي الله عليه وسلم وكان يعلم وقائع ولادته صلي الله عليه وسلم لأبنائه فيبشر به ويقول هدا اليوم هذا اليوم فقال صلي الله عليه وسلم ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة يبشرون لك ومن فعل –فعلت
অগণিত মুসলমানদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যে, যখন তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার মাতৃগর্ভ হতে ভূমিষ্ট হওয়ার আলোচনা শুনে তখন তাঁর সম্মানার্থে কিয়াম করেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী ও হাফেজ জালাল উদ্দিন সুয়ুতী এ আমলের মূল দলীল সুন্নাত হতে বের করেছেন।
ইমাম তাজউদ্দিন ফাকেহানীর মন্তব্য মীলাদ নিকৃষ্ট বিদআত। আল্লামা ফাকেহানীর এ মন্তব্য কে উভয়ে কঠোর ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আরো বলেছেন যে, আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) হযরত রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম কাহিনী জনসম্মুখে বর্ণনা করতেছিলেন এমন সময় হুজুর তথায় হাজির হয়ে বললেন তোমরা যারা এ আলোচনায় শরীক হয়েছ তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত হালাল হয়ে গেছে। অনুরূপ হযরত আবু দারদা (রাঃ) তাঁর ছেলেদেরকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আর্বিভাব কাহিনী শিক্ষা দিচ্ছিলিনে ও সুসংবাদ ঘোষণা করতেছিলেন এবং বলতেছিলেন এ দিনটি ইত্যবসরে হুজুর তথায় তাশরীফ এনে বললেন হে আবু দারদা শুন মহান আল্লাহ তোমার জন্য রহমতের দরজাগুলো খুলে দিয়েছেন। সকল ফিরিশতা তোমাকে সুসংবাদ দিতেছেন এভাবে তোমার ন্যায় যারা আমার জন্ম উৎসব পালন করবে তাদের জন্য আল্লাহ পাক রহমতের দ্বার খুলে দেবেন ও ফিরিশতারা তাদেরকে খোশ খবর দিতে থাকবেন।
وفي جواهرالبحار جرت العادة بانه اذا ساق الواعظ مولده صلي الله عليه وسلم ذكرواو وضع امه قام الناس عند ذالك تعظيما له صلي الله عليه وسلم وهدا القيام بدعة حسنة ليما فيها من اظهارالفرح والسرور والتعظيم بل مستحبة لمن غلب عليه الحب والاجلال لهدا النبي صلي الله عيه وسلم وقد وجد القيام عند ذكر اسمه الشريف من عالم الامة ومقتدي الائمة دينا ورعا الهمام تقي الدين السبكي وتابعه علي ذالك مشائخ الاسلام في عصره وقال في انسان العيون يكفي مثل ذالك في الاقتدا- اقول لم تنزل عليه المواظبة من العلماء الاعلام والمشائخ الكرام
অনুবাদঃ জাওয়াহিরুল বিহার কিতাবে লিখিত আছে মুসলমানদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে যে যখন ওয়ায়েজীন অনুষ্ঠানে নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতৃগর্ভ হতে ভূমিষ্ট হওয়ার কাহিনী ব্যক্ত করেন তখন তাঁর তাজীমাথ্যে উপস্থিত জনগণ কিয়াম করেন। এ কিয়াম হচ্ছে উত্তম বিদায়াত কেননা কিয়াম দ্বারা হুজুরের জন্মোৎসবের খুশী প্রফুল্লতা ও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। যে ব্যক্তির হৃদয়ে নূর নবীর প্রতি মহব্বত ও আসক্তি প্রবল আকার ধারণ করছে তার জন্য কিয়াম করা মুস্তাহাব ইমামদের নেতা বিশিষ্ট পরহেজগার ও খোদভীরু আল্লামা ইমাম তকীউদ্দিন সুবুকী নূর নবীর নাম মোবারক শ্রবণ করা মাত্র দাঁড়িয়ে যেতেন। ইনসানুল উয়ুন কিতাবের অনুকরণই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ কিয়াম সম্পর্কে এরপরে আর কোন দলীল তালাশ করার প্রয়োজন নাই।
সুতরাং মিলাদ মাহফিল স্বয়ং সাহাবীগণ উদযাপন করেছেন এবং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হয়ে মাহফিলকারীদের জন্য সুসংবাদ প্রদান করেছেন। তাছাড়া খোলাফায়ে রাশেদীনে মীলাদুন্নবী মাহফিলের ফজিলত ও বর্ণনা করেছেন। তাবেঈন যুগের বুযুর্গানে দ্বীন মিলাদ মাহফিলের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন। আল্লামা ইবনে দাহইয়া কৃত আত তানভীর আল্লামা ইবনে হাজার হায়তানী মক্কী (রঃ) কৃত সাবিলুল হুদা নামক গ্রন্থদ্বয় সারা বিশ্বে পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচিত। এখন থেকে প্রায় ৮০০ ও ৫০০ বৎসর পূর্বে এগুলো রচিত হয়।
অতএব মিলাদ শরীফ স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সমর্থিত এবং খোলাফায়ে রাশেদীন কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে যুগে যুগে এ প্রসংগে বহু কিতাব লিখা হয়েছে এরপরও যারা মীলাদুন্নবী তথা মীলাদ কিয়ামের বিরোধীতা করে তারা হয় ঈমানে অন্ধ নতুবা নবী ও ছাহাবী বিদ্বেষী বা মুনাফিক বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন মীলাদ ও কিয়ামের বিধান তাফসীরে রুহুল বয়ান ৯ম খন্ড ৫৬/৫৭ পৃঃ আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া, আত তানভীর, নুরুদ্দিন হালাবীর ইনসানুল উয়ুন, জাওয়াহিরুল বিহার, আল্লামা ইবনে আসকালানী, আল্লামা ইবরাহীম হালাবীর সিরতে হালাবী ইমাম আবু শামা, ইমাম বরজাঞ্জী, শামসুদ্দিন ইবনে জাজরী ও ইবনে হাজার হায়তামীর আন নেয়মাতুল কেবরা ইত্যাদি।
মীলাদ কিয়াম সম্পর্কে বিশ্বের ওলামায়ে কেরামের মতামত ও আমল সন্নিবেশীত করা হলো।
মীলাদ কিয়াম সম্পর্কে বিশ্বের ওলামায়ে কেরামের মতামত ও আমল
বর্তমান যুগে কিছু সংখ্যক আলেম ছাহেবান মীলাদ কিয়াম সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের কটুক্তি করে ধর্মপ্রাণ সরল মুসলমানদেরকে বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ পাক এ ধরণের ফাসাদ থেকে সকলকে হেফাজতে রাখুন এবং সঠিক পথ ও মত বুঝার তাওফীক দিন। যে সকল ১ম শ্রেনীর ওলামা, আয়েম্মা, আওলিয়ায়ে কিরাম প্রচলিত মীলাদ কিয়ামকে সমর্থন করতঃ উহাকে খায়ের বরকত ও ছাওয়াবের অছীলা মনে করে উহার আমল করতেন এবং উহার সমর্থনে কুরআন, হাদীছ, ইজমা কিয়াস ভিত্তিক বহু প্রমাণ্য কিতাব রচনা করেছেন তাঁদের কিছু সংখ্যক নাম নিম্নে প্রদত্ত হলো।
১. হযরত আল্লামা মুফতি মোহাম্মদ আমীন (র:) মুফতি হানাফী, মদীনা শরীফ।
২. হযরত আল্লামা মুফতী জাফর হোসাইন (র:) মুফতী শাাফেয়ী মদীনা শরীফ।
৩. হযরত আল্লামা মুফতী আবদুজ জাব্বার (র:) মুফতী হাম্বলী মদীনা শরীফ।
৪. হযরত আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ শরকী (র:) মুফতী মারেকী মক্কা শরীফ।
৫. হযরত ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি শাফেয়ী (র:) (ওফাত ৯১০ হিজরী)
৬. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (র:) বুখারী শরীফের অন্যতম ব্যখ্যাকার। (ওফাত ৮৫২ হিজরী)
৭. ইমাম শামছুদ্দিন মুহাম্মদ ছাখাবী (র:) হযরত মোল্লা আলী কারী (র:) এর সম্মানিত ওস্তাদ।
৮. হযরত আল্লামা মোল্লা আলী কারী (র:) মেশকাত শরীফের শরাহ মেরকাতের প্রনেতা। (ওফাত ১০১৪ হিজরী)
৯. হযরত শাহ আব্দুল আজীজ (র:) মুহাদ্দিস দেহলভী পাক ভরত, উপমহাদেশের মুহাদ্দিছীনদের ওস্তাদ চার তরীকার পীরনে পীর। তিনি প্রতি বৎসর নিজ বাড়ীতে দুইবার প্রচলিত মিলাদ মাহফিল করতেন।
১০. হযরত মাওলানা আলী ইবনে ইব্রাহিম (রঃ) সীরাতে হলবীয়ার লেখক।
১১. হযরত ইমাম বরযেনজী (রঃ) যিনি প্রচলিত মীলাদ কিয়ামের সমর্থনে কিতাব লিখেন।
১২. হযরত মাওলানা শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান (রঃ) মুফতি হানাফী মক্কা শরীফ।
১৩. হযরত মাওলানা শায়খ খাল্লাফ (রঃ) মুফতীয়ে হাম্বলী মক্কা শরীফ।
১৪. হযরত মাওলানা শায়খ মুহম্মদ ইবনে হোমায়েদ (রঃ) মুফতি শায়েফী মক্কা শরীফ।
১৫. হযরত মাওলানা শায়খ হোসাইন ইবনে ইব্রাহিম (রঃ) মুফতি মালেকী, মক্কা শরীফ।
১৬. হযরত ইমাম কাস্তলানী (রঃ) বুখারী শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যখ্যাকার।(ওফাত ৯২৩ হিঃ)
১৭. হযরত হাজী এমদাদ উল্লাহ (রঃ) মোহাজেরে মক্কী দেওবন্দী ওলামায়ে কিরামের পীরানে পীর, তিনি তার এমদাদুল মুশতাক কিতাবে লিখেছেন-
আলেমগন (প্রচলিত) মীলাদ ও কিয়াম নিয়ে ঝগড়া করেছেন এবং বহু আলেম মীলাদ জায়েয বলেছেন। এমতাবস্থায় নিষেধকারীগণের এত বাড়াবাড়ি করার কোন কারণই থাকতে পারেনা। মক্কা মদীনা শরীফের হক্কানী ওলামায়ে কেরামের অনুসরণ করাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। অবশ্য কোয়ামের সময় নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপস্থিতিকে মেনে নেয়া ও হয় তবুও তাতে কোন দোষ নেই। কারণ জড়জগতে স্থান কালের সাথে সীমাবদ্ধ বটে কিন্তু আত্মিক জগত স্থান ও কালের কবল থেকে পবিত্র। অতএব নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মীলাদ মাহফিলে হাযির হওয়া মোটেও অসম্ভব নয়। জনাব মরহুম হাজী এমদাদ উল্লাহ মোহাজেরে মক্কী সাহেব তাঁর প্রণীত ফয়সালায়ে হাফতে মাসায়েলে কিতাবেও মীলাদ কিয়াম মাহফিলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাজির হওয়ার কথা স্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করেছেন।
১৮. হযরত মাওলানা আশ্রাফ আলী থানবী এর ওস্তাদ ও পীর হাজী এমদাদ উল্লা মোজেরে মক্কী (রঃ) বলেছেন- মীলাদ মাহফিলকে অসংখ্য বরকতের অছীলা মনে করে আমি উহা প্রতি বছর বহুবার পালন করে থাকি এবং কিয়াম কালিন অশেষ প্রশান্তি ও তৃপ্তি অনুভব করে থাকি।
১৯. হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলভী মক্কী (রঃ) প্রচলিত মীলাদ ও কিয়ামকে অতি উত্তম অনুষ্ঠান বলে আমল করতেন।
২০. হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল হক এলাহাবাদী (রঃ)।
২১. হযরত ইমাম জযরী (রঃ) শাফেয়ী।
২২. হযরত ইমাম মুহাদিদ্স হাফেজ আবু মাহাম্মাদ আব্দুর রহমান ইবনে ইসমাঈল ওরফে আবু শামাহ শাফেয়ী (রঃ) ইমাম নববীর ওস্তাদ
২৩. মাজমাউল বেহার প্রণেতা আল্লামা তাহের জালাল (রঃ)।
২৪. আল্লামা ইবনে জওজী (রহঃ) তিনি বলেন মদীনা সিরিয়া, মিশর, ইয়ামেন প্রভৃতি আরব রাজ্যের সকল ওলামা প্রচলিত মীলাদ মাহফিল জায়েযের ফতোয়া দিয়েছেন।
২৫. হযরত মুজাদ্দেদে আলফেছানী (রঃ)।
২৬. ওস্তাদুল মুহাদ্দিছীন হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিছে দেহলভী (রহঃ) বলেছেন আমার আব্বা হযরত শাহ আব্দুর রহীম (রহঃ) আমার নিকট ফরমায়েছেন যে, আমি প্রতি বছর নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মীলাদ অনুষ্ঠানে তাঁর তাজীমার্থে জেয়াফাতের আয়োজন করতাম। এক বছর দুর্ভাগ্যবশত ছোলা বুট ভাজা ব্যতিত আর কিছুই ছিলনা অগত্যা উহাই মীলাদ মাহফিলে জনতার মধ্যে বিতরণ করলাম। অতঃপর নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নযোগে দেখলাম এবং তাঁর সামনে আমার দেয়া ছোলা বুট রক্ষিত আছে দেখে খুশী হলাম।
২৭. মিয়াতে মাসায়েল কিতাবের প্রণেতা হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ইছহাক দেহলভী (রঃ)
২৮. আল্লামা মুফতী ছা’দুল্লা (রহঃ)
২৯. আল্লামা ছদরুদ্দিন মরহুম শাফেয়ী (রহঃ)
৩০. হযরত শাহ আব্দুর রহীম (রহঃ) দিল্লী
৩১. হযরত আল্লামা হোছাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) দেওবন্দী।
৩২. মুফতী আল্লামা আযিযুল হক দেওবন্দী (রহঃ)
৩৩. আল্লামা মাহমুদ হাছান দেওবন্দী (রহঃ)
৩৪. আল্লামা আনোয়ার শাহ দেওবন্দী (রহঃ)
৩৫. আল্লামা আহমদ দেওবন্দী (রহঃ)
৩৬. আল্লামা আজীজুর রহমান দেওবন্দী (রহঃ)
৩৭. হযরত মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী (রহঃ)
৩৮. হযরত সুফী ফতেহ আলী (রহঃ)
৩৯. হযরত সুফী নূর মোহম্মদ নিজামপুরী (রহঃ)
৪০. হযরত ছালামত উল্লাহ কানপুরী (রহঃ)
৪১. ফতোয়ায়ে এমদাদীয়ায় বর্ণিত আছে যে, নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার জীবনের বিভিন্নমুখী আলোচনা অনুষ্ঠান যেমন জায়েয বরং মুস্তাহাব অনুরূপ শরীয়তের খেলাফ কর্ম কান্ড হতে প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠান প্রচলিত কেয়াম কোন ক্রমেই নাজায়েয হতে পারেনা। এই ফতোয়া খানা দিয়েছেন দেওবন্দ মাদ্রাসার মুফতি হযরত মাওলানা আযিযুল হক (রহঃ) ছাহেব।
৪২. হযরত মাওলানা হাবীবুর রহমান (রহঃ)
৪৩. হযরত মাওলানা আব্দুল হাই (রহঃ) লখনভী
৪৪. হযরত মাওলানা মুজাফফর হোসাইন (রহঃ) সাহারান পুরী
৪৫. হযরত মাওলানা মুফতি শফী ছাহেব (রহঃ)
৪৬. হযরত মাওলানা খলিল আহমদ দেওবন্দী (রহঃ)
৪৭. হযরত মাওলানা শায়খ মজদুদ্দীন সিরাজী (রহঃ)
মিশর জামে আজহার হতে শিক্ষা প্রাপ্ত প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কেরাম যারা মীলাদ কিয়াম করেছেন তাঁদের তালিকা:
১. হযরত আল্লামা কামাল উদ্দিন (রহঃ) লাকসাম, কুমিল্লা।
২. হযরত আল্লামা আলাউদ্দিন আজহারী (রহঃ), পাচথুরী, বরুড়া, কুমিল্লা।
৩. হযরত আল্লামা ফজলুল করীম মিশরী, রায়পুর, নোয়াখালী।
দেওবন্দ মাদ্রাসা হতে শিক্ষা প্রাপ্ত প্রখ্যাত ওলামায়ে কিরাম যারা মীলাদ কিয়াম করেছেন তাঁদের তালিকা:
১. শায়খুল হাদীস আল্লামা নিয়াজ মাখদুম তর্কিস্থানী (রহঃ), হেড মুহাদ্দিস, ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসা।
২. শায়খুল হাদীস আল্লামা আবদুস সাত্তার বিহারী (রহঃ), মুহাদ্দিস, ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসা।
৩. পীরে কামেল মুফতি আব্দুল লতিফ (রহঃ), (গোল্ড মেডালিষ্ট), মীরশরাই, চট্টগ্রাম।
৪. শায়খুল হাদীস আল্লামা আঃ গণি সাহেব (রহঃ) অধ্যক্ষ সুফিয়া নুরীয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
৫. শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতি সাইয়্যেদ মুনাজের আজম আযীযুল হক (রহঃ), শেরে বাংলা হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
৬. শায়খুল হাদীস হাদীয়ে দ্বীন ও মিল্লাত আল্লামা নুরুল ইসলাম হাশেমী, চট্টগ্রাম।
৭. হাফেজে বুখারী শরীফ আল্লামা ওয়াজিহুল্লাহ সন্দীপি, চট্টগ্রাম।
৮. মুনাজেরে আহলে সুন্নাত হযরত আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ওসমান গণি (রহঃ)
৯. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈদ হোসাইন (রহ) লালমাই, কুমিল্লা।
১০. শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহঃ)
১১. পীরে কামেল আল্লামা আব্দুল লতিফ ফুলতলী ছাহেব ক্বিবলাহ (রহঃ) সিলেট।
১২. পীরে কামেল হযরত মাওলানা আঃ লতিফ আমতলী, বাগেরহাট।
ভারতে রামপুর আলীয়া মাদ্রাসা হতে শিক্ষা প্রাপ্ত প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কিরাম যারা মীলাদ কিয়াম করেছেন তাঁদের তালিকা:
১. পীরে কামেল হযরত মাওলানা আঃ রহমান (রহঃ) বিজকরা, কুমিল্লা।
২. পীরে কামেল হযরত মাওলানা ওয়াজ উদ্দিন (রহঃ) রামপুরী, চাঁদপুর।
৩. আল্লামা সুফী ওছমান গণি (রহঃ) হেড মুহাদ্দিস ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা।
৪. আল্লামা আঃ লতিফ ছাহেব, বুরবুরিয়া বি বাড়ীয়া।
৫. হযরত মাওলানা সাইয়্যেদ হাছান আলী গিলাতলা, কুমিল্লা।
৬. পীরে কামেল হযরত মাওলানা আজগর হোসাইন, আড়াইবাড়ী, কুমিল্লা।
৭. শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ মোস্তফা রামের বাগ (গোল্ড মেডালিষ্ট) লাকসাম, কুমিল্লা।
৮. হযরত আল্লামা মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল করিম, রূপসা, চাঁদপুর।
কলকাতা আলিয়া ও ঢাকা মাদ্রাসা বোর্ড হতে সনদ প্রাপ্ত প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কিরাম যারা মীলাদ কিয়াম করেছেন তাঁদের তালিকা:
১. হযরত আল্লামা মুফতি সাইয়েদ আমীমুল এহসান, গ্রেন্ট মুফতি বাংলাদেশ, খতিব বাইতুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা।
২. হযরত আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ হোসাইন, প্রিন্সিপাল, সিলেট গভঃ আলিয়া মাদ্রাসা।
৩. মুফতি মাওলানা হরমজুল্লাহ সিলেট, গভঃ আলিয়া মাদ্রাসা।
৪. মুফতি মাওলানা আব্দুল আউয়াল ফখরে বাংলা (গোল্ড মেডালিষ্ট) লাকসাম।
৫. মুফতি আল্লামা আব্দুল গফুর (গোল্ড মেডালিষ্ট) চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা।
৬. মুফতি মাওলানা হাবীবুর রহমান গাজীপুর, চাঁদপুর।
৭. মুফতি আল্লামা তাজম্মুল হোসাইন, অধ্যক্ষ ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসা।
৮. হযরত মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ শিরাজুল হক ছাহেব, ছোট মানিকা ভোলা।
৯. হযরত মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ আব্দুল কাদের অধ্যক্ষ ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসা।
১০. হযরত মাওলানা আযীযুর রহমান নেছরাবাদী উপাধ্যক্ষ ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসা।
১১. উসতাজুল ওলামা হযরত মাওলানা আঃ মজীদ ছাহেব (রঃ) অধ্যক্ষ গাজীমুড়া লাকসাম।
১২. হযরত আল্লামা মুহাম্মদ আহমদ ছাহেব (রঃ) গাজীমুড়া, লাকসাম।
১৩. মুফতি মাওলানা মুফতি হাবীবুর রহমান ছাহেব মন্ডলী, কুমিল্লা।
১৪. হযরত মাওলানা মুফতি মাকসুদুর রহমান সিংরাইল (গোল্ড মেডালিষ্ট), কুমিল্লা।
১৫. শায়খুল হাদিস হযরত আল্লামা ফজলুল করীম নকশবন্দী, দালাল বাজার লক্ষীপুর।
১৬. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ এনায়েতুল্লাহ বদরপুর, কুমিল্লা।
১৭. হযরত মাওলানা মুহাঃ আলী হোসাইন, জঙ্গলপুর, কুমিল্লা।
১৮. শায়খুল হাদিস মুহা রফিকুল্লাহ শাকতলী, কুমিল্লা।
১৯. মুফতি মাওলানা মুহাঃ আব্দুল হাকীম নাটোরপাড়া, কুমিল্লা।
২০. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ নোয়ামতুল্লাহ, নাথেরপেটুয়া, কুমিল্লা।
২১. হযরত মাওলানা হাবীব উল্যা হাজেরা মুড়ী, কুমিল্লা।
২২. হযরত আল্লামা মুহাম্মদ বদিউল আলম (গোল্ড মেডালিষ্ট), কুমিল্লা।
২৩. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ওবায়দুল হক, অধ্যক্ষ ফেনী আলিয়া মাদ্রাসা।
২৪. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ মুজাফফর আহম্মদ অধ্যক্ষ নেছারিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
২৫. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ একরামুল হক লতিফী, মীরশরাই।
২৬. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান অধ্যক্ষ সোনাকান্দা আলিয়া মাদ্রাসা।
২৭. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আহমাদুল্লাহ শরীয়তপুর, মাদারীপুর।
২৮. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হালিম, অধ্যক্ষ ধামতী আলিয়া মাদ্রাসা।
২৯. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল আমীন আতীকী, নোয়াখালী।
৩০. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আঃ ছোবহান (শহরকুতুব) ইসলামিয়া আলীয়া মাদ্রাসা, নোয়াখালী।
৩১. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ছালেহ আহমদ সোনাইমুড়ী আলীয়া মাদ্রাসা, নোয়াখালী।
৩২. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জলিল অধ্যক্ষ মুহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া আলীয়া মাদ্রাসা, ঢাকা।
৩৩. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আঃ রব খান, অধ্যক্ষ ছারছীনা আলীয়া মাদ্রাসা।
৩৪. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আমজাদ হোসাইন অধ্যক্ষ ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসা।
৩৫. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ কাফিল উদ্দিন সালেহী অধ্যক্ষ নেছারিয়া আলীয়া মাদ্রাসা, ঢাকা।
৩৬. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ফয়জুল বারী, উপাধ্যক্ষ, সীতাকুন্ড আলিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
৩৭. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ছালেহ অধ্যক্ষ আলিয়া মাদ্রাসা খুলনা।
পাক ভারত উপমহাদেশের পীর মাশায়েখ যারা মীলাদ কিয়াম করেছেন তাঁদের তালিকা:
১. ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত শাহ আহমদ রেজা খাঁন বেরলী (রহ) ভারত।
২. ছিরিকুটি, ছহরভী, শরীফের মাশাইখিনে কেরাম।
৩. সিরহ্নিদ শরীফের মাশাইখিনে কেরাম।
৪. ফুরফুরা শরীফের মাশাইখিনে কেরামের মূলাংশ।
৫. জৈনপুরী মাশাইখিনে কেরামের মূলাংশ।
৬. ছারছীনা দরবার শরীফের মাশাইখিনে কেরাম।
৭. হযরত মাওলানা ওকার উদ্দিন বেরেলী (রঃ)
৮. শায়খুর হাদীছ মুফতি সাইয়েদ আহমদ কাজেমী (রঃ) করাচী।
৯. শায়খ শাহ আহমদ ইয়ার খান বেরেলী (রঃ) শরীফ পাকিস্তান।
১০. হযরত মাওঃ খাজা আহমদ শাহ ইসলামপুর, গাছতলা দরবার শরীফ, চাঁদপুর।
১১. হযরত মাওঃ সাঈদুর রহমান মুজাদ্দেদী নকশেবন্দী, ঘনিয়া দরবার শরীফ, ফরিদগঞ্জ।
১২. পীরে তরিকত হযরত মোল্লা কাজিমউদ্দিন (রঃ) কালিয়াপুরী, লাকসাম।
১৩. পীরে কামেল আলী আশ্রাফ চাঁপুরী (রঃ) দোঘাইয়া চাঁদপুর লাকসাম।
১৪. পীরানে পীর গাউছে জামান শাহ মোঃ আব্দুছ ছোবহান আলকাদেরী, শাহপুর, কুমিল্লা।
১৫. মুনাজিরে আজম রাহনুমায়ে শরীয়ত ওয়াত তরীকত আল্লামা আবু নছর মোহাম্মদ আবিদ শাহ মুজাদ্দেদী আল মাদানী (রহঃ) হাজীগঞ্জ।
১৬. পীরে তরিকত হযরত আল্লামা আলহাজ্ব মোঃ আব্দুছ ছোবহান আলকাদেরী (রহঃ) বিঘা, নোয়াখালী। (আমার পীর ও মুর্শিদ কিবলা মাদ্দা জিল্লুল হুল আলী)
একটি বিশেষ অনুরোধ:
মহান আল্লার প্রিয় হাবীব আমাদের আকা ও মাওলা হযরত মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে বিতর্কে জড়ানো কোনো অবস্থায়ই উচিৎ নহে কেননা তিনি আমাদের ঈমান। তাঁর সম্পর্কে যিনি যতটুকুন বুঝ বা জ্ঞান লাভ করেছেন তা আসলে মহা সমুদ্র হতে বিন্দু মাত্র। সুতরাং তাঁর শানে যেন তর্ক বহছে অবতীর্ণ না হোন কারন তর্ক বহছে জড়িত হয়ে পড়লে স্বভাবতঃ মানুষের মধ্যে জেদ এসে যায়। এমন জেদও রাগের মাথায় অনেক সময় সীমাতিক্রম করে শানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যপারে এমন কোনো অবাঞ্চিত অশোভনীয় উক্তি মুখে এসে যেতে পারে। যার কারনে অনেক সময় ঈমান আমাল সমূহ বরবাদ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং এ ব্যপারে অধিক জ্ঞানার্জন করার চেষ্টা করাই ঈমানদার বুদ্ধিমানদের কাজ হবে।
প্রাপ্তিস্থান ও প্রতিনিধিগণ
রহিমা নগর, কচুয়া, চাঁদপুর
মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
পাটোয়ারী ভেরাইটিজ স্টোর
রহিমা নগর মধ্য বাজার
মোবাইল ০১৮১৭৫৮৮০৪৮
হাজিগঞ্জ, চাঁদপুর
সাজ্জাদ হোসেন (ফারুক)
ফটো ফেশান কালার ল্যাব
করিম প্লাজা (২য় তলা) পশ্চিমপার
০১৭২০৫০৯৯১৩
হাজিগঞ্জ, চাঁদপুর
মুহাম্মদ উবায়দুল হক
মোম্বাইশ আড্ডা, বরুড়া
০১৮২২৫২৩৪৪৪
উঘারিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
ও আলা হযরত ইসলামি পাঠাগার (শাহরাস্তি, চাঁদপুর)
মুহাম্মদ আবু জাফর
০১৯২০৫৬৪৪৬৩
লক্ষ্মীপুর চিশতিয়া সাইফিয়া দরবার শরীফ
লক্ষ্মীপুর সদর লক্ষ্মীপুর
কালিয়াপাড়া, শাহরাস্তি, চাঁদপুর
মু. মনির হোসেন
গাউসিয়া মাইক সার্ভিস
কালিয়াপাড়া পশ্চিম বাজার
০১৮১৮৯৫২০৭৫
মুজাফফরগঞ্জ, লাকসাম
মু. নুরে আলম নূরজাহান হোটেল
মুদ্দাসরগঞ্জ পূর্ব বাজার
০১৭৩১৬৫১৬৪৩
শাহ্পুর দরবার শরীফ, কুমিল্লা
সোবহানীয়া মুহাম্মদীয়া কুতুবখানা
পোঃ শাহ্পুর দরগা শরীফ
আদর্শসদর, কুমিল্লা
০১৭১৫৭৩৭০২৫
মুড়াগাঁও, শাহরাস্তি, চাঁদপুর
মাও. আব্দুল আউয়্যাল
০১৮২৪৮৪৪৩২৪
সাওয়ালপুরী দরবার শরীফ, নোয়াখালী
কেশারপাড় সেনবাগ নোয়াখালী
মাও. বিছমিল্লাহ আল-ক্বাদেরী
০১৭২৬৮২২৭৫০
কুচাইতলী, কুমিল্লা
মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার
পশ্চিম কুচাইতলী, কুমিল্লা
০১৭৩৩৭০১৯২৭
মোগলটুলি, কুমিল্লা
মুহাম্মদ কাসওয়া
০১৯১১১৯১৯৫৯
মাও. মুহাম্মদ ওসমান গণি আল-ক্বাদেরী
সাংগঠনিক সম্পাদক
হাফেজ মাও. রুহুল আমিন আল-ক্বাদেরী
প্রচার সম্পাদক
মুহাম্মদ কাসওয়া (জিসান)
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক
মাও. আলাউদ্দিন আল-ক্বাদেরী
দপ্তর সম্পাদক
মাও. শামছুদ্দোহা বারী আল-ক্বাদেরী
মিলাদ ও কিয়ামের ফতোয়া
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতি অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুর রব আল-ক্বাদেরী
প্রশ্ন: মিলাদ কিয়াম ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কতুটুকু বৈধ? সাহাবা, তাবেয়ীন ও সালফে সালেহীন কর্তৃক মিলাদ কিয়াম পালনের প্রমাণ আছে কি?
মুহাম্মদ দিদারুল ইসলাম (বি.এ. অনার্স, গণিত বিভাগ), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা।
মিলাদ, মওলেদ এবং মওলুদ এ তিনটি শব্দের আভিধানিক অর্থ নিম্নরূপঃ-
আরবী ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ অভিধান লেসানুল আরব ও বৃহত্তম অভিধান তাজুল আরুছ, কামুছ, মুহকাম, তাহজীব, আছাছ, ছেহাহ ও জওহরী এবং মিছবাহ প্রভৃতি লোগাতে (অভিধানে) বর্ণিত আছে যে, অলীদ, মুওলুদ শব্দের অর্থ নবজাত শিশু। মওলুদুর রিজাল অর্থ মানুষের জন্মকাল, জন্মস্থান ও জন্মদিন ব্যতীত অন্য কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়না। সুতরাং মীলাদুন্নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম বা আগমন কাহিনী ও তৎসংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী আলোচনা করা।
এই মজলিসটি ঈদে মিলাদুন্নবী নামে খ্যাতি অর্জন করেছে। আল্লাহর প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার এ বিশ্ব জগতে আগমন সম্পর্কে সুসংবাদ ও শুভ পদার্পনের কথা পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতে স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজেই বর্ণনা করেছেন-
সুরায়ে তাওবার ১২৮ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-
لقد جاكم رسول من انفسكم عزيز عليه ما عنتم حريص عليكم بالمؤمنين رؤف رحيم
অনুবাদঃ নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট তোমাদের থেকে এমন একজন রাসূল আগমন করেছেন যিনি তোমাদের বিপদাপন্ন হওয়াতে অতিশয় দুঃখিত হন। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী অতিশয় দয়ালু ও করুনাময়।
সুরায়ে বাকারায় ১২নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে-
ربنا وابعث فيهم رسولا منهم يتلو عليهم أياتك ويعلمهم الكتاب والحكمة ويزكيم انك أنت العزيز الحكيم
অনুবাদঃ হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেন ওহে প্রভু! তাঁদের মধ্যে তাদের হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন যিনি আপনার বানীসমূহ তাঁদেরকে পাঠ করে শুনাবেন এবং কিতাব হিকমাত শিক্ষা দিয়ে পবিত্র করবেন। ওহে প্রভূ আপনি অতিশয় পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী।
সুরায়ে ছফ এর ৬ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে-
اذ قال عيس ابن مريم يا بني اسرايئل اني رسول اليكم اليكم مصدقا لما بين يدي من التورة ومبشرا برسول يأتي من بعدي اسمه أحمد فلما جاءهم بالبينات قلوا هذا سحر مبين
অনুবাদঃ যখন হযরত ঈসা (আঃ) বনী ইসরাঈলকে বললেন আমি আল্লাহ তায়ালার রাসূল হিসেবে তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি। তৎসঙ্গে আমার পূর্বে যে তাওরাত এসেছে উহার প্রতি আমার সমর্থন রয়েছে এবং আমার পরে যে রাসূল আসবেন তাঁর নাম হবে আহমদ ঐ রাসূলের সুসংবাদ নিয়ে তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি। আর যখন সে রাসূল তাদের নিকট দলীলসহ আগমন করলেন তখন তারা বলতে লাগলো এটা প্রকাশ্য যাদু।
আসুন আমরা এবার মীলাদ শরীফ সম্পর্কে হাদীস শরীফ হতে তথ্য সংগ্রহ করি:
তিরমিজী শরীফে ২য় খন্ড ২০৪ পৃষ্ঠা মীলাদুন্নবী অধ্যায়ে হযরত মুত্তালিব বিন আব্দুল্লাহ আপন দাদা কায়েস বিন মাখরিমা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন-
باب ما جاء في ميلاد النبي صلي الله عليه وسلم عن المطلب بن عبد الله بن قيس بن مخرمة عن أبيه عن جده قال ولدت أنا ورسول الله صلي الله عليه وسلم عام الفيل قال وسأل عثمان بن عفان قباث بن اشئم احد بني عمربن ليث أنت أكبر أم رسول الله صلي الله عليه وسلم –فقال رسول لله صلي الله عليه وسلم أكبر مني و أن أقدم منه في الميلاد- رواه الترمدي-ج/২ص২০৩
অনুবাদঃ আব্দুল্লার পুত্র মুত্তালিব নিজ দাদা কায়েস বিন মাখরিমা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেছেন আমি ও হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই সালে জন্ম গ্রহণ করেছি। হযরত ওছমান (রাঃ) কিবাছ বিন আশইয়ামকে প্রশ্ন করেন, আপনাদের উভয়ের মধ্যে বয়সে কে বড়? তিনি উত্তরে বলেন বয়সের দিক দিয়ে আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বড় কিন্তু সম্মানে ও মর্যাদার দিক দিয়ে তিনি আমার চেয়ে অনেক বড়।
অত্র হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণিত হলো ছাহাবায়ে কেরাম নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার জন্ম কাহিনী পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করতেন।
বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে-
عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم بعثت م خير قرون بني ادم قرنا فقرنا حتي كنت من القرن الدي منه رواه البخاري
অনুবাদঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন বনী আদমের সর্বোত্তম যুগে আমি প্রেরিত হয়েছি। যুগের পর যুগ অতিক্রমের পর আমি সেই সর্বোত্তম যুগে উপনীত হয়েছি।
মিশকাত শরীফে ৫১৩ পৃঃ বর্ণিত আছে-
عن عرباض بن سارية من رسول الله صلي الله عليه وسلم انه قال اني عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل في طينة وسأخبركم باول امري دعوة ابراهيم وبشارة عيسي ورؤياي امي التي رأت حين وضعتني وقد خرج لها نور اضا لها منه قصور الشام - رواه في شرح السنة
অনুবাদঃ এরবাদ বিন সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট খাতেমুন নাবীয়িন হিসেবে লিখিত ঐ সময় যখন হযরত আদম (আঃ) তার মাটির সাথে সম্পৃক্ত। তোমাদেরকে আমার প্রথম অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করছি। তাহলো আমার জন্য হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর দোয়া, হযরত ঈসা (আঃ) এর সুসংবাদ আর আমার মাতার স্বপ্ন যা তিনি আমার প্রসবকালীন অবস্থায় দেখেছিলেন তখনি তাঁর থেকে এমন এক নূর প্রকাশিত হয়েছে যদ্বরুন সিরিয়ার রাজ প্রাসাদ তার নিকট উদ্ভাসিত হয়।
হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই আগমন দিন উৎযাপন করে মীলাদ কায়েম করেছেন। যেমন মিশকাত শরীফে বর্ণিত আছে-
عن ابي قتادة قال سئل رسول الله صلي الله عليه وسلم عن صوم يوم الاثنين فقال فيه ولدت وفيه انزل
অনুবাদঃ হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সোমবার রোযা রাখা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন ইহা এমন একটি দিন, যে দিন আমি জন্ম লাভ করেছি এবং আমার উপর কুরআন শরীফ নাযিল করা হয়েছে। এ দুটি নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে আমি রোযা রাখি। সুতরাং মিলাদ শরীফ কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
কিয়াম প্রসঙ্গ:
ফরজ কিয়ামঃ ফরজ ও বিতর নামাজে কিয়াম করা ফরজ পবিত্র কুরআনের বাণী- قوموا لله قانتين অর্থাৎ মহান আল্লাহর অনুগত হও চুপ করে দাড়াও।
ওয়াজিব কিয়ামঃ কোন পরিচালক উপবিষ্ট লোকদের কে দাঁড়াতে বললে তখন দাড়ান ওয়াজীব। যেমন পবিত্র কুরআনের বাণী-
واذا قيل لكم تفسحوا في المجالس فامسحوا يفسح الله لكم واذا قيل انشزوا فانشزوا
অর্থাৎ যখন তোমাদের কে কোন দ্বীনী মাহফিলে দাঁড়ানোর জন্য আদেশ করা হয়, তোমরা তৎক্ষণাত দাঁড়িয়ে যাও। এ কিয়াম ওয়াজিব কেননা-
اطاعة اولي الامر واجب
অর্থাৎ শরীয়তের বিরোধী না হওয়া পর্যন্ত আদেশ দাতার হুকুম মান্য করা ওয়াজিব।
সুন্নাত কিয়ামঃ সিজাদায়ে তিলাওয়াতের জন্য কিয়াম করা সুন্নাত, কবর যিয়ারত কালে কিয়াম করা সুন্নাত।
মুস্তাহাব কিয়ামঃ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড ৯৫ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৫৯১ পৃষ্ঠায় হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে হাদীস বর্ণিত-
قال نزل اهل قريظة علي حكم سعد بن معاد فارسل رسول الله صلي الله عليه وسلم الي فاتاه علي حمار فلما دنا قريبا من المسجد قال رسول الله صلي الله عليه وسلم للانصار قوموا لسيدكم اوخيركم –رواه مسلم
অনুবাদঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেছেন বনু কুরাইজা ছা’দ বিন মুয়াজ (রাঃ) এর ফয়সালা মান্য করার শর্তে তাদের দুর্গ হতে নেমে আসে। তখন রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছা’দ বিন মুয়াজকে আনার জন্য পাঠান। ছা’দ বিন মুয়াজ গাধার পিঠে আরোহণ করে যখন মসজিদের নিকটবর্তী হলেন তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদের লক্ষ করে বলেন তোমরা তোমাদের সরদারের সম্মানার্থে দাঁড়াও।
মিশকাত শরীফের ৪০২ পৃঃ এ হাদীসের টীকায় মিরকাত হতে বর্ণিত আছে-
وفي سعد لادلة علي ان قيا م الرء بين يدي الرائس الفاضل والوالي العادل وقيام المتعلم للمعلم مستجب غير مكروه وقال البيهقي هدا القيام يكون علي وجه البر والاكرام كما كان القيام الانصار لسعد وقيام طلحة لكعب
অনুবাদঃ হযরত সা’দ (রাঃ) এর হাদীছ শরীফ হতে প্রমাণিত সম্মানী সরদার ন্যায় বিচারক এবং ওস্তাদের সম্মানার্থে ছাত্রদের এ কিয়াম মুস্তাহাব। মাকরূহ নয়। ইমাম বায়হাকী বলেন ছা’দ বিন মুয়াজের জন্য আনছারদের কিয়াম তালহা (রাঃ) এর কিয়াম কা’ব বিন মালিকের জন্য সম্মানী অর্থাৎ তাজিমী ছিল। এরূপ জমজমের পানি ও অজুর অবশিষ্ট পানি পানের জন্য কিয়াম করা মুস্তাহাব।
সীরাতে হালাবীয়া ১ম খন্ড ১০০ পৃঃ বর্ণিত আছে-
وقد وجد القيام عند دكر اسمه صلي الله عليه وسلم من عالم الأمة ومقتديالأئمة ديناو ورعا الامام تقي الدين السبكي وتابعه علي ذالك مشائخ الاسلام في عصره –فقد حكي بعضهم ان الامام السبكي اجتمع عنده جمع كثير من علماء عصره فأنشد قول البصيري في مدحه صلي الله عليه وسلم لمدح المصطفي-الخط باالدهب علي ورق من خط أحسن من كتب وان تنهض الاشرا ف عند سماعه قياماصفوفا او جثياعلي الركب فعند دالك قيام الامام السبكي رحمه الله وجميع من في المجالس فحصل انس كبير بدالك المجلس مثل ذالك الاقتداء-
অনুবাদঃ হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার প্রশংসামূলক কাছিদা শ্রবনের সময় নেতৃস্থানীয় আলেম ইমামগণের নেতা দ্বীনদারী ও পরহেজগারী সম্পন্ন ব্যক্তি ইমাম তকিউদ্দিন সুবুকী কিয়াম করেছেন। ঐ যামানার মাশায়েখে ইসলাম তার অনুকরণে সকলে কিয়াম করতেন। এ সম্পর্কে জনৈক আলেম ছাহেব বর্ণনা করেছেন একদা ইমাম সুবুকীর দরবারে তৎকালীন বহু বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম সমবেত হন। অতঃপর একজন পাঠক নূর নবীর প্রশংসা ইমাম ছরছরীর ২টি পংতি পাঠ করেন যার অর্থ হলো রোপ্য নির্মিত কাগজের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নবী পাকের উচ্ছাসিত প্রশংসা লিপিবদ্ধ করা এবং তাঁর প্রংশসামূলক কাছীদাহ শ্রবণের সময় ওলামায়ে কেরামের সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া অতীব নগন্য প্রশংসা ও নগন্য সম্মান প্রদর্শন করা বই আর কিছু নয়। ইহা শ্রবন করার সাথে সাথে ইমাম সবুকী ও যারা ঐ মাহফিলে ছিলেন সকলে নবী পাকের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে গেলেন। এতে নূর নবীর প্রতি বিরাট আসক্তি পরিলক্ষিত হয়েছিল এসব ইমামের অনুকরণ ও অনুসরণই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
মোল্লা আলী ক্বারী মিশকাত শরীফের শরাহ মিরকাতে লিখেছেন-
وقد جرت عادة كثير من الناس اذا سمعوا بدكر وضعه صلي الله وسلم ان يقوموا تعظيما له صلي الله عليه وسلم وقد استخرج له الحافظ ابن حجر العسقلاني اصلا من السنة وكذا الحافظ جلال الدين السيوطي رحمه الله رد علي الفاكهاني المالكي في قوله ان عمل المولد بدعة مذمومة – وقد ثبت عن ابن العباس رضي الله عنهما انه يحدث وقائع ولادته صلي الله عليه وسلم فاذا جاء البي صلي الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتي وعن ابي درداء رضي الله عنه انه مر عليه النبي صلي الله عليه وسلم وكان يعلم وقائع ولادته صلي الله عليه وسلم لأبنائه فيبشر به ويقول هدا اليوم هذا اليوم فقال صلي الله عليه وسلم ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة يبشرون لك ومن فعل –فعلت
অগণিত মুসলমানদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যে, যখন তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার মাতৃগর্ভ হতে ভূমিষ্ট হওয়ার আলোচনা শুনে তখন তাঁর সম্মানার্থে কিয়াম করেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী ও হাফেজ জালাল উদ্দিন সুয়ুতী এ আমলের মূল দলীল সুন্নাত হতে বের করেছেন।
ইমাম তাজউদ্দিন ফাকেহানীর মন্তব্য মীলাদ নিকৃষ্ট বিদআত। আল্লামা ফাকেহানীর এ মন্তব্য কে উভয়ে কঠোর ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আরো বলেছেন যে, আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) হযরত রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম কাহিনী জনসম্মুখে বর্ণনা করতেছিলেন এমন সময় হুজুর তথায় হাজির হয়ে বললেন তোমরা যারা এ আলোচনায় শরীক হয়েছ তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত হালাল হয়ে গেছে। অনুরূপ হযরত আবু দারদা (রাঃ) তাঁর ছেলেদেরকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আর্বিভাব কাহিনী শিক্ষা দিচ্ছিলিনে ও সুসংবাদ ঘোষণা করতেছিলেন এবং বলতেছিলেন এ দিনটি ইত্যবসরে হুজুর তথায় তাশরীফ এনে বললেন হে আবু দারদা শুন মহান আল্লাহ তোমার জন্য রহমতের দরজাগুলো খুলে দিয়েছেন। সকল ফিরিশতা তোমাকে সুসংবাদ দিতেছেন এভাবে তোমার ন্যায় যারা আমার জন্ম উৎসব পালন করবে তাদের জন্য আল্লাহ পাক রহমতের দ্বার খুলে দেবেন ও ফিরিশতারা তাদেরকে খোশ খবর দিতে থাকবেন।
وفي جواهرالبحار جرت العادة بانه اذا ساق الواعظ مولده صلي الله عليه وسلم ذكرواو وضع امه قام الناس عند ذالك تعظيما له صلي الله عليه وسلم وهدا القيام بدعة حسنة ليما فيها من اظهارالفرح والسرور والتعظيم بل مستحبة لمن غلب عليه الحب والاجلال لهدا النبي صلي الله عيه وسلم وقد وجد القيام عند ذكر اسمه الشريف من عالم الامة ومقتدي الائمة دينا ورعا الهمام تقي الدين السبكي وتابعه علي ذالك مشائخ الاسلام في عصره وقال في انسان العيون يكفي مثل ذالك في الاقتدا- اقول لم تنزل عليه المواظبة من العلماء الاعلام والمشائخ الكرام
অনুবাদঃ জাওয়াহিরুল বিহার কিতাবে লিখিত আছে মুসলমানদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে যে যখন ওয়ায়েজীন অনুষ্ঠানে নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতৃগর্ভ হতে ভূমিষ্ট হওয়ার কাহিনী ব্যক্ত করেন তখন তাঁর তাজীমাথ্যে উপস্থিত জনগণ কিয়াম করেন। এ কিয়াম হচ্ছে উত্তম বিদায়াত কেননা কিয়াম দ্বারা হুজুরের জন্মোৎসবের খুশী প্রফুল্লতা ও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। যে ব্যক্তির হৃদয়ে নূর নবীর প্রতি মহব্বত ও আসক্তি প্রবল আকার ধারণ করছে তার জন্য কিয়াম করা মুস্তাহাব ইমামদের নেতা বিশিষ্ট পরহেজগার ও খোদভীরু আল্লামা ইমাম তকীউদ্দিন সুবুকী নূর নবীর নাম মোবারক শ্রবণ করা মাত্র দাঁড়িয়ে যেতেন। ইনসানুল উয়ুন কিতাবের অনুকরণই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ কিয়াম সম্পর্কে এরপরে আর কোন দলীল তালাশ করার প্রয়োজন নাই।
সুতরাং মিলাদ মাহফিল স্বয়ং সাহাবীগণ উদযাপন করেছেন এবং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হয়ে মাহফিলকারীদের জন্য সুসংবাদ প্রদান করেছেন। তাছাড়া খোলাফায়ে রাশেদীনে মীলাদুন্নবী মাহফিলের ফজিলত ও বর্ণনা করেছেন। তাবেঈন যুগের বুযুর্গানে দ্বীন মিলাদ মাহফিলের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন। আল্লামা ইবনে দাহইয়া কৃত আত তানভীর আল্লামা ইবনে হাজার হায়তানী মক্কী (রঃ) কৃত সাবিলুল হুদা নামক গ্রন্থদ্বয় সারা বিশ্বে পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচিত। এখন থেকে প্রায় ৮০০ ও ৫০০ বৎসর পূর্বে এগুলো রচিত হয়।
অতএব মিলাদ শরীফ স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সমর্থিত এবং খোলাফায়ে রাশেদীন কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে যুগে যুগে এ প্রসংগে বহু কিতাব লিখা হয়েছে এরপরও যারা মীলাদুন্নবী তথা মীলাদ কিয়ামের বিরোধীতা করে তারা হয় ঈমানে অন্ধ নতুবা নবী ও ছাহাবী বিদ্বেষী বা মুনাফিক বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন মীলাদ ও কিয়ামের বিধান তাফসীরে রুহুল বয়ান ৯ম খন্ড ৫৬/৫৭ পৃঃ আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া, আত তানভীর, নুরুদ্দিন হালাবীর ইনসানুল উয়ুন, জাওয়াহিরুল বিহার, আল্লামা ইবনে আসকালানী, আল্লামা ইবরাহীম হালাবীর সিরতে হালাবী ইমাম আবু শামা, ইমাম বরজাঞ্জী, শামসুদ্দিন ইবনে জাজরী ও ইবনে হাজার হায়তামীর আন নেয়মাতুল কেবরা ইত্যাদি।
মীলাদ কিয়াম সম্পর্কে বিশ্বের ওলামায়ে কেরামের মতামত ও আমল সন্নিবেশীত করা হলো।
মীলাদ কিয়াম সম্পর্কে বিশ্বের ওলামায়ে কেরামের মতামত ও আমল
বর্তমান যুগে কিছু সংখ্যক আলেম ছাহেবান মীলাদ কিয়াম সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের কটুক্তি করে ধর্মপ্রাণ সরল মুসলমানদেরকে বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ পাক এ ধরণের ফাসাদ থেকে সকলকে হেফাজতে রাখুন এবং সঠিক পথ ও মত বুঝার তাওফীক দিন। যে সকল ১ম শ্রেনীর ওলামা, আয়েম্মা, আওলিয়ায়ে কিরাম প্রচলিত মীলাদ কিয়ামকে সমর্থন করতঃ উহাকে খায়ের বরকত ও ছাওয়াবের অছীলা মনে করে উহার আমল করতেন এবং উহার সমর্থনে কুরআন, হাদীছ, ইজমা কিয়াস ভিত্তিক বহু প্রমাণ্য কিতাব রচনা করেছেন তাঁদের কিছু সংখ্যক নাম নিম্নে প্রদত্ত হলো।
১. হযরত আল্লামা মুফতি মোহাম্মদ আমীন (র:) মুফতি হানাফী, মদীনা শরীফ।
২. হযরত আল্লামা মুফতী জাফর হোসাইন (র:) মুফতী শাাফেয়ী মদীনা শরীফ।
৩. হযরত আল্লামা মুফতী আবদুজ জাব্বার (র:) মুফতী হাম্বলী মদীনা শরীফ।
৪. হযরত আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ শরকী (র:) মুফতী মারেকী মক্কা শরীফ।
৫. হযরত ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি শাফেয়ী (র:) (ওফাত ৯১০ হিজরী)
৬. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (র:) বুখারী শরীফের অন্যতম ব্যখ্যাকার। (ওফাত ৮৫২ হিজরী)
৭. ইমাম শামছুদ্দিন মুহাম্মদ ছাখাবী (র:) হযরত মোল্লা আলী কারী (র:) এর সম্মানিত ওস্তাদ।
৮. হযরত আল্লামা মোল্লা আলী কারী (র:) মেশকাত শরীফের শরাহ মেরকাতের প্রনেতা। (ওফাত ১০১৪ হিজরী)
৯. হযরত শাহ আব্দুল আজীজ (র:) মুহাদ্দিস দেহলভী পাক ভরত, উপমহাদেশের মুহাদ্দিছীনদের ওস্তাদ চার তরীকার পীরনে পীর। তিনি প্রতি বৎসর নিজ বাড়ীতে দুইবার প্রচলিত মিলাদ মাহফিল করতেন।
১০. হযরত মাওলানা আলী ইবনে ইব্রাহিম (রঃ) সীরাতে হলবীয়ার লেখক।
১১. হযরত ইমাম বরযেনজী (রঃ) যিনি প্রচলিত মীলাদ কিয়ামের সমর্থনে কিতাব লিখেন।
১২. হযরত মাওলানা শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান (রঃ) মুফতি হানাফী মক্কা শরীফ।
১৩. হযরত মাওলানা শায়খ খাল্লাফ (রঃ) মুফতীয়ে হাম্বলী মক্কা শরীফ।
১৪. হযরত মাওলানা শায়খ মুহম্মদ ইবনে হোমায়েদ (রঃ) মুফতি শায়েফী মক্কা শরীফ।
১৫. হযরত মাওলানা শায়খ হোসাইন ইবনে ইব্রাহিম (রঃ) মুফতি মালেকী, মক্কা শরীফ।
১৬. হযরত ইমাম কাস্তলানী (রঃ) বুখারী শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যখ্যাকার।(ওফাত ৯২৩ হিঃ)
১৭. হযরত হাজী এমদাদ উল্লাহ (রঃ) মোহাজেরে মক্কী দেওবন্দী ওলামায়ে কিরামের পীরানে পীর, তিনি তার এমদাদুল মুশতাক কিতাবে লিখেছেন-
আলেমগন (প্রচলিত) মীলাদ ও কিয়াম নিয়ে ঝগড়া করেছেন এবং বহু আলেম মীলাদ জায়েয বলেছেন। এমতাবস্থায় নিষেধকারীগণের এত বাড়াবাড়ি করার কোন কারণই থাকতে পারেনা। মক্কা মদীনা শরীফের হক্কানী ওলামায়ে কেরামের অনুসরণ করাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। অবশ্য কোয়ামের সময় নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপস্থিতিকে মেনে নেয়া ও হয় তবুও তাতে কোন দোষ নেই। কারণ জড়জগতে স্থান কালের সাথে সীমাবদ্ধ বটে কিন্তু আত্মিক জগত স্থান ও কালের কবল থেকে পবিত্র। অতএব নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মীলাদ মাহফিলে হাযির হওয়া মোটেও অসম্ভব নয়। জনাব মরহুম হাজী এমদাদ উল্লাহ মোহাজেরে মক্কী সাহেব তাঁর প্রণীত ফয়সালায়ে হাফতে মাসায়েলে কিতাবেও মীলাদ কিয়াম মাহফিলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাজির হওয়ার কথা স্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করেছেন।
১৮. হযরত মাওলানা আশ্রাফ আলী থানবী এর ওস্তাদ ও পীর হাজী এমদাদ উল্লা মোজেরে মক্কী (রঃ) বলেছেন- মীলাদ মাহফিলকে অসংখ্য বরকতের অছীলা মনে করে আমি উহা প্রতি বছর বহুবার পালন করে থাকি এবং কিয়াম কালিন অশেষ প্রশান্তি ও তৃপ্তি অনুভব করে থাকি।
১৯. হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলভী মক্কী (রঃ) প্রচলিত মীলাদ ও কিয়ামকে অতি উত্তম অনুষ্ঠান বলে আমল করতেন।
২০. হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল হক এলাহাবাদী (রঃ)।
২১. হযরত ইমাম জযরী (রঃ) শাফেয়ী।
২২. হযরত ইমাম মুহাদিদ্স হাফেজ আবু মাহাম্মাদ আব্দুর রহমান ইবনে ইসমাঈল ওরফে আবু শামাহ শাফেয়ী (রঃ) ইমাম নববীর ওস্তাদ
২৩. মাজমাউল বেহার প্রণেতা আল্লামা তাহের জালাল (রঃ)।
২৪. আল্লামা ইবনে জওজী (রহঃ) তিনি বলেন মদীনা সিরিয়া, মিশর, ইয়ামেন প্রভৃতি আরব রাজ্যের সকল ওলামা প্রচলিত মীলাদ মাহফিল জায়েযের ফতোয়া দিয়েছেন।
২৫. হযরত মুজাদ্দেদে আলফেছানী (রঃ)।
২৬. ওস্তাদুল মুহাদ্দিছীন হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিছে দেহলভী (রহঃ) বলেছেন আমার আব্বা হযরত শাহ আব্দুর রহীম (রহঃ) আমার নিকট ফরমায়েছেন যে, আমি প্রতি বছর নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মীলাদ অনুষ্ঠানে তাঁর তাজীমার্থে জেয়াফাতের আয়োজন করতাম। এক বছর দুর্ভাগ্যবশত ছোলা বুট ভাজা ব্যতিত আর কিছুই ছিলনা অগত্যা উহাই মীলাদ মাহফিলে জনতার মধ্যে বিতরণ করলাম। অতঃপর নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নযোগে দেখলাম এবং তাঁর সামনে আমার দেয়া ছোলা বুট রক্ষিত আছে দেখে খুশী হলাম।
২৭. মিয়াতে মাসায়েল কিতাবের প্রণেতা হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ইছহাক দেহলভী (রঃ)
২৮. আল্লামা মুফতী ছা’দুল্লা (রহঃ)
২৯. আল্লামা ছদরুদ্দিন মরহুম শাফেয়ী (রহঃ)
৩০. হযরত শাহ আব্দুর রহীম (রহঃ) দিল্লী
৩১. হযরত আল্লামা হোছাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) দেওবন্দী।
৩২. মুফতী আল্লামা আযিযুল হক দেওবন্দী (রহঃ)
৩৩. আল্লামা মাহমুদ হাছান দেওবন্দী (রহঃ)
৩৪. আল্লামা আনোয়ার শাহ দেওবন্দী (রহঃ)
৩৫. আল্লামা আহমদ দেওবন্দী (রহঃ)
৩৬. আল্লামা আজীজুর রহমান দেওবন্দী (রহঃ)
৩৭. হযরত মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী (রহঃ)
৩৮. হযরত সুফী ফতেহ আলী (রহঃ)
৩৯. হযরত সুফী নূর মোহম্মদ নিজামপুরী (রহঃ)
৪০. হযরত ছালামত উল্লাহ কানপুরী (রহঃ)
৪১. ফতোয়ায়ে এমদাদীয়ায় বর্ণিত আছে যে, নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার জীবনের বিভিন্নমুখী আলোচনা অনুষ্ঠান যেমন জায়েয বরং মুস্তাহাব অনুরূপ শরীয়তের খেলাফ কর্ম কান্ড হতে প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠান প্রচলিত কেয়াম কোন ক্রমেই নাজায়েয হতে পারেনা। এই ফতোয়া খানা দিয়েছেন দেওবন্দ মাদ্রাসার মুফতি হযরত মাওলানা আযিযুল হক (রহঃ) ছাহেব।
৪২. হযরত মাওলানা হাবীবুর রহমান (রহঃ)
৪৩. হযরত মাওলানা আব্দুল হাই (রহঃ) লখনভী
৪৪. হযরত মাওলানা মুজাফফর হোসাইন (রহঃ) সাহারান পুরী
৪৫. হযরত মাওলানা মুফতি শফী ছাহেব (রহঃ)
৪৬. হযরত মাওলানা খলিল আহমদ দেওবন্দী (রহঃ)
৪৭. হযরত মাওলানা শায়খ মজদুদ্দীন সিরাজী (রহঃ)
মিশর জামে আজহার হতে শিক্ষা প্রাপ্ত প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কেরাম যারা মীলাদ কিয়াম করেছেন তাঁদের তালিকা:
১. হযরত আল্লামা কামাল উদ্দিন (রহঃ) লাকসাম, কুমিল্লা।
২. হযরত আল্লামা আলাউদ্দিন আজহারী (রহঃ), পাচথুরী, বরুড়া, কুমিল্লা।
৩. হযরত আল্লামা ফজলুল করীম মিশরী, রায়পুর, নোয়াখালী।
দেওবন্দ মাদ্রাসা হতে শিক্ষা প্রাপ্ত প্রখ্যাত ওলামায়ে কিরাম যারা মীলাদ কিয়াম করেছেন তাঁদের তালিকা:
১. শায়খুল হাদীস আল্লামা নিয়াজ মাখদুম তর্কিস্থানী (রহঃ), হেড মুহাদ্দিস, ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসা।
২. শায়খুল হাদীস আল্লামা আবদুস সাত্তার বিহারী (রহঃ), মুহাদ্দিস, ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসা।
৩. পীরে কামেল মুফতি আব্দুল লতিফ (রহঃ), (গোল্ড মেডালিষ্ট), মীরশরাই, চট্টগ্রাম।
৪. শায়খুল হাদীস আল্লামা আঃ গণি সাহেব (রহঃ) অধ্যক্ষ সুফিয়া নুরীয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
৫. শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতি সাইয়্যেদ মুনাজের আজম আযীযুল হক (রহঃ), শেরে বাংলা হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
৬. শায়খুল হাদীস হাদীয়ে দ্বীন ও মিল্লাত আল্লামা নুরুল ইসলাম হাশেমী, চট্টগ্রাম।
৭. হাফেজে বুখারী শরীফ আল্লামা ওয়াজিহুল্লাহ সন্দীপি, চট্টগ্রাম।
৮. মুনাজেরে আহলে সুন্নাত হযরত আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ওসমান গণি (রহঃ)
৯. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈদ হোসাইন (রহ) লালমাই, কুমিল্লা।
১০. শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহঃ)
১১. পীরে কামেল আল্লামা আব্দুল লতিফ ফুলতলী ছাহেব ক্বিবলাহ (রহঃ) সিলেট।
১২. পীরে কামেল হযরত মাওলানা আঃ লতিফ আমতলী, বাগেরহাট।
ভারতে রামপুর আলীয়া মাদ্রাসা হতে শিক্ষা প্রাপ্ত প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কিরাম যারা মীলাদ কিয়াম করেছেন তাঁদের তালিকা:
১. পীরে কামেল হযরত মাওলানা আঃ রহমান (রহঃ) বিজকরা, কুমিল্লা।
২. পীরে কামেল হযরত মাওলানা ওয়াজ উদ্দিন (রহঃ) রামপুরী, চাঁদপুর।
৩. আল্লামা সুফী ওছমান গণি (রহঃ) হেড মুহাদ্দিস ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা।
৪. আল্লামা আঃ লতিফ ছাহেব, বুরবুরিয়া বি বাড়ীয়া।
৫. হযরত মাওলানা সাইয়্যেদ হাছান আলী গিলাতলা, কুমিল্লা।
৬. পীরে কামেল হযরত মাওলানা আজগর হোসাইন, আড়াইবাড়ী, কুমিল্লা।
৭. শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ মোস্তফা রামের বাগ (গোল্ড মেডালিষ্ট) লাকসাম, কুমিল্লা।
৮. হযরত আল্লামা মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল করিম, রূপসা, চাঁদপুর।
কলকাতা আলিয়া ও ঢাকা মাদ্রাসা বোর্ড হতে সনদ প্রাপ্ত প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কিরাম যারা মীলাদ কিয়াম করেছেন তাঁদের তালিকা:
১. হযরত আল্লামা মুফতি সাইয়েদ আমীমুল এহসান, গ্রেন্ট মুফতি বাংলাদেশ, খতিব বাইতুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা।
২. হযরত আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ হোসাইন, প্রিন্সিপাল, সিলেট গভঃ আলিয়া মাদ্রাসা।
৩. মুফতি মাওলানা হরমজুল্লাহ সিলেট, গভঃ আলিয়া মাদ্রাসা।
৪. মুফতি মাওলানা আব্দুল আউয়াল ফখরে বাংলা (গোল্ড মেডালিষ্ট) লাকসাম।
৫. মুফতি আল্লামা আব্দুল গফুর (গোল্ড মেডালিষ্ট) চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা।
৬. মুফতি মাওলানা হাবীবুর রহমান গাজীপুর, চাঁদপুর।
৭. মুফতি আল্লামা তাজম্মুল হোসাইন, অধ্যক্ষ ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসা।
৮. হযরত মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ শিরাজুল হক ছাহেব, ছোট মানিকা ভোলা।
৯. হযরত মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ আব্দুল কাদের অধ্যক্ষ ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসা।
১০. হযরত মাওলানা আযীযুর রহমান নেছরাবাদী উপাধ্যক্ষ ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসা।
১১. উসতাজুল ওলামা হযরত মাওলানা আঃ মজীদ ছাহেব (রঃ) অধ্যক্ষ গাজীমুড়া লাকসাম।
১২. হযরত আল্লামা মুহাম্মদ আহমদ ছাহেব (রঃ) গাজীমুড়া, লাকসাম।
১৩. মুফতি মাওলানা মুফতি হাবীবুর রহমান ছাহেব মন্ডলী, কুমিল্লা।
১৪. হযরত মাওলানা মুফতি মাকসুদুর রহমান সিংরাইল (গোল্ড মেডালিষ্ট), কুমিল্লা।
১৫. শায়খুল হাদিস হযরত আল্লামা ফজলুল করীম নকশবন্দী, দালাল বাজার লক্ষীপুর।
১৬. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ এনায়েতুল্লাহ বদরপুর, কুমিল্লা।
১৭. হযরত মাওলানা মুহাঃ আলী হোসাইন, জঙ্গলপুর, কুমিল্লা।
১৮. শায়খুল হাদিস মুহা রফিকুল্লাহ শাকতলী, কুমিল্লা।
১৯. মুফতি মাওলানা মুহাঃ আব্দুল হাকীম নাটোরপাড়া, কুমিল্লা।
২০. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ নোয়ামতুল্লাহ, নাথেরপেটুয়া, কুমিল্লা।
২১. হযরত মাওলানা হাবীব উল্যা হাজেরা মুড়ী, কুমিল্লা।
২২. হযরত আল্লামা মুহাম্মদ বদিউল আলম (গোল্ড মেডালিষ্ট), কুমিল্লা।
২৩. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ওবায়দুল হক, অধ্যক্ষ ফেনী আলিয়া মাদ্রাসা।
২৪. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ মুজাফফর আহম্মদ অধ্যক্ষ নেছারিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
২৫. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ একরামুল হক লতিফী, মীরশরাই।
২৬. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান অধ্যক্ষ সোনাকান্দা আলিয়া মাদ্রাসা।
২৭. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আহমাদুল্লাহ শরীয়তপুর, মাদারীপুর।
২৮. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হালিম, অধ্যক্ষ ধামতী আলিয়া মাদ্রাসা।
২৯. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল আমীন আতীকী, নোয়াখালী।
৩০. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আঃ ছোবহান (শহরকুতুব) ইসলামিয়া আলীয়া মাদ্রাসা, নোয়াখালী।
৩১. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ছালেহ আহমদ সোনাইমুড়ী আলীয়া মাদ্রাসা, নোয়াখালী।
৩২. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জলিল অধ্যক্ষ মুহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া আলীয়া মাদ্রাসা, ঢাকা।
৩৩. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আঃ রব খান, অধ্যক্ষ ছারছীনা আলীয়া মাদ্রাসা।
৩৪. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আমজাদ হোসাইন অধ্যক্ষ ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসা।
৩৫. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ কাফিল উদ্দিন সালেহী অধ্যক্ষ নেছারিয়া আলীয়া মাদ্রাসা, ঢাকা।
৩৬. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ফয়জুল বারী, উপাধ্যক্ষ, সীতাকুন্ড আলিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
৩৭. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ছালেহ অধ্যক্ষ আলিয়া মাদ্রাসা খুলনা।
পাক ভারত উপমহাদেশের পীর মাশায়েখ যারা মীলাদ কিয়াম করেছেন তাঁদের তালিকা:
১. ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত শাহ আহমদ রেজা খাঁন বেরলী (রহ) ভারত।
২. ছিরিকুটি, ছহরভী, শরীফের মাশাইখিনে কেরাম।
৩. সিরহ্নিদ শরীফের মাশাইখিনে কেরাম।
৪. ফুরফুরা শরীফের মাশাইখিনে কেরামের মূলাংশ।
৫. জৈনপুরী মাশাইখিনে কেরামের মূলাংশ।
৬. ছারছীনা দরবার শরীফের মাশাইখিনে কেরাম।
৭. হযরত মাওলানা ওকার উদ্দিন বেরেলী (রঃ)
৮. শায়খুর হাদীছ মুফতি সাইয়েদ আহমদ কাজেমী (রঃ) করাচী।
৯. শায়খ শাহ আহমদ ইয়ার খান বেরেলী (রঃ) শরীফ পাকিস্তান।
১০. হযরত মাওঃ খাজা আহমদ শাহ ইসলামপুর, গাছতলা দরবার শরীফ, চাঁদপুর।
১১. হযরত মাওঃ সাঈদুর রহমান মুজাদ্দেদী নকশেবন্দী, ঘনিয়া দরবার শরীফ, ফরিদগঞ্জ।
১২. পীরে তরিকত হযরত মোল্লা কাজিমউদ্দিন (রঃ) কালিয়াপুরী, লাকসাম।
১৩. পীরে কামেল আলী আশ্রাফ চাঁপুরী (রঃ) দোঘাইয়া চাঁদপুর লাকসাম।
১৪. পীরানে পীর গাউছে জামান শাহ মোঃ আব্দুছ ছোবহান আলকাদেরী, শাহপুর, কুমিল্লা।
১৫. মুনাজিরে আজম রাহনুমায়ে শরীয়ত ওয়াত তরীকত আল্লামা আবু নছর মোহাম্মদ আবিদ শাহ মুজাদ্দেদী আল মাদানী (রহঃ) হাজীগঞ্জ।
১৬. পীরে তরিকত হযরত আল্লামা আলহাজ্ব মোঃ আব্দুছ ছোবহান আলকাদেরী (রহঃ) বিঘা, নোয়াখালী। (আমার পীর ও মুর্শিদ কিবলা মাদ্দা জিল্লুল হুল আলী)
একটি বিশেষ অনুরোধ:
মহান আল্লার প্রিয় হাবীব আমাদের আকা ও মাওলা হযরত মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে বিতর্কে জড়ানো কোনো অবস্থায়ই উচিৎ নহে কেননা তিনি আমাদের ঈমান। তাঁর সম্পর্কে যিনি যতটুকুন বুঝ বা জ্ঞান লাভ করেছেন তা আসলে মহা সমুদ্র হতে বিন্দু মাত্র। সুতরাং তাঁর শানে যেন তর্ক বহছে অবতীর্ণ না হোন কারন তর্ক বহছে জড়িত হয়ে পড়লে স্বভাবতঃ মানুষের মধ্যে জেদ এসে যায়। এমন জেদও রাগের মাথায় অনেক সময় সীমাতিক্রম করে শানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যপারে এমন কোনো অবাঞ্চিত অশোভনীয় উক্তি মুখে এসে যেতে পারে। যার কারনে অনেক সময় ঈমান আমাল সমূহ বরবাদ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং এ ব্যপারে অধিক জ্ঞানার্জন করার চেষ্টা করাই ঈমানদার বুদ্ধিমানদের কাজ হবে।
প্রাপ্তিস্থান ও প্রতিনিধিগণ
রহিমা নগর, কচুয়া, চাঁদপুর
মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
পাটোয়ারী ভেরাইটিজ স্টোর
রহিমা নগর মধ্য বাজার
মোবাইল ০১৮১৭৫৮৮০৪৮
হাজিগঞ্জ, চাঁদপুর
সাজ্জাদ হোসেন (ফারুক)
ফটো ফেশান কালার ল্যাব
করিম প্লাজা (২য় তলা) পশ্চিমপার
০১৭২০৫০৯৯১৩
হাজিগঞ্জ, চাঁদপুর
মুহাম্মদ উবায়দুল হক
মোম্বাইশ আড্ডা, বরুড়া
০১৮২২৫২৩৪৪৪
উঘারিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
ও আলা হযরত ইসলামি পাঠাগার (শাহরাস্তি, চাঁদপুর)
মুহাম্মদ আবু জাফর
০১৯২০৫৬৪৪৬৩
লক্ষ্মীপুর চিশতিয়া সাইফিয়া দরবার শরীফ
লক্ষ্মীপুর সদর লক্ষ্মীপুর
কালিয়াপাড়া, শাহরাস্তি, চাঁদপুর
মু. মনির হোসেন
গাউসিয়া মাইক সার্ভিস
কালিয়াপাড়া পশ্চিম বাজার
০১৮১৮৯৫২০৭৫
মুজাফফরগঞ্জ, লাকসাম
মু. নুরে আলম নূরজাহান হোটেল
মুদ্দাসরগঞ্জ পূর্ব বাজার
০১৭৩১৬৫১৬৪৩
শাহ্পুর দরবার শরীফ, কুমিল্লা
সোবহানীয়া মুহাম্মদীয়া কুতুবখানা
পোঃ শাহ্পুর দরগা শরীফ
আদর্শসদর, কুমিল্লা
০১৭১৫৭৩৭০২৫
মুড়াগাঁও, শাহরাস্তি, চাঁদপুর
মাও. আব্দুল আউয়্যাল
০১৮২৪৮৪৪৩২৪
সাওয়ালপুরী দরবার শরীফ, নোয়াখালী
কেশারপাড় সেনবাগ নোয়াখালী
মাও. বিছমিল্লাহ আল-ক্বাদেরী
০১৭২৬৮২২৭৫০
কুচাইতলী, কুমিল্লা
মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার
পশ্চিম কুচাইতলী, কুমিল্লা
০১৭৩৩৭০১৯২৭
মোগলটুলি, কুমিল্লা
মুহাম্মদ কাসওয়া
০১৯১১১৯১৯৫৯